„শালারা সব অকৃতজ্ঞের দল!“ বললো সৈন্যটি। থু করে একদলা থুতু ফেললো সীমাহীন ঘৃণায়। বালিময় উত্তপ্ত মাটিতে সে থুতুর দলা মুহৃর্তের মাঝেই মিলিয়ে গেলো। সাদা একটি বৃত্তাকার দাগ কুশ্রী এক চিহ্ন রেখে পড়ে রইলো কিছুক্ষণের জন্যে।
„ব্যাটাদের জন্যে এই মরুভুমির দেশে জান বাজী রেখে লড়তে এলাম আমরা, অথচ এরাই আমাদেরকে ঘৃনা করে! বিকট চেহারা একেকটার! মুখভর্তি দাড়ি, ময়লা পোষাক আসাক, দেখলেই ডাকাতের মতো মনে হয়!“
পাশের সৈন্যটি তার অস্ত্রটি নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। সম্মতিসুচক মাথা নাড়লো সে। তার চেহারাতেও এক অবর্ণনীয় ঘৃণার ছবি ফুটে উঠলো। হাতের মেশিনগানটি উপর টোকা দিয়ে বললো,
“সামনে পড়লেই গুলিতে ঝাঝরা করে উচিৎ এইসব হারামজাদাদের! গনতন্ত্রের যোগ্যই নয় এই হতভাগার দল! অথচ এদের দেশে গনতন্ত্রের জন্যে যুদ্ধ করছি আমরা! কোথায় আমাদেরকে একটু খাতির করবে, আমাদের সাথে আনন্দ করবে- আর এখন দেখি এরা আমাদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র তোলে!„
„সামনে পেলে একজনকেও ছাড়বো না আর! ওদের মরণই প্রাপ্য„ বললো প্রথম জন।
দু’সপ্তাহ ধরে একটি শিবিরে অপেক্ষা করছে ওদের দলটি। কয়েকদিন আগে বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধে বেশ ক্ষতি হয়েছে ওদের। ট্যংক, কামান, অস্ত্রশস্ত্র হারিয়েছে প্রচুর। বেশ কয়েকজন মারাও গিয়েছে। কিন্তু তারপরও একটিই স্মান্তনা যে, অবশেষে নি:শ্চিহ্ন করতে পেরেছে শত্রুদের। আরো বিভিন্ন শহরে আক্রমণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু তার আগে আরো কয়েকটি দিন অন্য একটি প্লাটুন আর অস্ত্রশস্ত্রের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই অপেক্ষার সময়টি ধীরে ধীরেই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবারই গেরিলা আক্রমন করে শত্রুরা। সে আক্রোশে আর অনায়াসে মানুষ খুন করে নিজেদের বুকের ভেতরে যে রক্তলোলুপ হায়েনাটি জায়গা করে নিয়েছে, তাকে বাগে রাখা সহজ কথা নয়!
ওদের অপেক্ষার পালা শেষ হলো একদিন। পরের প্লাটুনটি এসে যোগ দিল ওদের সাথে। সাথে সাথেই হাইকম্যান্ড থেকে পূর্ণ শক্তিতে সামনে যা আসে, ছিন্নভিন্ন করে এগিয়ে যাবার আদেশ দেয়া হলো। আদেশ পেয়ে ভেতরের হায়েনাটি নতুন শিকারের আশায় গর্জন করে উঠলো উল্লাসে। শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে এগিয়ে গেলো ওদের বিশাল দলটি। চোখের সামনে যা পড়লো, সবই পরিণত হলো ধ্বংসস্তুপে। মানুষ মারা হলো পিপড়ের মতো। শিশুরাও রেহাই পেলো না। মরুভুমির দেশটি ক’দিনের মাঝেই ওদের ছোবলে রক্তাক্ত হয়ে উঠলো।
একদিন এমনি এক ধ্বংসপ্রাপ্ত উপশহরের অলিতে গলিতে আরো খুন করার জন্যে শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছিল ওরা দু’জন। হঠাৎ একটি মেয়েকে দেখতে পেলো এক ভাঙ্গা বাড়ীর ভেতরে। চুল উস্কোখুস্কো, চেহারায় ভয় আর শোকের কালো প্রলেপ, উন্মাদ হরিণের চাওনি। ওদেরকে দেখেই মাটিতে উবু হয়ে পাগলের মতো চীৎকার করতে শুরু করলো মেয়েটি। দেখেই রক্তের স্বাদ পেলো ওরা। পাশাপাশি- ভেতরের জৈবিক নেশাটিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। সৈন্যদের কাছাকাছি এগিয়ে যেতে দেখে যেনো আরো বেশী পাগল হয়ে গেল মেয়েটি। জোরে চীৎকার করে পালাবার চেষ্টা করেও যেন পালাতে পারলো না। দ্বিতীয় সৈন্যটি প্রথম জনকে মুচকি হেসে সেদিকে এগিয়ে যেতে ইশারা করে নিজের মেশিনগান বাগিয়ে পাশের ধ্বংসস্তুপের দিকে পা বাড়ালো।
প্রথম সৈন্যটি মেশিনগান বাগিয়ে এগিয়ে গেলো মেয়েটির দিকে। ভয়ে মেয়েটি গলা দিয়ে কোন স্বরই বের করতে পারলো না। শুধু উঠে দাঁড়িয়ে বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সৈন্যটির দিকে। পালাবার চেষ্টা করারও সাহস হলো না তার। কাছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটিকে চীৎ করে মাটিতে ফেলে দিল সৈন্যটি। মেশিনগানটি মাটিতে রেখেই ঝাপিয়ে পড়লো তার উপর। একবার কেঁদে উঠেই থেমে গেলো মেয়েটি। শুধু দুটো হাত উঠে এলো উপরে, যেনো ঈশ্বরের কাছে এক অব্যক্ত আর্তি জানালো সে।
কোথায় কে লুকিয়ে ছিল, বা কোত্থেকে গুলিটি এলো বলতে পারবে না কেউ। অজ্ঞান মেয়েটির উপর সৈন্যাটির রক্তাক্ত শরীর একটু নড়ে উঠেই স্থির হয়ে রইলো। দ্বিতীয় সৈন্যটির দেখাও পাওয়া গেলোনা আর।
তার প্রায় একমাস পর ইলিনয়ের ছোট্ট এক শহরের শিশির আর রোদভেজা এক সকাল। মার্গারেট তার বাবার কবরের মাটিতে ফুলগুলো সযত্নে সাজিয়ে রাখলো। সুন্দর একটি ফ্রক পরেছে সে। সে সাথে শোকের চিহ্ন হিসেবে মাথায় কালো রুমোল। সে রুমোল ছাপিয়ে পিঠে লুটিয়ে আছে একগুচ্ছ সোনালী চুল। দেশের জন্যে যুদ্ধে গিয়ে এক সুদুর মরুভুমিতে শহীদ হয়েছে বাবা। বীরত্বের জন্যে মরনোত্তর খেতাবে ভুষিত করা হয়েছে তাকে। বিশেষভাবে চিহ্নিত শহীদদের করবে স্থান হয়েছে তার। বাবার শ্বেতপাথরে বাঁধানো কবরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মার্গারেটের বুক ফুড়ে। এক ফোটা অশ্রুও শিশির হয়ে ঝরে পড়লো সদ্য তাজা ফুলের পাপড়ীর উপর।
মন্তব্য
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
আপনাকে ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অসাধারন সমাপ্তি ......
খুশী হলাম শুনে। ভালো থাকবেন!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আপনার গল্প বনফুলের গল্প মনে পড়িয়ে দেয়।
গল্প পড়াচ্ছেন না শুধু, তীরটা মারছেন একেবারে মোক্ষম লক্ষ্যে। তীরন্দাজীয়।
আপনার কলম আরো প্রাণময় হয়ে উঠুক। অভিনন্দন।
বাপরে! কী যে বলেন! কোনভাবে লিখে যাই মাত্র!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরন্দাজ পৈশাচিকতার শিল্পীত জবাবের জন্য
আপনাকেও ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
যুদ্ধ যে প্রিয়জন হারানোর বেদনায় লীন, এই চরম সত্যটিই ফুটে উঠলো আপনার গল্পে।
আপনার কথা ঠিক! সে চেষ্টা করেছি, তার পাশাপাশি সত্যের অপলাপ এর একটি ছবিও তুলে ধরতে চেয়েছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভাল্লাগলো।
---------------------------------------------------------
আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত। অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
নাহ, বনফুল না- কারন আমাদের তীরন্দাজের গল্পে হাস্যরস নেই, আছে নির্মম বাস্তবতা।
উতপ্রেক্ষা আমাকে জহির রায়হানের ছোটো গল্পগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে।
(শব্দশিল্পী)
আমি অবশ্যই আপনাদের তীরন্দাজ। ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
যত ছোটগল্পই হোক, আপনার গল্পের সমাপ্তি কখনোই আন্দাজ করা যায় না!
*********************************
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী,
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, একটু 'টাইপড' হয়ে যাচ্ছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
টাইপড হলেও আমার মত পাঠকের সমস্যা নেই, এই টাইপ লেখাই বেশি ভালো লাগে পড়তে।
*********************************
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী,
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
চমৎকার! একই ঘটনার আলাদা দুটো রূপ উপস্থাপন। খুব ভালো লাগলো।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
খুব খুশী হলাম আপনার মন্তব্যে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
দারুন গল্প, একেবারে তীরন্দাজীয়।
শেষের মোচড়টায় গল্পটা একেবারে পাল্টে গেল।
একরাশ মুগ্ধতা !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনার ভালো লেগেছে, তাই খুশী হলাম খুব...! ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
উফ !
কি দুর্দান্ত একটা গল্প, তীরুদা !!
আসলেই দুটো প্রান্ত আমরা কখনো একসাথে ভাবার কথা চিন্তাই করি না।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমাদের সবার মনেই বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এক প্রান্তিয় চিন্তা। আর এসব যুদ্ধ-বিগ্রহের ও নান ছোট-বড় সমস্যার উতপত্তি সেখানেই। নাহলে আমাদেরকে এধরণের গল্প লিখতে হতো না।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
(তালিয়া)
-----------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
খুশী....!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
গল্পের কাহিনী সত্যিই অতীব চমতকার।
তবে উপস্থাপনাটি একটু কম নাটকীয় হলে আমার ভালো লাগতো আরও বেশি। "আমার" বললাম, কারণ মতামতটি একান্তই আমার, যেটিকে পাত্তা না দেয়াটাই উচিত হবে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনার মতামত আমার কাছে অবশ্যই খুব মূল্যবান। আমার নিজেরও মনে হয়, কাহিনী বিস্তারে কিছুটা সমস্যা রয়েছে আমার। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
তবে আমি কাহিনী নাটকীয় করার জন্যে এমনটি করিনি। ঘটনাটি কি বাস্তববিবর্জিত?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তীরু ভাই ভাল লাগল কাহিনি খানা
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ জানাই নিবিড়!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
সত্যিই তীরুদা, আপনার গল্পের সমাপ্তি কখনোই আন্দাজ করা যায় না! শেষের এই মোচড়গুলো বরাবরই আপনার লেখায় এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে।
মাঝে মাঝে ভয় হয়, বাড়াবাড়ি করে ফেল্লাম কি না!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অসাধারন তীরুদা !! অসাধারন !!
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
খুব খুশী হলাম ভাই! ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আসাধারন লাগল । আচ্ছা তীরুদা, এই ছবিটা দেখে কি মনে হয় ? আপনার গল্পটা পড়ার সময় আমি আশা করছিলাম এরকম কিছুতে শেষ হবে হয়ত ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ছবিটি দেখলাম। একটাই মন্তব্য আমার, ভয়াবহ! আমি মূলত শান্তিকামী মানুষ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
মারাত্নক!
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
নতুন মন্তব্য করুন