জার্মানীর জাতীয় নির্বাচন:
জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ সরগরম হয়ে আছে জার্মানী। এখনো ক্ষমতায় রক্ষণশীল সিডিউ-সিএসউ আর সোস্যাল ডেমোক্রাট এসপিডি। সাপে-নেউলে সম্পর্ক হলেও চারবছর আগে রাজনৈতিক হিসেবনিকেশের মারপ্যাচে বড় কোয়ালিশন করতে বাধ্য হয়েছিল ওরা। এখন আবার ভোটযুদ্ধে পরস্পরের মুখোমুখি। বিভিন্ন মতামত জরিপে মনে হচ্ছে রক্ষনশীলরাই জিতবে এবার। কোয়ালিশন করবে এফডিপির সাথে। অন্ততপক্ষে সর্বশেষ মতামত পরিসংখ্যান সেকথাই বলে। নৌকোয় আরো রয়েছে পরিবেশবাদী গ্রীণ আর বামপন্থী দল। দেখি, কার নৌকো পার্লামেন্টে ভিড়ে!
এখানকার নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের দেশের মতো দেয়ালে চিকা পড়েনা। টিভি, রেডিও বিজ্ঞাপণ আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে কাঠের ফ্রেমে পোষ্টার দিয়েই সারা। রোববার কোন মিটিং মিছিল ছাড়াই নীরবে যে যার ভোট দিতে যায়। সহিংসতার কোনো খবর কথনো শুনেছি বলে মনে পড়েনা। ছ’টার পর ভোটকেন্দ্র বন্ধ হবার পরপরই দু’তিন ঘন্টার মাঝে ফলাফল জেনে যাওয়া যায়।
এদেশের নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে, বাংলাদেশের একটি কথা মনে পড়ে গেলো। নতুন বিদেশী বউ নিয়ে দেশে আসছি বলে আব্বা বাড়ীঘর পরিস্কার আর চুনকাম করিয়ে ধবধবে করে রেখেছেন। এমনকি রাস্তার দিকের দেয়ালও ধবধবে। অথচ সামনে নির্বাচন। আমিও বাড়ী পৌছে সে দেয়ালকে সাদাই রাখতে চাইলাম। এমনকি ভাইবোনদেরও বলে দিলাম, “সাবধান! কেউ চিকা মারলে বাঁধা দিস যেন!”
ভাইরাও মাথা নেড়ে সায় দিল। সামান্য শব্দেই দরজা খুলে বাইরে আসি। কারো সেরকম কোন পরিকল্পনা থাকলেও দেখে আর এগুতে সাহস করে না। গভীর রাতে আওয়াজ শুনে বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম বাইরের বারান্দায়। বাইরের দেয়ালের কাছে কয়েকজনের গলার আওয়াজও শনে “কেরে!” বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। কেউ কোন কথা বলার আগেই উত্তর দিয়ে উঠলো আমার সেজোভাই, “ভাইজান, আমি। অন্য দল উল্টাপাল্টা লেখনের আগে আমিই সৃন্দর কইরা লিখা দিতাছি। ডরাইয়েন না, আমার চিকার নাম আছে”!
আমি আর কি বলবো! ঘরে ঢুকে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
সেপ্টেম্বরের সাতাশে নির্বাচন। গতকাল টিভিতে সিডিউর প্রার্থী ও বর্তমান চ্যান্সেলর আংগেলা মার্কেল ও তাদের সাথে কোয়ালিশন করা এসপিডির ওয়ালটার ষ্টাইনমায়ারের প্রাগ-ইলেকশন বিতর্ক বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনেছে জার্মানরা। ওয়ালটার ষ্টাইনমায়ার বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর। চার বছর একসাথে সরকার চালানোর পর বিতর্কে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়! বিতর্কে নিজেদের চারবছরের অর্জনকে কোন কথায় নস্যাত করলে তার কোপ নিজেদের ঘাড়েই পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেজন্যে দু’জনের পারস্পরিক মোকাবিলায় যে অতিরিক্ত সাবধানতা, ভালো লাগেনি অনেকেরই।
এখানকার রাস্তাকাটাকুটি:
গ্রীস্মের শুরুতেই রাস্তাঘাট কাটাকাটি শুরু হয় এখানে। অনেকটা আমাদের দেশের মতোই অবস্থা। এমনকি একই বছরে এই রাস্তায় একবারের বেশীও কাটাকাটি করতে দেখেছি। অনেক সময় দেখেছি, মেরামতির কাজ চলছে বলে যে রাস্তা বন্ধ, মেরামত শেষের পর সে রাস্তার একই চেহারা। হয়তো সে রাস্তা মেরামতেরও কোন দরকার ছিল না। ঘটনা কি? জানতে চাইলাম এক জার্মান বন্ধুর কাছে।
ও বললো, এটাই স্বাভাবিক। প্রাদেশিক সরকার থেকে প্রতিবছরই একটি বরাদ্ধ থাকে রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্যে। সে বরাদ্ধটুকু খরচ করতেই হয়। বাড়তি খাকলে পরের বছর কমিয়ে দেয়া হবে বরাদ্ধ। সেজন্যেই এই কাটাকাটি। তাতে খরটিও করা হলো, নিজেদের দলীয় লোকদেরকে টেন্ডার দিয়ে খুশীও করা হলো।
কিন্তু ট্রাফিক জ্যামে সাধারণ লোকদের যে ভোগান্তি, তার খবর রাখে কে?
এখানেও দূর্নীতি আছে। তবে সাধারণ তবে আমাদের দেশের মতো মধ্যবিত্ব আর নিম্নবিত্তরা এতে নেই। এখানকার উচ্চবিত্তরাই দুর্নীতিতে বিশেষ পারদর্শী ও এর পাশাপাশি কর ফাঁকি দেয়াতে সিদ্ধহস্ত।
প্রমীলা ফুটবল:
প্রমীলা ইউরোপীয়ান ফুটবলে ইংল্যান্ডকে গো-হারা হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হলো জার্মানী। নতুন কিছু নয় বটে! পঁচানব্বুই সাল থেকে পরপর পাঁচবার সহ সর্বসাকুল্যে সাতবার শিরোপা এদের বরাতেই। তারপরও মেলা হইচই একমাত্র মিডিয়াতেই। ৬-২ গোলো জিতলে কি হবে? বাইরের লোকজন বিষয়টি জানে বলেও মনে হলোনা। মেয়েদের খেলা বলে কথা!
মন্তব্য
আমার কিন্তু মেয়েদের ফুটবল দেখতে ভালোই লাগে তীরুদা।![দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/4.gif)
![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
ফাইনাল ও দেখছিলাম। মজাই লাগছে। বড় দলের গোলশূন্য ড্র দেখার চেয়ে এই রকম গোলবহুল প্রমীলা ফুটবল অনেক ভালো।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
প্রমীলা ইউরোপীয়ান ফুটবল জার্মান দের জন্যই মনে হয়।
...........................
Every Picture Tells a Story
- এই রাস্তাকাটাকাটি অর্থনীতির একটা বড় চলক জার্মানিতে । এইটারে এরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে এরা ।
- germany নামটা বাংলায় হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লেখা উচিত নাকি দীর্ঘ ঈ-কার দিয়ে লেখা উচিত ? আমি লিখি হ্রস্ব ই-কার দিয়ে :-|
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মিউনিখ কথন চলুক। পড়ছি।
জুকটা জুশ![দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/4.gif)
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
নতুন মন্তব্য করুন