... আসলে অজন্তার কোন অলটারনেটিভ ছিলো না। সুতরাং বাধ্য হয়েই...।
সমস্ত গন্ডগোলের মূলে ছিলো তার মা। আরে বাবা, মেয়েটা নাহয় ফড়িং হয়ে একটু বেশিই উড়ে বেড়াচ্ছিলো- তা উড়ুক না, এ তো ওড়ারই বয়স। তাই বলে তার পাখা কেটে ফেলার ষড়যন্ত্র ! এ বড্ড বাড়াবাড়ি। অজন্তা যে প্রতিদিন ইউনিভার্সিটি থেকে দেরীতে বাড়িতে ফিরতো সে তো আর এমনি এমনি নয়- কাজ আর ব্যস্ততার চাপে। কে না জানে ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে পড়া আনকোরা জীবনটা কত ব্যস্ততার! কাজের কি আর শেষ আছে- কার্জন হল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই তো কত সময় লেগে যায়।তার ওপর টি.এস.সি. তে "DU" এর পর A থেকে Z লাগিয়ে কত সংগঠন! সবগুলোর সদস্য না হলেই নয়। নতুন বন্ধুদের সাথে জম্পেস আড্ডাটাও কি কম ইম্পর্ট্যান্ট? এর মাঝে ক্যাম্পাসের আশেপাশের দর্শনীয় স্থানে ঘোরাঘুরি। এই সব কিছুর ফাঁকে কাস-প্র্যাকটিকাল তো করতেই হয় (যন্ত্রণা)। সুতরাং এতদিক রক্ষা করে অজন্তা যে সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতো সে-ই ঢের। কিন্তু অজন্তার মা এসব বুঝলেন না। মেয়ের ওপর কড়া শাসনের ব্যর্থ চেষ্টা করে তিনি পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, বেয়াড়া মেয়েটাকে বিয়ে দিতে হবে।
অজন্তার মাথায় পুরো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। মাকে শত অনুনয় করেও লাভ হলো না। সামনে পুরো জীবন, ক্যারিয়ার, এনজয়মেন্ট--এর মাঝে বিয়ে নামের যন্ত্রণা! রক্ষে করো ঈশ্বর, অজন্তাকে বাঁচাও। ঈশ্বর শুনলেন, অজন্তাকে বাঁচানোর পথ বের করে দিলেন। হবু বর নামক শত্রুর সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো সে। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় অজানা কণ্ঠের ফোন--সে-ই। সুযোগ পেয়েই নানান মিথ্যে অজুহাতে বিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা চালালো সে। পাত্র অনড়, অজন্তা যে সমস্যার কথাই বলে বিরক্তিকর রকমের ভদ্র বর বলে "It's ok,No prolem"। এরপর প্রতিদিন তাকে জ্বালাতে আসতে শুরু করলো ফোন। কোন উপায় না দেখে অজন্তা একদিন তাকে বলে বসলো, "আমার একজনে সাথে অ্যাফেয়ার আছে....", তখনও প্রতুত্তর "It's ok,তোমার বয়সে এটাই স্বাভাবিক। "No problem,বিয়ের পর আমি এসব মনে রাখবো না"-!!! প্রায় হাল ছেড়ে দিয়ে অজন্তা প্রতি রাতে আতংকে থাকে কখন যেন নির্লজ্জ, নাছোড়বান্দা লোকটার ফোন বেজে ওঠে। অবশেষে শেষ চেষ্টা হিসেবে অজন্তা একদিন তাকে সত্যি কথাই বলে। বলে তার স্বপ্নের কথা, তার পড়াশোনা, স্বাধীনভাবে ক্যাম্পাস-জীবন কাটানোর ইচ্ছা, একটা ব্রিলিয়ান্ট ক্যারিয়ার....। টেলিফোনের অপর প্রান্ত নি:শ্বব্দে সব শোনে, বুঝতে পারে একটা উজ্জ্বল জীবনের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা...এবং অবশেষে ধীরে ধীরে ছোট্ট করে বলে "ok dear, তোমার স্বপ্নই সত্যি হোক, ভালো থেকো।"
অত:পর...। আতংকের সেই ফোনটা আর আসে ন। অজন্তা ভাবে বুঝি বাঁচা গেলো। বাঁচতে গিয়ে দ্যাখে কিসের অপেক্ষায় যেন সমস্ত দিন বড্ড ফাঁকা। প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রিয় ব্যস্ততাগুলো অর্থহীন--রাত নামে, বাড়ে প্রতীক্ষা। নিজের অনুভবের হঠাৎ পরিবর্তনে হতবাক নিজেই সে ভাবতে থাকে "Is it really ok?"
এরপর একদিন চূড়ান্ত দ্বিধা আর ভয় নিয়ে ভীষন কাঁপা হাতে অজন্তা আঙুল ঘোরায় এক অনভ্যস্ত নম্বরে, পরিচিত কণ্ঠস্বরের আশায়...।
আসলে অজন্তার কোন অলটারনেটিভ ছিলো না। সুতরাং বাধ্য হয়েই...
-----------------------------------------------------------
এটা অনেকই পুরনো লেখা। নিজেদের পত্রিকা "যুযুধান"-এ প্রথম ছাপা হয়েছিলো। এরপর সামহোয়ারইন-এ। আমার এই লেখাটা নিয়ে তেমন কোন উচ্ছ্বাস নেই, কিন্তু যাদের আছে এমন ক'জনের কথা ভেবে এখানে রিপোস্ট করলাম, তাদের মধ্যে একজন, আনোয়ার সাদাত শিমুল। শিমুলকে এটা উৎসর্গ করলাম।
এই গল্পের নামকরণ আমার করা নয়। ছয় বছর আগের সেই কৃতজ্ঞতা কাছের মানুষ বলেই হয়তো কখনও জানানো হয় নি। আমার বন্ধু তারেক অথবা ব্লগার কনফুসিয়াস, কৃতজ্ঞতা ডিয়ার
মন্তব্য
গল্পটা সুন্দর!
ধন্যবাদ।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
পুরান লেখা ... তবে পড়তে খারাপ লাগে নাই
বেশি বেশি লেখেন ...
ছোট্ট সুন্দর আর মিষ্টি গল্প
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
সুন্দর গল্প।
তারেক নামটা এত কমন ক্যান? আমাদের পাড়ায় তিনটা তারেক ছিল। ব্লগেও কনফুদা, আমি কই যাই? এই জীবনে আমার নিজের কইরা একটা নাম পাওয়া হইল না। আফসোস, বড়ই আফসোস। (sigh!)
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
ঠিক, তারেক বারেকে ভইরা গেলো দেশ। আরেকজন আছেন তো ব্লগে কাছাকাছি, আপন তারিক।
কানে কানে বলি, এই নামটা তো সুন্দরই লাগে আমার কাছে। এটাকে ছোট করে কত মিষ্টি করে যে ডাকা যায়!
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
হয়ত (বা আসলেই) এই বিরক্তিটুকু অজন্তার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলছিল। অজন্তা যখন পাল্টা ডায়াল করল, তখন সে আসলে ঐ বিমূর্ত সত্যটাকে আকশি দিয়ে পেড়ে আনল মাটিতে। কখনো কখনো নাটক গল্পকে ছাড়িয়ে আরেকটু সামনে যেতে চায়, এই গল্পে সেরকম নাট্যসম্ভাবনা দেখি। নাটক নিয়ে আমার মাথাব্যথা নাই খুব, আমি এই তুলনা দিয়ে গল্পের বাউন্ডারি চিহ্নিত করতে চাইছি।
..........................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
অনেক ধন্যবাদ মূল্যবাদ মন্তব্যের জন্য। এই গল্পে কি আছে জানি না, একটা অসম্পূর্ণতার জন্যই কিনা, অনেকেই এর পরে আরো কিছু খুঁজে। এটাকে আমি আরো একটু বাড়িয়ে লিখি, এমন বলে। বা নাট্যসম্ভাবনার কথাও শুনলাম আজ। আমার অবশ্য গল্পটাকে এই জায়গায় ঠিক এমনি করেই থেমে যেতে দেখেই ভালো লাগে।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
গল্পটা চমৎকার । সামহোয়্যারইনে পড়িনি আগে.....
কি মাঝি? ডরাইলা?
রিপোস্ট করেছেন দেখে আবার পড়া শুরু করলাম। মন্তব্য কি লিখবো -সেটা মাথার ভেতর তৈরি হচ্ছিলো অটোমেটিক্যালি। ফুটনোটে এসে তো থ মেরে গেলাম। করেছেন কী!!!
সবিশেষ কৃতজ্ঞতা।
যে মন্তব্যটা করার কথা ছিলো:
আমার পড়ালেখার পরিধি খুব সীমিত। ছোটোগল্প বা অনুগল্প যা পড়েছি তার পছন্দের তালিকা যদি করি তবে প্রথমদিকে থাকবে প্রজাপতির '---অতপর!'
ব্লগিং জগতে আমার বয়েস তখন ১৫/২০ দিনের মতো হবে। সামহয়ারে লেখাটি পড়ে আমি বিমোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। অসাধারণ এ লেখা আমি কয়েকজনকে জোর করে পড়িয়েছি (এ বদঅভ্যাসটা আমার মাঝে প্রবল)। যারা পড়েছেন, তারাও মুগ্ধ। প্রজাপতিকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এরকম চমৎকার একটি লেখার জন্য। প্রত্যাশা নয়, দাবী থাকবে - এরকম দূর্দান্ত আরো লেখা চাই। ঋদ্ধ হোক প্রজাপতির লেখার হাত এবং ব্লগ পাতার আজ ও আগামী।
সবিশেষ কৃতজ্ঞতা শিমুল।
কিংকং, শ্যাজা, তারেক, দ্রোহী ভাই সবাইকে ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আপনার আরেকটা লেখা পড়েছিলাম পত্রিকায়, নাম সম্ভবত 'জীবন ও মৃত্যুর স্বপ্ন' কিংবা এরকম কিছু। সময় পেলে ওটা ব্লগে তুলে দিয়েন।
সেরেছে! ওইটাও পড়েছেন?
ওটার তো কোন ড্রাফট নেই আমার কাছে। পেপারটাও কালেকশানে নেই। আম্মু কই যেন রাখত সব খুব যত্ন করে, জানিও না...
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
:(। ওকে।
পত্রিকাটা সম্ভবত: আমার বাসায় আছে, গত ডিসেম্বরে দেখেছিলাম। নেক্সট টাইম ঢাকা গেলে চেক করে জানবো।
শুকরিয়া। ওটা খুব ছেলেমানুষী লেখা ছিলো, পিচচী ছিলাম তখন।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
শিমুল ভাই এর পছন্দ আছে বলতে হয়!

অসাধারণ অণুগল্প ।
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
নতুন মন্তব্য করুন