অণুগল্প এক
বিদায়ের সময় বুকে জড়িয়ে ধরলাম ওকে। ভেতরটা একেবারে খালি খালি মনে হলো। একটি ব্ছর ওকে ছাড়া কাটাবো কি করে? আমার কাঁধের উপর ওর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া একফোঁটা অশ্রু ওর ভেতরের ঝড়কেও স্পষ্ট করে দিল। তাতে আমার নিজের কষ্ট আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো। একসময় পরস্পর পরস্পরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। আমার দিকে একবার ম্লানমুখে তাকিয়ে বিদায় নিল সে। ওর অপসৃয়মান দেহটির দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ।
অথচ ও যখন আমাদের কাছে এসেছিল, তখন এমনটি ছিল না। খুব অযাচিত মনে হতো ওকে। একেবারেই সহ্য করতে পারতাম না। কি করে করবো? চেঁচামেচি আর অন্যায় জেদে পাগল করে ফেলেছিল আমাকে। আমার অতি সখের জিনিসগুলোতেও যখন দাবী জানাতে আসলো, একদিন মায়ের সামনেই মেরে বসলাম ওকে। দেখে মা বললো,
- সারাক্ষন একা একা ছিলি, একটি ভাই চাই, ভাই চাই বলে পাগল করে ফেললি! আর এখন মারছিস ওকে!
অণুগল্প দুই
সকালের সোনালী আলোতে গা ভাসিয়ে বসেছিল ওরা দুজনে। একজন সমুদ্রের পাড়ে একটি পাথরের উপর, আরেকজন একটু দুরে, জলের উপর গা ভাসিয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঙ্গর বললো,
- এই অসীম জলরাশি আর বল্গাহীন স্বাধীনতায় ঘুরে বেড়াতে কতোই না আরাম!
পাথরের উপরের নিরাপদ দূরত্ব থেকে মাথা কাত করে তাকালো গাংচিল হাঙ্গরের দিকে। একটু সাহসী হয়ে বললো,
- তোমার মতো আমারও যদি এতোটা বিশাল শরীর আর ধারালো দাঁত থাকতো, তাহলে আমিও আকাশে উড়ে উড়ে এই স্বাধীনতা উপভোগ করতাম।
- ফালতু কথা। স্বাধীনতা শরীরের আকারের উপর নির্ভর করে না। নিজের ভেতরের স্বাধীনতাই হলো আসল শক্তি।
- তাই নাকি?
বলেই আরো অভয় পেয়ে আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো গাংচিল। ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো হাঙ্গর।
- অবশ্যই! তোমার মাথায় শুধুই উদ্ভট চিন্তাভাবনা!
বলেই গাংচিলের সুস্বাদু মাংশে সকালের প্রখম নাস্তাটি সারলো হাঙ্গর। মুখের মৃদু হাসিটি আগের মতোই লেগে রইলো চেহারায়।
অণুগল্প তিন
একটি নির্জন আড়ালের জন্যে তিন দিন ঘুরে বেড়ালো আলীবাবা। অনেক পথ পেরুলো মরুভুমিতে। পায়ের তলা আগুন-গরম বালির উত্তাপে ফোস্কা পড়ে ক্ষতবিক্ষত হলো। শরীরের ভেতরে জমে থাকা ঘাম সে গরমকে যেন আরো বেশী অসহনীয় করে দিল। এর মাঝে সাবধান হতো হলো, যাতে কেউ অনুসরণ না করে। অবশেষে একটি মরুপাহাড়ের খুব খাড়া উতরাই পেরিয়ে একটি গুহার সামনে এসে দাঁড়ালো সে। বেশ মনোমতো হলো জায়গাটি তার।
এবার আর তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। পৃথিবীর সমস্ত ধনসম্পদ এখন তার হাতের মুঠোয়। উত্তেজনা আর আনন্দে কাঁপতে কাঁপতে আলাখাল্লার পকেট থেকে কাগজটি বের করে পড়া শুরু করলো সে।
- আড়াইশো গ্রাম খোরমা, পোয়া লিটার কেরোসিন, .......
