স্মৃতির শহর ৩ : উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ

তাসনীম এর ছবি
লিখেছেন তাসনীম (তারিখ: বুধ, ০৩/০৩/২০১০ - ৯:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশ আর আমি প্রায় সমবয়েসী। আমাদের জন্ম কাছাকাছি সময়ে, আমরা বেড়েও উঠেছি প্রায় একই সঙ্গে। আমি যেবার স্কুলে ভর্তি হই, তার কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশকেও ভর্তি করা হয় সেনাবাহিনীর পাঠশালায়। আমি কলেজে ভর্তি হতে হতে বাংলাদেশে সামরিক শাসনেরও দশ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে, আর আমি যখন কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা জীবনে পা রাখলাম, বাংলাদেশও তখন সামরিক ভূত গা থেকে ছেড়ে গনতন্ত্রের দিকে পা বাড়িয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আমার চোখ দিয়ে যেন বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখি।

যেই স্বপ্ন নিয়ে আমরা দুজনই জীবন শুরু করেছিলাম, সেই স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস শুরু হতে জন্মের পরে আর বেশিদিন লাগেনি। আমার এই লেখাটা আমার বাংলাদেশকে নিয়ে, বালক এবং কিশোরের চোখে দেখা স্বপ্নভঙ্গের গল্প, মুক্তিযুদ্ধের মূল সুর থেকে সরে আসার গল্প। আমি কোন ইতিহাস বলতে চাইছি না, না কোন গবেষণা প্রবন্ধ, এটা শুধু আমার নিজের অভিমানের গল্প। এই গল্পে নতুন কোন অজানা তথ্য নেই।

১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে ভর্তি হই আমি স্কুলে। ভেবে দেখবেন সময়টা, মাত্র কয়েকমাস আগেই বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন তাঁর নিজের বাসায়, নিজের দেশের সেনাবাহিনীর একাংশের হাতে। সেনাবাহিনীর আরেক অংশ যে খুব বাধা দিয়েছিল তা নয়, মনে হয় সবাই মনে করেছিল সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলাই বোধহয় তাঁর প্রাপ্যই ছিল। অল্প কয়েকদিন পরেই জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছেন সিপাহী জনতার বিপ্লবে, দেশে শৃংখলা ফিরে এসেছে, বহু প্রত্যাশিত শান্তি যেন পাওয়া গেছে।

মুজিব যখন নিহত হন, তখনও জেলে আটকা পড়ে ছিল অনেক যুদ্ধাপরাধী। এত মানুষকে হত্যা করেও একজনকেও ঝুলতে হয়নি ফাঁসির দড়িতে। জেলে ঢুকে এদের অনেকেই প্রাণে বেঁচেছে, নইলে হয়ত মুক্তিবাহিনীর হাতেই জীবন শেষ হত ওদের। মুজিবের সাধারণ ক্ষমা ছিল শুধু “পাতি রাজাকারদের” জন্য, কিন্তু বড় রাজাকারগুলোকে কেন তিনি জেলের ভেতর পালছিলেন, সেটা আমার বোধগম্য হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ার প্রথম দোষটা আমি বঙ্গবন্ধুকেই দেব। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদেরকে শুধু ছেড়েই দিলেন না বরং ধীরে সুস্থে বেশ প্রতিষ্ঠিত করলেন তাদের। জিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন শাহ আজিজ, যিনি একজন স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন, গোলাম আযমও দেশে ফেরে একই সময়ে। এত কিছু সত্ত্ব্বেও মানুষ কিন্তু ভুলেনি মুক্তিযুদ্ধকে। তখনো পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধও কোন দূরের কোন ঘটনা নয়, মানুষের মনে তার স্মৃতি বেশ ভালো ভাবেই জেগে ছিল।

আমাদের ক্লাস ওয়ানের পঁয়ত্রিশ জন ক্লাসমেটের মধ্যে দুজন আছে যাদের বাবা মারা গেছেন যুদ্ধে। আমরা সবাই তাদের সমীহ নিয়ে দেখতাম, শিক্ষকরা স্নেহ করতেন বেশ, মাঝে মাঝে এগুলো নিয়ে কথা বলতেন। মনে আছে কয়েক বছর পরে ক্লাস ফাইভে উঠে নজরুল ইসলাম স্যার বেশ জোর করে ওদের ফ্রী স্টুডেন্টশীপ করে দেন, ওরা অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান, ওরা যথাসাধ্য আপত্তি জানালো, সরকারি স্কুলে বেতনই বা কতো। কিন্তু স্যার নাছোড়বান্দা, শেষে উনি বললেন, “বাবা, তোদের জন্য কিছু করতে পারলে আমার নিজেরই ভালো লাগবে, আমার জন্যই তোরা এটা নে।”

আমরা স্কুলের মাঠে বসে শুনেছি আমার শহীদ পরিবারের বন্ধুদের বাবাদের বীরত্বের গল্প। এঁদের একজন ছিলেন বিমান বাহিনীর তরুন অফিসার, তাঁকে গুলি করে হত্যা করে তাঁরই এক সহকর্মী। তাঁর স্ত্রী, স্বামীকে হারান খুব অল্প বয়েসে, দুটি ছোট বাচ্চা নিয়ে প্রায় অকূল পাথারে পড়েন তিনি। বাংলাদেশ বিমানে একটা চাকরি করতেন খালাম্মা, তাঁর মেয়েটাকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে দিয়েছিল, যক্ষের ধনের মত তিনি ছেলেটাকে মানুষ করছিলেন। ধরা যাক এই ছেলেটির নাম বারেক, আমার শৈশবের সহপাঠী। আমরা বা আমার বাকি সহপাঠীরা আজও ভুলিনি ওদের সেই কষ্টটা।

জিয়া নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, বীরোত্তম ছিলেন, এতগুলো বিশেষণ থাকার পরেও কেন তিনি দেশকে পাকিস্তানের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন? আমার কাছে মনে হয়েছে কারণটা হয়ত পুরোটাই রাজনৈতিক, তিনি আওয়ামী লীগের বিপরীতে একটা প্ল্যাটফর্ম গড়তে চেয়েছিলেন, জাসদ একটা দাঁড়ানো প্ল্যাটফর্ম ছিল কিন্তু মুসলিম প্রধান দেশে জাসদের সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা “পাবলিক খাবে না”, তাই ইসলামকেই পুঁজি করলেন তিনি, যদিও তাঁর ক্ষমতায় আরোহনের পিছে জাসদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আদর্শ টার্দশ নিয়ে ভাবলে মনে হয় রাজনীতি হয় না।

জিয়ার আমলে নিউজ পেপার পড়লে ১৯৭১ সম্বন্ধে কোন কিছু জানাটা খুব জটিল ব্যাপার বলে মনে হবে। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে পত্রিকাগুলো ক্রোড়পত্র বের করত ঠিকই, কিন্তু সেগুলোতে কখনও পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বা রাজাকারদের উল্লেখ থাকত না তার বদলে “হানাদার বাহিনী” আর “তাদের দোসর” বলা হত। অনেকটা ভাসুরের নামের মত, উহ্য রাখা হত আসল ইতিহাস। সেই সময় পত্রিকা ছাড়া আর বইপত্র ছাড়া আর খুব কম উপায় ছিল ইতিহাস জানার, স্বাধীনতার উপর খুব বেশি বইও লেখা হয়নি তখন সুতরাং খুব আগ্রহী কেউ ছাড়া কারো পক্ষে সত্যিকারের ইতিহাস বের করা বেশ জটিল ছিল।

জিয়াউর রহমান অনেকগুলো সামরিক অভ্যুত্থান মোকাবিলা করেন, যেগুলো তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর হাতে দমন করেন। শোনা যায় তিনি সেনাবাহিনীর ভালো কোন অফিসারকে নেতৃত্বে রাখেন নি, পাছে তারা ক্যু করে বসে। লম্পট জেনারেল এরশাদকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা বোধহয় তাঁর সেই নীতিরই প্রতিফলন, যদিও এটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে মনে হয় আমার। নিয়তির অনিবার্য পরিণতি একদিন জিয়ার ভাগ্যেও এল, স্ত্রী পুত্রকে ফেলে নিজের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধ করা এই সমর নায়ক স্বাধীনতা বিরোধীদের যুদ্ধের দশ বছরের মধ্যে পুনর্বাসিত করে বিদায় নিলেন রঙ্গমঞ্চ থেকে। নেতারা আসেন আর বিদায় নেন, “কৌশলগত কারণে” স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যবহার করেন, নিজেরা প্রাণ হারালেও রাজাকারগুলো কালস্রোতে টিকে যায় তেলাপোকার মতই।

এরপর এরশাদের আগমন, একই পাকিস্তান তোষণ নীতি চলতে থাকল। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলটাও চিন্তা করতে হবে, সোভিয়েট ইউনিয়নকে আফগানিস্তানে নাস্তানাবুদ করেছে মুজাহীদিনরা আমেরিকার সাহায্যে। মৌলবাদীদের জয়জয়কার আর আমেরিকার পিঠ চাপড়ানিতে সারা দুনিয়া জোড়াই ওদের উত্থান। ইসলাম বেশ ভালো “মার্কেটেবল প্রডাক্ট”, সুতরাং লম্পট আদর্শহীন জেনারেল এরশাদ যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করবেন সেটা আর আশ্চর্য কি? এক রসিক বড়ভাই বলেছিলেন যে কয়েকদিন পরে নিউটনের সূত্রেরও মুসলমানী হয়ে যাবে, পড়তে হবে “বিসমিল্লাহ বলে কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে, ইনশাল্লাহ তার ভরবেগের পরিবর্তন হবে”। রাষ্ট্রীয় মদদ পেলে যে কেউ আস্কারা পায়, আমার মনে হয় বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান জিয়ার আমলে শুরু হলে এরশাদের আমলে বেশ ভালো একটা অবস্থানে আসে এটা। স্যাম চাচাও বেশ খুশি এদের উপর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জবাই হলে উনার কি যায় আসে? শিবিরের রগকাটা কার্যক্রমের শুরুও এই আশির দশকেই। যদিও এই মৌলবাদের “রিটার্ন মার্চেন্ডাইস” আমেরিকার কাছে ফেরার পর আজ ওরাই পয়লা নম্বর শত্রু হয়েছে আমেরিকার। আহারে, যদি আজকেরই এই বাস্তবতা থাকত সেদিন।

১৯৮৩ বা ৮৪ সালে বাংলাদেশ বিমানের পাইলটরা একবার ধর্মঘটে যায়। সেবার সিদ্ধান্ত হয় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশানাল এয়ারলাইন্স থেকে কয়েকজন পাইলট এনে বিমান চালানো হবে। এ বিষয়ে পত্রিকায় একটা খবর দেখে চমকে উঠেছিলাম, এদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি পাইলট আগে বিমানবাহিনীতে ছিলেন, হত্যা করেছিলেন একজন বাংলাদেশি অফিসার, আর কেউ নয় আমার বন্ধু বারেকের বাবাকে। শেষে কি হয়েছিল জানি না, কিন্তু অসীম ক্রোধ থেকে আমার সেদিন মনে হয়েছিল যে শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয়, আত্মসম্মান পর্যন্ত এই জাতি বিলিয়ে দিচ্ছে।

এই রকম একটা পরিবেশে নয় মাসের যুদ্ধ ভুলতে বেশি দিন লাগার কথা নয়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রথম প্রজন্মের আমরাও ভুলতে শুরু করলাম ১৯৭১ কে। খেলার মাঠে পাকিস্তান দলকে নিয়ে লজ্জাজনক মাতামাতি শুরু হয় আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে, সেবার একটা আন্তর্জাতিক হকি টুর্ণামেন্টের আয়োজন হয়েছিল। ১৯৮৮ তে একটা ক্রিকেট টুর্ণামেন্টে ব্যপকভাবে দেশের তরুন সমাজের পাকিস্তান প্রেম চোখে দেখা পড়ে। মজার ব্যাপার হল আশির দশকের শুরুতে চট্টগ্রামে পাকিস্তান টীম জনতার প্রহারের শিকার হয়েছিল (সেটা হয়ত দেশের জন্য কোন ভাল ঘটনা না), তার কয়েক বছরের মধ্যেই পাকিস্তান দলকে পূজা করার মত একটা বেশ বড় তরুণ গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গেল, যারা অনেকেই আমারই বয়েসী। স্কুলে খেলার মাঠে গোল করে বসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প করা প্রজন্মও আনমনে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে লাফ দেয় খেলার মাঠে, আমাদের সমসায়িক মেয়েরাও ইমরান খানকে চিঠি লেখে...খেলাতে নাকি রাজনীতি থাকতে নেই। কোনটা রাজনীতি, কোনটা আত্মসম্মান সবই আমরা ভুলে গেছি আশির দশকের শেষে এসেই।

এরপরের গল্প রেকারিং ডেসিমেলের মতই। নেতারা ইতিহাস ভুলিয়ে যা শিখিয়েছেন তাই আমরা শিখেছি। ইতিহাস বিস্মৃত আত্মসম্মানহীন জাতির জাতির ভাগ্য যা জোটা উচিত তাই জুটেছে। দুই দফা ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনাও যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন সেটা আমার মনে হয়নি, বরং তিনি জোর করে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা ঠিক মত উঠিয়ে আনলে যে মুজিব এমনিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান সেটা তাঁকে বোঝাবে কে? আজকে ব্লগগুলো পড়ে বুঝি যে নতুন প্রজন্মের অনেকেই দেশের সবচেয়ে সম্মানের ইতিহাসটা জানতে এবং জানাতে চায়, সেই সংগে নতুন বাংপাকি প্রজন্মও কিন্তু চোখে পড়ে। বাংলাদেশের সমবয়েসী এই আমার আর আগের ক্রোধ নেই, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, মেধা মননে উন্নত একটা দেশের প্রত্যাশা নেই আর, আছে শুধু স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। ইতিহাস ভুলে গেলে ভব্যিষৎও মনে হয় নড়বড়ে হয়ে যায়। আশির দশকে দেশে কোরবানীর সময় উট আমদানী দেখে শামসুর রাহমান লিখেছিলেন তাঁর অমর কবিতা “উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ”, মনে হয় আজও আমরা সেই উটের পিঠে চড়েই উলটোপথে যাচ্ছি।

উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায় ; মুক্তিযুদ্ধ,
হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়।
(উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ; শামসুর রাহমান)

##########


মন্তব্য

সচল জাহিদ এর ছবি

কিছু কঠিন সত্য খুব সহজ করে বলে দিলেন তাসনীম ভাই। ঠিক যেন ছোটবেলায় মায়ের মুখ থেকে গল্প শোনার মত। এই লেখার যে কথাগুলি সবচাইতে অমেঘবানীর মত তা হলোঃ

নেতারা আসেন আর বিদায় নেন, “কৌশলগত কারণে” স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যবহার করেন, নিজেরা প্রাণ হারালেও রাজাকারগুলো কালস্রোতে টিকে যায় তেলাপোকার মতই।

দুই দফা ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনাও যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন সেটা আমার মনে হয়নি, বরং তিনি জোর করে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা ঠিক মত উঠিয়ে আনলে যে মুজিব এমনিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান সেটা তাঁকে বোঝাবে কে?

ইতিহাস ভুলে গেলে ভব্যিষৎও মনে হয় নড়বড়ে হয়ে যায়

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ জাহিদ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সচল জাহিদ এর ছবি

----


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

ভাল লাগলো লেখা পড়ে।

কোনটা রাজনীতি, কোনটা আত্মসম্মান সবই আমরা ভুলে গেছি

বড়ই নির্মম সত্য কথা মন খারাপ
অফটপিকঃ আপনি কোন স্কুলে ছিলেন? ( যদি সমস্যা না থাকে বলতে হাসি )
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ, আমি ল্যাবরেটরি স্কুলের।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

গল্যাহাস দেঁতো হাসি ??
তাইলে সালাম বড় ভাই দেঁতো হাসি
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

তাসনীম এর ছবি

ওয়ালাইকুম সালাম ছোট ভাই হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রাজিব মোস্তাফিজ [অতিথি] এর ছবি

আপনার চেয়ে বয়সে প্রায় এক দশক ছোট বলেই হয়ত আপনার নৈরাশ্যের সাথে একমত হতে পারলাম না--

বাংলাদেশের সমবয়েসী এই আমার আর আগের ক্রোধ নেই, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, মেধা মননে উন্নত একটা দেশের প্রত্যাশা নেই আর, আছে শুধু স্বপ্নভঙ্গের বেদনা।

আমার মনে হয় আরেকটা সুযোগ পাওয়া গেছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রাপথটা ঠিকঠাক হচ্ছে এবার । যদিও আমি জানি এই আশংকা একেবারে অমূলক না যে এই সরকার এমন কিছু কাজ করে ফেলবে যে কোনসময়(এবং এর মধ্যেই করে ফেলেছে অনেককিছু) যা শূন্য হিসেবে কাজ করে সবকিছুকে গুণ করে ফলাফলটাকেও শূন্য করে দেবে।

তাসনীম এর ছবি

দেখা যাক। আশা নিয়েই আছি।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মূলত পাঠক এর ছবি

ভীষণ ভালো লেখা, সৎ ও সাহসী।

তাসনীম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পাঠকদা।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা। সোজা-সাপ্টা। ++

- মুক্ত বয়ান

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

আলমগীর এর ছবি

আপনার সাহসের প্রশংসা করি।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ। সাহস থেকে না, অভিমান থেকে লেখা এটা হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অদ্বিতীয় এর ছবি

আপনার এই সিরিজটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলেই আমাদের দেশের ইতিহাসের ব্যাপারে ফ্যাক্টগুলো জানা খুব কঠিন! পাঠ্যবই এর দেশের ইতিহাসের অধ্যায় তো সরকারের সাথে সাথে পাল্টায়! তাই ৮০ র দশকের প্রজন্মকে ক্ষমা করা না গেলেও ৯০ দশকে আমরা যারা বড় হয়েছি তাদের পক্ষে অন্যদের সরাসরি আঙুল তুলে ভুলটা দেখিয়ে দেওয়া কঠিন। মুক্তিযুদ্ধ কে দলগুলো "আমার বাবার" বা "আমার স্বামীর" স্বপ্নের ফল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টার মাঝে আসল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটাই হারিয়ে গেছে।

আমি জানতে চাই। দল নিরপেক্ষভাবে ইতিহাসের খুটিনাটি জানতে চাই। আর সেটা আমাদের জানানোর দায়িত্ব এখন আপনাদের।

আপনার লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

অদ্বিতীয়

অদ্বিতীয়

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ, কঠিন দায়িত্ব দিলেন হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অনেক পিছিয়েছি আমরা, তবে ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই।
হতাশ হওয়ার মতো কারণের অভাব নেই; কিন্তু দেশটা আমাদেরই, আর ভুল থেকে উত্তোরণের কাজটাও আমাদেরকেই করতে হবে। পঁচা রাজনীতির শর্টকাট সাফল্য চিরস্থায়ী না আর সেই রাজনীতির প্রয়োজনে ইতিহাস বিকৃতির ধারাটাও এক সময় শেষ হবেই। ইতিহাস বিকৃতিকারীরা এখনও সংখ্যালঘু। সুতরাং আমি আশাবাদী।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তাসনীম এর ছবি

