হৃদয়পাত্র উচ্ছ্বলিয়া

নিঘাত তিথি এর ছবি
লিখেছেন নিঘাত তিথি (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৭/২০০৭ - ১১:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটানা বেজে চলা টেলিফোনটা ধরতে ইচ্ছা করছেনা কেন জানি। অলস সময়টা রোজকার মত আজ একঘেয়েও মনে হচ্ছে না, বরং সব বাদ দিয়ে অলসতাটাকেই আঁকড়ে বসে থাকতে ভালো লাগছে যেন। টেলিফোনের ওপাশে মেয়েটা নিশ্চয়ই চিন্তায় অধীর হচ্ছে, তা হোক না একদিন--রোজ সেই একই নিয়ম, অফিসে বসে দুপুরের খাবারের ফাঁকে মায়ের খোঁজ--আজ নাহয় সে একটু চিন্তায় পড়ুক।

আজ দিনটার শুরুই যে অন্য রকম, আজ ভাঙুক সব নিয়ম।

বারান্দার ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে আজ বহুদিন পরে বিকালটাকে বড় সুন্দর মনে হলো আমার। বিকালের নরম হলুদ আলো বুঝি সত্যি এত সুন্দর হয়! কতদিন আমি দেখিনি, কতদিন চোখ বুঝে ছিলাম, কত বছর?

পাশে রাখা সাদা খামটার দিকে চোখ পড়ে আবার। আজই সকালের ডাকে হাতে এলো। প্রাপকের নাম বরুণা। চমকে উঠেছিলাম, এই নামে আমাকে কেউ ডাকে না আজ কত বছর!

...তারপর...তীব্র আবেগে সংবরনহীন জলোচ্ছ্বাস। না, আজ আর কোন খেদ নেই, কোন অভিযোগ নেই আমার জীবনের কাছে। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে কি অপূর্ব উপহার, কি শান্তি! পূর্ণতা।

আজ সেই চিঠি এলো, যার প্রতিক্ষায় দিন গুনেছি আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে। যে কথার শুণ্যতায় এত বছরের পূর্ণ সংসারে সব থেকেও কিসের এক অপূর্ণতা ঘিরে ছিলো আমাকে--আজ তা-ই রঙীণ ঘুড়ির মত উড়ে উড়ে আমার দরজায় আটকা পড়েছে...আর কি চাইবার থাকলো আমার জীবনের কাছে?

"বরুণা,
খুব চমকে গেছো বুঝি আজ এতদিন পরে আমার চিঠি পেয়ে! অথবা উলটোটাও হতে পারে, হয়তো বিরক্ত, কিছুটা বিব্রত। কিন্তু এতটা বয়সে, এত দিন পরে তোমাকে লিখতে গিয়ে আমার কিন্তু চমক, বিরক্তি বা বিব্রতবোধ--এর একটাও হচ্ছে না।

দেশে গিয়েছিলাম গত বছর, কি আশ্চর্য অঞ্জনের মৃত্যুর খবর আমি সেবার মাত্র পেলাম জানো? তখনই তোমাকে লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কি এক অস্বস্তি, যা এতগুলো বছরে তোমার থেকে আমাকে দূরে রেখেছিলো -- আবারো আমাকে আটকে দিলো। থাক সে কথা। তোমার মেয়ে কেমন আছে? অনেক বড় হয়েছে নিশ্চয়ই? তোমার মত মুখ আর অঞ্জনের মাথা পেয়েছে শুনলাম নীলার কাছে।

আমার ছেলেমেয়ে দুটোও খুব ভালো, আমার মত নয়, নীলারই মত- ভাগ্যিস, আমার মত হলে নীলাকে একসাথে তিনটা পাগল সামলাতে হোত!

বরুণা, আজকাল শরীর ভালো থাকে না জানো? বয়স ধরে ফেললো বুঝি আমাকেও। সব সময়ের হাসিখুশি থাকা এই আমি মাঝে মাঝেই বড্ড আনমনা হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাই। অতীত মনে পড়ে কেবল। মনে পড়ে দেশের কথা, আমার মফস্বলের শান্তিমাখা কৈশোর, প্রথম যৌবনের ইউনিভার্সিটি জীবন, প্রথম চাকরী স-ব। আর মনে পড়ে খুব ছোট্ট একটা সময়ে বিদ্যুতের মত আমার জীবন ঝলকে দেয়া তোমার কথা! বয়স বাড়লে বুঝি এমনই হয়? যা কিছু চলে গেছে তার কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে কেবল বারবার? তোমারও কি তাই হয় বরুণা?!

