অণুগল্প এক:
কোন এক স্বপ্নিল রাতে নাচঘরে রাজকুমারের হাত ধরে নেচে আনন্দে মাতোয়ারা রাজকুমারী। সে রাজকন্যার অনিন্দসুন্দর চেহারা, পোষাকের চমকের পাশাপাশি নাচঘরের হাজারো ঝাড়বাতিও পুরোপুরি ম্লান। রাজকুমারের পাণিপ্রার্থি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন যুবতীদের সাথে এককাতারে দাঁড়িয়ে তার সৎমা ও সৎবোনেরা। পরীর কৃপাধন্য এই রাজকুমারী আজ তাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত। কোন দেশের ভাগ্যবতী এই রাজকন্যা, এ নিয়ে তাদের সাথে জল্পনা কল্পনায় ব্যাস্ত নাচঘরের সবাই।
হঠাৎ দেয়ালে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো রাজকুমারীর। সাড়ে দশটা প্রায়! আর মাত্র দেড়টি ঘন্টা! তারপরই শেষ! এই আনন্দ, এই নাচগান, রাজকুমারের সাথে এই অপার আনন্দসন্ধ্যা, সবই শেষ। আবার ছাইগাদায় সৎমা ও সৎবোনের হাতে নিগৃহীত জীবন! চোখ য়েটে জল এলো রাজকুমারীর। রাজকুমারের হাতটি আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা খুঁজলো সে। রাজকুমারও তার ভালোবাসার সমস্ত আদ্রতা নিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
নাচতে নাচতে আবার ঘড়ির দিকে চোখ গেলো রাজকুমারীর। এগারোটা বাজতে সামান্যই বাকী। আর মাত্র একটি ঘন্টা। টিক্ টিক্ এগিয়ে গেলো ঘড়ির কাটা। হঠাৎ থমকে গেলো রাজকুমার, সে সাথে থেমে গেলো সমস্ত গানবাজনা আর আনন্দের কলরোল। রাজকুমারীর জমকালো পোষাক আবার জীর্ণ ন্যাকড়ায় পরিণত হয়ে গেলো। তার চেহারা মলিন, ছাই লেগে আছে গালে, পায়ের ছেড়া জুতো। চিনতে পেরে কদর্য ক্রুঢ়তা নিয়ে ছুটে এলো তার সৎমা ও সৎবোনেরা। আর রাজকুমার তাকে ছেড়ে থ’ হয়ে দুরে দাঁড়িয়ে।
১৯ শে জুনের এই রাতে ঘড়ির কাটা একঘন্টা এগিয়ে দেবার কাজটুকু সমাধা করতে কেন যে ভুল করলো রাজপ্রাসাদের লোকজন, জানিনা!
অণুগল্প দুই:
সাত আট বছরের ছেলেটি যখন একটি কিশোরী মেয়েকে মা বলে ডাকলো, বেশ অবাক লাগলো আমার। তারপর যখন সে তার প্রায় সমবয়েসী একটি ছেলেকে বাবা বলে ড়াকলো, তখন আমার অবাক ভাবটি বিমূঢ় বিস্ময়ে পরিণত হলো। একসময়ে ছেলেটি আমার ছেলের সাথে খেলতে খেলতে আমার কাছাকাছি চলে এলো, তখন আর জিজ্ঞেস না করে থাকতে পারলাম না।
- তোমার নাম কি? জানতে চাইলাম আমি।
- রূপ! উত্তর দিল ছিলেটি কিছুটা জড়তা নিয়ে।
- তোমার বয়েস?
- সাত।
- ওরা কারা? দূরে বসা দু’জনকে ইশারা করে দেখালাম।
- আমার বাবা আর মা।
যদিও জানি, এতো বেশী কৌতুহল বেশ বাড়াবাড়িই হচ্ছে, তারপরও নিজেকে খামাতে পারলাম না। তাই আবার জিজ্ঞেস করলাম,
- তোমার বাবা-মায়ের বয়েস কতো, জান?
- হ্যা, বাবার বয়েস আট আর মায়ের কুড়ি।
- তোমার বাবা-মায়ের নাম বলবে?
- রহিম বাদশা আর রূপবান কন্যা।
ছেলেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরবো,তাই আর কোন প্রশ্ন করলাম না।
অণুগল্প তিন:
দেশের রাজকুমারীর চুম্বনে একটি ব্যাঙ যখন অনিন্দুসুন্দর রাজপুত্রে পরিণত হলো, হৈ হৈ পরে গেলো সে দেশের যুবতীদের মাঝে। প্রায় প্রত্যেকেই শতশত ব্যাঙ কিনে চুম্বনে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। কেউ বেউ নাকি চুম্বনের পর রাজপুত্রের দেখাও পেয়েছে বলে খবর বেরুলো পত্রিকায়। দেশে তাই ব্যাঙের বড় আকাল ইদানীং।
বাজারে গিয়ে সে খবরটি পেয়ে মন খারাপ হলো আমার। ছেলের বায়োলজী প্র্যাকটিকেলের জন্যে ব্যাঙ দরকার। বাড়ীর কোনাতে, ঝোপঝাড়ে, পুকুরে কোথাও পেলাম না। বাজারে তো একেবারেই লা’পাত্তা। কি করি বলুন তো!
মন্তব্য
অনুগল্পের দ্বারা ছোটবেলার রূপকথাদের ইয়েকরে দমফাটানো হাসি তৈরীর তেব্র নিন্দা মানে জাঝা জানাই!
নিন্দা আর জাঝা, দুটোর জন্যেই ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
সেরাম হইসে... ফাট্টাফাটি...
--------------------------------------------------
একটি কথার দ্বিধাথরথর চূড়ে ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ভালো থাকবেন দুষ্টু!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
কালকের পর আজকেই আবার আপনার তীরের দেখা পাওয়া যেন আমার কাছে আকাশের চাঁদ নয়, পুরা নক্ষত্রমন্ডলী পাওয়ার মত, লেখা পড়ে শেষ করতে না করতেই পরিচিত গন্ডির সবাইকে জিমেইলে গুতাগুতি শুরু করলাম, আপনার লেখা এসেছে এই সুসংবাদ নিয়ে :) ।
প্রথম গল্পে সিন্ডারেলা যেভাবে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে "আলো বাঁচাও পরিকল্পনা" এর হাতে ধরাশায়ী হল =)) , আমার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকলো না, সমস্যা হয়ে দাড়ালো অফিসের চেয়ার টেবিল, বসে বসে তো আর গড়াগড়ি দেয়া যায় না :(
আর ২য় গল্পে আপনি প্রথম গল্পকে টেক্কা দিয়ে সাঁই করে সাইড কেটে ধানি মরিচের মত যা দিলেন, কি বলব, এখনও চোখ টেঁরা হয়ে আছে।
৩নং এর কথা আর কি বলব, এখনও প্রথমটার হাসি থামাইতে পারি নাই, =)) , ৭ লাইনে আপনে যা দিলেন, আমার মুখ দিয়ে মাছি ঢুকে পেটে চলে গেল, এখন একটু পর পর হেঁচকি উঠাচ্ছি আর ওই মাছি ভনভন করেই চলেছে।
আপনে নমস্য ^:)^
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই। হাসাতে হাসাতে না জানি বিপদ ঘটিয়ে ফেলি, এই ভয়েই আছি। হবুচন্দ্রের রাজ্যে আপনার বাস নয় নিশ্চয়ই!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ইয়ে মানে :( ... ... ...
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
দূর্দান্ত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম নজরুল ভাই! ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভালোই! :)
----------------------------------------
শুধু শরীরে জেগে থাকে শরীরঘর
মধ্যবর্তী চরকায় খেয়ালী রোদের হাড়
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
তাই! ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
প্রথমটা তবু কিছুটা শিশুতোষ (!) ছিল। পরের দুইটায় তো এক্কেরে ফাটায়লাইছেন! :) :)
বিশেষ করে শিশুর মুখে এমন সরলভাবে রহিম-রূপবানের উপস্থাপন, আহা! সাধু সাধু।
শেষেরটা গুল্লি হইছে।
টুপি বিয়োজন দিতেই হয় এমন তিন তিনখান অণু পড়ে!
খুব খুশী হইলাম আপনার উচ্ছসিত আনন্দে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বেশ ভালো লেগেছে।
প্রথম গল্পের ব্যাপারে একটা গাণিতিক প্রশ্ন আছে। ডেলাইট সেভিং টাইম তো মানুষের বানানো একটা জিনিস। পরীরা যদি মহাজাগতিক সময় অনুসরণ করে, তাহলে ওই সময় আসলে ১১টাই বাজার কথা। সে হিসেবে পরীর বর আরও এক ঘণ্টা জায়েজ থাকার কথা। বরং রাজপ্রাসাদের কর্মীরা যদি সরকারি আদেশ মেনে ঘড়ি এগিয়ে দিতো, তাহলে সেই ঘড়ির সময়ে রাত বারোটায় রাজকন্যার কোন পরিবর্তন আসতো না। এতে রাজকন্যা বিভ্রান্ত হয়ে ভাবতো যে তার পরীর দেয়া বর চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। সেটা ভেবে সে যদি রাত ১টা পর্যন্ত থাকতো, তাহলেই তার বিপদে পড়ার সম্ভাবনা ছিলো। তাই না? :-D
হয়তো আপনার কথাই ঠিক!
পরী বলে কিছু আছে কি? গানিতিক যুক্তি নিয়ে তেমন ভাবি নি। মজা করাটাই মুখ্য। তবে আপনার গানিতিক বিশ্লেষনেও যথেষ্ট রস লুকোনো। ভাবতে হবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
কইথেকে যে পান আইডিয়া, চলুক।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হঠাত করেই চলে আসলো! মাঝে মাঝে এমন হয়! তারপর সব গায়েব, অন্য কিছু মাথায় আসে তখন!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তিনটেই খুব ভালো লেগেছে। আমারও জানতে ইচ্ছে করছে যে এতসব আইডিয়া পান কোথায়?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
কি জানি! মাঝে মাঝে চলে আসে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বেশি জোস।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আপনাকেও জোস ধন্যবাদ জানাই!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তিনটাই গুল্লি লাগলো, তীরুদা। (দেঁতোহাসি)
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন পারভীন!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আবার, তীরুদা ! (বিব্রত)
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হুম, ভালো লাগলো।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
লেখার বয়স নেই ....!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
- তিন নাম্বারটার সমাধান আছে। পত্রিকা মারফত খবর নিয়ে দেখুন কাছাকাছি কোথাও 'রূপান্তরিত রাজপুত্তুর' আছে কিনা। তারপর এশা'র ওয়াক্তে ব্যাটাকে ধরে আমাদের দেশের পুলিশের হাতে দিয়ে দেন চৌষট্টি ধারায় গেরেফতার দেখিয়ে। ফজরওয়াক্ত হতে হতে দেখবেন ব্যাটা নিজের মুখেই স্বীকার করছে, "আমি আপনেগো পায়ে পড়ি, আমিই ব্যাঙ, আমিই ব্যাঙ। এই দেখেন আমি লাফ দিয়া দেখাই!"
ব্যস, সমাধান হয়ে গেলো পুত্রের ব্যবহারিক ক্লাসের সমস্যা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন