কুয়ালামপুরে বসে লিখছি। আমার এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি সত্যি সত্যি দেশে যাচ্ছি!
এরকম হয়, যে ব্যাপারগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি উতসাহ, আগ্রহ, প্রত্যাশা, অপেক্ষা বা এমন যেকোন ভালো লাগা বা কষ্টের অতি মানবীয় আবেগ জড়িয়ে থাকে, সেই ব্যাপারগুলো চোখের সামনে চলে এলে আমি ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারি না। এয়ারপোর্টে তারুকে ফেলে যখন ইমিগ্রেশান পার হচ্ছিলাম, তখন আবার এটাও বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে আমি সত্যি একা যাচ্ছি। তারুর সাথে যেকোন কিছু শেয়ার করে নিতে ভালো লাগে। নিশ্চিন্ত লাগে। আজ প্লেনে মোবাইল ফোনটা সুইচ অফ করবার পরেও কতবার যে কত কারনে ওকে কল করতে ইচ্ছা করেছে...। জানা কিছু ব্যাপার, তবু কথা বলে মিলিয়ে নিতে ভালো লাগে। মানুষ আজব ভীষণ। একই সাথে ভালো লাগা আর কষ্টের মিশেল দিয়ে কি যেন আজব এক আজব অনুভূতি হয়। এতদিন পরে দেশে যাচ্ছি সেই আনন্দ, আবার সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে ছেড়ে দশটা দিন আলাদা থাকাটাও অনেক কষ্টের। এই মানুষটার কাছে থাকবার জন্যই তো দেশ আর বাবা, আপু, বন্ধুদের ছেড়ে আসা!
কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে এই প্রথম এলাম। অনেক গরম বাইরে। নেমেই একটা মজার ব্যাপার হলো, দু'টো বাংলাদেশি ছেলে, এখানেই থাকে বোধ করি, আমাকে নিয়ে ছোটখাট একটা গবেষণা চালালো। একজন নিশ্চিত, আমি বাংলাদেশি, দেখে নাকি মনে হয় বাংলাদেশি মেয়ে না হয়ে যায়ই না। আরেকজনের দ্বিধা আছে। ফাইনালি তারা এইসব কথা আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বাংলায়ই বললো, আমি কিছু বুঝি নাই ভাব করে থাকি, কি দরকার বেচারা স্বদেশী ভাইদের বিব্রত করে। একটা ব্যাপার ইন্টারেস্টিং লাগে, বাংলাদেশি, ভারতীয়দের অন্য দেশের মানুষেরা গড়পরতা ভারতীয়ই মনে করে, কিন্তু কোথাও একটা অন্যরকম তো আছেই। আমরা কেমন করে বুঝে যাই, কে বাংলাদেশের আর কে ভারতের!
নেমেই ভাবলাম, একটু নাস্তা করে কফি খাই। এক্সপেরিমেন্টের ঝামেলায় না গিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসেই ঢুকে গেলাম। কিন্তু যেই কফি খাওয়ার উদ্দেশ্যে গেলাম তাই নেই। মানে আছে, কিন্তু কেবলই ব্ল্যাক কফি। ক্যাপুচিনো, লাটে--এইসব কিছু নেই। আমার ব্ল্যাক কফি একেবারেই চলে না। চা-কফির মধ্যে অনেক দুধ থাকবে, আর সেই সাথে গাঢ় লিকার, এবং খানিক চিনি- এই হলো আমার আদর্শ চা-কফি। সেই বিচারে লাটে খুব প্রিয়, ইদানিং ক্যাপুচিনোও ভালো লাগে। কাজেই কেবল পানিই নিলাম। আজ প্লেনে পড়ছিলাম এয়ার ট্রাভেলিং-এর সময় পিউর পানি আর জুস ছাড়া অন্য যেকোন ড্রিংক্স না নেয়াই উচিত, ওগুলো আরো শুষ্ক করে দেয় শরীর, উচ্চতায় তো এমনিতেই শুষ্ক থাকে। তো অর্ডার করে অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পে করতে পারলাম ঠিকই কিন্তু চেঞ্জটা দিলো মালয়েশিয়ান রিংগিটে! ৮.৪৫ রিংগিট হয়েছিলো বিল, আমি দিলাম ৫০ ডলার, আর ফেরত পেলাম ১২৫.৫৫ রিংগিট। খুচরা পয়সাগুলো দেখেও মজা লাগছে। কিছুমিছু কেনা যেতো, কিন্তু লাগেজ তো অলরেডি ফুল...।
এখন যে নেট সার্ফিং করছি সেটা কে.এল. এয়ারপোর্টের ফ্রি সার্ভিস। দুই ঘন্টার জন্য ফ্রি। কানেক্ট করার আগে এই রকম হুমকি দেখেই করলাম যে, এটা সিকিউরড নয়, যে কেউ দেখতে পারবে। কিন্তু আসলে কিছু হবে না মনে হয়। বসে বাংলা লিখছি, কেউ বুঝলে তো! অবশ্য ক'দিন ধরে জিমেইল, ফেসবুকে কেউ আমার একাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করছে, ইমেইল আসে, আমি নাকি নতুন ইমেইল সেট করতে চেয়েছি বা ইনফর্মেশান বদলাতে চেয়েছি। কোন ফাজিল যে এই কাজগুলো করে?
একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে, কফিটা খেতে পারলে খুব ভালো হতো। মালয়েশিয়ান সময়ে সাড়ে নয়টা বাজে মাত্র। আমার ঢাকার ফ্লাইট আরো সাড়ে চার ঘন্টা পরে, কেমনে যে পার করি। বই আছে একটা সঙ্গে, মাহমুদুল হকের "প্রতিদিন একটি রুমাল", পড়ি। আচ্ছা আমি কি সত্যি দেশে যাচ্ছি? আজকে সত্যি বাবার সাথে দেখা হবে? একে একে সবার সাথে? আর আমার দেশটার সাথেও? এখনও মাথায় ঢুকছে না। গতকাল এক বড় ভাই উপদেশ দিয়েছেন, খুব সাবধানে থাকবেন, বাংলাদেশ এমন এক উইয়ার্ড দেশ, সব ঘটা সম্ভব। হায়, সেই উইয়ার্ড দেশটাকে দেখবার জন্যই তবু মন কেমন করে..."প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যপ্রাতে/ প্রতিদিন তোমার কথা হৃদয়ে জাগে/ ও আমার দেশ/ ও আমার বাংলাদেশ"।
আর এই দশটা দিন.........পার করে দিস তারু, ভালো থাকিস, প্লিজ। আর তাড়াতাড়ি চলে আয়। তোকে ছাড়া কোন আনন্দই পরিপূর্ন হয় না যে আমার...।
মন্তব্য
যা, দেশে তো যাচ্ছিস তবু ... । আমার তো তা ও হচ্ছে না । ভালো কাটুক সময় । তারুর কথা চিন্তাকরিস্না । আসবে নে । ভালোই থাকবে ও ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
আহা, চমৎকার! দেশে যাবার জন্য অভিনন্দন আপনাকে তিথি। প্রিয়জন দ্রুতই এসে পড়বে। মাঝে মাঝে জানেন, একটু দূরে যাওয়া ভালো, তাতে টান আরো বাড়ে।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এয়ারপোর্টে বসে আমারো এরকম লেখার শখ। একবারই সুযোগ হয়েছিল, লন্ডন হিথ্রোতে। ল্যাপটপ খুলে এমনি দেখছিলাম কোন লাইন আসে কিনা। এসেছিল দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিলাম। পরক্ষণেই যখন পাউন্ড চাইলো, তখন চুপসে গিয়েছিলাম
কুয়ালালামপুর তো উদার মনে হচ্ছে।
দেশে যেয়েও ব্লগানো চলতে থাকবে মনে হচ্ছে
ভালো লাগলো। বাংলাদেশ ভ্রমণ আনন্দময় হোক
শুভ দেশভ্রমণ।
আমি কে কোন জাতি সেটা মোটামুটি চিহ্নিত করে ফেলতে পারি।
ছবি তুলুন প্রচুর। সচল চেয়ে আছে।
[ব্ল্যাক কফি আমার-ও সহ্য হয় না। উপায় না দেখলে আদা বা কাঁচামরিচ দিয়ে খাই। :P]
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
স্বাগতম।।
পড়ে খুব ভালো লাগল আবেগঘন এই লেখাটুকু পড়ে। আমি নিশ্চিত যে এই লেখাটি পড়ে আপনার প্রিয়জনের খুবই ভালো লাগবে।
সুখে থাকুন।
বাকবাকুম
স্বদেশে স্বাগতম!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ভ্রমণ হোক আনন্দময় ....
