যাযাবর দিনের গল্প (তিন)– তেহরান এক ঝলসানো রুটি

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: সোম, ২৩/০৩/২০০৯ - ৭:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আফগানিস্থান আর ইরানের নো’ম্যনস ল্যান্ড পেরিয়ে মেশাদে পৌঁছলাম চারজন। তেহরানের দিকে রওয়ানা হতে হবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। এখানে বসে থেকে পয়সা খরচ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। সকাল এগারোটা বাজে প্রায়। ক্ষিদেও বেশ তীব্রভাবেই জানান দিচ্ছে পেটের ভেতরে, কাবুল থেকে মেশাদ অবধি এই তিনদিনের ভ্রমনে খাবার পেটে পড়েনি বললেই চলে। আর এই লক্কর ঝক্কর বাসের ভ্রমণে ঘুমের কথা না তোলাই ভালো। তবে বিশ্বজয়ের যে স্বপ্ন আমাদের চোখে, সেখানে খাবার আর ঘুমের কথা ভেবে চিন্তিত হওয়া কি সাজে!

পুরো মেশাদ তখন লোকে লোকারন্য। কোন এক ধর্মীয় উৎসব চলছে তখন। ইরানের অর্ধেক মানুষ যেন এসে ভীড় করেছে এখানে। বাস ভর্তি লোক আসছে, আবার সে বাস ভর্তি হয়ে ফিরে যাচ্ছে নতুনদেরকে জায়গা করে দেয়ার জন্যে। আমাদের শুকনো চেহারা আরো বেশী শুকনো হয়ে গেলো। এবার কি করি! তেহরানে পথে বাসের কোন টিকিট নেই, আগে থেকেই দখল হয়ে আছে। সেকারণে এখানে যে কয়েকটি দিন থাকতে পারবো, সেটাও অসম্ভব। কোন হোটেলেই জায়গা নেই। আর থাকলেও তার খরচ দেবার সাধ্য আমাদের আছে কি? সকালের এই প্রখর রোদের আলোতেও চোখে অন্ধকার দেখলাম। শহরের কেন্দ্রের গোলচত্তরে বসে রইলাম চারজন মুখ চুণ করে। আমাদের থেকে কিছুটা দূরে আমাদের সাথেই কাবুল থেকে আরো কয়েকজন। মনে হলো তারাও একই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে চিন্তিত। নিজেদের মাঝে আলাপ আলোচনা করছে।

এরই মাঝে একজন এগিয়ে এলো আমাদের কাছে। নিজেকে পাকিস্তানের বলে পরিচয় দিল। জানালো, কোন এক মাইক্রোবাস ড্রাইভারের সাথে আলাপ করেছে ওদেরই কেউ একজন। সে ড্রাইভার তেহরান যেতে প্রস্তুত। তবে ভাড়ার পরিমান প্রায় চারগুন বেশী। আমরা রাজী হলে ওদের সাথে যেতে পারি। বাসের বাকী সীটগুলোও পূরণ হয়ে যায় তাতে। রাজী হওয়া ছাড়া কোন উপায় রইলো না আমাদের। খুব কষ্ট হলো বাড়তি ভাড়া দিতে। প্রায় শুন্য পকেট আরো বেশী শুন্য হলো। কিন্তু মেশাদে বসেই বা কি করবো! ক’দিন চলবে পকেটের জোরে। তাছাড়া এগিয়ে যাওয়াটাই এই মূহুর্তে ভীষন জরুরী। খাবার দাবারের পরিমাণ আরো কমিয়ে দিতে হলো।

