কাদের মোল্লার ফাঁসি কি বন্ধ্যা এক খাসি?

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: সোম, ১৬/১২/২০১৩ - ৯:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় অবশ্যই খুশি হয়েছি। কিন্তু সে খুশি সাথে সাথেই উবে যায়, যখন দেখি কারো ভাই অফিস থেকে ফেরাপথে জামাতের চোরাগোপ্তা হামলার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে। আরও উবে যায়, যখন দেখি, কারো বোন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে শিবিরের তাড়ায় আলি-গলি দৌড়ে বাড়ি ফেরে। ঘরের ভেতরে কোনো মায়ের ভীতসন্ত্রস্ত শুকনো মুখ দেখে আমারও মুখ শুকনো হয়ে যায়। পাশের বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা যখন জামাত-শিবিরের প্রতিহিংসায় বাসের ভেতরে পুড়ে কয়লা হয়ে যান, তখন ফাঁসি-উৎসব পালনের আনন্দে খাসির মাংস তো দুরের কথা, সাধারণ খাবারও গলা দিয়ে নামতে চায় না। হয়তো খুব ভীতু আমি, বিদেশের মাটির এই নিরাপদ জীবনের আবরণে আমার হয়তো আরেকটু সাহসী হওয়া দরকার ছিল। এই আবরণের আড়ালে সাহস করে খাসি না হোক ভেড়ার মাংসও খেয়েও আনন্দ করতে পারতাম। কিন্তু কী করবো, প্রতিবারই আমার মন বারবার দেশের মাটিতে উড়ে গিয়ে সব সাহস ওখানেই বিলিয়ে আসে।

স্বাধীনতার পর থেকেই দুটো রাজনৈতিক দলের কাছে দেউলিয়া হয়ে আছি আমরা। এরা নিজেদের প্রয়োজনে যখন তখন জামাতকে ডাকে। যুদ্ধাপরাধী এই জামাতকে পালিশ মালিশ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পোক্ত করেছে এরাই। এতোটাই পোক্ত করেছে যে, জামাতের সহিংস কর্মকাণ্ডকেও প্রতিরোধ করতে তো পারছেই না, বরং নিজেদের স্বার্থে গায়ে হাত বুলিয়ে আরও বেশি তাতিয়ে দিচ্ছে।।

অথচ আমাদের দেশে এই মুহূর্তে সবচাইতে বেশি দরকার জামাতের বিরুদ্ধে, এই দুই দলের আপোষহীন প্রতিরোধ। প্রতিদিনের পত্রপত্রিকা পড়ে ও বিভিন্ন মানুষের সাথে আলাপ করে যতটুকু জানি, দেশের সাধারণ জনগণের বেশিরভাগই জামাতকে ঘৃণা করে। কাদের মোল্লার ফাঁসির পর জামাতের অপকর্মে তাদের প্রতি জনগণের ঘৃণা আরও বেড়েছে। যদি ফাঁসির সাফল্যের হিসেব করা হয়, তাহলে জনগণের এই চেতনাটুকুই এই সময়ে যুদ্ধাপরাধী বিচারের সবচাইতে বড়ো সাফল্য। জামাত প্রতিহত করার পথে আমাদের দুই রাজনৈতিক দলের জন্যেই এই জনচেতনা পাথেয় হতো পারতো। কিন্তু এরা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে নিজেরাই কামড়াকামড়ি করে জনগণের পছন্দের বদলে ঘৃণাই অর্জন করছে বেশি। সময়মত সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারলে এই অপছন্দই একদিন এতো বেশি শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াবে যে, জামাতকেই সমর্থন করবে দেশের মানুষ। স্বাধীনতা থেকে শুরু করে আজ অবধি এই ধারাতেই নিজেদেরকে শক্তিশালী করেছে জামাত।

