হুমায়ূন আহমেদ হুমায়ূন আহমেদ হুমায়ূন আহমেদ। উফফ। জন্মে, একটু বুদ্ধি হবার পর থেকেই এই ভদ্রলোকের নাম শুনছি শুধু চারপাশ থেকে। কারন কি? তিনি একজন লেখক। পাঠকরা তার লেখা খুব পছন্দ করে, তাই তিনি দুর্ভাগ্যবশত জনপ্রিয় লেখকে পরিণত হয়েছেন। খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার তার ভক্ত আছে, সমালোচকও আছে। কেউ ভক্তির ঠেলায় হিমু সাজে, আর কেউ তাকে সস্তা লেখক বলে।
ছোটবেলা, কিশোরবেলা পার হয়ে এসেছি অনেক আগেই। তারুণ্যের মাঝামাঝি আছি এখন। এখনও দেখি সেই একই। এত থাকতে এই বেচারা হুমায়ূন আহমেদকেই কেন টার্গেট করা হয়? সে কখন কি করলো, কখন কি বললো- তার খবরই কেন রাখতে যাওয়া হয়?
আমার খুব ছোট্ট একটা কথা মনে পড়ে, ছোটবেলায় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে নিয়ে পাঠ্যবইয়ে একটা কথা পড়েছিলাম, একজন লিওনার্দো যদি আর কোন শিল্পকর্ম না করে কেবল "মোনালিসা"ই এঁকে যতো তাহলেও তাঁকে এত মর্যাদাই দেয়া হত। তখন থেকেই এই কথাটা মনের মধ্যে খুব গেঁথে গিয়েছে। একজনের একটা মাত্র ভালো কাজের জন্যও তাকে সারা জীবন স্বীকৃতি দিতে শিখেছি।
এখনকার হুমায়ূন আহমেদ পচে গিয়েছে। তার কোন একটা উপন্যাস, নাটক, সাক্ষাৎকার আর স্পর্শ করে না। স্রেফ ফালতু মনে হয়। তাকে নিয়ে তো কথা বলতে চাই না। কিন্তু এই মানুষটাকেই কেন এক সময় দেবতা মনে হতো? কেবল ভাঁড়ামো করে, তুচ্ছু-ফালতু লেখা লিখে কেউ তা অর্জন করতে পারে না। সেরকম সস্তা, ভাঁড়, বা অন্য ধারার যৌন সুরসুরি দেয়া লেখক অসংখ্য আছে- তারা কেউ হুমায়ূন আহমেদ হয় নি। তাদের কেউ দেবতা মনে করে নি। তার লেখার সাবলীলতা, গল্প বলার অন্য রকম ধরন (যেই ধরন পরবর্তীতে অনেকেই নকল করেছে)- তার সম্পূর্ণ নিজস্ব ধরন তাকে তখন সবার থেকে আলাদা করেছিলো। একজন হুমায়ূন আহমেদ "নন্দিত নরকে" লিখেছেন, "শংখনীল কারাগার" লিখেছেন, "কৃষ্ণপক্ষ", "মেঘ বলেছে যাবো যাবো", "পেন্সিলে আঁকা পরী", "জনম জনম", "পারুল ও তিনটি কুকুর" লিখেছেন- এবং আশির দশকে (পরে পড়েছি) এবং নব্বইয়ের দশকে এরকম আরো অসংখ্য গল্প এবং উপন্যাস লিখেছেন যেগুলো বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। তার মিসির আলী সিরিজের প্রায় প্রতিটি উপন্যাস ইউনিক, অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত। "হিমু" নিয়ে এখন নানান বিতর্ক আছে, কিন্তু এরকম সম্পূর্ণ অভূতপূর্ব ইচ্ছাপূরনের একটি চরিত্র কেন মানুষের মনে দাগ কাটবে না? কে প্রভাবিত হয় নি কখনও "হিমু" পড়ে? "অয়োময়"-এর মত চমৎকার নাটক পেয়েছি আমরা তার কাছ থেকে। হুমায়ূন আহমেদের পড়া কিছু গল্প, না বলা ভালো অনেকগুলো ছোটগল্প বা গল্প এখনও পড়ে তার দক্ষতায় বিস্মিত হই। এমনকি কিছু চমৎকার কবিতাও আছে! সেই হুমায়ূন আহমেদকে এখনও শ্রদ্ধা করি। এখনকার হুমায়ূন আহমেদের সাথে তাকে তুলনা করে ছোট করতে চাই না।
ভালো লেখক মানেই কমলকুমার মজুমদার, আর হুমায়ূন আহমেদ মানেই আ ছি ছি ছি- এত সরলীকরন করার মত হাস্যকর বোকামী আমরা না করি। তাহলে সবাই নাহয় একই ব্যকরন মেনে গৎ বেঁধে রোবটের মত একই রকম লেখা শুরু করুন।
আমরা কেন যেন কাউকে কেউ খুব ভালোবাসছে দেখছে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ি- জাতিগত সমস্যাই কি না জানি না। একজন লেখক লেখাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে- বেচারার বই দেদারসে বিক্রি হচ্ছে, সুতরাং তাকে সাহিত্য ব্যবসায়ী নাম দিতেই হবে। ব্যবসাতে কি সমস্যা? ব্যবসা করলেই সে খারাপ? ব্যবসা শব্দটা কি খারাপ? ব্যবসা পেশাটা কি খারাপ?
ভূপেন হাজারীকার কথা মনে পড়ছে। সারা জীবন মানবতাবাদী গান গেয়ে গেয়ে শেষকালে মৌলবাদী সংগঠন বিজেপির সদস্য হলেন! খবরটা শুনে বিরাট বড় ধাক্কা খেলাম। ভূপেন? এও কি সম্ভব? কিন্তু তার সেই পুরনো গানগুলোর মূল কিন্তু তবু এতটুকু কমলো না। সেই দিনগুলোতে যে ভূপেন হাজারিকা অজস্র মানবতার গান লিখে মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন তার প্রতি শ্রদ্ধা কিন্তু কমলো না- কারন সেইটুকু তো তার অবদান, অমূল্য অবদান। এখনও তার গলায় "বিস্তীর্ণ দুপারে অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনে/ ও গংগা তুমি গংগা বইছো কেন" শুনে গা শিউরে উঠে চোখ জ্বালা করে।
কাউকে বলতে শুনি না হুমায়ূন আহমেদের ভালো উপন্যাসটির কথা। এখন খুব সুযোগ এসেছে পচে যাওয়া মানুষটিকে নিয়ে হাসিমুখে উৎসব করার। আমরা এই তো পারি অকৃতজ্ঞের মত, ভালোটা নিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে থাকি, মন্দ পেলেই পাইসি বলে উৎসব নৃত্য করি। এক সময়ের ভালো লাগা, অসম্ভব সুন্দর সময় উপহার দেয়া গুনীনকে কৃতজ্ঞতা আমরা কখনও জানাতেই চাই না। আমি তাই আমার ক্ষুদ্র স্বত্তা নিয়ে চেষ্টা করি, এখন যে ভূপেন বিজেপি করে তার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার পুরনো গান গাইতে। আর হুমায়ূন আহমেদ এখন কি লিখছে তাই নিয়ে গবেষনা করে সময় নষ্ট না করে তার পুরনো কোন লেখা পড়তে বসি। অনেক তো হলো, এতদিনেও যদি বাংগালী গুনীর গুনের কদর না দেয়, এতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকে তো আর কবে?
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
মন্তব্য
"একজন লেখক লেখাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে- বেচারার বই দেদারসে বিক্রি হচ্ছে, সুতরাং তাকে সাহিত্য ব্যবসায়ী নাম দিতেই হবে। ব্যবসাতে কি সমস্যা? ব্যবসা করলেই সে খারাপ? ব্যবসা শব্দটা কি খারাপ? ব্যবসা পেশাটা কি খারাপ?"
ব্যবসা পেশাটা খারাপ না। কিন্তু একজন সৎ ব্যবসায়ী যখন চোরাকারবারী শুরু করেন তখন তার আগের client দের তাকে সমর্থন করলে চলে না।
হুমায়ূন আহমেদ এখন ব্যবসা করছেন বয়োসন্ধির আবেগ নিয়ে, জনপ্রিয়তার আশ্রয় নিয়ে জীবন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ কৈশোর ও তারুন্যকে মনোজ়াগতিক বিভ্রান্তিতে ফেলে দিচ্ছেন।
একজন কিশোর যদি হিমু পড়ে হিমু হ ওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাহলে আগামীতে আমরা জাতির নেতৃত্ব হিসেবে কাদের পাব?
একদল হিমুকে????
-----------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ভূপেন হাজারিকা ভুলেও শুনি না।
নন্দিত নরকে পড়ার সময় লেখকের কথা ভেবে একটু যে গা ঘিন ঘিন করবে না তা নয়।
আমি পারি না, আমি পারবো না। যার শিরদাঁড়াটাই সোজা নেই, তাকে আমি বন্ধু ভাবি না। আমি এক্সট্রিমিস্ট।
আমি এই সুবিধাবাদীদের ঘৃণাই করবো।
আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হুমায়ুন আহমেদের কাছে যে একটি মাত্র কারনে বাংলা সাহিত্য ঋনী তা হল, তিনি বর্তমান প্রযন্মকে (বয়স সীমা ১৫-২৫ ) বাংলা বই পড়া শিখিয়েছেন।
এই বয়সসীমায় বেশ বড় একটা অংশ কেবল তারঁ ই বই পড়ে।
হুমায়ুন আহমেদের বর্তমান লেখা প্রসঙ্গে "শেষের কবিতার" একটা লাইন মনে পড়ছে "যে সব কবি ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাচঁতে একটুও লজ্জা করে না, তারা নিজেকে শাস্তি দেয়; নিজেকে সস্তা করে দিয়ে..."
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷
তিথি আপুর সাথে একমত ...
আমার ক্ষমতা বা অক্ষমতা যাই হোক, আমি শিল্প আর শিল্পীকে আলাদাই দেখি ... একজন হুমায়ূনের হোটেল গ্রেভার ইন যখন পড়ি তখন সদ্য দেশত্যাগী একটা মানুষের বেদনাটা খুব গাঢ়ভাবেই অনুভব করি, "ফেরা" উপন্যাসটা যখন পড়ি তখন যেন আমিন ডাক্তারকে নিজের চোখেই দেখতা পাই, বৃহন্নলা আর জ্বিন-কফিল পড়ে গায়ে কাটা দেয় ... আর এখনকার হলুদ হিমু কালো র্যাব পড়া হলে সাথে সাথে ডিলিট করে দেই ... আর হুমায়ূন পেপারে কি সাক্ষাৎকার দেন সেটা নিয়ে দুই পয়সাও দাম দেইনা ... হুমায়ূনও একটা মানুষ ... জনপ্রিয় লেখক হিসাবে তিনি যদি কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতেন তাহলে ভালো লাগতো, কিন্তু দেননি বলে তাকে নিশ্চই আমি কাঠগড়ায় তুলতে পারি না ...
তেমনি একজন জাফর ইকবাল, একসময় যাঁর "আমার বন্ধু রাশেদ" পড়ে আমার সাত বছর বয়সী ভাইটা ফুঁপিয়ে কান্না শুরু শুরু করেছিল সেই জাফর ইকবাল আজকে যখন সস্তা বাজারী উপন্যাস লেখেন সেটা দেখলে মন খারাপ হয়, কিন্তু তাতে মানুষ হিসেবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আমার কমে না ... লেখক জাফর ইকবাল আর মানুষ জাফর ইকবাল আলাদা, তাঁদেরকে শ্রদ্ধা-অশ্রদ্ধা আলাদাভাবেই করা উচিৎ ...