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিহ্মা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃহ্মমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আহলান সাহলান তিথী ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
দেশে যাবার কী আনন্দ...!!
লেখায় সে আনন্দ ছড়িয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
- তারুরে মাঝে মধ্যে হিংসাই হয়। গত এক বছর ধরে হিংসাটা বেশি বেশি হচ্ছে, আগে কিন্তু এমন হিংসুটে ছিলাম না আমি মোটেও!
ভাবলাম বুঝবে ব্যাটা এবার মজা। কীসের কি, মোটে দশ দিন! তাও 'কল্যানপুর এয়ারপোর্ট' থেকে এমন মায়াভরা একটা চিঠি যে পায় তার মজাতে দাঁত কেলিয়ে হাসা যায় না। কী জানি, হিংসাটাও ঠিকমতো বের হয় না। শুভকামনা জানাতে ইচ্ছে হয় খালি। দু'জনকেই। আপনারা জীবনের পুরোটা সময় এভাবেই একে অন্যের সাথে মিলিয়ে নিন জানা বিষয়গুলোও। প্রিয় মানুষটার সাথে যেনো দশটা দিনেরও বিরহকাল কাটাতে না হয়। সবসময় ভাগাভাগি করে নিন আনন্দের মুহূর্তগুলো, দুঃখের মুহূর্ত যেনো অনেক দূর দিয়ে চলে যায় সব।
দেশটাকে নিয়ে লিখেন সময় করে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
স্বাগতম
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার "এক নদী রক্ত পেরিয়ে" শুনে মুগ্ধ হয়ে ছিলাম বেশ কিছুদিন, ভাল লাগাটা জানিয়ে রাখলাম।
লেখাটা পড়েও খুব ভাল লাগল।
সাধারনতঃ কেউ দেশে যাওয়া নিয়ে পোষ্ট দিলে আমি পড়তে চাই না, পড়ি না।
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে? (আমি--)
দোনোমনো করে শেষ মেশ পড়েই ফেললাম।
খুব ভাল লাগল তিথি।
সারাটা লেখায় প্রিয় মানুষ আর প্রিয় দেশের জন্যে বড় কোমল একটা অনুভূতি জড়ানো। মনটা দ্রবীভূত হয়ে এল।
দেশ ভ্রমন আনন্দের হোক তিথি।
সবার দেশে ফেরা হয় না।
যারা ফেরে তাদের জন্য আমি আর হিংসা জমিয়ে রাখব না।
কারন তাদের সবার সাথে আমার একটা অংশ দেশ ঘুরে আসে---
সেইটাই বা কম কী
অনেক শুভেচ্ছা
আহারে।
কী মায়াময় একটা লেখা।
দেশে ব্যাপক ভালো কাটুক সময়।অনেক অনেক ভালো থাকো আপু
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নিশ্চয়ই এতক্ষণে পৌঁছেই গেছেন... স্বাগতম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শুভ যাত্রা।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
ভালোভাবে ফিরে আসেন। তারেক ভাইও ঠিক থাকবেন আশা করি।
"Life happens while we are busy planning it"
তোর কথা শুনেতো আমারো দেশে যাবার লোভ হচ্ছে। কতোদিন হয়ে গেলো .....এই বিদেশে পড়ে আছি! দেশে তোর সময় ভালো কাটুক এই কামনা রইলো...
মূর্তালা রামাত
স্বাগতম আপু, দেখা করার ইচ্ছা রইলো!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
সেই উইয়ার্ড দেশটাকে দেখবার জন্যই তবু মন কেমন করে..."প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যপ্রাতে/ প্রতিদিন তোমার কথা হৃদয়ে জাগে/ ও আমার দেশ/ ও আমার বাংলাদেশ"।
দেশ ভ্রমন আনন্দময় হোক তিথী
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন