তৃতীয় পর্ব
হাড়ভাঙ্গা আর ঘাম-ঝরানো খাটুনি খেটে ঘাস কেটে ঘরে আনে তারা। যতটা ভেবেছিল, তারচেয়ে অনেক বেশী ফসল ঘরে আনতে পারে সবাই মিলে।
মানুষের উপযোগী যন্ত্রপাতি নিয়ে ক্ষেতে কাজ করা পশুদের জন্যে একেবারেই সহজ নয়! তাছাড়া যে সব যন্ত্র নিয়ে পেছনের দু'পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়, তার ব্যবহারও জানা নেই ওদের। কিন্তু শুয়োরেরা এতেটাই বুদ্ধিমান যে, প্রতিটি সমস্যারই সমাধান করল। ঘোড়াদের বেলায় এ কথা সত্য যে, ক্ষেতের প্রতিটি বর্গক্ষেত্রের সাথে পরিচিত তারা। ক্ষেতে লাঙ্গল চালান বা মাটি সমান করার কাজ তারা জোনসের কামলাদের চাইতে অনেক দক্ষতার সাথে করতে সক্ষম। ক্ষেতের কাজে শারীরিক পরিশ্রমে না গিয়ে কাজ পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শের কাজে থাকে শুয়োরেরা। বুদ্ধিমত্তার বিচারে চালকের আসন পাবার যোগ্যতা তো এদেরই! লাঙ্গল আর কাটারি টানে সামনে বক্সার আর তুলসীপাতা, পেছনে "হেট, হেট কমরেড!" করতে করতে শুয়োরেরা। এমনি সময়ে লাগাম ব্যবহার করার কোনো প্রশ্নই আসে না! পেছনে পেছনে কাটা ঘাস জমানো, ঝাড়া ও গোছা বাঁধার কাজে সাহায্য করে প্রতিটি পশু। এমনকি মুরগি আর হাঁসের দলও সারাদিন রোদে পুড়ে ঠোঁটের ডগায় প্রতিটি ঘাসের টুকরো বয়ে আনে। অবশেষে জোনস ও তার কামলাদের চাইতে দুদিন আগেই ক্ষেতের কাজ শেষ করতে সক্ষম হয় তারা। তাছাড়া এত বেশী ফসল এর আগে কখনও ঘরে আনতে পারেনি কেউ। একটি ছোটো টুকরোও পড়ে রইল না। তাদের তীক্ষ্ণ চোখে প্রতিটি ঘাস খুঁজে আনে হাঁস আর মুরগির দল। খামারের কোনো পশু একটি টুকরোও লুকিয়ে মুখে নিলো না।
পুরো গ্রীষ্মকাল ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে খামারের কাজকর্ম চলে। এতটা সুখে পশুরা আগে কখনও ছিলনা। প্রতিবার খাবার মুখে নিতেই, খাবারের যে স্বাদ, যে আনন্দ, তা আগে কখনও ছিলনা। এ খাবার তাদের নিজেদের পরিশ্রমের ফসল, কোনো মানুষের হাতের অবহেলায় ভাগ করে দেয়া বস্তু নয়। এই অযোগ্য, পরগাছার মতো মানুষগুলোকে বিদায় করার পর পশুদের ভাগে খাবার জোটেও আগের চাইতে অনেক বেশি। আর কৃষিকাজে নিজেদের অভিজ্ঞতা কম হলেও অবসরের সময় বেড়েছে। পরে আর কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় ওদের, বিশেষ করে গম কাটার সময়। পুরনো পদ্ধতিতে মাড়াইয়ের কাজ সারতে হয়। গম থেকে তুষ আলাদা করতে হয় ফুঁ দিয়ে কারণ আলাদা করা কোনো যন্ত্র ওদের নেই। তারপরও শুয়োরদের বুদ্ধিমত্তা আর ঘোড়া বক্সারের শারীরিক শক্তির গুনে প্রতিবারই সমস্যার সমাধানও হয়। বিশেষ করে বক্সার সবার সামনে বিস্ময় হয়ে থাকে। জোনসের সময়েও কঠিন পরিশ্রমী ছিল সে। কিন্তু এবার তার কাজের পরিমাণ প্রায় তিনটি ঘোড়ার কাজের সমান। মাঝে মাঝে সে সারাদিনের কাজ একাই তার বলশালী কাঁধে নিয়ে সমাধা করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি যেখানেই শক্ত কোনো কাজ, সেখানেই এগিয়ে যায় সে। তাকে যাতে অন্যদের চাইতে আধ ঘণ্টা আগে জাগিয়ে দেয়া হয়, এ নিয়ে এক মোরগের সাথে চুক্তি করে সে। যেখানেই দরকার, সেখানে প্রতিদিন বাকীদের আগে গিয়ে স্বেচ্ছায় কাজ অনেকটাই এগিয়ে রাখে বক্সার। কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে একটিই কথা তার, "আমি আরও, আরও বেশী খাটব।" যেন খাটুনীর আর জীবনের প্রধান লক্ষ্য।
প্রত্যেকেই নিজের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে। মাটিতে ঠুকরে ঠুকরে পাঁচ ঝুড়ি গম জমিয়ে ফেলে মুরগি আর হাসের দল। চুরি করে খায় না কেউ, খাবারের পরিমাণ নিয়ে কোনো আপত্তিও নেই কারো, কোনো হিংসা, ঝগড়াঝাঁটি বা মারামারিও নেই প্রায়, যা আগে প্রায়ই হতো। কাজে ফাঁকিও দেয়না কেউ, বলা যেতে পারো প্রায় কেউ। মলির সকাল বেলা সময়মত ঘুম থেকে ওঠা পছন্দের নয়, দিনের বেলা কাজের সময় ক্ষুরে পাথর বিঁধেছে, এই অজুহাতে ফাঁকি প্রায়ই দেয় সে। এই প্রশ্নে বিড়ালের ব্যবহারও সবার কাছে অদ্ভুত ঠেকে। একসময় টের পায় সবাই, সেখানে করণীয় কিছু, সেখানে বিড়ালকে আশা করাই বৃথা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেখা যায় না তাকে, কিন্তু কাজের শেষ বা খাবার সময় হলেও উদয় হয় দৈবের মতো। তারপর গড় গড় করতে করতে একান্ত বাধ্যগত প্রাণীর মত সে যে সব অজুহাত দেখায়, তাতে কারোরই কোনো সন্দেহ করার সুযোগ থাকে না। খামারের গাধা, বুড়ো বেনজামিন চরিত্রেও কোনো পরিবর্তন আনে না এই বিপ্লব। জোনসের সময় যেমন ছিল, তার কাজের ধরণ তেমনই থাকে - খুব আস্তে আস্তে, নিতান্তই অনিচ্ছায়! জোনসের বিদায়ে সে আনন্দিত কি না, জানতে চাইলে বলে, "গাধারা দীর্ঘজীবি. কেউ কখনো কোনো মরা গাধা দেখেছ?" তার এই রহস্যময় উত্তরেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় প্রশ্নকর্তাকে।
রোববার সবার ছুটি। নাস্তার সময় অন্যান্য দিনের চাইতে এক ঘণ্টা পরে। নাস্তার পর একটি আনুষ্ঠানিকতা. যা প্রতি সপ্তাহে পালন করায় কোনো ব্যতিক্রম থাকে না। সবার আগে পতাকা তোলা। মিসেস জোনসের আলমারিতে পুরনো একটি সবুজ কাপড় খুঁজে পায় তুষারবল। তাতে একটি শিং ও ক্ষুর একে পতাকা বানায় সে। সবুজ রঙ ইংল্যান্ডের সবুজ শষ্যভূমির প্রতীক, ক্ষুর আর শিং হবে সেই রিপাবলিকের প্রতীক, যা সমস্ত মানবজাতিকে ধ্বংস করার পর তৈরি করা হবে। এই পতাকাই টানানো হয় প্রতি রোববার খামারের খামে। এর পর সমস্ত পশুদের নিয়ে এক সভা বসে সবচাইতে বড় আস্তাবলে। এর নাম দেয়া হয়েছে "সাক্ষাত"। সামনের সপ্তাহের সমস্ত কাজকর্মের পরিকল্পনা হয় এখানেই। নতুন নতুন ধারা আর প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলে। প্রতিবার শুয়োরেরাই পেশ করে এ ধারাগুলো। যদিও বাকী পশুরা ভোট দেয়ার পদ্ধতি শিখেছে, তারপরও নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো ধারা-প্রস্তাব তাদের মাথায় আসে না। তর্কের বেলায় নেপোলিয়ন আর তুষারবল সবার আগে। কিন্তু তাদেরকে কখনোই একমত হতে দেখা যায় না। একজনের যে কোনো প্রস্তাবের বিপক্ষে অবশ্যই আরেকজন। একটি প্রস্তাব, বাগানের পেছন দিকে বৃদ্ধ পশুদের জন্যে একটি জায়গা বরাদ্ধ রাখা। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হবার পরও তুমুল তর্ক হয়। পশুদের শেনীবিভাগ বিচার করে প্রকৃত বার্ধক্যের বয়েস স্থির করা নিয়েই এই বিতর্ক। সাক্ষাতের সমাপ্তি ঘটে "ইংল্যান্ডের পশু" গানটি গেয়ে। বিকেলবেলা সবার বিশ্রামের সময়।
আসবাবপত্র রাখার ঘরে তাদের অফিস সাজিয়েছে শুয়োরেরা। জোনসের ঘর থেকে বই এনে বিকেলবেলা সেখানে পড়াশোনা করে। এইভাবেই কামারের ও কাঠের কাজ ও অন্যান্য দরকারি পদ্ধতি শেখা হয় তাদের। তুষারবল অন্যান্য পশুদের নিয়ে বিভিন্ন পশু-কমিটি গঠন করায় অগ্রগামী। এ নিয়ে তার কোনো ক্লান্তি নেই। মুরগিদের নিয়ে একটি "ডিম-উৎপাদন কমিটি", গরুদের নিয়ে "পরিষ্কার লেজ আন্দোলন" গঠন করে সে। তারপর করে ভেড়াদের নিয়ে "সাদা উল প্রস্তুত সংগ্রাম পরিষদ" ও বন্য পশুদের নিয়ে "বন্যদের সামাজিক শিক্ষা ফোরাম"। শেষ কমিটির মূল উদ্দেশ্য, ইঁদুর ও খরগোসদের সমাজ-যোগ্য করা। এর পাশাপাশি আরও অনেক কমিটি ও পশুদের লেখাপড়ার শেখানোর ব্যবস্থাও করে সে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব কমিটির কাজ ব্যর্থ হয়। বন্য পশুদের সমাজ-যোগ্য করার প্রচেষ্টা প্রায় মুহূর্তের মাঝেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এদের চলাফেরার কোনো পরিবর্তন হয় না ও সদয়ভাবে নিলে মাথায় ওঠে ওরা। বিড়ালটিও "বন্যদের সামাজিক শিক্ষা ফোরাম" এ যোগ দিয়ে কয়েকদিন বেশ কাজকর্ম করে। অথচ ছাদে বসে কয়েকটি চড়ুই পাখিকে বিড়ালের থাবা থেকে নিজেদের রক্ষা করা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়। নিজদেরকে পরস্পরের কমরেড হিসেবে যদিও অভয় দেয় বিড়াল, তারপরও নিরাপদ দূরত্বই বজায় রাখে তারা।
কিন্তু পড়া ও লেখা শেখার কাজটি পুরো সফল হয়। শরত শেষ হতে হতে প্রায় প্রতিটি পশুই মাত্রা-বিভেদে শিক্ষিত হয়ে উঠলো।
শুয়োরেরা পুরোপুরিই লিখতে ও পড়তে শেখে। কুকুরগুলো পড়ায় পারদর্শী হলেও পশুতন্ত্রের সাতটি ধারাতেই পাঠ সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ তাদের। মুরিয়েল নামের ছাগলটি কুকুরদের চাইতে ভালো পড়ে। আবর্জনার স্তূপে একটি পুরনো পত্রিকা থেকে মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় সবাইকে পড়ে শোনাতে তার খুব আনন্দ। বেনজামিন পড়ায় শুয়োরদের মতো দক্ষ হলেও সে ক্ষমতার কোনো ব্যবহার নেই। তার মতনূযায়ী, কিছুই নেই, যা পড়ার যোগ্য। শর্ষে-পাতা সবকটি অক্ষর শিখে ফেললেও কোনো শব্দগঠনে অক্ষম। আর বক্সার ডি এর পর এগুতে পারে না আর। সে তার ক্ষুর দিয়ে মাটিতে "এ বি সি ডি" এঁকে কান খাড়া করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কেশর ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে সমস্ত মনোযোগে পরের অক্ষরটি মনে করার চেষ্টা করায় ব্যর্থ হয় প্রায় প্রতিবারই। "ই এফ জি এইচ" অনেকবারই শিখেছে সে কিন্তু তারপরই "এ বি সি ডি" ভুলে যায় প্রতিবার। সুতরাং প্রথম চারটি অক্ষরেই সে তার বিদ্যা সীমিত করায় স্থির করে মুখস্থ করার উদ্দেশ্যে দিনে দু-তিনবার করে মাটিতে আঁকে। নিজের নাম লিখতে যে কটি অক্ষরের দরকার পরে, তার বাইরে কিছু শিখতে আপত্তি মলির। গাছের ডালপালা জমিয়ে নিজের নাম লিখে ফুলে সাজিয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে ঘুরেফিরে সেদিকেই তাকিয়েই থাকে সে।
বাকী পশুর মাঝে কেউই "এ" র বেশী এগুতে পারে না। পরে দেখা যায়, বোকা পশু, যেমন মুরগি, হাঁস আর ভেড়া সাতটি ধারা মুখস্থ রাখতে অক্ষম। গভীর ভাবনার পর তুষারবল এই সাতটি ধারার সংমিশ্রণ একটি মূল ধারায় সংক্ষিপ্ত করল। সেটি হল, পশুতন্ত্রের মূলনীতি হিসেবে, "চারপেয়েরা ভালো, দুপেয়েরা মন্দ"। এটি আত্মস্থ করার পর প্রতিটি পশুই মানুষের প্রভাব থেকে মুক্ত। দুপেয়ে হিসেবে পাখিরা আপত্তি জানালেও তাদের যুক্তি ভুল প্রমাণ করে তুষারবল।
তুষারবল বলে, "পাখির পাখা চলাফেরা জন্যে, কাউকে প্রভাবিত করার জন্যে নয়। সুতরাং পাখাকে পা হিসেবে ধরাই যুক্তিসঙ্গত। পার্থক্য তৈরি করে হাতদুটো। এই হাত দিয়েই মানুষগুলো তাদের কুকর্ম চালিয়ে যায়।"
পাখিরা তুষারবলের লম্বা বক্তৃতা না বুঝলেও তার যুক্তি মেনে নেয়। বাকীরা, যারা অল্পেই সন্তুষ্ট, সাথে সাথে শ্লোগানটি মুখস্থ করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
"চারপেয়েরা ভালো, দুপেয়েরা মন্দ"
সুতরাং আস্তাবলের পেছনের দেয়ালে যে সাত দফা লেখা ছিল, তারও উপরে আরও বড় অক্ষরে লেখা হল এই শ্লোগান।
একবার মুখস্থ করার পর ভেড়াদের জন্যেও যেন বেদবাক্য হয়ে উঠল শ্লোগানটি। মাঠে চড়ার সময়েও তাদের একই আওয়াজ, "চারপেয়েরা ভালো, দুপেয়েরা মন্দ, চারপেয়েরা ভালো, দুপেয়েরা মন্দ"। ঘনটার পর ঘণ্টা একই কথায় কোনো ক্লান্তি নেই তাদের।
তুষারবলের করা কমিটির দিকে নজর নেই নেপোলিয়নের। তার কথা, প্রাপ্তবয়স্কদের কিছু শেখানোর চাইতে শিশুশিক্ষা অনেক বেশি জরুরী। ঘাস কাটার পর কুকুর জেসি আর তুলসীপাতা কয়েকটি স্বাস্থ্যবান শিশুর জন্ম দেয়। সে নিজ হাতে ওদেরকে শিক্ষিত করে তুলবে, এই বলে বাচ্চাগুলোকে মায়ের কাছ থেকে নিজের কাছে নিয়ে নেয় নেপোলিয়ন। খাবার ঘর থেকে শুধুমাত্র মই বেয়ে ওঠা যায়, এমনি এক ঘরে তাদেরকে আলাদা করে রাখে সে, একসময় বাকি পশুরা ভুলেই যা বাচ্চাগুলোর কথা।
দুধের বালতি কোথায়, এই গোপন কথাও গোপন থাকে না আর। দুধ প্রতিদিন শুয়োরদের খাবারের সাথে মেশানো হয়। বছরের শুরুর দিকের আপেল পাকা শুরু হয়েছে। গাছের নিচে পাকা আপেলে ছেয়ে মাঠের ঘাস। সেগুলো সবার মাঝে সমানভাবে ভাগ করা হবে, এটিই স্বাভাবিক বলে ভাবে পশুরা। কিন্তু একসময় নির্দেশ আসে, সব যেন শুয়োরদের জন্যে আসবাবপত্রের ঘরে জমা হয়। কয়েকজন অনুযোগ জানালেও কোনো ফল হলোনা। এ প্রশ্নে সব শুয়োরেরই একই মত, এমনকি নেপোলিয়ন ও তুষারবলেরও। প্রয়োজনীয় বিবৃতির জন্যে চাপাবাজকে পাঠানো হয়।
সে বলল, "ভেবো না যে, নিজেদের স্বার্থ ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য দুধ খাই আমরা। সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের অনেকেই দুধ ও আপেল পছন্দ করে না। আমার নিজেরও একেবারেই অপছন্দ। একটিমাত্র উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যরক্ষা, এই লক্ষ্য সামনে রেখেই এসব খাই। বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত যে, দুধ আর আপেলে এমন কিছু উপকরণ রয়েছে, যা শুয়োরদের স্বাস্থ্যের জন্যে বিশেষ জরুরী। আমদেরকে মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়। পুরো খামারের পরিচালনা ও দেখাশোনা আমাদের কাঁধে। তোমাদের সবার মঙ্গলের জন্যে দিনরাত নির্ঘুমে কাটাই আমরা। তোমাদের জন্যেই এই দুধ আর আপেল খেতে হয় আমাদের। আমরা যদি আমাদের কর্তব্য পালন না করতে পারি, কি হবে জান? জোনস ফিরে আবার আসবে। সত্যি সত্যিই সে ফিরে আসবে আবার!"
কাতর আবেদন তার চেহারায়। শরীরের পেছনের অংশ একবার ডানদিকে আরেকবার বাঁদিকে। লেজ উপরে তুলে আবার জোর আওয়াজে বলল চাপাবাজ, "জোনস ফিরে আসুক, তোমরা কেউ নিশ্চয়ই চাওনা!"
যে বিষয়ে সব পশুরা পুরোপুরিভাবে একমত, সেটি হল, জোনস যেন কখনোই আর খামারে ফিরে না আসে। তার পরিপ্রেক্ষিতে চাপাবাজের এই বক্তৃতার পর তাদের কিছু আর বলার থাকে না। শুয়োদের স্বাস্থ্যরক্ষা যে কতটা অপরিহার্য, সেটি তখন তাদের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। সুতরাং আর কোনো বিতর্ক ছাড়াই গাছ থেকে পড়া আপেল ও দুধ শুয়োরদের জন্যে নির্ধারিত হয়ে থাকে। এরপর গাছ থেকে পেড়ে নেয়া আপেলও তাদের ভাগে পড়লেও কোনো প্রতিবাদ হলো না।
চলবে………
মন্তব্য
ভাল, লেখা চলুক।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সবগুলো পর্বই পড়েছি, অনেক ভাল লেগেছে। অনুবাদকের প্রতি অনেক শুভেচ্ছা রইল।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই আপনাকে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
পড়তে ভাল লাগছে। চলুক
ধন্যবাদ। শেষ অবধি চলবে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
দেবা ভাই
-----------------------------------------
'দেবা ভাই' এর ব্লগ
চমৎকার!
ধন্যবাদ আপনাকে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আজই ক্লাসে এই বইটি নিয়ে কথা হচ্ছিলো। আপনার এই অনুবাদের কথা বেশ মনে হচ্ছিল।
আসলেই দারুন ভালো মূল বইটি। অবশ্যই আলোচিত হবার যোগ্য।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ আপনাকে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভাই - আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক দিয়ে দেয়া যায় না প্রতিটি লেখার শেষে বা শুরুতে? এখন তো মাত্র পাঁচ পর্ব চলছে, তাই
"লেখকের অন্যান্য লেখা" থেকে আগের পর্বগুলোয় যাওয়া যায়, কিছুদিন পরে কিন্তু তা আর পারবো না।
ধন্যবাদ।
-অয়ন
পরের পর্বগুলোতে লিংক দিয়ে দেবো।সময় পেলে আগের পর্বগুলোও ঠিক করবো। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বইটা অনেক আগে পড়েছিলাম, বাংলাতেই, অনুবাদকের নাম মনে নেই।
আপনার সম্পূর্ণ অনুবাদ সচলে দেয়া হলেই আবার পড়ব সব পর্ব একসাথে
facebook
নতুন মন্তব্য করুন