আমরা মানুষকে দেবতা বানানো বন্ধ করবো কবে?
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
হুমায়ুন পড়তাম এককালে। কিছু বই ভালো লাগছিলো, সন্দেহ নাই। শংখনীল, এলেবেলে, দুই একটা সায়েন্স ফিকশন ইত্যাদি। তবে মিসির আলী, হিমু এসব একেবারে টানে নাই।
যেই লেখক সাহিত্যমান বিবর্জিত শত শত বই লিখে যাবে, স্রেফ সস্তা ভাঁড়ামো করে ডজন ডজন নাটক বানাবে, তাকে অযাচিত সম্মান দেওয়ার কোন কারণ দেখি না। হুমায়ুন তার পাঠককে সম্মান করতে জানেন না, এটাই আমার কাছে বড় সমস্যা। যেই লেখক একই মদ হাজার বোতলে বিক্রি করে ঘুরে ফিরে, নীলু, বিলু, পিলু মার্কা, ৪০ পাতার 'উপন্যাস' ফ্যাক্টরির মত বানিয়ে বিক্রি করে ৫০ টাকায়, তাকে কিভাবে সম্মান করি? উপন্যাস কি একটা কমোডিটি হয়ে গেল?? পাঠকের রুচি আর বুদ্ধি সম্পর্কে অত্যন্ত নীচু ধারণা পোষণ করলেই লেখক এসব করতে পারেন।
আর সেই পাঠকও তার নিকষ গার্বেজ কিনেই যাচ্ছে কিনেই যাচ্ছে কিনেই যাচ্ছে, পড়েই যাচ্ছে পড়েই যাচ্ছে পড়েই যাচ্ছে। নিখিল বাংলায় এমন হাজারো বুকশেলফ পাওয়া যাবে যেখানে ডজন ডজন হুমায়ুনের বই আছে, অথচ একটা তারাশংকর বা মানিক নেই, একটা ইলিয়াস বা ওসমানও নেই। এমন সংকুচিত রুচির পাঠক তো তাহলে পাল্প ফিকশন পড়েই খুশী।
যেই লোক স্রেফ টাকার লোভে এইসব ছাইপাশ লিখে বেঁচে কাড়ি কাড়ি, পাঠককে ভাবে গবেট এবং উজবুক, তাকে সম্মান করা সম্ভব নয়। তার ব্যক্তিগত জীবনও প্রচুর অবজেকশন তৈরী করে, কিন্তু তা অপ্রাসংগিক। শুধুমাত্র লেখক হিসাবে তার সীমাবদ্ধতা এবং অসততাই যথেষ্ঠ। আর এমন সুবিধাবাদী লেখকের পক্ষে তিনি যা যা বলেছেন, সেটাও খুব সহজেই বলা সম্ভব।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
কন্ট্রাডিক্টরী হয়ে গেল না? পাঠকরা খায় বলেই হু আ খাওয়ায়, আর হু আ খাওয়ায় বলেই পাঠক খায়, দোষটা তাহলে কার? হু আ যদি এইসব গর্ভস্রাব লেখা বন্ধ করতো তাহলে কি এইসব পাঠক রাতারাতি তারাশংকর-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়া শুরু করতো? আমার কিন্তু মনে হয় তারা বই পড়াই বন্ধ করে দিত ... কাজেই এই পাঠকদের পুঁজি করে হু আ যদি কিছু পয়সা কামায় সেটা কতটা অন্যায়?
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
- আমাদের দেশে একটা সময় যথেষ্ট সুস্থ ধারার সিনেমা তৈরী হয়েছে। দর্শক ও হয়েছে প্রচুর। কিন্তু একটা সময় নির্মাতারা শুরু করলেন অশ্লীলতার খেলা। বাংলা সিনেমার আকাশ ছেয়ে গেলো চূড়ান্ত ন্যাক্কারজনক অশ্লীলতায়। এইসব সিনেমাও দর্শক পেয়েছে প্রচুর, পাশাপাশি হারিয়েছেও অনেক। আপনি-আমি এখন বাংলা সিনেমার নাম শুনলেই নাক সিঁটকাই, কেনো? দর্শকের দোষে নাকি নির্মাতাদের দোষে!
তিথির লেখার মান নিয়ে কোনো সংশয়ই প্রকাশ করার অবকাশ নেই। তাঁর উপস্থাপিত যুক্তিগুলোও হেলা করার নয়। কিন্তু একজন হূমায়ুন আহমেদ, যাঁকে আমরা জেনেছি অয়োময় কিংবা শঙ্খনীল কারাগারের স্রষ্টা হিসেবে সেই হূমায়ুন আহমেদকে গলা টিপে হত্যা করার জন্য আর কেউ যা-ই বলুক, যে কাউকেই দায়ি করুক, আমি অন্তত আজকের হূমায়ুন আহমেদকেই দায়ী করবো।
আর তাঁর সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে দ্রোহী'র উললেখ করা গ্রেট পাওয়ার কামস উইথ গ্রেট রেসপন্সিবিলিটিজ, কথাটাই বলার আছে। তবে তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে এসব গুলানোর একদমই পক্ষপাতি নই আমি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তিথি আপুকে অনেক ধন্যবাদ সাহিত্যের এই গুরুতর বিষয় অবতারনার জন্য।
---
সুবিনয়ের সঙ্গে আরেকটু যোগ করতে চাই। এ ক্ষেত্রে আমি শরণাপন্ন হচ্ছি অমর কথাশিল্পী আহমদ ছফার।
সেটা ১৯৯১-৯২ সাল। সাপ্তাহিক প্রিয় প্রজন্মর জন্য সাক্ষাতকার আনতে ছফা ভাইয়ের পরীবাগের বাসায় মুখোমুখি বসেছি। জানতে চাইলাম, হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য? তিনি কী এখন এ যুগের শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়?
আহমদ ছফার সংক্ষিপ্ত ও সোজা-সাপ্টা জবাব, বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন আহমেদ এখন জনপ্রিয়তার দিক থেকে শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়কে ছাড়িয়ে গেছেন। কিন্তু মেরিটের দিক থেকে সে নিমাই ভট্টাচার্যের সমান। নাউ হি ইজ রাইটিংস ওনলি ফর বাজার।...
---
ভূপেন হাজারিকা নিয়ে আমি বিস্মীত হই না। আমি জানতাম, শিল্পী চীনা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে উজ্জীবিত হয়ে গান লেখেন:
মোর গাঁয়ের সীমানায়
পাহাড়ের ওপারে
নিশিথ রাত্রির প্রতিধ্বনী শুনি
নতুন দিনের যেনো পদধ্বনী শুনি...
অথবা বিবিসির জরীপে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গান:
মানুষ-মানুষের জন্য
জীবন-জীবনের জন্য...ইত্যাদি।
তো এই শিল্পী যখন আদর্শচ্যূত হন, তার পক্ষে বিজেপির মনোনয়ন পাওয়া থেকে সব ধরণের আদর্শহীন কাজ-কর্ম করা সম্ভব, আমি এ-ও জানি। আর আবর্জানার গন্তব্য তো শেষ পর্যংন্ত নর্দমাতেই?
লক্ষ্যনীয়, স্বাধীনতা , বিজয় দিবস কী একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে গত কয়েক বছর আগেও যেভাবে স্কুলে-কলেজে, পাড়ায়-মহল্লায় ভূপেন গাওয়া হতো...এখন আর সে ভাবে তা গাওয়া হওয়া না। অনুমান করি, তার ক্যাসেট-সিডি বিক্রর হারও কমতে শুরু করেছে একই মাত্রায়। তাহলে, আম-জনতা নিশ্চয়ই এতো বোকা নয়!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
তিথি,
অত্যন্ত মর্মস্পর্শী একটি লেখা। আপনার সাথে একমত--- আমরা আসলেই গুনীর কদর জানি না। হয়ত সেই জন্যই আমাদের মাঝে 'গুনী'-র সংখ্যা এত কমে আসছে। যারাও বা আছেন তারা কেউ প্রান দিচ্ছেন আমাদের নব্য মৌলবাদী সংস্কৃতির জারজ কিছু নপুংসকের কাছে, অথবা নিলামে বিকিয়ে দিচ্ছেন নিজের মাথা। আমদের দেশে এই গত কয়েক দশকে যেসব অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে, আমার মতে, তাদের মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দাঁড়িওয়ালা-সুরমাওয়ালা বেশধারী যে কোন কারোর প্রতি এক বিশেষ ধরনের আবেগ (ধনাত্মক বা ঋণাত্মক) এবং বুদ্ধিজীবি শব্দটা গালাগাল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া।
আমরা এমন এক সময়ে বাস করি যেখানে এক জাতির পুরোধা ব্যাক্তিগুলো সস্তা তোষনে পুজারী হয় কিছু পাশব সত্ত্বার। ব্যবসা করা মোটেও খারাপ নয়--'বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী'। কিন্তু বানিজ্যের জন্য কি সব কিছুই পন্য হবে??
আমাদের অনুজ-প্রতীমদের জন্য আমরা কি কোন অনুকরনীয় আদর্শ রেখে যেতে পারছি?? তারা সকলে বড় হচ্ছে এক সহায় সম্বলহীন প্রান্তরে---যেখানে মূল মন্ত্র হলো---প্রথম সুযোগে পালিয়ে যাও এ দেশ ছেড়ে। তাদের জন্য নেই দেশপ্রেমের কোন উদাহরন। সকলের চোখের সামনে লাথি নেমে আসে এদেশের সুর্যসন্তানদের পিঠে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা ক্লীবত্বের অর্চনা করে। মানুষের পাপ-পুন্যের হিসাব হয় দাঁড়ির দৈর্ঘ্যে।দেশের প্রধান লেখক হাতে গোনা--তাদের মাঝে দুর্বৃত্তই প্রধান। সস্তা জনপ্রিয়তা আর ধরা-কে-সরা-জ্ঞান করার অমানুষিক ক্ষমতায় এরা আমাদের মননশীলতার আকৃতি পালটে দিতে থাকেন। কাজেই দেশের 'প্রধানতম' লেখক যখন বলেন, যে তিনি আসলে 'নিজের আনন্দের' জন্য লেখেন এবং কারোর প্রতি কোনরকমের দায়িত্ববোধের দায় বহন করেন না---তখন কেন জানি আর অবাক লাগে না।
লেখকরাও মানুষ । ষড়রিপুর দংশনে আমাদের মত তাদের
অন্ত্ররত্মা নীল হয়, কখনো হয়ত খানিকটা বেশিই।কিন্তু তারা যে প্রতি মুহুর্তে প্রতি পদক্ষেপে দ্রষ্টব্য এবং উত্তরসুরীর চোখে অনুকরনীয়--- এই জিনিসটাই তাদের কে আমাদের থেকে আলাদা করে দেয়। কোন এক কালে এক মহীষী বলেছিলেন" With greater power--comes greater responsibilities"(Spiderman, part 1). সেই মহাসত্য প্রণিধান করার মত সময় আমাদের হুমায়ুনের কোথায়? তিনি কতজনকে প্রেম নিবেদন করলেন, কত কিশোরীকে অঙ্কশায়ীনী করলেন--- সে নিয়ে আমাদেরই বা মাথাব্যথা হবার কারনটা কি? কারন আসলে ত্রিবিধঃ
১) গোটা ব্যাপারটার মাঝে যে 'কেলেঙ্কারীর' সুবাস আছে, আর সকল জাতির মত আমরা বাঙ্গালিরাও সেই মৌতাতে মাতোয়ারা। দারফুরে যখন শত শত শিশু বুলেটকে আপন করে নেয়---সে সময়ে পৃথিবীর সব চাইতে শক্তিশালী দেশটির সকালের খবরের শিরোনাম হয় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্রিটনী স্পিয়ার্সের মাথা কামানোর মত sensational news!