এই যা! তাড়াহুড়োয় ভুল করে বউএর বাজারের ফর্দটি নিয়ে এসেছে আলীবাবা।
মন্তব্য
তিন ভিন্নতার স্বাদ জোগাল তিনটি অনু গল্প। ভালো লাগল।
১. বেশ আলোড়িত করল ভাইয়ে অথবা বোনের মমত্ব বোধ।
২. স্বার্থপরতার এক চালাকী রূপের বর্ণনা মোহনীয়
৩. আলীবাবার নির্জনতায় বেরসিক বৌয়ের বাঁ হাত...........
তীরন্দাজ আপনার তীর লক্ষ্যে আঘাত হানবেই।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভাল লাগল তীরুদা । প্রথম টা পুরান কথা মনে করিয়ে দিল ।
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
খুপ সুপ্ফ হইছে। কিন্তু হাঙ্গর কি গাঙচিলের মংস খায়?
কিন্তু এই হারাজাদা হাঙ্গর তো খাইল! আমার চৌক্ষের সামনে খাইল! আমার কি দোষ! হয়তো শঙ্কর হাঙ্গর আছিল।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
কাল্পনিক আর পৌরানিক হাঙ্গরের কথা জানিনা, তবে বাস্তবিক হাঙ্গর সব কিছুই খায় । বিষাক্ত জীব ছাড়া ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
গল্পের গরু গাছে ওঠে, সো নো প্রবস। তাই হাঙ্গর গভীর জলের মাছ হইলেও গাংচিলের সাথে আড্ডা দিতেই পারে।
তিনটি গল্পই বড় স্বাদু হয়েছে।
নিজের ফুলদানীতে যারা পৃথিবীর সব ফুলকে আঁটাতে চায় তারা মুদি; কবি নয়। কবির কাজ ফুল ফুটিয়ে যাওয়া তার চলার পথে পথে। সে ফুল কাকে গন্ধ দিলো, কার খোঁপায় বা ফুলদানীতে উঠলো তা দেখা তার কাজ নয়।
___________________________ [বুদ্ধদেব গুহ]
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
যত কান্না তত হাসি। প্রথমটায় কান্না পেলেও শেষমেষ হাসতে হল।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
ভাল লাগল তীরুদা। একটা জিনিস বুঝিনি, আলীবাবা ভুল করে কিসের বদলে বাজারের ফর্দ নিয়ে গিয়েছিল?
সিসেম ফাক! কথাটা ভুলে গিয়েছিল হয়তো। কাগজে লিখে রেখেছিল। কে জানে?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
খুব ভাল লাগল। বিশেষ করে প্রথম দুটো।
ক্রমাণুসারে ভালো লেগেছে - ২-৩-১
তিনটাই তীরের মত । ঋজু তীক্ষ্ম ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ ও ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
শেষটা পড়ে দারুণ লাগলো।
চমৎকার লাগল তীরুদা।
খুশী হলাম জেনে। ভালো থাকবেন।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
- আলীবাবা হাঙরের পিঠে চড়ে ভাইকে গিয়ে চড় মেরে আসলো। সেটা আবার দেখে ফেললো দুরন্ত গাংচিল। বাড়ি ফেরার পর মিসেস আলীবাবার সাথে ঝগড়ায় ত্যাক্ত মা দিলো ডলা।
ড্যাবস হইছে তীরুদা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সাবাস ধুসর! আরেকটি অণুগল্প হয়ে গেলো দেখছি!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমার কাছে বেশ মজা লেগেছে। তবে আমার ধারণা, আরেকটু ডিটেলসে কাজ করে আরো মজা করতে পারতেন, কিন্তু সময়ের অভাবে ফাঁকে মেরেছেন!
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ঠিক বলেছেন। আসলেই আমি অলস!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বার্তাবহ তিনটি অনুগল্পের অনুন্তব্য হল:
খুব যথার্থ হইয়াছে। ১০ এ ১২ দেয়ার মত।
ধন্যবাদ, অনেক অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
নতুন মন্তব্য করুন