কত কিছু বলছি কেবল, থাক আজ। তুমি ভালো থেকো, ঠিক তোমার নিজের মত করে।

ইতি,
অরুনাভ।

পুনশ্চ: কেন আমি এমন হয়েছি বল তো? যে কথা বলব বলে আজ এত দিন পরে তোমাকে লিখতে বসেছি, এখনও তাই বলা হলো না! বরুণা, সেদিন তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম জানি। কিন্তু আজ জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিয়ে যে কথা বলা অর্থহীন, তাই খুব বলতে ইচ্ছা করছে... বরুণা--তুমি জানো না, আমিই জানতে দিই নি, আজ বলছি, তোমাকে আমি ভালোবেসেছিলাম।

-------------------------------------------------------
এই অনুগল্পটা লিখে ফেলার পেছনে অনুপ্রেরণা গী দ্য মোঁপাসার। সামহোয়ারের পুরনো লেখা। মাথা আপাতত খালি, তাই পুরনো চাল ভাতে বাড়ানোর চেষ্টা।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুব, খুব ভাল লাগলো পড়ে।

দ্রোহী এর ছবি

পূর্বেই পড়িয়াছিলাম...
ওহে, চাল কি বাড়ন্ত? তোমরা দুজনে মিলিয়া পুরানো চালে ভাত রান্না করা শুরু করিলে কি বুঝিয়া?


কি মাঝি? ডরাইলা?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হাততালি
_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'

তারেক এর ছবি

দারুন।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আগে পড়া হয়নি। দারুন লাগল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নিঘাত তিথি এর ছবি

ইশতিয়াক রউফ, তারেক, মুর্শেদ ভাই,
ধন্যবাদ অনেক। ভালো হয়েছে আগে পড়েন নি। হাসি

দ্রোহী ভাই,
চালের মতিগতি এখনও বুঝে উঠতে পারি নি তেমন! পূর্বপাঠের পরে আবারও পড়িয়াছেন, এই আনন্দ আমি রাখি কোথায়? কৃতজ্ঞতা। দুইজন মানে? আর কাহার কথা বলিতেছেন, আমি কি তাহাকে চিনি? গড়াগড়ি দিয়া হাসি

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

নজমুল আলবাব এর ছবি

যাক মাথা খালি, তাই এইটা দিলেন, তাই আমার পড়া হল। এবং ভালো লাগলো...

নিঘাত তিথি এর ছবি

শিমুল, আলবাব ভাই,
শুকরিয়া হাসি

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

অপালা এর ছবি

আবার পড়লাম

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পল্লাম
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

দ্রোহী এর ছবি

দ্রোহী ভাই,
চালের মতিগতি এখনও বুঝে উঠতে পারি নি তেমন! পূর্বপাঠের পরে আবারও পড়িয়াছেন, এই আনন্দ আমি রাখি কোথায়? কৃতজ্ঞতা। দুইজন মানে? আর কাহার কথা বলিতেছেন, আমি কি তাহাকে চিনি?
--তিথি

আমি আর কাহার কথা কহিবো? তোমার সারা জগৎ জুড়িয়া একজনইতো আছে!


কি মাঝি? ডরাইলা?

মাশীদ এর ছবি

আগে কেন বাদ পড়েছিল জানিনা।
এখানে পোস্ট করে ভাল করেছিস।
ভাল লাগল খুব।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

নিঘাত তিথি এর ছবি

মাশীদ আপু, সুমন বদ্দা,
আগে অনেকেই এটা পড়ে নি, জানি আমি। এবার যে পড়া হলো, ভালো লাগলো- জেনে আমারও ভালো লাগলো। থ্যাঙ্কু।

অপালা,
আগেও পড়েছিলেন? আপনি কি সামহোয়ারে ছিলেন? চিনি আপনাকে?

দ্রোহী ভাই,
হি হি। কইসে আপনারে!

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

বন্দনা এর ছবি

অসাধারন একটা লিখা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।