অণুগল্প ১:
উৎকণ্ঠায় ঘুম হারাম বনের পশুদের। সামনের তিন মাসে যেসব পশুদের সাবাড় করবে, তাদের একটি তালিকা নাকি করেছে সিংহরাজ। কাদের নাম সেই তালিকায়, জানা নেই। অথচ জানা থাকা ভলো হতো সবার জন্যে? মরার আগে মানসিক প্রস্তুতি যাতে আগে থেকেই নেয়া যায়। যাদের নাম নেই, নিশ্চিত আনন্দে বাঁচতে পারে তারা। জানতে চায় অনেকেই। কিন্তু সিংহের সামনাসামনি যাবার সাহস সহজে হয় না কারো।
অবশেষে সাহস করে জেব্রা। দিনের আলো থাকতে থাকতে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে দাঁড়ায় সিংহের ডেরার সামনের বড়ো পাথরটির আড়ালে।
- কি রে, কী চাই?
- আমি কি আপনার লিস্টে আছি মহারাজ?
- আছিস।
উত্তর শুনে আর কিছু না বলে মন বেব্জার করে ফিরে আসে জেব্রা। বউ, ছেলে, মেয়ে, বন্ধুবান্ধব সবার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেয়। তিন রাত পর জেব্রার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়না।
ভয়ে ভয়ে কয়েকটা দিন পার করে পশুরা। কারোরই সিংহের কাছে যাবার সাহস হয় না। কিন্তু অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে শেয়ালনি শেয়ালকে পাঠায় সিংহের কাছে।
- আমি কি লিস্টে আছি মহারাজ?
শেয়ালের চশমাটি ধার করে অনেক সময় নিয়ে তালিকাটি পড়ে সিংহ। একবার পড়া শেষ করে আরেকবার পড়ে। শুকনো মুখে করে অপেক্ষা করে শেয়াল। পড়া শেষ করে চশমাটি ফেরত দিয়ে জানতে চায় সিংহ,
- তুই কি এই বনের ইস্কুলমাস্টার শেয়াল?
- জী, জাঁহাপনা।
- খারাপ খবর! তুইও আমার লিস্টে আছিস।
খারাপ খবরটি শেয়াল এসে শেয়ালনিকে জানায়। শেয়ালনি কেঁদে কেঁদে জানায় বনের বাকী সবাইকে। নতুন ইস্কুল মাস্টারের জন্যে পাশাপাশি জঙ্গল থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। আবেদনপত্র ঘেঁটে একজনকে নিয়োগও দেয়া হয়। নতুন শেয়ালমাষ্টার কাজে যোগ দেবার একদিন আগেই আগের শেয়ালমাষ্টারের ঘাড় মটকায় সিংহ।
নতুন মাষ্টার তার ক্লাস নেয়া শুরু করে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে আজ কার পালা, কাল কার পালা, এসব ভেবেই দিন কাটায় পশুরা। কিন্তু কদিন আর এভাবে এই অনিশ্চয়তার মাঝে কাটানো যায়! অবশেষে গাধা গেল সিংহের কাছে। জেব্রা আর শেয়ালের মাংস মিলিয়ে নতুন এক রেসিপি রান্নায় সিংহীকে পরামর্শ দিতে ব্যস্ত সিংহ। গাধাকে দেখেই গর্জন করে সে।
- অসময় বিরক্ত করতে এসেছিস! কী চাই তোর?
- আমি কি আপনার লিস্টে আছি মহারাজ?
- আছিস।
- তাহলে একটা আর্জি ছিল মহারাজ।
- কী? তাড়াতাড়ি বল!
- নামটা কেটে দেবেন হুজুর?
- নো প্রবলেম! কেটে দিলাম। এখন বাড়ি যা।
বিনাবাক্যে মেনে নেয়ার চাইতে কিছু বলা অনেক ভালো।
অণুগল্প ২:
গাধাকে তৈরি করে ঈশ্বর বললেন, “তোর নাম দেয়া হল গাধা। তুই সকাল থেকে রাত অবধি বড়ো বড়ো বোঝা টানবি, কঠিন পরিশ্রম করবি। ঘাসপাতা খেয়েই বাঁচতে হবে তোকে, তাই বুদ্ধি থাকবে সামান্যই ঘটে। তবে পঞ্চাশ বছর বাঁচবি তুই।“
খাটাখাটুনির কথা শুনে বেশিদিন বাঁচার খায়েস আর রইল না গাধার। ঈশ্বরের দিকে তাই সে তার আর্জি জানালো।
- আয়ু কমিয়ে তিরিশ বছর করা যায় না ঈশ্বর?
- ঠিক আছে, তাই হবে।
গাধার পর কুকুরকে বানালেন ঈশ্বর। বললেন, “তুই হবি মানুষদের সবচাইতে বিশ্বাসী দাস। ওরা যা বলবে, তাই করবি তুই। ওদের সব সম্পত্তি পাহারা দিবি, ওদের ফেলে দেয়া খাবার দাবার খেয়েই বাঁচবি। তোকে পঁচিশ বছর আয়ু দিলাম।”
মানুষ এখনো তৈরিই হয়নি, তাদেরই দাসত্ব সারা জীবন! একেবারেই পছন্দ হল না কুকুরের। তাই কুই কুই করতে করতে ঈশ্বরকে বলল,
- দশ বছরের বেশী বাঁচতে চাই না হুজুর।
কুকুরের আর্জি মেনে নিলেন ঈশ্বর। খুশী মনে লেজ দোলাতে দোলাতে মানুষ প্রভুর খোঁজে বেরিয়ে পড়ল কুকুর।
তারপর বানরকে তৈরি করলেন ঈশ্বর। বললেন, “তুই গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়াবি। নিজের নির্বোধ চরিত্রের কারণে সবাইকে আনন্দ দিবি। এর বাইরে কারো কাজেই আসবি না তুই। তোর আয়ু করলাম কুড়ি বছর।”
নির্বোধ শব্দটি শুনে অসম্মানিত বোধ করল বানর। কুড়ি বছর এই অসম্মানের মাঝে বেঁচে থাকা সহজ মনে হল না। সে বলল,
- আয়ু দশ বছর কমিয়ে দিলে কৃতার্থ হই ঈশ্বর।
- তথাস্তু।
বানরকে জঙ্গলে বিদায় করে মানব বানালেন ঈশ্বর। বললেন, “তোকে সৃষ্টির সবচাইতে বুদ্ধিমান জীব হিসেবে তৈরি করলাম। বুদ্ধি ব্যবহার করে বাকী সমস্ত জীবের উপর রাজত্ব করবি তুই। তোকে কুড়ি বছরের আয়ু দিলাম।
শুনে মানব বলল, “বুদ্ধিমান মানব হয়ে মাত্র কুড়ি বছর বেঁচে থাকা খুবই কম হয়ে যায় ঈশ্বর। গাধার কুড়ি, কুকুরের পনেরো আর বানরের দশটি বছরের আয়ু আমাকে বরাদ্দ করে দিলে খুব আনন্দিত হতাম হুজুর!”
সেভাবেই করলেন ঈশ্বর। মানব কুড়ি বছর মানুষের মতোই বাঁচে। তারপর বিয়ে করে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কুড়ি বছর গাধার খাটুনি। ছেলেমেয়েদের বাবা হয়, পনেরো বছর ধরে কুকুরের মতো সংসার আর সম্পত্তি পাহারা দেয়। তাদেরকে খাইয়ে পড়িয়ে যদি বাড়তি থাকে, সেটি নিজের ভাগ্যে জোটে। একসময় অপ্রয়োজনীয় হয়ে অবসরে যাবার পর দশ বছর ধরে নির্বোধ বানরের মতো সবাইকে খুশী করার চেষ্টা চালায়।
আজ অবধি এই নিয়মই চলছে।
শোনা, পড়া কিছু কথা নিজের রঙে সাজনো
মন্তব্য
রূপকের আড়ালে সত্যি গল্প বেশ উপভোগ্য এবং শিক্ষণীয়। লেখককে অভিনন্দন।
মাহবুব আলী
অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
দুর্দান্ত!! দু'টোই!!