বাস রওয়ানা হলো তেহরানের পথে। ইরানের প্রত্যন্ত শহর গ্রাম পেরিয়ে চললাম আমরা। মাথায় হাজারো চিন্তার ভার, চোখে অন্ধকার। শুধুমাত্র আক্ষরিক অর্থেই নয়, সত্যিই অন্ধকার। কোন পথ পেরিয়ে, কিভাবে ঘুমিয়ে, কি খেয়ে দু’দিনের এই যাত্রা শেষে তেহরান এসে পৌঁছলাম, সেকথা বলার ক্ষমতা নেই। রাতে বাস ড্রাইভার কোন এক হোটেলে ঘুমিয়েছিল, আমরা বাসের ভেতরেই আধঘুমে কাটিয়েছি। দু’টো বড় বড় রুটি কিনে নিয়েছিলাম মেশাদ থেকে। সেটা আর বোতল ভর্তি পানি দিয়ে চালিয়ে দিলাম চারজনে দু’টো দিন। শুধুমাত্র শরীরকে কোনভাবে টিকিয়ে রাখা ছাড়া খাবারের তেমন কোন আগ্রহও আমাদের ছিলনা। সামনের সময়ের কথা ভেবে কেমন যেনো বিবশ, এক আনুভূতিক বৈকল্যে অসাড় হয়ে গিয়েছিল আমাদের তাৎক্ষনিক সময়। আমরা জানি, আমাদের পকেটে গ্রীস তো দূরের কথা, তুরস্ক অবধি পৌঁছানোর মতোও পর্যাপ্ত টাকা নেই। সুতরাং ইরানেই ভাড়ার টাকা আয় করতে হবে আমাদের। যদি কাজ না পাই, যদি ভিক্ষে করতে হয় রাস্তায় রাস্তায়? কী নিশ্চিত জীবন ছিল দেশে! আর এখন কোথায় আমরা?

পরদিন বিকেলে পৌছলাম তেহরানে। আমাদেরকে শহরের কেন্দ্রে নামিয়ে দেয়া হলো। সেখান থেকেই রাতের আবাস খোঁজা শুরু করলাম। ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন শরীর। কাঁধের হালকা বোঝাও তখন ভয়ংকর ভারী। পা টানতে চাইলো না একেবারে। শুধুমাত্র দৃঢ় মনোবলের প্রভাবে এগিয়ে যেতে পারলাম। হঠাৎ একটি বিষয় আবিষ্কার করে খুশী হয়ে উঠলাম আমরা। তেহরানের রাস্তায় সামান্য পরপরই পানির ড্রাম সাজানো। টেপ গলে বেরিয়ে আসে শীতল পানি। কোন পয়সা লাগে না। বুঝলাম, মুহররম স্বরণ করেই রাস্তায় রাস্তায় এই ব্যাবস্থা। আমাদের পথ চলা অনেকটা সহজ হয়ে উঠলো এর কল্যানে। অবশেষে বেশ কম ভাড়ায় একটি হোটেল খুঁজে পেলাম। আমাদের চারজনকে এক ঘরে মাটিতে বিছানা পেতে ঘুমোতে হবে। মাটিতে বিছানা, তাতে কি? আমাদের জন্যে তা রাজপালঙ্ক। রাতে ছাড়পোকার কামড়, মশার ভনভন আওয়াজ আমাদের ঘুমকে ব্যহত করতে না পারলেও মস্তিষ্কের কোটরে হাজারো চিন্তাভাবনা সেটি ঠিকই পারলো।

সাদরুলভাইএর দূরপরিচিত কেউ একজন তেহরানে থাকেন। তাঁর সাহায্য পাবার কথা এবার চিন্তা করতে হলো। বাংলাদেশ দূতাবাসের ধর্ণা দেবার কথা ভাবলাম। এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে যদি পরিচিত হওয়া যায়, তাতে যদি কোন সুযোগ করা যায়, এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার। এসব নিয়ে হাজারো জল্পনা চালালাম চারজন মিলে। পরদিন তেহরানের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটে পৌঁছলাম বাংলাদেশ দূতাবাসে। তাদেরকে আমাদের প্রফেসরের দেয়া চিঠিপত্র দেখালাম। “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমরা। বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছি, আমাদেরকে যেনো বিপদে আপদে সাহায্য করা হয়, ইত্যাদি, ইত্যাদি”। কিন্তু তাঁরা আমাদের কি সাহায্য করবেন! আমাদের দরকার টাকা, যাতে আরো এগিয়ে যেতে পারি। তারা সে টাকার বন্দোবস্ত কিভাবে করবেন? খারাপ ব্যাবহার করেন নি, এটাই যথেষ্ট! সাদরুল ভাইয়ের পরিচিতজনের সাথে শহরের আরেক প্রান্তে হেঁটে দেখা করলাম। তাঁরাও তেমন কোন ভরসা দিতে পারলেন না। এই অনিশ্চয়তার মাঝে দেশ ছেড়ে নিজেদের বিপদের জন্যে নিজেরাই দায়ী, একথাটিই মনে করিয়ে দিলেন বারবার। তারপরও আরো অন্যান্য বাংলাদেশীদের সাথে আমাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন বলে জানালেন। আমরা আবার ফিরে এলাম আমাদের ডেরায়। শহরের রাস্তার পানির ড্রামগুলো ছাড়া কাউকেই আমাদের প্রতি সদয় মনে হলোনা। ইরানীদের কাছে কোন রাস্তার খবর জিজ্ঞেস করতে গেলেও শুনতে হলো, “বুরো বাবা বুরো”। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, “যাও! ভাগো”!