২) এইসব আলোকিত মানুষদের 'পতন' আমাদের এক ধরনের স্বস্তি দেয়। আমরা আমাদের গৎবাঁধা জীবনের অসহনীয়রকমের নিস্তরঙ্গ নিরস প্রেক্ষাপটে হঠাৎ আলোর ঝলকানী দেখতে পাই। বুক ভরে শ্বাস নিতে নিতে নিজেকে বলি " ছ্যা, ছ্যা ছ্যা এত্ত বড় মানুষের এই রকম ঘটনা??!!" মনে মনে পরিতৃপ্তির সুবাতাসে প্রানটা জুড়িয়ে দেয়----আমার চাইতে ও বেটা আর ভাল কিসে?
৩) আর কেউ কেউ চিন্তিত হই এই ভেবে যে আমার সন্তানের মনে এই ঘটনা কি রেখাপাত করবে? কেউ হয়ত আরেকটু আগ বাড়িয়ে ভাবি---আহা রে, ওদের ছেলেমেয়ের না জানি কি রকম লাগছে??
আমরা এক নিদারুন বন্ধ্যা সময়ের মাঝে দিয়ে যাচ্ছি---- ছোট মন, ক্ষীন দৃষ্টি, অশক্ত ন্যুব্জ দেহ এইতো আমাদের সম্বল। আমাদের 'প্রধানতম' বুদ্ধিজীবিরা তস্করদের থেকে কতদূরই বা যেতে পারবেন?
আমাদের 'হুমায়ুন' তো এমনি হবার কথা !!
হুমায়ুন আহমেদ দুধওয়ালাদের মত আচরণ করছেন বহুদিন থেকেই। দুধ ওয়ালা দুধে প্রথম প্রথম অল্প পানি মেশায়। তারপর আস্তে আস্তে দুধে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে।
হুমায়ুন ও তার দুধে পানি মিশিয়ে যাচ্ছেন অনেকদিন ধরে। পানি মিশাতে মিশাতে আজ আর কোন দুধ অবশিষ্ট নেই, সবই পানি। মাঝে মাঝে হয়ত মন চাইলে এক জগ পানির মধ্যে এক ফোঁটা দুধ মিশান।
আমি হুমায়ুন বিরোধী নই, বরং একটা সময় প্রচন্ড হুমায়ুন ভক্তই ছিলাম। আজো ঢাকায় আমার ঘরে আছে শয়ে শয়ে হুমায়ুনের বই। কিন্তু আজ তার অধঃপতন দেখে তার জন্য দুঃখ হয়।
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়।
সেদিনের সেই হুমায়ুনের লেখা পড়ে মুগ্ধ হওয়ার অধিকার যেমন পাঠকের আছে, ঠিক তেমনি, আজকে হুমায়ুনের নিম্নমানের লেখা আর তার গাজাখুরি সাক্ষাতকার পরে ক্রোধে ফেটে পড়ার অধিকার ও পাঠকের আছে।
কিন্তু এককালে ভালো লিখত, এককালে ভালো লোক ছিল, এই অজুহাতে আজকে তার অধঃপতনকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখেও না দেখার ভান করা/প্রশ্রয় দেয়ার কোন যুক্তি নেই।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
অবশ্যই আছে ... তাকে গালি দেয়ারও অধিকার আছে ... কিন্তু কোন গালিটা লেখক হিসাবে আর কোন গালিটা মানুষ হিসাবে এইটা পার্থক্য রাখা দরকার ... এই দুই ভূমিকা গুলায়ে না ফেলাই ভালো ...
মেজাজ খারাপ হয় যখন দেখি হু আ জনপ্রিয় লেখক তাই তার সামাজিক দায়বদ্ধতা বেশি জাতীয় কথা শুনি ... একজন মানুষ হিসাবে আমার যতটুকু সামাজিক দায়বদ্ধতা হু আ র তার চেয়ে বেশি হবে ক্যান?
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
আমার আক্রমন ব্যক্তি হুমায়ুনকে নয়, লেখক হুমায়ুনকে, আর তার অধঃপতিত মূল্যবোধকে।
আর সেলিব্রেটিদের দায়বোধ রেগুলার মানুষের চেয়ে বেশি হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? আপনি বা আমি একটা খারাপ কাজ করলে যতগুলো মানুষ তা অনুসরণ করবে, একই খারাপ কাজ একজন সেলিব্রেটি করলে এর হাজার গুন মানুষ তা অনুসরণ করবে।
যাহোক, সে বিতর্কে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। আমার ক্ষোভ আপাতত লেখক হুমায়ুনের বিরুদ্ধেই থাক।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
আমার মনে হয় সেই দায়টা যে অনুসরণ করে তার উপরেই বর্তায় বেশি ... আরেকজন চুরি করছে তার দেখাদেখি আমিও করছি এইটা কুযুক্তি ছাড়া আর কিছুই না ... অনেকটা "মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নেতারা ধান্দাবাজি করছে দেখে আগ্রহ হারায়ে ফেলছি" টাইপ শোনায় ...
যাই হোক, বিতর্কে যাওয়ার ইচ্ছা আমারও নাই ... কাজেই অফ গেলাম
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
তিথি আপু,
অসংখ্য ধন্যবাদ। একেবারে আমার মনের কথাটাই বললেন।
আর রেনেট ভাই আপনার কমেন্টের জন্য বিপ্লব। হুমায়ূন আহমেদ সম্বন্ধে আমার ও ধারণা একেবারেই এইরকম।
------------------------------------------------------------
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাঁক জ্যোৎস্নায় দিও সামান্য ঠাঁই
---------------------------------------------------------
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় দিও সামান্য ঠাঁই
আব্বু প্রথম আমাকে বৈশাখের উপহার দেয় হুমায়ুন আহমেদের "নীল হাতি", তারপর ওনার বই ছারা আর কিছুই পড়তাম না।
হুমায়ুন আহমেদ এর জন্যই আমার দেশের বাইরে গিয়েও বাংলা বই পড়ার চর্চা ছিল, হাইস্কুলে পড়ার সময় কেউ দেশে গেলেই বলতাম আমার জন্য কিছুই আনতে হবেনা শুধু হুমায়ুন আহমেদ এর ব্ই। পাগলের মত পড়তাম ওনার বই। ওনার আগের লেখার প্রায় সব বইগুলোই মনেহয় আমি পড়েছি।
এখনও মাঝে মাঝে ওনার ঐ বইগুলো পড়ি। এখন যদিও একদমই রেসপেক্ট করিনা ওনাকে কিন্তু ওনার অবদান অস্বিকার করতে পারব না, মন খারাপ লাগে কেন ওনার লেখার মান এমন হল ভেবে
দারুন লেখা
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
আমার মতে, গুণীর কদর দিতে জানি না কথাটা হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রে মোটেই খাটে না। তার ইদানিংকালের অধিকাংশ লেখাই সেরদরে বিক্রির জন্য, তবে তার কিছু ভালো লেখা অবশ্যই আছে। তিনি পাঠককে আকর্ষণ করতে পারতেন এবং তার সেই সুনামের জন্য লোকে এখনও ব্যাপকহারে তার বই কেনে। তবে লেখক হিসেবে তিনি মিডিওকারের ওপরে উঠতে পারেন নি কখনোই।
এমন একজন মিডিওকার লেখক যে পরিমাণ সম্মান এবং অর্থ পেয়েছেন, সেটা তার গুণের তুলনায় অনেকগুণ বেশি বলেই তো মনে হয়।
মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু সমকালে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার যে কুৎসিত দিকটি বেরিয়ে এসেছে, তার জন্য হুমায়ূন শুধু ঘৃণাই পেতে পারেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তিথির লেখাটার সাথে একমত হতে পারলাম না।
হুমায়ূন আহমেদের অনেক ভালো গুণের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লাগে লেখার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মকে বোহেমিয়ান করে তোলার ব্যাপারটি। হিমু, মিসির আলী চরিত্র নতুন প্রজন্ম, সমাজকে কী দিচ্ছে? জনপ্রিয় লেখকরা যেমন সমাজ গড়তে পারে, তেমনি নতুন প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতেও পারে! তাছাড়া তাঁর অধিকাংশ লেখায় অন্ধবিশ্বাস, অলৌকিকতা, কুসংস্কারে বিশ্বাস সমাজকে আরও পিছেনে ঠেলে দিচ্ছে। শুধু টাকা কামানোর জন্য ইদানিং তিনি যা লিখছেন তা ছাইপাশ ছাড়া আর কিছু না। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার ও কোথাও কেউ নেই-এর হুমায়ূন আহমেদকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না এখন। এ বিষয়ে অন্য ব্লগে লেখা লিখেছিলাম বেশ আগে-
http://www.somewhereinblog.net/blog/SheikhJalilblog/16010
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
সারসে। আমি জলিল ভাইয়ের মতো বিরোধী দলে।
ভদ্রলোকের টিভি নাটকের ধারে কাছে কেউ নেই। আমি বিনোদনটাকেই প্রধান ধরি, শিল্পমান পরখ করার দিন শেষ।
সমকালের সাক্ষাতকারটি পড়লাম। রীতিমতো ধাক্কা খেলাম একটা। হুমায়ুন আহমেদের মতো স্পষ্টবাদী, প্রগতিশীল মানুষের কাছে এ ধরনের গড্ডালিকা প্রবাহ মার্কা কথাবার্তা একেবারেই আশা করিনি। জামাতীদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রতিহত করার পক্ষে আমিও নই। যেহেতু আমরাই তাদেরকে জায়গা করে দিয়েছি, তাদেরকে প্রতিহত করার দ্বায়িত্বও আমাদের। নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করলে সে দ্বায়িত্বকে যথাযথভাবে পালন করা হয় বলে আমি মনে করি না। আগে নিজেদের করা পাপ স্খলন করে নিতে হয়। তা না করলে যে কোন পদক্ষেপই আপাত: সাফল্য আনলেও তা সুদূরপ্রসারী হয় না। নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করাটা আমার দৃষ্টিতে নিজেদেরই পরাজয়। তাদেরকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত ও নিশ্চিহ্ন করার ক্ষমতা আমাদের থাকা উচিত। সেটা যদি আমাদের না থাকে, সেটাও আমাদেরই পাপে। সে পাপের ভার আমাদের বহন করতে হবে বৈকি!
তাহলে ধাক্কা খেলাম কেন? হুমায়ুন আহমেদকে পছন্দ করতাম, এমনকি হিমুকেও। আমাদের সমাজ একটা ব্যাধিগ্রস্থ রোগীর মতো। আমরা সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি, যদিনা সংক্রামিত হই। অথচ নিজেও ভেতরেও রোগ। আমরা সারাক্ষণ মুখোশ পরে আছি। সেকারণে একজনকে খারাপ, মিথ্যেবাদী, সুবিধাবাদী ও শঠ জেনেও তাকে সকাল সন্ধ্যা সালাম দিতে দ্বিধা বোধ করি না। নিজের ভেতরেও শঠতা আছে জেনে সালাম নিতেও অন্যথা করি না। হিমু নামে চরিত্রটি সাজিয়ে হুমায়ুন আহমেদ চেষ্টা করেছেন আমাদেরকে সচেতন করার, আমাদের শিড়দাড়া সোজা করার। সবাইকেই হিমু হতে হবে, এমন দাবী তার ছিল না, থাকার কথাও না। সেটা সম্ভবও নয়, কোন সমাজেই নয়। কারণ হিমু ছিল একটি প্রতিবাদী চরিত্র, সামাজ ইতিগতভাবে পাল্টালে সে চরিত্রও আর অপরিহার্য় থাকে না। তা স্বভাবতই মূল্যহীন আর অস্পষ্ট হয়ে পড়ে।
কিন্তু যে শঠতার বিরুদ্ধে হুমায়ুন হিমুকে বানালেন, এই সাক্ষাতকারে তার নিজের ভেতরেই সেই শঠতা ও সুবিধাবাদী চরিত্র নিদারুণভাবে প্রকট হয়ে উঠলো। হিমুকে বোঝার জন্যে হুমায়ুন আহমেদের উপর এই বিশ্বাসটুকুর যথেষ্ট দরকার ছিল। সেটা হারাতে বাধ্য হলাম।
তার ইদানীং কালের লেখা যে বস্তাপঁচা হচ্ছে বা হয়েছে, তার এই সাক্ষাতকার পড়ার পর তাতে অবাক হবার আর কোন কারণ দেখি না।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
একটা মন্তব্য লেখা শুরু করলাম। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল ঠিক পোস্ট কমেন্ট চাপবার আগে। ঘন্টা দুয়েক পরে ইলেক্ট্রিসিটি আসার পর দেখতে পাচ্ছি আমার কথাগুলি মোটামুটি সবাই বলে দিয়েছেন। তাই একবারে সার সংক্ষেপে বলি।
হুমায়ূন আহমেদকে চিরকালই আমার মধ্যমানের লেখক মনে হয়েছে। তাঁর লেখা সূর্যের দিন যদিও আমার পড়া অন্যতম ভালো কিশোর মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস, তবুও তাঁকে আমি অনেক উঁচুতে অন্তত লেখক হিসেবে স্থান দিতে পারি নি। বরং আমার কৈশোরকে বর্ণিল করে তোলার জন্য অনেক বেশি ধন্যবাদ দিবো কাজী আনোয়ার হোসেনকে, চমৎকার কিশোর ক্লাসিকের জন্য।
লেখার একপর্যায়ে বলেছেন,
আমি। হিমু'র চরিত্র আমাকে একদমই টানেনি। অস্বাভাবিকতা কিংবা ব্যতিক্রম এর গল্প তখনই ভালো লাগে, যখন সেই ব্যতিক্রমী চরিত্র কোন ডিসিঙ্কট মেসেজ বহন করে। দুঃখজনকভাবে হিমুর চরিত্রে এমন কিছু আমি পাই নি।
কমলকুমার মানেই ভালো, হুমায়ূন মানেই খারাপ এমনটা মনে করার বিরুদ্ধে আমিও। তবে কি না, কমলকুমারের গোটা দুয়েক উপন্যাস পড়ার পর ( অন্তর্জলি যাত্রা এবং সুহাসিনীর পমেটম ), আমি ক্ষান্ত দিয়েছি। কারণ ফরাসী সাহিত্যরীতি অনুসরণ করে লিখিত এ ধরণের সাহিত্যের রস আস্বাদনের ক্ষমতা আমার নেই। তাই তিনি ভালো না খারাপ, সে ব্যাপারে আমার কোনই বক্তব্য নেই। তিনি গুরু, তিনি দুর্দান্ত - এসবই কেবল সুনীল, শক্তি কিংবা ঐ প্রজন্মের সাহিত্যিকদের উচ্ছাস থেকে শোনা কথা। তবে হুমায়ূন আহমদের লেখা বিগত ৫-৭ বছরে যা পড়েছি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে, তাতে আমি নিজের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে অন্তত হুমায়ূন আহমেদ মানেই ফালতু এমন একটা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করিয়ে নিয়েছি, তবে এ নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত বিচার। কোন ইউনিভার্সেল ফতোয়া না।
এতকিছুর পরও হুমায়ূন আহমেদ এর জন্য অন্তত কিছুটা শ্রদ্ধা আমার কাছে ছিলো। কিন্তু আমার ব্যর্থতা, আমি শিল্প এবং শিল্পীকে সবসময় আলাদা করতে পারি না। মেয়ের বয়েসী কাউকে বিয়ে করলে আমি বিচলিত হই না, কিন্তু অন্য একজন লেখকের প্রতি হামলাকে জাস্টিফিকেশনে বিরক্ত হই, তার সুক্ষ্ম সেনাবন্দনায় ঘৃণা জন্মায়।
দুঃখিত মি. হুমায়ূন আহমেদ, আমি জানি আমার সম্মানে কিছুই যায় আসে না। কিন্তু আজকের সকালের পর থেকে আপনার জন্য শুধুই ঘৃনাই অবশিষ্ট। আপনি যদি আমার জীবনের পড়া শ্রেষ্ঠ গল্পের লেখকও হতেন, তবুও এই ঘৃণার কম বেশি হতো না।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
- হুমম
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তিথির পোস্টের বক্তব্যের সাথে অনেকাংশে একমত। তবে সমস্যা হলো আমরা ব্যক্তি হুমায়ুন ও লেখক হুমায়ূন আহমেদকে গুলিয়ে ফেলার কোন কারন নেই। আর সাহিত্যের গুণ বিচারে হুমাযূন আহমেদের"নন্দিত নরকে", "শংখনীল কারাগার" , "কৃষ্ণপক্ষ", "মেঘ বলেছে যাবো যাবো", "পেন্সিলে আঁকা পরী", "জনম জনম", "পারুল ও তিনটি কুকুর" এই সকল সৃস্টিগুলো যদি মান সম্মত বিবেচিত হয়, তাহলে কেন অন্য সকল বই যেগুলোকে সুবিনয় 'পালপ ফিকশন' বলছেন সেগুলোর কারণে উল্লেখিত সাহিত্যের মান ক্ষূন্ন হবে ?
আর ব্যবসার বিষয়টা আমি এই স্থানে সমর্থন করিনা, যখন একজন লেখক প্রকাশকের সাথে পরামর্শ করে লেখেন । কোন ধাঁচে বই খানা লিখলে পাঠক খাবে, কতটা কাটতি হবে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের বিষয়গুলো মাথায় রেখে যদি কোন লেখক তার সাহিত্যকর্ম সম্পাদনে বসেন তাহলে আমার আপত্তি আছে।
কিন্তু একটি ৫০ পাতার বই লেখার পর যদি সেটির লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রী হয়ে যায় , এতে করে যদি লেখক কিংবা প্রকাশক ব্যবসা করে ফেলেন সেখানে আমি দোষের কিছূ দেখিনা।
আবারও তিথির কথায় ফিরে যাই।
তাই যেখানে হুমায়ুন ব্যর্থ সেখান থেই আমাদের যাত্রা শুরু হোক। আজকে এই সমালোচনায় আমাদের যেখানে জোড়ালো উচ্চারণ সেইখানে আমাদের কলমে জ্বলে উঠুক।
----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
এতকিছুর পরও হুমায়ূন আহমেদ এর জন্য অন্তত কিছুটা শ্রদ্ধা আমার কাছে ছিলো। কিন্তু আমার ব্যর্থতা, আমি শিল্প এবং শিল্পীকে সবসময় আলাদা করতে পারি না। মেয়ের বয়েসী কাউকে বিয়ে করলে আমি বিচলিত হই না, কিন্তু অন্য একজন লেখকের প্রতি হামলাকে জাস্টিফিকেশনে বিরক্ত হই, তার সুক্ষ্ম সেনাবন্দনায় ঘৃণা জন্মায়।
দুঃখিত মি. হুমায়ূন আহমেদ, আমি জানি আমার সম্মানে কিছুই যায় আসে না। কিন্তু আজকের সকালের পর থেকে আপনার জন্য শুধুই ঘৃনাই অবশিষ্ট। আপনি যদি আমার জীবনের পড়া শ্রেষ্ঠ গল্পের লেখকও হতেন, তবুও এই ঘৃণার কম বেশি হতো না।
কিন্তু সবজান্তা, কিন্তু কোনও কোনও হুমায়ূনভক্ত/ভক্তা তো মনে করেন, উনি এতো এতো ভালো কাজ করে বসে আছেন, এখন যা ইচ্ছে করলে/লিখলে ও আগের কথা মনে করে, তাকে তার সম্মান/স্বীকৃতি দিয়েই যেতে হবে ! বে-চা-রা ( শুধু লিখে/ব্যবসা করে একটা দ্বীপাংশ আর কোটি কোটি টাকার মালিক, বেচারা-ই কি-না !! ) কেন শুধু শুধু টার্গেট করা ভাই !!
---------------------------------------------------------
আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
সুপান্থ ভাইয়া,
প্রত্যেকেরই নিজের মত করে কিছু বলার থাকতে পারে বোধহয়। তোমার এই মন্তব্যের শেষ অংশে যে আক্রোশ নিয়ে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে কথা বললে, আমার আর কিচ্ছু বলার নেই তোমাকে। আমি শক্ড।
ভালো থাকো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
তিথি,
কী বলছিস তুই ! ব্যক্তিগত আক্রমণ ? তা ও আবার তোকে !? আর কেউ না জানুক, তুই-আমি জানি,পরষ্পরের কাছে কতোটা কি আমরা, কতোখানি আশা করি এক আরেকজনের কাছে । এই লেখা নিয়ে আমি তোর উপর আক্রোশ ঢালি ?
শুধু তুই-ই হতে যাবি কেন, আশেপাশের সব হুমায়ূন ভক্তকে-ই তো এইরকম বলতে শুনি । আমি নিজে,আমার পোস্টে কি একবার ও লেখক-হুমায়ূনকে কটাক্ষ করে কিছু বলেছি ? না, তোর পোস্টের মন্তব্যে ? আমি তো এমন ও বলেছি তার লেখা পড়ে হিমু হয়ে যাওয়া,বাকের ভাই'র জন্য মিছিল বের করা; যে বিচারেই হোক, লেখকের সাফল্যই তো !
স্রোতের অনুকূল-প্রতিকূলের বিষয় তো নয় , এটা ( আর কোনও উদাহরণ না দিলে ও) এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা-সন্তানের চরম অধ:পতনের বেদনা/বিষ্ময়/আঘাতে উথলে উঠা প্রতিবাদও তো হতে পারে । এইসব নিয়ে তর্ক-বির্তক-বাক-বিতন্ডা হতেই পারে,ভাই-বোনের মধ্যে আরো বেশী-ই হতে পারে, পারে না ? তুই ও তো আমাকে কতো কি শুনিয়ে দিলি ! তাই বলে পরষ্পরে আক্রমণ বলে একে ? এবার আমি কিঞ্চিত শকড্ !
ভালো থাক্ বোন আমার , সারাক্ষণ-সারাবেলা ।
---------------------------------------------------------
আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
হুম, খারাপ লেগেছে এই কারনে যে আমাকে এবং আমার পোস্ট ইঙ্গিত করে এই মন্তব্যটা কপি করে অন্য পোস্টেও দিয়েছো। আমি তো কোথাও বলি নি হুমায়ূনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ করা যাবে না, অথচ তেমনটাই তুমি উল্লেখ করেছো আমাকে নিয়ে। মূল কথাটা ছিলো- তার ভালোটা কেউ কখনও বলে না। আজকের এই সাক্ষাৎকারের আগেও বলে নি। মানুষটা তুমি বলেই, পোস্টের বাইরেও অনেক কিছু বুঝে নিবে আশা ছিলো। হয়ত নিজেদের ভাবনায় খুব কড়া থাকতে গিয়ে আর কিছু ভাবার অবকাশ থাকে না কখনও কখনও।
যাক, বাদ দাও। অনেক তো হলো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
সবার মন্তব্য পড়লাম। অনেক ধন্যবাদ পোস্ট পড়ে নিজেদের মূল্যবান কথাগুলো ভাগ করে নেবার জন্য।
প্রত্যেকে নিজেদের ভাবনাগুলোর কথা বলেছেন, এটাই প্রয়োজন ব্লগে। আমিও আমার নিজের ভাবনার কথাই বলেছি। পোস্টটা দেবার আগে জানতাম স্রোতের পুরোপুরি বিপরীতে কিছু বলতে যাচ্ছি, তবুও বলেছি কারণ না বললে নিজেকে হিপোক্রেট মনে হতো, কারণ আমার যেহেতু বিপরীতে কিছু বলার ছিলো।
সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আমি হুমায়ুন আহমেদের সাক্ষাৎকারটা আমার মাকে পড়ে শোনাচ্ছিলাম, কিছুটা শোনার পরে মা বললো, আর না শোনাতে, মানুষের প্রতি এতো নির্মম কথা সহ্য করা কষ্ট।
আর ব্যাক্তি মানুষ আর লেখক মানুষের মধ্যে আমি তেমন পার্থক্য করতে পারিনা। আমার সবচাইতে প্রিয় লেখক যদি ব্যক্তিগত জীবনে একজন জামাতি হয়ে যান, তাহলে তার লেখা প্রতিটি জাদুময় বাক্য আমার কাছে জ্ঞানপাপীর অর্থশুন্য প্রলাপ হয়ে যায়। বেদনার সাথে দেখলাম, শহীদের পুত্রও আজকের দিনে একধরনের রাজাকার হতে পারে।
ভাবছিলাম এ বিষয়ে অনেক হয়ে গেছে, নতুন করে আর কথা না বাড়াই ।
অন্দ্রিলা'র মন্তব্যে সহমত না জানিয়ে পারলাম না ।
শেষপর্যন্ত ব্যক্তিই কিন্তু মতাদর্শ ধারন করে । আর ব্যক্তির সংবেদনশীলতা,ব্যক্তির অসহায়ত্ব,ব্যক্তির মেনে নিতে বাধ্য হওয়া এইসব একরকম আর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্ববিরোধীতা কিন্তু অন্যরকম ।
-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
একজন লেখক ভালো লিখলে বা তার লেখা ভালো লাগলে একজন পাঠকের অধিকার আছে তাকে সম্মান করার। ঠিক তেমনি সেই লেখকটি আজেবাজে লেখা লিখলে বা তার লেখা পাঠকের কাছে আবর্জনা মনে হলে তাকে অপছন্দ করার অধিকারও আছে পাঠকের। তবে তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে টানাটানির কোন কারন দেখি না।
হুমায়ূন আহমেদ এখন জঞ্জাল লিখছেন, এটা যেমন সত্য, তার হাত দিয়ে কিছু ভালো লেখা বের হয়েছে, এটাও সত্য। একজন ভালো লেখক ফালতু হয়ে গিয়েছেন - এটা মেনে নিয়েই আমরা যারা পাঠক, তাদের বাচতে হবে, নতুন ভালো লেখকের সন্ধান করতে হবে, ভালো লেখা পড়তে হবে ও ভালো লেখা বাচিয়ে রাখতে হবে।
তিথি আপার সাথে আমার কোনদিন দেখা হয় নি , কথা হয় নি । উনার কোন লেখায় সম্ভবত কিছু বলাও হয় নি । আজ কিছু লিখবার আগে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা আপনার জন্য রইল । শুধু মাত্র এই লেখাটির জন্য । খুব চমত্কার করেই আপনি অনেক কিছু বলেছেন । আনার ভালো লাগা মন্দ লাগা গুলোর সাথে ব্যাক্তিগত ভাবে " আমার কথা-ই" বলা হচ্ছে , এইরকম মনে হচ্ছিল ।
আপনার লেখাটির পরে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন । লক্ষ্য করলাম কিংকু ভাই খুব অসাধারণ করে অনেকেরই মন্তব্য গুলো যুক্তি সহ ব্যাখা করেছেন । " না না ... এ হতে পারেনা, হূমায়ূন আহমেদ ফালতু" এই ডিসিশন নিয়ে কেউ যখন বসে থাকেন, তাকে কি আর গঠন মূলক আলোচনায় আনা যায় ?? সুতরাং কিংকু ভাই যতই বুঝান আর অনিকেত ভাই যতই বলেন, কার্যত কোন লাভ নেই বলেই আমার বিশ্বাস । সুনীল,সমরেশ , আক্তারুজ্জামান পড়লেই হুমায়ুন আহমেদের বই টিসু পেপার এই বোধ আর চিন্তা নিয়ে যারা পড়ে আছেন তাদের টেনে নিয়ে আলোতে আনবার কোন শখ আমার নেই, শক্তিও নেই ।
আমি কেবল মাত্র আমার কথাই বলতে পারি । হুমায়ুন আহমেদের ব্যাক্তিজীবনের সাথে তার লেখক জীবন কোনভাবেই মিলিয়ে ফেলার পক্ষপাতী আমি নই । এই মহালেখকের বই আগেও পড়তাম, এখনও পড়ি , আজকেও পড়ছি ( কে কথা কয়) ভবিষ্যতেও পড়ব, ইনশাল্লাহ । কি করে ভুলে যাই তার মহান সব বইগুলোর কথা?? জোছনা ও জননীর গল্প, মেঘ বলেছে যাব যাব, অপেক্ষা, অন্যদিন,অচিনপুর, ফেরা,তোমাকে, মধ্যাহ্ন, নক্ষত্রের রাত ... আরো কত কি... কখনো নিজেকে মিসির আলী ভেবে, কখনো হিমু হয়ে , কখনো মেঘ বলেছে যাব যাব'র হাসান, কখনো অপেক্ষার ইমন, কখনো মধ্যাহ্নের ইদ্রিস হয়ে নিজেকে সেসব চরিত্রে বার বার নিয়ে গিয়েছি , কষ্ট পেয়ে বালিশ মুখে কেঁদেছি, কত গল্প পড়ে কষ্ট নিয়ে কারো সাথে কথা বলিনি, কল্যানীয়াসু গল্পটি পরেছি পঞ্চাশ বার । বার বার কি এক অব্যাক্ত যন্ত্রনায় বুক টা বিষাক্ত হয়ে যেত... কি করে এই রকম পরম অবজ্ঞায় আজ এই মহালেখক কে ছুঁড়ে ফেলে দেই ??? শুধু আঙ্গুল কাটা জগলু কংবা আজ হিমুর বিয়ে কিংবা হলুদ হিমু কালো র্যাব লিখেছে বলে ??? নাহ্ সবার মত এত অকৃতজ্ঞ আমি হতে পারব না ।
একবার একটা মন্তব্যে লিখেছিলাম, আমাদের সচলায়তনেরই লেখক কনফুসিয়াস যদি কোন কারনে আর না লিখেন, কিংবা মন মত আর না লিখতে পারেন কিংবা লিখব না বলে কলম খাতা ছুঁড়ে ফেলে দেন , আমি বলব, তা-ই করেন । আপনি জীবনে সমান্তরাল নামে যেই গল্প লিখেছেন , তাতেই সই । আপনি এর জন্যই বস । এই একটি লেখা আপনাকে আজীবন সবাইকে না হোক একজনকে হলেও কাঁপিয়ে দিতে পেরেছে ।
তেমনি করেই, হুমায়ুন আহমেদ প্রচুর প্রচুর ভালো লিখেছেন । দু" একটা আশাহীন পর্যায়ের লেখার জন্য তাকেঁ আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিতে হবে কেন??
এত সমালোচনা চলতে থাকা অবস্থাতেও কি তিনি মধ্যাহ্নের মত উপ্ন্যাস লেখেন নি ? কিন্তু কিছু মানুষ হলুদ হিমু কালো র্যাব, হিমু রিমান্ডে, আঙ্গুল কাটা জগলু পড়ে গেলো গেলো বলে মাতম তুলে ফেলেছেন । তাদের এই মাতম দেখে হাসি লাগে । এইরকম কত দেখেছি, সারা রাত হুমায়ুন কে অভিশাপ দিয়ে , গালি দিয়ে, অপ্ন্যাস নামে হুংকার ছেড়ে , গোপনে ফোন করে বলত...
নিঝুম, তোর কাছে কি শংখনীল কারাগার টা আছে ? একটু পড়তে ইচ্ছা করছে রে... হারামজাদা লিখতেও পারে ...
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
স্পাইডারম্যানের ট্যাগলাইন ছিল: With great power comes great responsibility.
বাংলায় অনেক সাহিত্যিক জন্মেছেন। কিন্তু কারও লেখা পড়ে একজন সম্ভাবনাময় তরুন খালি পায়ে, হলুদ পাঞ্জাবী পরে রাস্তায় নেমে পড়েছে এ উদাহরণ সত্যিই বিরল।
লেখক হুমায়ুন আহমেদের হাতে আছে বিশাল ক্ষমতা। সুতারাং রেসপনসিবিলিটও অন্য যে কারও চাইতে বেশি। ব্যক্তি হুমায়ুন আমজনতা হতে পারেন কিন্তু লেখক হুমায়ুন আমজনতার উর্ধ্বে।
সমকালের পক্ষ থেকে লেখক হুমায়ুনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, ব্যক্তি হুমায়ুনের নয়। ব্যক্তি হুমায়ুন মনে করতে পারেন যে হুমায়ুন আজাদ অরুচিকর লেখা লিখেন অতএব তাঁকে কুপিয়ে মেরে ফেলায় দোষের কিছু নেই কিন্তু লেখক হুমায়ুন যদি এ কথা মেনে নেন তাহলে বলতে হয় তাঁর লেখা যাদের কাছে অরুচিকর ঠেকে তাদের কেউ যদি তাঁকে কোপাতে যায় সেটাও তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
বইতে পড়েছিলাম, "দুর্জন বিদ্ধান হইলেও পরিত্যাজ্য"। লেখক হুমায়ুন আহমেদের সাক্ষাৎকারটি পড়ে মনে হয় তিনিও কালক্রমে দুর্জনে পরিনত হয়েছেন। তাঁকে পরিত্যাগ করার সময় হয়েছে।
কী ব্লগার? ডরাইলা?
নিঝুম এবং আর অন্য সবার প্রতিই একটা কথা বলি, এই লেখাটা ভেতরে জমে ছিলো অনেক দিন থেকেই। আজ লিখলাম একটানা দুম করে, মূলত মন্তব্য লিখতে গিয়ে। সেটা এই কারনেই যে, আজকে হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়ে যে সমালোচনা সেটা খুব স্বাভাবিক। এই ধরনের কথা বলার পরে তার প্রতিবাদ, সমালোচনা হওয়া খুব স্বাভাবিক। আমার নিজের কাছে যা মনে হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদ এই মুহুর্তে যাই বলুক, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়- পোস্টে বলেছি, আমার কাছে সিম্পলি মনে হয় সে পচে গিয়েছে। তারপরও এই পোস্টের কারন এই
যে, তার অনেক লেখা এক সময় খুব আন্দোলিত করেছিলো। সেইটুকু না প্রকাশ না করলে নিজেকে সত্যিই ভীষন হিপোক্র্যাট মনে হতো। এবং এই মুহুর্তে আজকের সাক্ষাৎকার নিয়ে যে প্রতিবাদ, তাদের কেউ কেউ আসলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও অন্য কোন বিষয়ে তার সমালোচনা করতেই থাকেন। করে আসছেন গত দশ-পনেরো বছর ধরেই। সেটা তারা করতে পারেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা বললাম, নইলে পাঠক হিসেবে ঋণ শোধ হয় না আমার।
আমার পোস্টে এবং অন্য পোস্টে যারা আজকের হুমায়ূন আহমেদের কীর্তি এবং বক্তব্য নিয়ে প্রতিবাদ করছেন, তারা খুব স্বাভাবিক কাজ করছেন। ভালোটা ভালো আর খারাপটা খারাপ- তাই বলাটাই স্বাভাবিক। আমি বলি নি যে, এক সময় ভালো লিখেছেন বলে এখন তাকে খারাপ বলা যাবে না। কিন্তু এই লেখককে নিয়ে কিছু মানুষ বরাবরই খারাপই বলে গেলো, ভালোটা বললো না। আমার মূল বক্তব্য দু'টোঃ
১। এখনকার হুমায়ূন আহমেদের কোন কিছুই আর আমাকে স্পর্শ করে না। সেইটুকু গুরুত্ব হারিয়েছে তার বর্তমান লেখা এবং বক্তব্য। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।
২। আজকের ইস্যু ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে যারা তার আগের লেখাগুলোকে তুলোধুনো করে নানাভাবে ব্যক্তিজীবন এবং এখনকার বস্তাপচা লেখাকেই সামনে তুলে আনেন, তাদের উদ্দেশ্যে একটু কৃতজ্ঞতাবোধ স্মরন করিয়ে দেয়া।
এই।
সুতরাং, আজকের বক্তব্য দিয়ে খুব ভালো করেছেন বলে আমি ভাবছি বলে যদি কেউ ভেবে থাকেন (আশা করি তেমনটা কেউ ভাবছেন না) তাহলে ক্ষমা করুন, আমার লেখারই দুর্বলতা। হুমায়ূন আহমেদ পচে গিয়েছে বলে ভাবছি বলার পরেও তার কথাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছি ভাবলে , আর কি ভাবে সেটা প্রকাশ করা যায় লেখায় সেটা আমাকে শিখতে হবে। আল মাহমুদের কথাও এসেছে, আমার পোস্ট প্রসঙ্গে। সেই প্রসঙ্গে আমার যা বলার বোধ হয় পোস্ট এবং এই মন্তব্যে এতক্ষনে বলে ফেলেছি। ক্লান্ত লাগছে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
ঠিকাছে..........
কী ব্লগার? ডরাইলা?
একটা ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে চাইছি।
"জোছনা ও জননীর গল্প" উপন্যাসটি আমি পড়িনি। কোথায় যেন পড়লাম (আজকের কোন কমেন্টেই কি ? ) সেখানে জামাতে ইসলামীকে নেগেটিভ ভাবে চিত্রায়িত করা হয়নি /
কথাটা কি সত্য ? যারা পড়েছেন , তাঁদের কাছে জানতে চাইছি। নিছকই কৌতুহল।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বাংলা সাহিত্য নিয়ে যে কোন আসরে বা আলাপে, হুমায়ুন নামটা এখন একটা পুলসিরাতের মতন। কোনমতে পার হয়ে সামনে চলে যেতে পারলে তুমি আজাদ (ইয়ে আজাদী ক্যায়সা হ্যায়?)। আর যদি নিচে পড়ে যাও, তো তুমি আহমেদ।
কালক্রমে হুমায়ুন আহমেদ নামটা এখন মক্কায় ঢিল খেয়ে যাওয়া পাথুরে শয়তানের চেয়ে কম ঝামেলায় নাই।
তিথির অনুভুতির সাথে ভীষণভাবে একমত। শুধু বলবো, টাইমিং-এ একটু গোলমাল হয়ে গেছে। সমকালে সাক্ষাতকারের মাধ্যমে সম্প্রতি ভিলেন বনে যাওয়া হুমায়ুনের জন্যে এই অনুভুতির প্রকাশ এই সময়ে নিরাপদ নয়। এইটা একটা ভুল সময়ের পোস্ট।
হুমায়ুনের লেখা নিয়ে যারা গালাগাল করেন, তবু ভাগ্যিস, যে তারা পড়ে-টড়েই গাল দেন। আমি হুমায়ুন পড়া ছেড়েছি বহু বহু আগে, না পড়ার তালিকায় এমনকি জোছনা ও জননীও আছে, এবং এ জন্যেই হুমায়ুন নিয়ে আমার ভাল লাগাটা এখনও বেশ বেঁচে আছে। হুমায়ুনের আগের লেখাগুলোকে আমি যদি খারাপ বলি, তাহলে আমার শৈশব কৈশোরের বই পড়ার এতগুলো সময় জাস্ট ব্যর্থ হয়ে যাবে। সেই সময়কার হাসি কান্নার অনুভুতিগুলোও আমার কাছে খেলো হয়ে যাবে। নিজের সাথে এরকম প্রতারণা করাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সায়ীদ স্যার সুযোগ পেলেই মাসুদ রানাকে গাল দিতেন, সেবা প্রকাশনীকে দোষ দিতেন, কিন্তু তিনি জানেন না, মাসুদ রানা আমার পড়ার অভ্যেস না করে দিলে সায়ীদ স্যারের দেখিয়ে দেয়া বিশ্বসাহিত্যের এত এত দরজা আমার এবং আমার মত অভাগা আরও কিছু ছেলেপেলের জন্যে চিরকাল বন্ধই থেকে যেত।
প্রায় একই কথা খাটে হুমায়ুনের বেলায়ও। একটা সময়ে সারাদিন মুখ গুঁজে বই পড়ার আজব এক নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন ভদ্রলোক। পড়ে বড় হতে হতে হুমায়ুন পড়া কমে গেছে, ভাল লাগার তীব্রতা কমে গেছে, এবং আরও অনেক ভাল ভাল লেখা পড়তে পড়তে আমি এতটাই পেকে গেছি যে একটা সময়ে আর হুমায়ুন ছুঁয়েও দেখা হচ্ছে না, কিন্তু তাই বলে ছেলেবেলার সেই শুরুর কথা ভুলে যাবো কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ডিগ্রি হাতে নিয়ে যদি বলি, ইশকুলের মাস্টারমশাইরা আমাকে আর কি-ই বা শিখিয়েছে, অ আ ক খ, তাহলে কি চলবে?
আজকের হুমায়ুন আমার চেনা জানা হুমায়ুন নয়। নিশ্চিতভাবেই তিনি ভিন্ন কোন লেখক, ভিন্ন কোন মানুষ। এতটাই যে, আমি তার সাক্ষাৎকারটুকু পড়ে দেখার মত সময় নষ্ট করতেও রাজি নই, আমার তাই পড়া হয়ে ওঠে নি তিনি কি বলেছেন। আমার জানার কোন আগ্রহও নেই। সোনালী কাবিন পড়তে পড়তেও যদি আল মাহমুদকে জামাতী বলতে আমার দ্বিধা না লাগে, হুমায়ুনকেও তার বক্তব্য বা ভুমিকার পরিবর্তনের জন্যে খারাপ বলতে আমার বাঁধবে না, নিজের কাছে আমার স্বচ্ছতা এরকমই।
*
আরেকটা কথা-
পোস্ট বা মন্তব্যের চাপান-উতোরকে সচলায়তনে সবসময়েই স্বাগতম। কিন্তু সতর্ক দৃষ্টি রেখে এবারে আমার মনে হলো, হুমায়ুন ভক্তদের ভক্তি যতটা প্রবল, তার অভক্তদের প্রাবল্যও তার চেয়ে কোন অংশে কম নয়, এতটাই যে, তা একেবারে কোটেশান মার্ক সাথে নিয়ে ব্যক্তিআক্রমণ পর্যন্ত গড়ায়- এই ব্যাপারটাই বেশ দুঃখজনক।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
মন্তব্যের ঘরে মনে হয় আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কোটেশন মার্ক ব্যবহার করেছি। বাই এনি চান্স, আপনার মন্তব্যটা কি আমার উদ্দেশ্যে করা কনফু ভাই ?
যদিও নাও হয় তবুও বলি, হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে আমার এই ধারণা একান্তই আমার ব্যক্তিগত। অনেকেই যখন বলেছেন তাঁদের পাঠাভ্যাসের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ, তেমনি আমার পাঠাভ্যাসের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সেবা প্রকাশনী তাদের কিশোর ক্লাসিক নিয়ে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ব্র্যাকের কিছু সরলীকৃত বাংলা বই, শাহরিয়ার কবির, বিভূতিভূষণ এবং আরো এমন অনেক নাম। তাই আরো অনেকের মতোই আমি হুমায়ূন আহমেদকে এ কারণে শ্রদ্ধা জানাতে পারছি না। তাঁর প্রতি আমার কিছুটা শ্রদ্ধা ছিলো, এবং সেটা কেন বিনষ্ট হয়েছে সেটাও আমি মন্তব্যে বলেছি।
কমলকুমারের নামটাকে হুমায়ূন আহমেদের সাথে টেনে আনার ব্যাপারেও আমার অভিমত দিয়েছি।
যদিও জানি না, কনফু ভাই এর এই মন্তব্য আমার প্রতিই কিনা, তবুও খুব স্পষ্টভাবেই বলে যেতে চাই, মন্তব্যে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মতামতই প্রকাশ পেয়েছে। নিঘাত তিথির মতামতের পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে আমার, এবং সচেতনভাবে ( আশা করি অবচেতন ভাবেও ) তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমন আমি করি নি এবং করার ইচ্ছাও ছিলো না। যদি কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েও থাকে, আশা করি তা দূর হবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
প্রিয় সবজান্তা,
আপনি যেহেতু জানেন যে আপনি কাউকে ব্যক্তিআক্রমণ করেননি, তার মানে হয়তো আমার মন্তব্যটা আপনার উদ্দেশ্যে নয়।
আমি বর্তমানে কমলকুমার বা হুমায়ুন- কারোরই ভক্ত পাঠক নই। সুতরাং এই দুজনের তুলনা বা মূল্যায়ন আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এটা আপনি এবং তিথি- বা আর সব পড়ুয়াদের এক্তিয়ার।
আপনার ছেলেবেলার পাঠাভ্যাস বা সেখানে হুমায়ুনের উল্লেখ নিয়ে আমার নিজের সাথে তেমন কোন পার্থক্য পেলাম না। প্রকাশ আলাদা হলেও মূল কথা একই।
অনেক ভাল থাকবেন।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
প্রিয় কনফুসিয়াস,
নিঘাত তিথি'র মন্তব্যের প্রতিধ্বনি দ্যাখি আপনার মন্তব্যেও ! আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে থাকলে, এর জবাব আমি একটু আগেই দিয়ে রেখেছি ।
আমারও একটা বাড়তি কথা- শুধু এই বিষয়ে যারা মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য করছেন তারাই কেন কেবল, সকল সচলদের মধ্যেই এমন জোর সম্পর্ক লতার মতো জড়িয়ে আছে, এমন একটা বিষয়ে অল্প-বিস্তর দ্বিমত পোষণেই সেটা নড়ে উঠবার কথা নয়- কথা নয় ছিঁড়ে যাবার ।
হুমায়ূন বির্তক কি, হুমায়ূন আহমেদ নিজে ও কিঞ্চিত হালকা হবার কথা - সচলায়তনের বন্ধন, কি সেই বাঁধনের ওজন-তুলনায় !
ভালো থাকুন ।
---------------------------------------------------------
আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
প্রিয় সুপান্থ,
আমার কথাগুলো তিথির প্রতিধ্বনি হিসেবে বলিনি, সবার পোস্ট ও মন্তব্য পড়ে যা মনে হয়েছে তাই বলেছি।
সচলদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আপনার কথা খুব ভাল লাগলো, কিন্তু এটাও জানা থাকা দরকার যে এই সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সেটা ব্যক্তি ও মত- দু ক্ষেত্রেই। দ্বিমত প্রকাশের জন্যে ব্যক্তিআক্রমণ কোন সুস্থ পন্থা নয়।
প্রসংগতঃ এই পোস্টে করা আপনার ওপরের দুটি মন্তব্যের বক্তব্যের বৈপরীত্য দেখে বিস্ময় বোধ করেছি। দুটি কথা একই কলম থেকে বেরিয়েছে, এটা ভাবতে অবাক লাগছে, এবং আপনি বেশ এলেমদার লেখক, এটাও মানতে হচ্ছে।
ভাল থাকবেন।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
হুমায়ুন আহমেদের প্রথম দিককার লেখাগুলোকে অবশ্যই আলাদা করে রাখতে হবে, এবং বাংলা সাহিত্যে নিশ্চিতভাবে স্থান পাবে লেখাগুলি। তবে সেই স্বাদ আর তার লেখনীতে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এটাও বিশ্বাস করি যে লেখক, নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, অয়োময়ের মতো লেখা লিখতে পারেন তার পক্ষে আবার পুরনো ট্র্যাকে ফিরে আসা সম্ভব।
বর্তমান প্রসঙ্গে (সাক্ষাতকার পড়ে), হুমায়ুন আহমেদকে এখন ঘৃণা করি। ঠিক যেরকম ঘৃণা করি আল মাহমুদকে, একসসময়কার বিপ্লবী এখন রাজাকারের সভার শোভাবর্ধক। কিন্তু আল মাহমুদের কবিতাগুলোকে অস্বীকার করার উপায় নাই।
সুবিনয় মুস্তফীর “হুমায়ুন তার পাঠককে সম্মান করতে জানেন না” কথাটি বড় বেশি সত্যি।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
কাউকে বলতে শুনি না হুমায়ূন আহমেদের ভালো উপন্যাসটির কথা। এখন খুব সুযোগ এসেছে পচে যাওয়া মানুষটিকে নিয়ে হাসিমুখে উৎসব করার।
-তিথি আপুর সাথে একমত। এখন তাঁর ভাল বই হাতে গোনা যাবে। কিন্তু ছোটবেলায় ভুতের গল্পগূলো অনেক মজা করে ভাই বোনরা পালা করে পড়তাম।
ব্যক্তি আর লেখক হুমায়ূনকে মিলিয়ে ফেলাটা হুমায়ূন-ভক্তদে খারাপ লাগতেই পারে। এক্ষেত্রে আমার মত হল, হুমায়ূনের লেখাগুলো অনেক বেশি ব্যক্তিগত ছিল বলেই এক রকম অভিমান থেকেই এই দুই সত্ত্বাকে মিলিয়ে ফেলি অজান্তে। আর যেকোন লেখকের চেয়ে হুমায়ূন তাঁর ব্যক্তিজীবনকে নিজের লেখায় অনেক টেনেছেন। তাঁর প্রথম জীবনের কষ্ট ও সংগ্রামগুলো পাঠকের কাছে তাঁকে "ঘরের মানুষ" করেছে। হুমায়ূন এই বিরল সুবিধাটি উপভোগ করেছেন অনেকটা সময় ধরে। সেজন্যই আজকে হুমায়ূনের ব্যক্তিগত ও লেখক সত্ত্বাকে সার্জিকালি আলাদা করা দুষ্কর, এবং আমি তা করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না।
সব মিলিয়ে একালের হুমায়ূন একটি বিরাট হতাশার নাম। যে-বয়সে একজন সাহিত্যিক তাঁর সবচেয়ে ম্যাচিউর লেখাগুলো লেখেন, সেই বয়সে হুমায়ূন কিছুই দিতে পারেননি আমাদের। তাঁর প্রথম জীবনের লেখাগুলো যে-স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তার বাস্তবায়ন হলে ভাল লাগতো।
তবে আমি সেকালের হুমায়ূনকে অস্বীকার করি না তিল মাত্র। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে অবরুদ্ধ একটা সময়ে বইমেলাকে প্রাণবন্ত রেখেছেন হুমায়ূন, বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত জীবনের নাট্যরূপ দিয়েছেন হুমায়ূন। সেজন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ, তবে তাই বলে তাঁকে আজীবন "গেট আউট অফ জেইল ফ্রি" কার্ড দেবার প্রয়োজন দেখি না।
আসুরীকরণ যতটা খারাপ, দেবীকরণও ততটাই খারাপ। হুমায়ূনকে তাঁর বর্তমান দিয়েই সবার আগে বিচার করা উচিত, এবং সেই বিচারে তিনি অনুত্তীর্ণ।
রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!
সর্বাংশে সহমত.........
কী ব্লগার? ডরাইলা?
হুমায়ূন আহমেদ পাঠকের ভেতরে জায়গা করে নিয়েছিলেন অনেকটা নিশ মার্কেট দখল করার মতো করে। আর সেই সময়টাও দেখা জরুরি। তখন বই, আরো স্পষ্ট করে বললে মুদ্রিত মাধ্যম ছিলো মানুষের বিনোদনের প্রধান খোরাকগুলির একটি। অন্য আরো উৎসগুলির মধ্যে আরেকটা স্তম্ভ ছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশন। হুমায়ূন তাঁর পাঠকদের কাছে দু'টি মাধ্যম ব্যবহার করেই পৌঁছেছেন। লক্ষ্যণীয় যে তখন বিটিভি ছাড়া অন্য কোন টিভি চ্যানেল ছিলো না, মধ্যবিত্তের সান্ধ্য অবসরটুকুর পুরো মনোযোগ বিটিভি দখল করতে পেরেছিলো। এ সুযোগ তিনি কাজে লাগাতে পেরেছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদের শুরুর দিকের উপন্যাসগুলোতে কী আছে, যা তাঁর পাঠকভিত্তি তৈরি করেছে? প্রায় সব উপন্যাসেই দেখতে পাই অসচ্ছল মানুষের মুখ, তাদের বেদনার ভেতরে পাঠক নিজের বেদনাটুকুই খুঁজে পেয়েছিলো, তাদের আনন্দগুলোকেও খুব চেনা মনে হয়েছে পাঠকের কাছে। একদিকে টেলিভিশনে এইসব দিনরাত্রি চলছে, অন্যদিকে পত্রিকায় এলেবেলে লিখছেন হুমায়ূন, মাঝে মাঝে এক একটা উপন্যাস, সেগুলির আয়তনের দিকে আর পাঠক মন দেয়নি, মন দিয়েছে উপাদানে।
হুমায়ূন কিন্তু বিটিভিতে থামেননি কখনো। এইসব দিনরাত্রির পর বহুব্রীহি লিখেছেন, অয়োময় লিখেছেন, ঈদে দুর্দান্ত হাসির সব নাটক লিখেছেন, মোট কথা, দর্শক-পাঠকের সামনে ছিলেন। যে লেখক মাসে চারদিন ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েন, তাকে সরিয়ে রাখাও অনেক পাঠকের পক্ষে মুশকিল। এখনও তিনি ঈদে নানা ভাঁড়ামোপূর্ণ নাটক লেখেন দেখেছি।
আশির দশকের শুরুর দিকের রাজনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে হুমায়ূন নিজেকে দ্রুত বিস্তার করতে পেরেছিলেন এমন এক শ্রেণীর পাঠকের কাছে, যারা বই কেনার জন্যে বইয়ের ভাঁজে পয়সা জমায়। যা তিনি ডেলিভার করেছেন, তা মূলত হিউমার আর মানুষের ব্যক্তিজীবনের তখনও অব্যক্ত কোন কিছুর মিশেল। এর আবেদন তখন পাঠকের কাছে খুব ছিলো।
হুমায়ূনের লেখার মান তাঁর খ্যাতি, বা মার্কেট পেনেট্রেশনের সাথে পাল্লা দিয়ে নেমেছে। তিনি যখন নিশ্চিত হয়েছেন, বইয়ের ওপর তাঁর নাম ছাপা থাকলে সেটি বিনা প্রশ্নে বিক্রি হবে, তখনই তিনি লেখার পেছনে শ্রম ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন, এমনটাই মনে হয়েছে আমার কাছে। সময়ের ছাঁকনি নির্ধারণ করবে হুমায়ূন আহমেদের কোন লেখাগুলি কালোত্তীর্ণ। আমার কাছে ভালো লাগে তাঁর ছোটগল্পগুলি। সেখানে তিনি খুব দাপটের সঙ্গে বিচরণ করেছেন, এবং লক্ষ্য করবেন, বুদ্ধিমানের মতো চুপ করে গেছেন একটা সময় এসে। হুমায়ূন আহমেদ গাড়ল নন, বেশ ধুরন্ধর লোক, তিনি নিজেও বোধহয় জানেন, তাঁর কোন লেখাগুলি সময়ের নিকষে উৎরে যাবে।
সময়ের সাথে হুমায়ূনের বিবর্তন নিয়ে অনেক আলাপচারিতা হয়েছে আজ, কিন্তু হুমায়ূনের পাঠকের বিবর্তনও তো দেখতে হবে। মধ্যবিত্ত পাঠকের মানসে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে নব্বই শতকের মাঝামাঝি। বিদেশী অনেক টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি এই সহস্রকের শুরুর দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে আমাদের শক্তিশালী বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলি। বিটিভি এখন লোকে বিকল্প কিছু না থাকলে দেখে। বিনোদনে উপচে পড়ছে ঘরদোর। যে দর্শক একটা সময় নিষ্পলকচোখে অয়োময় দেখতেন, তিনি বা তাঁর উত্তরপ্রজন্ম এখন হয় কিঁউকি সাঁস ভি কাভি বহু থি নয়তো ফ্রেন্ডস দেখছে। যে মোটাদাগের হিউমার হুমায়ূনের প্রায় ট্রেডমার্ক ছিলো, তার ছড়াছড়ি টিভি সিরিয়ালগুলিতে, মুভি চ্যানেলে। এতকিছুর ভিড়ে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তের জীবন নিয়ে গল্প শোনার লোক কমে গেছে। নিম্ন-মধ্যবিত্তও এখন পরের মুখে ঝাল খেতে চান। হুমায়ূনের লেখাতেও তাই মধ্যবিত্তের জীবনের ব্যাপারটা একটু একটু করে হটে গিয়ে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে উদ্ভট রস। আমি জানি না তিনি এখন কেমন লেখেন, কিন্তু শেষ যে বইগুলো পড়েছিলাম, সেগুলোর প্রায় প্রতিটিই ছিলো সুপারহিউম্যান কোন চরিত্রকে ঘিরে। সে হয় ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, নয়তো তুমুল বড়লোকের ছেলে, এবং তার কাজ হচ্ছে উদ্ভট কিছু না কিছু করে বেড়ানো, ফাঁকে ফাঁকে তীব্র প্রেমের নানা উপসর্গ, যে প্রেম মানুষকে চাঁদনি রাতে বালির মধ্যে গর্ত করে ঢুকে বসে থাকতে একরকম বাধ্য করে বা এমনধারা কিছু। যে হুমায়ূন মানুষের যাপিত জীবনকে এক ঝলক দেখানোর পন্থা দিয়ে শুরু করেছিলেন, তিনি অন্য দিকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিবর্তিত পাঠকের জন্যে তিনিও এখন পরিবর্তিত গল্প লিখছেন। বাজারে টিকে থাকতে গেলে তার আর কিছু করার নেই বোধহয়।