১৯৫৭ সালে কনরাড আডেনহাওয়ারের নেতৃত্ব জার্মান রাজনৈতিক দল ৫০.২ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ডয়েচে পার্টির সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করে। চরম ডানপন্থী নাৎসিদের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে তখন দলের স্বার্থের চাইতে এগিয়ে রাখা হয়। ১৯৩১ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট আক্রান্ত করে ব্রিটেনকেও। ১৯৩১ এর নির্বাচনে রক্ষণশীল দল জিতলেও, ১৯৩১ থেকে ১৯৪০ অবধি লেবার, রক্ষণশীল ও ন্যাশনাল লিবারেল দল মিলে সরকার গঠন করে নিজেদের দলীয় স্বার্থকে পেছনে ঠেলে সে অর্থনৈতিক সংকটকে প্রতিহত করার যুদ্ধে। যদি সে ভাবে দেখা হয়, তাহলে আমাদের দেশের এখন সবচাইতে জরুরী ইস্যু জামাতকে প্রতিহত করা। ব্রিটেন ও জার্মানির উদাহরণ খুঁজে অনেক দেশই পাওয়া যাবে, যারা এধরণের ইস্যুর প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে পরস্পরের বিরোধী দল হলেও সম্মিলিত ভাবে কাজ করেছে। আমাদের দেশের দুই প্রধান দল কি কখনোই এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে সমর্থ হবে? আমি বিশ্বাস করি না। অন্য কেউ বিশ্বাস করবে, তা ও মনে হয়না আমার। অথচ এই মুহূর্তে এটিই হতে পারতো সবচাইতে সঠিক পদক্ষেপ। যদি হতো, তাহলে সর্বদলীয় নির্বাচনের পর এক দল বিজয়ী হলেও আরেক দলের সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করতো। দরকার হলে দুবছর পর পর দুই দলই তাদের একজনকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাতো। দুর্বৃত্ত জামাতকে রুখতে হলে এর চাইতে ভালো কোনো পথ থাকতে পারে না। তারপর যুদ্ধবন্দীদের বিচার বা ফাঁসি হোক, জামাতের কিছু বলার সাহস থাকতো না।

এসব উদাহরণ আনলে রাজনীতি বোদ্ধারা বলবেন, কার সাথে কার তুলনা! কোথায় আমাদের গণতন্ত্র আর কোথায় ব্রিটেন, জার্মানের! কিন্তু একটু কাছাকাছিও কি যেতে পারি না আমরা? কিন্তু আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের এজাতীয় কোনো ভাবনা নেই। এদের প্রত্যেকেই নিজদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। যে কোনো ইস্যুতেই এদের কাছে জনগণই একমাত্র সুবিধাজনক জিম্মি। এদের রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের শক্তিতে নয়, পয়সা দিয়ে লালিত নিজেদের ক্যাডারের শক্তিতে। জামাতের হিংস্রতায় কেউ মরুক বা বাঁচুক, এ নিয়ে তাদের কিছু যায় আসে না। এদের কাছে জনগণ ঢাল, তলোয়ার, লাঠি, সড়কি, ক্ষুরের মতো কোনো অস্ত্র। যুদ্ধে কিছু খোয়া গেলেও কিছু যায় আসে না। তাই এমনি এক দেশে, যে দেশের রাজনৈতিক আবহের এই চেহারা, তেমনি এক দেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হলে খুশী হই বটে, তারপরও জানি, এ ফাঁসি খাসীর মতোই বন্ধ্যা।


মন্তব্য

ওয়াইফাই ক্যানসার এর ছবি

এটাই খুব দুঃখের ব্যপার যে জামাত এরকম করছে কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ জামাতকে দায়ী করছেনা। তারা উলটা আওয়ামিলীগকেই দায়ী করে। আমি কালকে একটা সিএনজিতে উঠে সিএনজিওয়ালার সাথে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলাম। সে বলে সব শেখ হাসিনার দোষ। আমি বললাম, জামাত আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে এইটাতে শেখ হাসিনার দোষ কোথায়? সে আমাকে বলে, যারা আগুন দিতেসে তাদের গায়ে কি লেখা আছে তারা জামাত? এইগুলা সব আওয়ামিলীগের কাজ। তার শ্রেণীপেশার লোকজনই জামাত বিএনপির সন্ত্রাসের কাছে সবচাইতে বেশি ভালনারেবল। কিন্তু সে জামাতকে সাপোর্ট দিচ্ছে।

কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়া দরকার ছিল কারণ ওয়ার ক্রিমিনালদের শাস্তি হওয়া দরকার কিন্তু দেশে এতোদিন ধরে এতো অবরোধ মানুষ পোড়ানো ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষতির পরও মানুষের পক্ষপাত জামাত বিএনপির দিকে। ব্যপারটা হতাশাজনক।

হিমু এর ছবি

এই সিএনজিওয়ালাই যে সব সিএনজিওয়ালার মনের কথা বলছে, তা তো না।

তীরন্দাজ এর ছবি

আমার ধারণা মতে সাধারণ মানুষের বেশির ভাগই জামাতের উপর যথেষ্ট বিরক্ত। সেটি যথাযথ কাজে লাগানো যাচ্ছে না, এটাই বড় সমস্যা। আমাদের রাজনীতির ধারাই এর দায় বহন করে।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

স্বাধীনতার পর থেকেই দুটো রাজনৈতিক দলের কাছে দেউলিয়া হয়ে আছি আমরা। এরা নিজেদের প্রয়োজনে যখন তখন জামাতকে ডাকে। যুদ্ধাপরাধী এই জামাতকে পালিশ মালিশ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পোক্ত করেছে এরাই। এতোটাই পোক্ত করেছে যে, জামাতের সহিংস কর্মকাণ্ডকেও প্রতিরোধ করতে তো পারছেই না, বরং নিজেদের স্বার্থে গায়ে হাত বুলিয়ে আরও বেশি তাতিয়ে দিচ্ছে।।

তীরু'দা,
১২ তারিখের পরেও কি এই দুটো দলকে এভাবে সমান করে দেখার আর কোনও সুযোগ আছে?

অথচ আমাদের দেশে এই মুহূর্তে সবচাইতে বেশি দরকার জামাতের বিরুদ্ধে, এই দুই দলের আপোষহীন প্রতিরোধ।

হু, কিন্তু একটি দলের নেত্রী তো জামায়াতের সঙ্গত্যাগের বিরুদ্ধে আপোষহীন! তাহলে?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো।

এ সময়ে সাধারণ মানুষের সামনে কেবল বিএনপি-আওয়ামী লীগ। জামাত সব ঘটনার হোতা হয়েও দৃশ্যের আড়ালে। আজব লাগে। বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার করাটা আমার কাছে মনে হয় লীগের একটা বড় ভুল সীদ্ধান্ত। একেবারেই ব্যাক্তিগত মতামত। বিএনপির নেতা-কর্মী আক্ষরিক অর্থেই নিষ্কৃয়। বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই তারা চালাচ্ছিল বেশ। আর কিছুদিন এভাবে গেলে তারা হাসির খোরাকে পরিণত হতো। আরেকটা কাজ হতে পারতো। তা হলো চাপ প্রয়োগে জামাত থেকে তাকে বিচ্ছন্ন করা। যদিও যথেষ্ট সংশয় থেকে যেত। দ্বিতীয় দফা টানা অবরোধের শেষ দিনই বোঝা গিয়েছিল যে পরেরটি মানুষ চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছে। তারপরও তারা তৃতীয়টি ডাকায় এটা প্রায় নিশ্চিত ছিল এটা সর্বোতভাবে ব্যার্থ হতে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষই বীতশ্রদ্ধ হয়ে তাদের নিজ উদ্যোগে প্রতিহত করতো হয়তো। অন্তত রাস্তা- ঘাটে এমন প্রতিক্রিয়াই ছিল। কিন্তু এর ভিতরেই হঠাৎ করে শো-পিস নেতাদের গ্রেপ্তার করে অন্য অর্থে তাদের কর্মসূচিকেই সফল করা হলো। এর ফলে এই সময়ে বিএনপি আরো বেশি করে জামাত নির্ভর হয়ে পড়লো।

যা হোক এখন অন্য পথ নেই। থাকলেও তা কি জানি না। এখন সরাসরি জামাতকে দমন না করলে এর কোনো সুরাহা সম্ভব না। শুধু দমন না নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। জামাতের ঘাঁটি বা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প কোথায় কোথায় তা সরকারি গোয়েন্দারা জানেন না এটা বিশ্বসযোগ্য নয়। ধরে ধরে খোঁজ নিয়ে এই জায়গাগুলো এবং সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এটা জরুরি। প্রতিপক্ষ বিএনপি না, প্রতিপক্ষ জামাত। এটা না বুঝলে সংকট।

স্বয়ম

তীরন্দাজ এর ছবি

বি এন পির কোনো রকম শুভবুদ্ধি নেই। থাকলে শাহবাগের গণজাগরণের শুরুতে জামাতের অন্ধ পক্ষ নিত না। তখন রাজনীতির ধারাটাই পাল্টে যেত। আর আওয়ামি লিগও সে জাগরনে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে কোনো জায়গা রাখে নি বিএনপির। অথচ এমন জরুরী ও নাজুক একটি ইস্যুতে দল ভারী করা খুব জরুরী ছিল। কিন্তু এদের কাছে ক্ষমতার লড়াইটাই মুখ্য।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

হিমু এর ছবি

ইউটিউবের এক চ্যানেলে বিএনপির নেতাদের কিছু ফোনালাপের অডিও পাওয়া যাচ্ছে। একটু শুনে দেখেন এরা শো-পিস কি না।

তীরন্দাজ এর ছবি

শুনলাম, আরও শুনব। শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ। আওয়ামি নেতাদের এমন কোনো অডিও আছে কি? এরা হয়তো বিরোধী দলে থাকলে এধরণের কথাই বলতো।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তীরন্দাজ এর ছবি

@সাক্ষী সত্যানন্দ

১২ তারিখের পরেও কি এই দুটো দলকে এভাবে সমান করে দেখার আর কোনও সুযোগ আছে?

আপনার কথা ঠিক। এসময়ে দুটো দলকে এভাবে এক করে দেখা ঠিক না। কিন্তু অতীতের ইতিহাস বিবে্চনা করে সামনেও যে এরকম থাকবে, এ ভরসাও আমি পাইনা। টেলিফোন আলাপে হাসিনা খালেদাকে বলেছিলেন, আপনি তো মাইনাস টু চান না। তাহলে আলোচনা আসতে চাইছেন না কেন? এখানে মাইনাস টু ঠেকিয়ে রাখা অর্থাৎ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখাই প্রধান উদ্দেশ্য। তার পরের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরস্পরের বিরোধীতা করা। এই ইস্যুতে দুদলই সমান। দেশের স্বার্থের দিকে নজর না রেখে, বিরোধিতাই যেখানে মূখ্য উদ্দেশ্য, সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি-ফাঁসির মতো এমন একটি জরুরী বিষয়ে দুর্বলতার রোগে ভুগবে বৈকি। আর সে সুযোগটাই নিচ্ছে জামাত। অন্য বিষয়গুলো একপাশে সরিয়ে রেখে বিএনপির সাথে যুদ্ধাপেরাধি ইস্যুতে এক হবার কোনো চেষ্টাই ছিল না আওয়ামি লীগের।

একটি দলের নেত্রী তো জামায়াতের সঙ্গত্যাগের বিরুদ্ধে আপোষহীন! তাহলে?

সত্যি কথা। কিন্তু আপোষহীন হলেও তার চাইতে বেশি আপোষহীন বিএনপির সাথে ঝগড়া করার প্রশ্নে।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

টেলিফোন আলাপে হাসিনা খালেদাকে বলেছিলেন, আপনি তো মাইনাস টু চান না। তাহলে আলোচনা আসতে চাইছেন না কেন? এখানে মাইনাস টু ঠেকিয়ে রাখা অর্থাৎ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখাই প্রধান উদ্দেশ্য। তার পরের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরস্পরের বিরোধীতা করা।

অতিসরলীকরণ মনে হচ্ছে ইয়ে, মানে...

