নীল তটভুমি, Cotte d'Azur শব্দটি ফরাসী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে এই অর্থই হয়। ফ্রান্সের দক্ষিন পূব উপকুলের ভুমধ্যসাগরের জলের রং নীল হলেও Cotte d'Azur এর এক আংশে উপকূলের মাটি, পাথর আর পাহাড়ের রং লাল। পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা পথ কখনো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েকশো মিটার উঁচুতে, কখনো সমুদ্রের সাথে একই সমতলে। জেমস বন্ডের কোন এক ছবিতে এখানকারই একট রাস্তায় নায়কের সাথে কোন এক সুন্দরীর গাড়ী রেসের তুমুল উত্তেজনা! বছর দশেক আগে এসেছিলাম এখানে, তারপরও আবারো আসতে মন চাইল। সামনেও হয়তো আবার চাইবে। ভুমধ্যসাগরকে ডানে রেখে পাহাড়ের খাদ, চুড়া আর কোল ঘেসে ঘেসে এগিয়েছে পথ ইটালীর জেনুয়ার দিকে। অনেক ছোট বড় শহর পেরিয়ে যেতে হয়। মাঝে মাঝে যানজটে আটকেও থাকতে হয়। ইচ্ছে হলেই স্থলভূমির আরেকটু গভীরে ঢুকে হাইওয়েতে সাই সাই করে এসব ঝামেলা এড়িয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় পশ্চিমে। সেটা করার লোক আমি নই। নৈস্বর্গিকতার সাথে নিবিড় এই আলাপ জমানোর সুযোগ কখনো ছাড়তে চাই না।
নিস এর বেলাভুমি
শুরুতে সমুদ্রতীর থেকে কিছুটা ভেতরে সরে আসতে হলো আমাদের। তাতে অবশ্য এই এলাকার প্রাদেশিক রাজধানী Arles দেখার সুযোগ হলো। অনেকটা পথ গাড়ী চালানোর পর বিশ্রামেরও দরকার। শহরে ঢুকে অনেক উদ্দেশ্যহীনভাবে কফিশপ খুঁজে খুঁজে একেবারে কেন্দ্রের পুরানো এলাকায় এসে থামলো আমাদের গাড়ী। কপালগুনে ভালো একটি পার্কের জায়গাও পেয়ে গেলাম। খৃষ্টজন্মের আগে রোমানদের হাতেই গড়া এই শহর। পুরোনো এলাকায় রোমান স্থাপত্যের ধ্বংসস্তুপ আর বাড়ীঘরের স্থাপত্যের ধরন সে কথা মনে করিয়ে দেয় বারবার। রোমান সম্রাটদের বিশাল রাজত্বের সাক্ষর ইউরোপের প্রায় প্রতিটি শহরেরই রয়েছে।
বিশাল শহর মার্সাইএর (Marseille) জানজট পেরিয়ে আবার যখন ডানদিকে সমুদ্র দৃশ্যমান, তখন সারাদিনের ক্লান্তিতে অনেকটাই পশ্চিমে হেলে পড়েছে সুর্য। কিছুটা খোঁজাখুজির পর Bandol নামে এক উপশহরের সমুদ্র পারে একটি ক্যাম্পিং প্লেস পছন্দ হয়ে গেলো। তাবুর সামনে বসে ঢেউ এর আওয়াজ (গর্জন নয়) শোনা আমার কাছে সুপ্রসন্ন ভাগ্যের প্রমাণ।
আমাদের ক্যাম্পিং প্লেস
ক্যাম্পিং প্লেস থেকে সামান্য এগিয়ে
ভুমধসাগরের তীরের এই এলাকাটি পৃথিবীর ফিল্ম জগতের সাথে জড়িত রথী মহারথীদের জন্যে বহু বছর ধরে বিশেষ আকর্ষনীয়। এখানে বিভিন্ন ছবির শুটিং হয়, প্রতিবছরই বড়বড় আসর বসে। বিখ্যাত ফরাসী কৌতুকঅভিনেতা লুইস ডে ফুনে এই সাগর পাড়ের সেইন্ট ট্রোপেজকে বিখ্যাত করেছেন তার একটি ছবিতে। একসময় নীল আকাশের নীচে বিশাল সমুদ্রে বিকিনি পরিহিতা সুন্দরীদের কথা উঠলেই সেইন্ট ট্রোপেজের নাম মনে হতো। এক কফিশপে সামান্য থেমে সে শহরটিও পেরিয়ে গেলাম আমরা। বিকিনি সুন্দরীদের দিকে তেমন নজর গেলো না। আগের একটি সপ্তাহ যে সৈকতে কাটিয়েছি, এরপর সেদিকে নজর না পড়ারই কথা!
কোটাজুর এর পাহাড়
সেইন্ট ট্রোপেজকে দশ কিলোমিটার পেছনে ফেলে রেখে পথের পাশে একটি ক্যাম্পিং প্লেসে রাত কাটলো। কাছাকাছিই একটি রেষ্টুরেন্টে ঢুকেও ভেতরের অবস্থা দেখে খেতে মন চাইলো না। সেইন্ট ট্রোপেজেই ফিরে গেলাম খাবার জন্যে। সমুদ্রপারের এক রেষ্টুরেন্টে বেশ রাজকীয় ভাবে রাতের খাবার সারলাম। অ্যাপেটাইজার, সালাদ, ফার্স্ট কোর্স, ষ্টেক ও সবশেষে পুডিং। সে সাথে রেড ওয়াইন আর ঠান্ডা পানি আলাদা আলাদা গ্লাসে। এধরণের রাজকীয় খাবার প্রতিবেলায় খেলে বেড়ানোই বন্ধ করে দিতে হবে! বেশীরভাগ সময়েই কোন স্যান্ডউইচ কিনে কোন এক মনোমত জায়গায় বসে খেয়েও যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছি।
পুরো এই যাত্রাপথে সমসময় একটি দিকে নজর রেখেছি দু’জনে। যতোটা সম্ভব সমুদ্রের তীর ঘেষে রাস্তা খুঁজে বের করে পশ্চিমে এগিয়ে যাওয়া। ইতিমধ্যেই নেভিগেশন আর ম্যাপ হাতড়ে পছন্দের পথ আবিস্কারে আমার বউ খুব পারদর্শী হয়ে পড়েছে। এসব পথ সাধারণত: আঁকাবাঁকা, সরু আর বন্ধুর। আর সেসব পথের দু’পাশেই লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরন্ত ভান্ডার। দুজনের ইচ্ছে আর রুচিবোধ একই রকম হওয়ায় সময় বেশী লাগলেও তাতে কোন সমস্যা দেখলাম না। পরদিন সকালে এই পাহাড়ী পথ কিছুটা পেরুনোর পরই পাহাড় আর মাটির রং লাল হতে শুরু করলো। আমাদের চোখের সামনে সাগর, আকাশ আর লাল পাহাড়ের মিলনমেলায় যে ছবি জেগে উঠলো, তাতে বিস্ময়ে থ’ হয়ে গেলাম। সামান্য পরপরই পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে গাড়ী থামিয়ে ডুবে রইলাম সে ছবির কবোষ্ণ নরম বুকে। আমাদের চলার সাথে সাথে পাল্টে যায় সে ছবি। আমরা চোখ মেলে শুধু দেখে যাই। এমনি এক অসম্ভব লাস্যময়ী বাঁকে পাহাড়ের কোলে একটি ছোট্ট রেষ্টুরেন্ট চোখে পড়লো। পেরিয়ে অনেকটা এগিয়ে যাবার পরও গাড়ী ঘুরিয়ে ফিরে এলাম আবার। এমন জায়গায় বসে এককাপ কফি খাওয়া জীবনের এক পরম প্রাপ্তি হিসেবেই দেখি। সামনের সরু রাস্তাটি পেরিয়েই প্রায় একশো মিটার নীচে ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশি, লাল পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে কোন এক রংএর হোলিখেলায় মেতেছে। সমুদ্রের বুকে অনেক দূরে জাহাজ আর পালতোলা নৌকো কোন পথের পাড়িতে, কে জানে! এই দৃশ্যের সাক্ষী আমরা দৃ’জন। সুখের এই বিরল সময়টিকে আরেকটু বাড়াতে চাইলাম বলেই পাহাড়ের কোলে কাটা সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম নী্চে। সাগরজলে সাঁতরে, শরীরে স্পর্শ করে অনেকটা সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম পথে। আমাদের সামনে তখন কান (Cannes) শহরেরর দালানকোঠা আর বেলাভূমি দূর থেকে হলেও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
লাল পাহাড়, সাগর আর পথ
উপরের পোড়ো বাড়িটি কিনলে কেমন হতো?