আমার পর্যবেক্ষণ বলে, বই পড়ার অভ্যেসও মানুষের কমে গেছে। আমি যে বয়সে ট্রেনে চড়লে ব্যাগে একটা বই থাকতো, সে বয়সী ছেলেমেয়েরা এখন কানে এমপিথ্রি প্লেয়ার গুঁজে গান শোনে, নয়তো অনর্গল মোবাইলে কথা বলে। আমাদের মধ্যবিত্ত কিশোরতরুণদের জীবনে প্রাইভেসির সুযোগ এনে দিয়েছে মোবাইল, তারা নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করা শিখেছে, কিংবা সে অধিকার আদায় করে নিচ্ছে, তারা নিজের মতো করে যোগাযোগ করতে শিখছে, এবং তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছে জিএসএম প্রযুক্তি। জরিপ করে দেখবেন, মোবাইল কোন কিশোর বা তরুণের কতটুকু সময় নিয়ে নেয়। সে হয়তো সর্বক্ষণ কথা বলে না, কিন্তু ব্যস্ত থাকে সেটিকে নিয়ে। হয় এসএমএস করে, নয়তো মিসড কল দেয়, নয়তো একটা না একটি কিছু করে সেটিকে নিয়ে। আপাতদৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও, মোবাইল প্রতিযোগিতা করছে বইয়ের সাথে যে রিসোর্সটির জন্যে, সেটি সময়। আশির দশকে বড় হওয়া গড় মানুষের সাথে নব্বই দশকে বড় হওয়া গড় মানুষের পাঠাভ্যাস তুলনা করে দেখতে পারেন প্রয়োজনে, বইয়ের পেছনে সময় দেয়া কমে গেছে ক্রমশ। যে পাঠক বইয়ের পেছনে কম সময় ব্যয় করতে চান, তার পায়ের মাপেই জুতো তৈরি করছেন হুমায়ূন। তিনি এখন বছরে একবার লেখেন, আর সারা বছর নানা উপসর্গে নিজেকে পরিচিত রাখেন। তাঁর প্রকাশকরা তাঁকে এককালীন টাকা দেয়া শুরু করেছে বহু আগে থেকেই, কাজেই বই বিক্রি নিয়ে তাদের মতটাও তাঁর যাচাই করা জরুরি বৈকি। উপন্যাসের মান আর তাঁর বইয়ের বিক্রির ওপর তেমন কোন প্রভাব ফেলছে না। একই সাথে হুমায়ূন নিজের ব্যক্তিজীবনকে বহু আগে থেকেই পাবলিক শেয়ার মার্কেটে ৫০% ছেড়ে দিয়েছেন, পাঠকও মনে করে হুমায়ূন আহমেদ কার সাথে শোবেন সে ব্যাপারে তার বলার অধিকার আছে! হুমায়ূন এখন অনেকখানি ইল-ম্যানেজড পাবলিক প্রপার্টির মতো। তিনি বইমেলায় বিপুলভাবে ব্যবহৃত হন, এ-ই।
আমরা কেন এত কথা খরচ করি? নস্টালজিয়া। হুমায়ূন আহমেদ আমি পড়ি না, কিন্তু কামনা করি তিনি ভালো কিছু লিখুন। এই কামনার পেছনে একটা অব্যক্ত বেদনা থাকে পুরনো সময়ের কথা ভেবে। এরচেয়ে বেশি কিছু নয়। আমার হাজারটা পথ খোলা আছে পাঠের জন্যে, কারো লেখার প্রতি ভালোলাগা কমে আসলে বাকি পথ আমার জন্যে খোলা।
ভক্ত হওয়া দোষণীয় নয়, তবে অতিভক্তদের আবেগের আতিশয্য কখনো কখনো বিরক্তি উর্দ্রেক করে, ব্যক্তিনির্বিশেষে। একজন রবীন্দ্র-অতিভক্ত আর একজন হুমায়ূন-অতিভক্ত কখনো কখনো সমান বিরক্তিকর। অতিভক্তরা আশা করেন, অন্য পাঠকও তাদের মতোই অবচেতনকে সমর্পণ করবেন ব্যক্তির কাছে। এ আশা বাড়াবাড়ি।
পাশাপাশি আরো বলি, তিনি আমার পাঠকসত্ত্বার প্রত্যাশা পূরণ করছেন না, অতএব তিনি একটি বদলোক, এই সরলীকরণ অন্যায়। হুমায়ূনকে আরো ভালো লেখার তাগাদা না দিয়ে লোকে নিজেই চেষ্টা করতে পারে তারচেয়ে ভালো লেখার জন্যে, অসম্ভব কিছু তো নয়। হুমায়ূন আহমেদ যদি ছাইপাঁশ লিখে ব্যবসা করতে পারেন, তো তা পারছেন তার ভোক্তাদের জন্যেই। বিকল্প ভালো কিছু দিন, তারা হুমায়ূন ফেলে আপনার লেখাই পড়বে। মরা ঘোড়া চাবকে কী লাভ?
আমি খুব হতাশ মন নিয়ে মন্তব্য শেষ করবো। হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার পড়ে মনে হয়েছে, তিনি কৌশলে একটি গোষ্ঠীকে তোয়াজ করার চেষ্টা করছে, মাহুতের সাথে বন্ধুত্ব করে বাড়ির দোর উঁচু করছেন। তিনি হয়তো এতে সাময়িকভাবে লাভবান হবেন, কিন্তু পাঠকের যে আবেগের গোড়ায় চুলকুনি দিয়ে তিনি চলেছেন এবং চলছেন, সেটি আহত হবে। তাঁর কিছু বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, কিছু বক্তব্য ব্যক্তিগত আক্রোশের দোষে দুষ্ট। ডালের আগায় বসে তিনি এই সময়ে এসে গোড়া কাটায় হাত দিয়েছেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
সিরাম বইলেছিস! শুধু এই মন্তব্য রেটিং করার জন্য 'মন্তব্য রেটিং'এর একটা অপশন চালু করতে হবে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মন্তব্য রেটিঙের ফীচারটা নিয়ে বসবা নাকি দোস্তো?
তিথি ভাই, "নিউট্রাল" শব্দটা শুনলেই আমার কেমন যেন লাগে। আমি নিউট্রাল না, আমার অনুভূতি এ ব্যাপারে মিশ্র, মৃদু অপছন্দের দিকে বলা যায়। কিন্তু হুমায়ূনকে পাইকারি হারে গালি দিতে পারি না। একটা সময় ছিলো, দুপুরে আমার মা নীল হাতি পড়ে শুনিয়ে আমাকে ঘুম পাড়াতেন। এখনও মুগ্ধ হই তার হরর গল্পগুলি পড়লে। অপছন্দের অনুভূতি এই মুগ্ধতাবোধকে এখনও অতিক্রম করতে পারেনি। যেদিন করবে সেদিন আমিও হয়তো কঠোর ভাষায় লিখবো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হিমু ভাই,
আপনার একটা মন্তব্য কেন যেন আশা করছিলাম। নিউট্রাল কিছু পাবো জানতাম বলেই। অসংখ্য ধন্যবাদ। এরপরে আর প্রায় কোন কথা থাকে না।
হুমায়ূনের ভক্ত এবং শত্রু- উভয়পক্ষই এক্সট্রিমিস্ট, এটা একটা বড় সমস্যা। আমি এক সময় প্রথম গ্রুপে ছিলাম। অনেক বছর সময়ে পেরিয়ে গিয়েছে তার লেখা পড়া হয় না, তবু হয়ত অনুভূতির সেই ফসিল রয়ে গিয়েছে বলেই এই সময়ে এই রকম একটা পোস্ট দিয়েছি!
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
হিমু ভাই লোক্টা মানুষ নাহ।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হিমু ভাই, মন্তব্যটা কি প্রথম পাতায় দেয়া যায়, পোস্ট হিসেবে ?
আর আপনার মন্তব্যের এক্টি অংশের সাথে আমি একটু দ্বিমত পোষন করতে চাই ,হুমায়ুন অতি ভক্তের সাথে সাথে অনেক হুমায়ুন অতি অভক্তও আছে যারা লিমিট ছেড়ে চলে যান , এবং ঢালাও ভাবে অনেকেই তাতে আহত হতে পারেন ।
আপনাকে একটা উদাহরণ দেই,
মঞ্জুরাউল সাহেব সুমন সুপান্থ ভাইয়ের এক লেখায় তার এক মন্তব্যে লিখেছেনঃ
হুমায়ূন সেই ‘শ্যালো-পাঠকশ্রেণীর’ ‘সিদ্ধার্থ’ যারা গার্মেন্ট নারী শ্রমিক মিছিল করলে বলে-‘িফডা মাগিগোরে’।দেশি ব্যাটসম্যানকে আম্পায়ার আউট দিলে বলে-‘ফিডা অশোকারে’। এরশাদ লুচ্চামি করলে বলে- ‘কোপা সামসু’।
অবাস-ব স্বর্গপুরির স্বপ্নালোকে যারা অশ্বা,মেনকা,রম্ভাদের কেলিনৃত্য দেখে উরু চুলকোয়...।
আর কিছু কি বলার আছে।।
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
একমত।
আমার মনে হয় আলাদা পোস্ট না দিয়ে প্রাসঙ্গিক পোস্টে আলোচনা বিস্তৃতির অভ্যাস করলে সুবিধা হয়, পরবর্তীতে খন্ড খন্ড আকারে না থেকে একই পোস্টে পুরোটা পড়া যায়। এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত, আমি এ চর্চাটা করি। প্রথম পাতায় আলাদা করে দেয়ার মতো নতুন কিছু এ মন্তব্যে নেই, চর্বিত চর্বণ শুধু।
হাঁটুপানির জলদস্যু
নিম্নমানের পাঠক হয়েও মন্তব্য করার ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী...
আমি সত্যিসত্যি দেশি ব্যাটসম্যানকে আম্পায়ার আউট দিলে বলি-‘ফিডা অশোকারে’..."মাঝেমাঝে কেলিনৃত্য দেখে উরু চুলকোনো"র অভ্যাসও অস্বীকার করতে পারবনা...আমার হাসি, আমার কান্না, আমার ক্রোধ,আমার ক্ষোভ-এখনো এইসব সাধারণ পাবলিকদের মত...তাই একটা সময় সাধারণ পাবলিকের মতই হুমায়ুন আহমেদ আমাকে 'নিশা' লাগায়াছিলেন...বলতে লজ্জা নাই-আমার 'নিশা' এখনো কাটে নাই...
আল্লাহর কাছে দোয়া করি-সাধারণ পাবলিকের চেয়ে বেশি সাহিত্য সেন্সও আমাকে কখনো দিয়োনা...পাবলিক যে চালের ভাত খায়, সেই চালের ভাত যদি খাইতে পারি,-পাবলিক যে রাইটার এর লেখা খায়, আমিও যেন সেই লেখা খাইতে পারি!
আমি যেন পাবলিকই থাকি!
বাংলা সাহিত্যের শিল্পমান বিচার করার, সাহিত্যের কৌলীন্য রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব আমারে তুমি দিওনা!
--- --- --- --- --- --- --- --- --- --- --- ---
মন, সহজে কি সই হবা?
চিরদিন ইচ্ছা মনে আল ডাঙ্গায়ে ঘাস খাবা।
"অনেক তো হলো, এতদিনেও যদি বাংগালী গুনীর গুনের কদর না দেয়, এতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকে তো আর কবে?"
আপনার সাথে একমত।
বাংগালী জাতি হুমায়ূন আহম্মদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
রূপক কর্মকারকে দেওয়া সাক্ষাতকারে কবি আবু হাসান শাহরিয়ার কেন এই লেখাটির প্রশংসা করেছিলেন, তা বেশ বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ নিঘাত তিথিকে।
*******************************
'ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত'
-সুভাষ মুখোপাধ্যায়
*******************************
'ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত'
-সুভাষ মুখোপাধ্যায়
আমার সারাটা বিকেল কেড়ে নিলেন তিথি এই পোষ্টটা দিয়ে। অনেক কিছু জানলাম। আমি নিতান্তই গোবেচারা টাইপ পাঠক, তাই বেশী কিছু বলার স্পুর্ধা নাই। আমি লেখক হুমায়ুন কে কখন ভুলবনা, অসম্মান করবনা, তার অবিস্মরণীয় কিছু লেখার জন্য।
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
নতুন মন্তব্য করুন