চারজনে মিলে বড় একটা রুটি আমাদের প্রতিবেলার বরাদ্ধ খাবার। সাথে পানি। এর বাইরে অন্যকিছু ভাবা অসম্ভব এক বিলাসিতা। হোটেলের ঘরে একটি কেরোসিনের স্টোভ রাখা। একদিন ডিম আর টমোটো মিলিয়ে রুটির সাথে খাবার জন্যে একটি ঝোল তৈরী করলাম। এই বিলাসিতার জন্যে সঙ্গত কারণেই সাদরুল ভাই এর বিরস সাবধাবানী শুনতে হলো কয়েকবার। একদিন পান্নাকে নিয়ে রুটি কিনতে গেলাম। পান্না রুটির সাথে কিছু আঙ্গুরও কিনলো। আমার অবাক দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে বললো, ”আরে মিয়া খাও খাও! আঙ্গুরের দেশে আসছো, না খেলে চলবে কি করে”! বলেই নিজেই গপ গপ করে খেতে খেতে আমাকেও সাধলো। আমি একটিও মুখে দিতে পারলাম না, শুধু অবাক হয়ে এর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর আঙ্গুর খাবার পর্ব শেষ হবার পর রুটি হাতে ফিরে এলাম ডেরায়। বাকী দু’জনকে এ নিয়ে কিছু বললাম না আর। এখনই বিভেদ সৃষ্টি হলে বাকী পথ কি করে পেরুবো সবাই মিলে? কিন্তু এরপর থেকে পান্নার সাথে রুটি কিনতে আমি আর কখনোই বেরোইনি।

বাংলাদেশ কম্যুনিটির সাহায্য পাবো, বা কোন কাজ, এমনি করেই দু:সহ অপেক্ষার মাঝে কাটলো কয়েকটি দিন। প্রতিদিনই কাজের খোঁজে যাই, আর ইরানীদের মুখে “বুরো বাবা বুরো!” শুনে শুনে মুখ চুন করে ফিরে আসি। একদিন যেনো আকাশের চাঁদ হাতে চলে এলো আমাদের। এক বাংলাদেশী সজ্জন এক কাজের সন্ধান দিলেন। এক সাইকেলের দোকানে দু’জনকে দরকার। স্পোক, চাকা, ফ্রেম থেকে শুরু করে প্রতিটি যণ্ত্রাংশ আলাদা আলাদা রাখা আছে। এসব মিলিয়ে সাইকেল বানাতে হবে আমাদের। পান্না আর আমি গেলাম কাজে। সাইকেল তো দূরের কথা, সারাদিন একটি চাকাও তৈরী করতে পারলাম না। স্পোকগুলো সঠিকভাবে বসানোর যে নিয়ম, সেটি খুঁজে বের করতেই পুরো দিন পেরিয়ে গেল। তারপরও সে চাকা ঠিকমতো ঘুরতে চাইলো না, এদিক সেদিক কান্নি মারে! পরদিন আবার গেলাম। কিন্তু বিকেল অবধিও খুব বেশী উন্নতি করে উঠতে পারলাম না। বিকেলের দিকে দোকানে ফোন বাজলো একটি। দোকানের মালিক ইশারা করে ফোনটি ধরতে বললেন আমাকে। ইংরেজীতে কথা বললেন এক ইরানী ভদ্রলোক। যা বললেন, তার সারাংশ এই দাঁড়ায়। “তোমাদের কাজের যে ধারা, তাতে দোকানের মালিক তোমাদের উপর ভরসা করতে পারছেন না। মালিক নিজে ইংরেজী জানেন না। আমি তার বন্ধু, আমাকে অনুরোধ করেছেন, তোমাদেরকে যেনো এই কথাটি জানিয়ে দিই। তোমরা দু’দিনের বেতন নিয়ে আজই বিদেয় হয়ে যাও!” আমরা সেমতোই ফিরে গেলাম ডেরায়। দোকানের মালিকের উপর সামান্যও রাগ হলোনা। তার কি দোষ! আমাদের মতো অকর্মাদের জন্যে নিজের ক্ষতি কেনোইবা করতে যাবেন ওনি! দু’দিনের বেতনটুকু যে দিয়েছেন, তাতেই কৃতজ্ঞ আমরা! কয়েকদিনের রুটির দাম তো হাতে এলো!

আমাদের আর্থিক ক্ষমতা ধীরে ধীরে শুন্যের কোঠায় নেমে আসতে শুরু করলো। খবর পেলাম, তেহরানের এক বিশাল পার্কে অনেকেই নাকি রাত কাটায়। আমরা তাদের দলেই যোগ দেবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। সুতরাং কোন এক দিন হোটেল ছেড়ে আমাদের সামান্য বোঁচকাবুচকি নিয়ে পার্কেই চলে গেলাম। দিনের সময়টা কোথাও বসে কাটিয়ে রাতে একটি সুবিধামতো জায়গা খুঁজে ঘুমোনোর চেষ্টা করলাম চারজন মিলে। এবার সত্যিই মনে হলো, আসলেই ভুল করেছি এভাবে দেশ ছেড়ে। মনে হলো, নিজের হাতে নিজের জীবনকে ধরে ছুড়ে ফেললাম আস্তাকুড়ে। তারপরও নিজের ভেতরে নিজেদের উপর কোথাও কোন এক বিশ্বাসের রেশ লেগে ছিল। সেটা দূর হলোনা এতো নির্মম সময়ের কবলে পড়েও। কিন্তু রাতের বেলা দুরে শোনা গেলো পুলিশের বাঁশীর আওয়াজ। অনেকেই দৌড়ে পালাতে শুরু করলো। আমরাও তড়িঘড়ি পার্ক ছেড়ে পালিয়ে আবার সেই আগের হোটেলেই ফিরে গেলাম। তবে একটি লাভ হলো আমাদের। কোন এক দৈব কারণের বশেই হয়তো, আমাদের হোটেল ভাড়া কমে গেলো অনেকটা।

এর মাঝে সাদরুল ভাইএর সেই পরিচিত ভদ্রলোক তাঁর বাসায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশাল ভোজের আয়োজন করলেন। আমাদেরকেও ডাকা হলো। কাবুলের বারী ভাইএর আশ্রয় ছাড়ার পর এই প্রথম অনেকদিন পর পেট ভরে খাওয়া হলো আমাদের। খাবার পর আমাদের সমস্যার কথা খুলে বলা হলো। অনেকের সাথে আলাপ হলো। তাদের সহৃদয়তার কথা ভুলিনি আজও। অনেকেই অনেক ধরণের পরামর্শ দিলেন। কেউ কেউ আমাদের সাহসের প্রশংসাও করলেন। দেশ ছাড়ার সময় বাঘের একটি চামড়া কিনে নিয়ে এসেছিলাম। একজন কিনে নিলেন চামড়াটি একশো ডলারের বিনিময়ে। বাড়ী ফেরার আগে সাবার কাছ থেকে মিলে মিশে যোগাড় করা আরো একশো ডলারের একটি নোট আমাদের হাতে তুলে দিলেন সেই সহৃদয় ভদ্রলোক।

এবার ইরান ছেড়ে ইস্তাম্বুলের দিকে রওয়ানা হবার পালা। পরদিন পান্না আর শাজাহান ষ্টেশনে গেলো ট্রেনের টিকিটের খোঁজে। ঘন্টা দু’য়েক পর মুখ চুন করে ফিরে এলো দু’জনে। ইন্টারন্যশনাল স্টুডেন্ট কার্ড ছাড়া ভাড়ায় কোন ছাড় দেয়া হয়না। পুরো ভাড়া দিলে প্রায় শুন্য হাতে পৌঁছাতে হবে ইস্তাম্বুলে। তারপর ওখান থেকে গ্রীস, সে ভাড়া কোথায় পাবো? আবার আরেকটা ধাক্কা! সে কার্ড তেহরানেও করানো যায় ইয়থ হোষ্টেল থেকে, কিন্তু তাতে যে সময় লাগবে, ততদিন হোটেলের ভাড়া গুনেই ফতুর হয়ে যাবো! স্টুডেন্ট কার্ডের মাহাত্য জানা থাকলেও পকেটে পয়সা না থাকাতে এতোদিন তার আবেদনই করতে পারিনি। হঠাৎ আমার প্রফেসরদের দেয়া চিঠিগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। সেগুলো দেখালে কি কাজ হতে পারে? এই দু:খের মাঝেও বাকী সবাই হাসলো আমার কথা শুনে। ছবি লাগানো ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কার্ডের বদলে প্রফেসরদের চিঠি! হাস্যকর তো বটেই! পাত্তাই দিতে চাইলো না কেউ। কিন্তু আমি আমার জেদে অটল হয়ে রইলাম। একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি? হয়না ফিরিয়ে দেবে আবার, এর বাইরে আর কি হতে পারে! আমার জেদে শাজাহান পরদিন সাথে যেতে রাজী হলো।

পরদিন দু’জনে মিলে গেলাম রেলষ্টেশনে। আমিই কাউন্টারে দাঁড়ালাম। টিকিট বিক্রেতা কাগজটি উল্টে পাল্টে দেখলেন কিছুক্ষন। আমার মুখের দিকে তাকালেন একবার। তার বিরস মুখে এবার কিছুটা সহৃয়তার ছায়া দেখলাম যেনো! ঠিকই দেখলাম! এক তৃতীয়াংশ ভাড়ায় ট্রেনের টিকিট কেটে বিজয়ীর মতো ফিরে এলাম হোটেলে। একটিই সমস্যা, তিনদিন পরে রওয়ানা হতে পারবো আমরা। এই তিনদিনের ভাড়াও আমাদের কাছে সহজ নয় একেবারেই। সাদরুল ভাই এর পরিচিত ভদ্রলোকের বাসায় সুখবরটি পৌঁছে দিতে রওয়ানা হলো পান্না আর সাদরুল ভাই। ফিরে এসে জানালো, ভাবী বাকী তিনটি রাত তাদের বাড়ীর ড্রয়িংরুমে কাটানোর সুযোগ দিয়েছেন আমাদের। সেই শেষ তিনটি দিন খুব আরামে কাটলো। ভাবীর হাতের রান্না, সামনে সুদিনের আর সাফল্যের কিছু ঝলক সে আরামের সাথে মিলে মিশে আমাদের চাঙ্গা করে তুললো অনেকখানি। তার রেশ ধরে তিন দিন পরের এক সোনালী সকালে, সোনালী দিনের দিকে চোখ রেখে আমরা ইস্তাম্বুলের ট্রেনে চড়লাম আমরা চারজন।

চলবে ….।

আগের পর্ব:
যাযাবর দিনের গল্প - ঢাকা, দিল্লী, কাবুল
যাযাবর জীবনের গল্প - কাবুলের বারী ভাই


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

অনেকদিন পর পেলাম।

...........................
Every Picture Tells a Story

তীরন্দাজ এর ছবি

হ্যা, গত কয়েকমাস এই লেখার জন্যে সময় করে উঠতে পারিনি একেবারেই। শুভেচ্ছা!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুস্তাফিজ এর ছবি

আরেকটা জিনিষ, সময় সম্পর্কে যদি একটু ধারনা দিতেন, মানে কোন সালের ঘটনা।

...........................
Every Picture Tells a Story

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক, অনেক আগের ঘটানা মুস্তাফিজ ভাই। '৭৭ এর আগষ্ট, সেপ্টেম্বরের কাহিনী। সঠিক দিনক্ষণ বলতে পারবো না বলে উহ্য রেখেছিলাম।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমি সেইসুমায় আম্মার হেডের ভিত্রে আছিলাম। আহ, কি আরাম।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তীরন্দাজ এর ছবি

এইবার বোঝেন! খবর কোথায় লুকানো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আলমগীর এর ছবি

গুরু গুরু

বাউলিয়ানা এর ছবি

তীরু'দা-আপনার এই লেখাটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি..
কেন জানিনা নিজের জীবনের টুকরে টুকরো স্মৃতি চোখের সামনে দেখতে পাই..
পরের পর্ব দয়া করে একটু তাড়াতাড়ি..

তীরন্দাজ এর ছবি

পরের পর্ব তৈরী হচ্ছে। সময়টাই সমস্যা করে ভাই!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

বাউলিয়ানা এর ছবি

তাইলে অসুবিধা নাই..
আপনি সময় নিয়ে বড় করে লিখেন।
হাসি

কীর্তিনাশা এর ছবি

অনেক দিন পরে পেলাম, তীরু'দা হাসি

তবে মুগ্ধতা সেই আগের মতই গুরু গুরু

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তীরন্দাজ এর ছবি

খুব খুশী হলাম আপনার কথায়!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

খুবই হ্রদয় স্পর্শ করা লেখা,
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

দুঃসাহসী পথিককে লাল সালাম।

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ পান্থ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

এনকিদু এর ছবি

তীরন্দাজ ভাই, দয়া করে দয়া করে দয়া করে এত বর বিরতী দিয়েন না ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

তীরন্দাজ এর ছবি

পরের পর্বটি দ্রুতই হবে ভাই! সময় পাইনা বেশী। সেটাই সমস্যা।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দুর্দান্ত, তীরুদা। ভীষণ ভাল লাগে আপনার এই লেখাগুলো। চলুক, অপেক্ষায় থাকলাম...

নিবিড় এর ছবি

অনেকদিন পর এই সিরিজ টা নামালেন তীরুদা।
আপনার গল্প পড়লে মনে হয় আপনার লেখার হাত দারুন কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতা গুলো পড়লে শুধু একটা কথাই মাথায় আসে অসাধারণ।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ নিবিড়। এবার আর লম্বা বিরতি না টেনে শেষ করে ফেলর পন করেছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রণদীপম বসু এর ছবি

দুর্দান্ত হচ্ছে তীরুদা ! আসলে আপনার অভিজ্ঞতাগুলোই মারাত্মক রকমের দুর্দান্ত। তার সাথে লেখাটাও জোশ হচ্ছে ! চমৎকার !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সবুজ বাঘ এর ছবি

আমার আর ভাল্লাগতাছে না। নন, আবার যাত্রা শুরু করি।

তীরন্দাজ এর ছবি

বোচকা বান্দেন! আইসা পড়েন! এখনও সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ি। তবে সে দিনগুলোর কথা আলাদা।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

যাক লেখাটা এগুচ্ছে ধীরে ধীরে সোনালী সমাপ্তির দিকে।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

লেখা হয়তো সোনালী সমাপ্তির দিকেই যাবে। কিনতু জীবন?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

গৌরীশ রায় এর ছবি

মুগ্ধ পাঠক

---------------------------------
জাগরণে যায় বিভাররী

'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তানভীর এর ছবি

ইস... পড়তে পড়তে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, শেষে এসে আমিও সোনালি দিনের ঝলক দেখতে পেলাম চলুক

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার মন্তব্যে খুশী হলাম খুব! অনেক ধন্যবাদ তানভীর!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

খেকশিয়াল এর ছবি

তীরুদা এই সিরিজটা কি বই করার চিন্তা আছে? আর জাহাজী জীবনের বই কবে পাচ্ছি? দেঁতো হাসি

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তীরন্দাজ এর ছবি

এই সিরিজ আর জাহাজী জীবন মিলিয়ে একটা বই আগামী বই মেলায় অবশ্যই পাবেন। ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

জীবন একটু শুকনোরুটি আর পানির মতো না হলে পরিধির ব্যাপ্তী আসে বলে মনেহয় না, লেখাটা পড়ে মনেহলো আরও লেখকদের জীবন একটু প্রচণ্ডই হওয়া উচিত্ ...
আর একদিন লিখবো বাকি কথা .... তবে

খুব বড় জীবন আমাদের তীরুদার ...
খুব ভাললেখা।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

s-s এর ছবি

আপনার এই একটি লেখা পড়ার জন্যই মনে হয় এখানে আসি। শ্রদ্ধেয় তীরন্দাজদা, আপনার এই বর্ণাঢ্য, কখনওবা আপাত: বর্ণহীন জীবনের বৈচিত্র্য আর সংগ্রামের কথাগুলো এত নাড়া দিয়ে যায় কেন জানিনা। বিভূতিভুষণের চাঁদের পাহাড় নাকি পুরনো দিনের ইবনে বতুতার ভ্রমণের কথা বলবো, সব কেমন ভীড় করে আসে এই গল্পগুলো পড়লে। আমি জানিনা আপনার সন্তানাদি আছে কি'না। সত্যজিতের আগন্তুক ছবির সেই মামাটির মতো নইলে আপনাকেও আমাদের বাড়িতে সব ছোটদের গল্প শোনানোর জন্য ডেকে আনতাম। ৭৭ সালের যে সময়টার কথা লিখেছেন সে সময় আমার বাবা মা'র কল্পনাতেও আমি ছিলাম কি'না জানিনা, অথচ লরেন্স অফ আ্যরাবিয়া বা সিন্দবাদের মত নাবিকের গল্প যেগুলো ছোটবেলায় শুনেছি, সেগুলো এত বেশি জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় চোখের সামনে, অকল্পনীয়। আপনার সন্তানেরা বড় ভাগ্যবান, আমাদের বাবা-মা"দের মত রূপকথার ছবির বই নয়, জীবন্ত রূপকথাই তাদের সামনে হেঁটে চলে বেড়ায়। জানতে ইচ্ছে করে তারা কি কেউ অভিযানে যায়?

এই লেখাগুলো আমার খুব প্রিয়, আরেকবার তাই শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম।

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??

তীরন্দাজ এর ছবি

আমার এটি ছেলে আছে। বয়েস সতেরো। বাংলা জানেনা তেমন। এসব গল্প ওকে অনেক বলেছি। ধরেছে, এসব কাহিনী যেনো জার্মান ভাষায় অনুবাদ করি। বাঙলা বইটা বের করার পর অনুবাদে বসবো, ওর জন্যে হলেও।

আরো অন্যান্য ভ্রমন কাহিনী লিখেছি, যেগুলো জীবনে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হবার পর করেছি। কিন্তু সেসময়ের কাহিনীগুলোর আবেদন আমার নিজের কাছেই আলাদা। সে সময় যুদ্ধ ছিল, ভয় ছিল, ছিল অনাগতে জীবনের অজানা পদক্ষেপের শিহরণ। আমি নিজেই সে সময়ের কথা ভেবে বিস্ময়ে বুদ হয়ে থাকি!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

কি ভীষণ ভালো লাগছে পড়তে!
আতর্থীর "মহাস্থবির জাতক" পড়ছিলাম কিছুদিন আগে, মনে পড়ে মুজতবা আলির "দেশেবিদেশে", কী অসাধারণ সব জীবন!

তীরন্দাজ এর ছবি

আমিও তখন ভাবতাম, এখন কষ্টে আছি বটে, তবে একবার এমনি সময় আসবে, যখন পুরোনো সময়ের কথা ভেবে ভালো লাগবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্বপ্নাহত এর ছবি

হিংসা এবং প্রশংসা - দুইটাই রেখে গেলাম ।

---------------------------------

তাও তো ভারী লেজ উঁচিয়ে পুটুশ পাটুশ চাও!

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

তীরন্দাজ এর ছবি

দু'টোর জন্যেই অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আপনার যাত্রাকাহিনী বরাবরই সরল এবং সেই কারণেই ভীষণরকম মনোগ্রাহী।
পরবর্তী পর্বের প্রতীক্ষায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমার কাছে যেটা স্বপ্নের মতো মনে হয়, আপনারা সেটা করে এসেছেন ... আর সাথে পাঠমুগ্ধতা তো আছেই
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দুতিন দিন আগে দেখলেও সুযোগ করতে পারছিলাম না পড়ার
অনেক দিন পরে আবার পড়লাম সেই দুর্দান্ত কাহিনী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।