কিছু মনে না করলে কয়েকটা বানানের ব্যাপারে বলতে চাই।
প্রথম লাইনে ঘুম বানানটি ভুল হয়েছে
আনূষ্ঠানিক = আনুষ্ঠানিক
সম্মত্তি = সম্পত্তি
অসন্মান = অসম্মান
ইশ্বর = ঈশ্বর
বরাদ্ধ = বরাদ্দ
ব্যাবহার = ব্যবহার
শেষ প্যারায়
'পাহারা' হবে
এখানে 'মানুষের' হবে।
এছাড়া 'আহব্বান' এর ব্যাপারটা আমি নিশ্চিত না।
ফারাসাত
আপনি যেগুলো বললেন এর বাইরেও আরও কিছু জঘন্য ভুল শোধরাতে হলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
খুব ভালো লাগলো
আসমা খান
অনেক ধন্যবাদ জানাই।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
পড়তে ভালো লাগলো, প্রথম’টা কি একদমই আপনার মৌলিক গল্প? আপনার কাছ থেকে এমন আরও গল্প আরও পড়তে চাই।
দ্বিতীয়টার শেষ লাইনে এসে মজা লাগলো। আসলেই কি এভাবে চলছে?
কিছুটা শোনা, কিছুটা নিজের করে সাজানো। ধন্যবাদ!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
দ্বিতীয় গল্পটা হুমায়ুন আহমেদের একটা নাটকেও ছিল। সেটারো একটা আদি উৎস থাকতে পারে। লেখা আপনার হলেও কাহিনী যেহেতু মৌলিক না, সেটা বলা উচিত ছিলো না?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অবশ্যই উচিত ছিল ও সেটা করে দিলাম। তবে হুমায়ুন আহমেদের নাটকটি আমি পড়িনি। আমাকে একজন একেবারেই অন্যভাবে বলেছে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
দুটো গল্পই ভালো লাগলো। আপনার 'জিলিপি' গল্পটা সেদিন পড়লাম খুব ভালো লেগেছে ।
নিয়মিত আপনার লেখা পড়বার ইচ্ছে থাকলো।
ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
গল্প দুটো ভালো লাগলো। গল্পের শেষে একটা লেসন ছিল। এরকম শিক্ষণীয় গল্প আরও লিখবেন আশা করি।
অমি_বন্যা
চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
এই খানে আছি তীরুদা।
কিন্তু, বিদ্যা শিক্ষা না করিতে আগে করসি বিয়া। বিনা দোষে হইসি গোলাম গাইডের টেকা দিয়া। কারে দোষ দিমু ওস্তাদ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ফোন কইরেন!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
দুটো গল্পই চমৎকার। তবে দ্বিতীয় গল্পটি আগেও পড়েছি কোথাও।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমিও!
আমিও! এটি তো আপনার মৌলিক গল্প নয় কোনভাবেই!
আমি নিজেও কোথাও অন্য ছাদে শুনেছিলাম।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
গল্পদু’টো আসলেই খুব ভালো লাগলো । বিশেষভাবে বলতে গেলে শেষের গল্পটা । শিক্ষণীয় বিষয় আছে,মজাও আছে ।
ধন্যবাদ আপনাকে মজার দু’টো গল্প লেখার জন্য ।
খুব শিক্ষণীয় গল্প দুটো।
দ্বিতীয়টা মনে হয় আগে কোথাও পড়েছি, তবুও আপনার রচনশৈলীতে ভালো লাগলো।
facebook
প্রথম গল্পটা চমৎকার লাগলো। তবে দ্বিতীয় গল্পটি আগেও পড়েছি কোথাও।
দ্বিতীয় গল্পের মানুষটাই তাহলে নির্বোধের মত আমাদের জন্য কিছু ঝামেলা আমদানী করে গেছে!
আব্দুল্লাহ এ.এম.
চমৎকার দুটি গল্প।
দ্বিতীয় গল্পটা আমি ছোটো থেকে শুনছি একটু অন্যভাবে, এটা প্রায় প্রচলিত প্রবাদের মতন আমাদের অঞ্চলে, মানুষের আসল আয়ু ৪০ বছর, কিন্তু মানুষ বেশিদিন বাঁচতে চাইলো, তখন বিধাতা তাকে ৪০ থেকে ৬০ দিলেন গাধার আয়ু, ৬০ থেকে ৮০ দিলেন কুকুরের আয়ু আর ৮০ থেকে ১০০ দিলেন শকুনের আয়ু। বহু লোক ৮০ এর উপরে আর যেতেন না, তার আগেই পরলোকে পালাতেন, শেষের অংশটা ওঁদের আর সইতে হতো না।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হাহাহা
সাহস করে কিছু বলা ভালো। আসলেই।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন