অণুগল্প: বই, বিবাহ আর বদমানুষ

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: শুক্র, ০৫/০৬/২০০৯ - ৫:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অণুগল্প এক:
চারটি বছর ধরে বইটি নিয়ে ব্যাস্ত সে। সমাজ, অর্থনীতি আর রাষ্ট্রের এই দুর্বিসহ অবস্থায় এমন একটি বই লেখা চাট্টিখানি কথা নয়। সে ভাবে চলছে সমাজ, তাতে এমন কোন কর্ম নেই, এমনকি কর্মের উদাহরণও নেই, যাতে সায় দেয়া যায়। যে গতিতে রাষ্ট্র সর্বনাশের দিকে পা বাড়াচ্ছে, সেখানে এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই, যার পদক্ষেপকে সমর্থন করা যায়। অর্থনীতিতে নীতির কোন বালাই নেই। এই নীতিকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেললেই সবার মঙ্গল হবার কথা। এসব নীতিবিহীন সময়ে প্রতিবাদেই তার এই বই। ব্যাস্ততায় বিয়ের দিনও বারবার পিছিয়ে দিতে হয়েছে। অরন্যাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে সে। বিয়ে করে সুখের এক সংসার পাতবে দুজনে, এটাও ঠিক হয়ে আছে। বারবার পেছানোয় অরন্যা খুব মন খারাপ করলেও বইটি শেষ করার আগে অন্য কোথাও মনযোগ দেবার কথা ভাবতেও পারেনি সে।

চরম প্রতিক্ষিত বইটির কাজ শেষ হলো অবশেষে। সেইসাথে ঠিক হলো অরন্যাকে বিয়ে করার দিনটি। কয়েকজন অতি ঘনিষ্ট বন্ধুবান্ধব নিয়ে কাজীর অফিসে। বিয়ে আর বইয়ের বড়সড় অনুষ্ঠান নাহয় কদিন পর একসাথেই করা যাবে! বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার পর্বে কাজী এবার বললেন,
- আমুকের কন্যা ... অমুককে বিয়ে করতে. . .. বলুন, কবুল!
তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো
- না!
আজকের এই চরম সিদ্ধান্তের ক্ষণে তার মুখে তার বইয়ের নামটিই চলে এলো কেনো, তার কারন কে জানে!

অণুগল্প দুই:
এই আধো অন্ধকারে ছেলেটি আমার পেছনে পেছনে আসছে কেনো! ভাবলেন বৃদ্ধাটি। নি:শ্চয়ই কোন বদমতলব আছে তার। গতকালও নাকি এক ধাক্কায় মাটিতে ফেলে একজনের হাতের ব্যগটি ছিনিয়ে নিয়েছে কেউ! পেছন ফিরে একবার তাকালেন তিনি। এই আধো অন্ধকারেও একটি নিষ্ঠুর অবয়ব স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠলো তাঁর চোখের সামনে। হাতে কি একটা চকচক করতেও দেখা গেলো। নিজের চলার গতি বাড়িয়ে দিয়ে এসে দাঁড়ালেন ঘরের দরজার সামনে। বাজারে থলেটি একপাশে রেখে ব্যাগটি খোঁজা শুরু করলেন।

কোথায় গেলো ব্যাগটি? ব্যাগের ভেতরে চাবি। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এদিক সেদিক হাতড়াতে শুরু করলেন তিনি। নেই, নেই কোথাও নেই ব্যগ। বিস্ফারিত চোখে পেছন দিকে তাকালেন একবার। ছেলেটি আরো কাছাকাছি এগিয়ে আসছে। এবার? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তাঁর। চেঁচাতেও পারলোন না।

এবার একেবারে কাছে এসে দাঁড়ালো ছেলেটি। পালানোর কোন পথ নেই আর!
- এটা কি আপনার ব্যাগ? ঐ রাস্তার কোনে পড়ে ছিল।
বলে পেছন ফিরে দুরের রাস্তার দিকে দেখালো ছেলেটি।
- হ্যা, এটা আমারই!
বললেন বৃদ্ধা। চাবিটি বের করে ছেলেটির অপসৃয়মাণ দেহটির দিকে একবার তাকিয়ে দরজা খুলতে খুলতে নিজেকেই বললেন, আহারে! ভালো ছেলে!


মন্তব্য

সাইফ এর ছবি

তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো
- না!

তীরুদা, আপনি আপনার একমাত্র তুলনা, অবাক হয়ে থাকি পড়ার পরেও অনেকক্ষন।

বিস্ফারিত চোখে পেছন দিকে তাকালেন একবার। ছেলেটি আরো কাছাকাছি এগিয়ে আসছে। এবার? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তাঁর।

কী টানটান উত্তেজনা, আমারও গলা শুকিয়ে গেল এখানে এসে, পালস্ বেড়ে গেল, অথচ কী সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতি দিয়ে না গল্পটা শেষ করলেন

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার ভালোলাগাটুকু খুব সুন্দর করে জানাতে পারেন আপনি। সেজন্যে ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো তীরুদা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেকদিন খবর নাই, কেমন আছেন?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নিবিড় এর ছবি

মোচড় গল্প ভাল লাগল তীরুদা। অনেকদিন পর আবার অণুগল্পের ঝুড়ি বের করেছেন মনে হয়।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

তীরন্দাজ এর ছবি

মাঝে মাঝে হঠাত্ই হয়ে যায়! ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

বন্যরানা এর ছবি

'তীরন্দাজ ফ্যান ক্লাব' হলে আমি এর প্রথম সদস্য হতে চাই।

তীরন্দাজ এর ছবি

আমি সাধারণ মানুষ, আমার কেনো ফ্যান ক্লাব হতে যাবে। আপনার ভালো লেগেছে, তাতেই অনেক আনন্দিত।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সাইফ এর ছবি

সে সম্ভাবনা কম আপনার জন্য, আমি আপনাকে দৌড়ে হারিয়ে প্রথম সদস্য হব, হে হে হে, এযে তীরুদা, কোন বর্ম এ তীর ঠেকাতে অক্ষম

মূলত পাঠক এর ছবি

ভাল্লাগ্লো।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ। দু' সপ্তাহের জন্যে সুইজারল্যানড, ফ্রান্স বেড়াতে যাচ্ছি, ইতালী হয়ে ফিরবো। যদি ভাড়া বাংলোয় ইন্টারনেট থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্লগে আসবো। না হলে এই দু'সপ্তাহ চুপচাপ থাকতে হবে।
ভালো থাকবেন আপনি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তানবীরা এর ছবি

আজকের দ্বিতীয়টা ঠিক ছিল ঃ)

---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

২টাই ভাল্লাগলো তীরুদা।

তীরন্দাজ এর ছবি

খুশী হলাম শুনে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

মূলত চোট, ধাক্কা, প্রচণ্ড!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ শাহীন! ব্যাথা পেলেন নাতো?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

না, পাইনি, সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পার‌ছি না!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহাহা তার মানে কি বই টাকে বিয়ে করে ফেললো? খাইছে

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

খুব ভালো।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

২য়টা বেশি ভাল্লাগলো। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমার কাছেও দ্বিতীয়টা বেশি ভাল লাগল। আরো লিখুন, তীরু'দা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।