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসবের তালিকায় অস্কারের পরেই কানের আসরের স্থান। প্রতিবছরই বিশাল আসর বসে এখানে। বড় বড় অভিনেতাদের পাশাপাশি সুন্দরী ‘গ্ল্যামার গার্ল’ দেরও সময় আসে নিজেদেরকে ও নিজেদের শরীরকে মেলে ধরার। বছর দশেক আগে একবার এসে দেখেছিলাম, কান শহরের ভেতরের চেহারাও সেই গ্ল্যামারকে ধরে রাখায় পারদর্শী। এমনকি এখনো বন্দরে যেসব প্রমোদতরী ভিড়ানো, সেখানেও এই গ্ল্যামারেরই অবাধ রাজত্ব। এসবের মাঝে অনেকটাই অসহায় বোধ করি আমরা দু’জনেই, আর সে কারণেই কিছুটা সময় কানের সৈকতে কাটানোর পর নিস’এর (Nice) আকর্ষনে এগিয়ে গেলাম পশ্চিমে।
ঐতিগহ্যময়ী রমনীয় শহর নিস। কানের মতো অতি ধনীদের ঐশ্বর্যের ভারে আক্রান্ত নয়। একটি পার্কিং হাউজে গাড়ী পার্ক করে বাকী দিন শহর ঘুরেই কাটাবো বলেই সিদ্ধান্ত নিলাম। আলফ্রেড হিচককের ‘To Catch a Thief’ নামে বিখ্যাত ছবিটির মূল কাহিনী এই শহরকে ঘিরেই। শহরকেন্দ্রে বসে এককাপ কাপুচিনো শেষ করে ঘুরে ঘুরে দেখলাম অনেকক্ষণ। তারপর মূল রেলস্টেশনের সামনে গিয়ে এক দোতালা ট্যুরিষ্ট বাসের ছাদে চড়ে ঘুরে রেড়ালাম শহরময়। প্রতিটি আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে থামলো বাস। সারাদিনের জন্যে প্রতিজনের ভাড়া কুড়ি ইউরো। যেখানে খুশী নেমে ঘুরে দেখে আবার পরের বাসে চড়া যায়।
নিস এর শহরকেন্দ্র
নিস: ফুলবাজার, আমাদের ফুলবাড়িয়াতেও ফুল নেই!
গ্রীকদের হাতে গোড়াপত্তন হয় নিসের। পরে রোমানদের হাতে আসে। অবশেষে নানা যুদ্ধবিগ্রহের পর ভৌগলিক অবস্থানের সুবাদে ফরাসীদের হাতে যায়। ভৌগলিক অবস্থানের কারনেই এখানকার তাপমাত্রা ইউরোপের অন্যান্য শহরের তুলনায় বেশী। সেকারণে মধ্যযুগেও ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবারের শীতের সময়ে এখানে অবসর কাটাতে আসতেন। রাশিয়ার জার পরিবারের শীতকালীন বাসস্থান ছিল এখানে। সেভাবেই শহরের বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন দেশের নাম ও স্থাপত্যশিল্প বহন করে নাম নিয়েছে, রাশিয়ান এলাকা, রোমান এলাকা, গ্রীক এলাকা। পুরো শহর আর বন্দরের দর্শনীয় এলাকা ঘুরে বেড়াতে দু’ঘন্টার মতো সময় লাগলো।
মোনাকো যাবার পরিকল্পনা বাদ দিলাম। এখানে অনেকটা কানের মতোই শুধুমাত্র ধনী লোকদের বাস, যা আমাদেরকে বিকর্ষণ করে। ফরাসী ভুমির ভেতরে একটি রাজতান্ত্রিক দেশ মোনাকো। বাসিন্দাদের আয়করের পরিমান ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। তাই নিজেদের দেশের সরকারদের ফাঁকি দিয়ে পশ্চিমের বিভিন্ন মাল্টিমিলিওনিয়ার এখানেই আবাস গড়েছেন । সে সাথে তাল মিলিয়েই বিলাসবহুলভাবে গড়ে উঠেছে এই শহর। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশকেও দ্বিতীয় স্থানে হটিয়েছে মোনাকো।
এবার সাগরকে বিদায় জানাতে হবে। পাহাড় পেরিয়ে উত্তরে মুখ করে ইটালী আর সুইজারল্যান্ড পেরিয়ে জার্মানীতে ফেরাপথ।
চলবে ....।
মন্তব্য
পোড়োবাড়িটা সত্যিই কিনবেন ? তাহলে আমাকে দারোয়ানের পোস্টের জন্য বিবেচনা করার সবিনয় নিবেদন রইল
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
জার্মান আর ফরাসি ভাষা শেখা শুরু করো।
...........................
Every Picture Tells a Story
অবশ্যই করবো।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তীরুদা ভালোই সাতার জানেন দেখা যায়। আসেন সেন্টমার্টিন নিয়া যামুনে।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধুর! ভালো সাতার বলা যায়না একে। কোনরকমে ভেসে থাকি আরকি! জার্মানরা সাতার শেখে সাতার স্কুলে। আমাকে বলে আমি নাকি কুত্তার মতো পানিতে দাপাদাপি করি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বন্ডের সেই ভিলেনের মুভি নাম ছিল 'ওনাটোপ':D
ছবিগুলো বেশ লাগলো। সামনের ছুটিতে দৌড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে
যান, অবশ্যই ভালো লাগবে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তীরুদা, বাড়িটা কিনেই ফেলেন, তারপর একটা মেইল ড্রপ করেন, আমি আসবো ইনোগেশনের জন্য।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
বাড়িটি না যতোটা ভাঙ্গা, আমাদের পকেটের ফুটো তারচেয়ে অনেক বড়! রেষ্টুরেন্টে বসে দেখা যাচ্ছিল বাড়িটি, বউএর সাথে বসে এ নিয়ে আকাশ কুমুম কল্পনা করছিলাম।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বাহ্ ঐসব দ্যাশে কি কেউ পকেটে টাকা রাখে? টাকা নিবেন ব্যাংক থেকে।
কিনে ফেলেন, কিনে ফেলেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
নিসের ছবিগুলো দারুণ লাগলো তীরুদা! ফুলের ছবি আরেকটু কাছ থেকে নিতেন!
ফুলের বাজার বসে সকালে। আমরা যখন গিয়েছি, তখন ফুলের কিছুই ছিলনা, রাস্তার দু'পাশে একটার পর একটা রেষ্টুরেন্ট!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ছবিগুলো দারুণ, আর আপনার অভিজ্ঞতা আর ইতিহাসের বর্ণনা তো আছেই।
ভূমধ্যসাগরের পাড়ের পাহাড় আর বন - এর চাইতে মন ভোলানো প্রাকৃতিক কিছু এখনো দেখিনি নিশ্চিত।
"Life happens while we are busy planning it"
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলাম। ভালো থাকবেন।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আপনার ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে এমন একটা আমেজ থাকে যে ভালো লাগতে বাধ্য। চালাতে থাকুন তীরুদা।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ধন্যবাদ ভুতুম! অবশ্যই চালিয়ে যাবো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
লেখা, ছবি - সবই দুর্দান্ত লাগল, তীরু'দা। চলুক।
নতুন মন্তব্য করুন