অন্য বিষয়গুলো একপাশে সরিয়ে রেখে বিএনপির সাথে যুদ্ধাপেরাধি ইস্যুতে এক হবার কোনো চেষ্টাই ছিল না আওয়ামি লীগের।

জামাতকে কোল থেকে ফেলে না দেয়া পর্যন্ত এক হবার সুযোগ আসছে কোথায়? তারপরেও বিয়েনপিকে তো বার বার ডাকাই হয়েছে। তারা "জামাত ছাড়ব না" এই গোঁ ধরে বসে থাকলেও কি দোষ আ'লীগের?? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তীরন্দাজ এর ছবি

অতিসরলীকরণ মনে হচ্ছে ইয়ে, মানে...

হতে পারে। আমি সোজা মানুষ। সরল কথাকে সরল ভাবেই দেখি।

জামাতকে কোল থেকে ফেলে না দেয়া পর্যন্ত এক হবার সুযোগ আসছে কোথায়? তারপরেও বিয়েনপিকে তো বার বার ডাকাই হয়েছে। তারা "জামাত ছাড়ব না" এই গোঁ ধরে বসে থাকলেও কি দোষ আ'লীগের

আমার সহজ সরল ধারণা, নির্বাচন পদ্ধতির প্রশ্নে একটু ছাড় দিতে রাজি হলে বিয়েনপি নিজের স্বার্থের কারণেই জামাত থেকে সামান্য হলেও দূরত্বে যেত। আমি বলছি না, আলিগের কাঁধে কাধ লাগিয়ে কাজ করতো এরা। সেটি যে ওদের কাছে আশা করা যায়না, সেটি আমারও জানা। কিন্তু পরিস্থিতি এতোটা চরমে যেত না হয়তো। আমি অনেক বিএনপি সমর্থককেও দেখেছি, শাহবাগের গনজাগরণের সাথে কাদের মোল্লার ফাসির প্রশ্নে একাত্ব হতে। কিন্তু নির্বচন প্রদ্ধতির ঝগড়ায় তারা দলের পক্ষে গিয়ে পরে এই একাত্মতাও বিসর্জন দিয়েছে। আমরা তাদেরকে আমাদের পক্ষে রাখতে পারিনি, এটা আমাদেরই পরাজয়। জামাতের বিরুদ্ধে কিছু করতে গিয়ে এই দূর্বল সমর্থকদের দরকার ছিল।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমি অনেক বিএনপি সমর্থককেও দেখেছি, শাহবাগের গনজাগরণের সাথে কাদের মোল্লার ফাসির প্রশ্নে একাত্ব হতে। কিন্তু নির্বচন প্রদ্ধতির ঝগড়ায় তারা দলের পক্ষে গিয়ে পরে এই একাত্মতাও বিসর্জন দিয়েছে।

হাইকমান্ড থেকে কখনই একাত্ম হবার পারমিশন এসেছে মনে পড়ে না, তীরু'দা। তাই,

আমরা তাদেরকে আমাদের পক্ষে রাখতে পারিনি, এটা আমাদেরই পরাজয়

এটার সাথে পুরো একমত নই

জামাতের বিরুদ্ধে কিছু করতে গিয়ে এই দূর্বল সমর্থকদের দরকার ছিল।

এটার সঙ্গে একমত

জানিনা, হয়তো কিছু মিস করে যাচ্ছি... সময়ই বলে দেবে...
কিন্তু, তখন সময় থাকবে কিনা কে জানে? মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তীরন্দাজ এর ছবি

পরিস্থিতি এতোই ঘোলাটে যে, একমত না হবারই কথা। তারপরও আমরা কী চাই, আমরা জানি। আমার চাওয়া আর আপনার চাওয়ার মাঝে বিশাল ফারক নেই, সেটিও জানা। আমার যা মনে হয়েছে, তা অকপটে বলেছি আর সেটাই একমাত্র পাওয়া। তারপরও আপনার মতোই বলছি,

জানিনা, হয়তো কিছু মিস করে যাচ্ছি... সময়ই বলে দেবে...
কিন্তু, তখন সময় থাকবে কিনা কে জানে? মন খারাপ

ভালো থাকবেন সাক্ষী সত্যানন্দ

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পরিস্থিতি এতোই ঘোলাটে যে, একমত না হবারই কথা। তারপরও আমরা কী চাই, আমরা জানি। আমার চাওয়া আর আপনার চাওয়ার মাঝে বিশাল ফারক নেই, সেটিও জানা।

চলুক

আপনিও ভাল থাকুন, তীরুদা

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এনালিস্ট এর ছবি

আরও একটা পক্ষ কিন্তু এই মুহুর্তে সরকারকে দায়ী করছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, দেশের নাগরিকের জীবন-জীবিকা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও সরকারের যে দায়িত্ব সরকার পালন করছে না। সরকার কেন কঠোর হাতে দমন করছে না এদের? বিম্পি-জামাত যখন যা খুশি তাই করছে, মানুষ মারছে আর সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা বিরাট বিরাট লেকচার ঝাড়ছে কিন্তু এদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সাধারণের প্রাণ কেঁপে যাচ্ছে, কিন্তু এদের আত্মা খাঁচাছাড়া করার কোন ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না।

তীরন্দাজ এর ছবি

মনে হয়না, সরকারের একা এই ক্ষমতা আছে, জামাতের চোরাগোপ্তা আক্রমণকে প্রতিহত করার। যাদেরকে নিয়ে প্রতিহত করার কথা, তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রেও জামাতি প্রভাব আছে। আর দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে আর কিছুকে দেখা আমাদের রাজনৈতিক কালচারে নেই, এই সত্য তো প্রতিবারই মেনে নিতে হয়।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

রাজনৈতিক সংষ্কৃতি গড়ে উঠেনি, পরস্পর বিরোধী মনোভাবই যেন রাজনীতি। অভিষ্ট লক্ষ্য ক্ষমতাই একমাত্র। দেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে চায়। এর বাইরের কোন কিছু সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, সে যে সরকারই হোক, এটাই শুধু দেখছে তারা। সাধারণ মানুষ কারও পক্ষপাতিত্ব করছে না। এটা হলো নাগরিক স্বভাব ?

সত্যি সময় এসেছে, জামাতের মতো অপশক্তিকে প্রতিহত করতে, দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠার --
লেখা টি ভাবনার জন্ম দিয়েছে অনেক, বলেই মনে করছি, ধন্যবাদ, তীরু দা ।।

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন‌্যবাদ শাহীন! দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠার আশা এখনও অনেক অনেক দুর।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

প্রান্তিক রহমান এর ছবি

আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি র একসাথে কাজ করা অসম্ভব। শেখ হাসিনা, চার নেতার ছেলে মেয়ে, তোফায়েল প্রভৃতি যতদিন না আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডে থাকবে ততদিন বিএনপির সাথে একসাথে বসা এবং কাজ করা অসম্ভব। লেখক ইউরোপের চমৎকার কিছু উদাহরন দিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল জাতির পিতা প্লাস বর্ষীয়ান চার নেতা প্লাস ২০০১ এর পরে প্লাস ২০০৪ এর ২১ শে আগস্ট এর মত ঘটনা ঘটানোর পরে প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছেন সেই ব্যাপারে তথ্য জানতে চাই। আর যদি আওয়ামী লিগকে বলেন যে এইগুলো ভুলে সামনে এগিয়ে বিএনপির সাথে কাজ করতে তাহলে মনে হয় জামাতকেও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না, কারন বাশেরকেল্লা প্রতিদিন ৭১ ভুলে সামনে তাকানোর কথা বলে।তবে গোলাম ময়লা রনির মত পাব্লিক যেইদিন লীগের নেতৃত্বে আসবেন সেইদিন আপনি আশা করতে পারেন লীগ বিএনপির সাথে একসাথে কাজ করা আরম্ভ করবে শুধু তাই নয় হয়তোবা জামাত শিবিরের সাথেও দেখা যাবে জোট করে ফেলবে। সুতরাং অপেক্ষায় থাকুন।

তীরন্দাজ এর ছবি

উদাহরণ দেখার অর্থ এই নয় যে, উদাহরণ কে অনুকরণ করতে হবে। কিন্তু এ থেকে শিক্ষা নেয়া যায়। আওয়ামি লীগ যদি নুন্যতম সততা নিয়ে দেশ শাসন করতো, তাহলে যুদ্ধাপরাধী কেন, যে কোনো ইস্যুতেই তাদেরকে প্রতিপক্ষের সাথে হাত মেলানোর দরকার পড়তো না। বাঁশেরকেল্লা প্রতিদিন ৭১ ভুলে সামনে তাকানোর কথা বললেও, কখনোই তারা তাদের ৭১এর অপরাধ স্বীকার করে নি।

এক সাথে কাজ করার অর্থ, সার্বক্ষনিক একসাথের রাজনৈতিক পথচলা হয়, বরং বড় কোনো দেশে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুকে সামনে রেখে যথাসম্ভব সমঝোতায় আসা।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

অপশক্তিকে দমন করতে হলে শুভশক্তিকে এক হতে হবে। শুভ শক্তি মানে সব শুভ শক্তি। আম্লীগে যেমন আছে, তেমনি বিম্পিতেও আছে। উর্ধতলায় হয়তো নেই, কিন্তু যেখানে আছে সেখান থেকেই শুভ শক্তিকে নিয়ে আসতে হবে - ক্ষমতার লোভে বিরোধের জন্য বিরোধ করলে আখেরে লাভ হবে রক্তলোভী হায়েনাগুলোরই।

____________________________

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ক্যাডার পাওয়ারড জামাত-শিবির সুশৃংখল, শক্তিশালী এবং হিংস্র একটা দল। এই দলকে ভয় করে সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ পর্যন্ত সবাই। ওরা ভাবে এটাই তাদের শক্তি। কিন্তু আসলে এটাই জামাত-শিবিরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। ভয় হলো জনপ্রিয়তার বিপরীত শব্দ। ভয় দেখিয়ে আর যাই হোক রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখা যায় না। জামাত জানে আগামী ১০০ বছরেও বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এটা জেনেই তারা ভর করেছে বিএনপির ঘাড়ে। বিএনপির জন্য এটা বিপদ হলেও তারা এখনো জামাতকে নিয়ে আনন্দে আছে, তুষ্টিতে আছে। তারা বুঝতে পারছে না সঙ্গমের নামে তাদেরকে আসলে ধর্ষণ করে যাচ্ছে জামাত। বিএনপির পেট থেকে এখন যেসব সন্তান জন্ম নেবে তাদের সবাই জামাতের জারজ।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তীরন্দাজ এর ছবি

জামাত ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এটা ঠিক। তবে আমাদের মাটিতে আরেকটা ফাকিস্তান হবে কী না, সে ভয় ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।

আওয়ামি বিএনপির চরিত্রগত একটিই তফাত, আওয়ামি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণে মক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি। বিএনপির এই প্রশ্নে পরম সুবিধাবাদি। এই একটাই মাত্র তফাত। কিন্তু রাষ্ট্রশাসনের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজেদের আখের গোছানোর প্রশ্নে এরা পুরোপুরি এক। আর এই তফাতের কারনে যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রশ্নে আওয়ামি লিগকে সমর্থন দেয়া যায়, সেটি তারা পেয়েছে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জামাতকে মোকাবিলার প্রশ্নে আওয়ামি বা বিএনপি, একা কারো উপরই ভরসা করা যায় না।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।