আপনার এই আশা পূর্ণ হোক।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

পথহারা এর ছবি

আপনার মত নিরপেক্ষ দৃষ্টিভংগী থেকে যদি সবাই দেখত আর সত্যগুলো সামনে আনত তাহলে দেশের আজ এই অবস্থা হত না। আপনার লেখা পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
আমরা আপনাদের পরের দশকের জন্ম পাওয়া নাগরিক যারা আশেপাশের সবাইকেই দেখেছি মেরুদন্ডহীন, স্বকীয়তাহীন, স্বার্থপর, সরকারী মাল দরিয়াতে ঢাল ধরণের! দেশের প্রতি ভালোবাসা কারো ভিতরেই দেখিনি, অনেককেই বলতে শুনেছি পাকিস্তানই ভালো ছিলো!!! আসলে ৪৭ থেকে ৭১ এই অল্প সময়ের ভিতর একটি জাতির জাতীয়তা ৩বার বদল হলে তাদের মধ্যে স্বকীয়তার অভাব পাওয়া বৈচিত্র্যের কিছু না, আর বর্তমানেও আমাদের জাতীয়তা কি তা নির্ধারণ করে দুটি রাজনৈতিক দল!! আমরা আসলে বিভ্রান্ত! স্বকীয়তা না থাকলে আত্মসম্মানবোধ না থাকারই কথা। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, জানার চেষ্টা করলে একেকজন একেকরকম তথ্য দিয়েছে। জানিনা আমার সাথে সবাই একমত হবে কিনা, তারপরও বলি, আমার কেন জানি মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ আরেকটু দীর্ঘ সময় ধরে হলে আমাদের সবার ভিতর দেশপ্রেম বোধটা আরও প্রবল হত। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা, তারপরও কেন জানি মনে হয় যদি একটা টোটাল জেনারেশন মুক্তিযুদ্ধের ভিতর জন্ম নিত আর বোধবুদ্ধি হওয়ার পরও দেখত দেশে যুদ্ধ চলছে তাহলে তারা অন্যরকম এক চেতনাবোধ নিয়ে বড় হত। যাই হোক, আশা করব আপনাদের মত কিছু মানুষ যারা মুক্তিযুদ্ধের সমসাময়িককালে জন্ম নিয়েছেন যারা কিছুটা হলেও সত্যগুলো আর সবার থেকে বেশী জানেন তারা যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন তাহলে নতুন প্রজণ্ম আর আমরা যারা বিভ্রান্ত তারা অনেক উপকৃত হব এবং দেশকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে পারব।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আপনার মন্তব্যের কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমত। মানুষের পরিবেশ পরিস্থিতি তার নৈতিকতা, ঔচিত্য-অনৌচিত্যের ভাবনায় প্রভাব ফেলে সন্দেহ নেই; কিন্তু মানুষ যেহেতু একটা বুদ্ধিমান প্রাণী, সেহেতু ঠিক-বেঠিকের মৌলিক পাঠ তার মধ্যে সাধারণত বিলট-ইন থাকে। এই পাঠটা চর্চার বিষয়, নিজেকে প্রশ্ন করার বিষয়। এদিক দিয়ে দেখলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে না জানার দায়টা পূরবসূরীদের ওপরে দিয়েই খালাস হওয়া যায় না। আমাদের নিজেদেরও প্রো-অ্যাকটিভ হওয়া দরকার।

ইচ্ছা থাকলে স্বাধীনতা যুদ্ধের খুঁটিনাটি সম্পর্কে না জেনেও স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে দেশগড়ায় ভালো কাজ করা যায়। যেমন, যুদ্ধে ৩০ লাখ মারা গেলো, নাকি ২৬ হাজার - এই বিষয়ে যদি কেউ নিজের কাছে মীমাংসা খুঁজে না ও পায়, তাতে ওই মৃত্যুটা যে অত্যাচার, গণহত্যা, সে বিষয়ে অস্পষ্টতার কোনো অবকাশ থাকে না। এখন যদি ওই গোঁ ধরে বসে থাকি যে, পূর্বসুরীরা ৩০ লাখের মীমাংসায় আসার আগ পর্যন্ত আমি নট নড়নচড়ন, তাইলে কেমনে কি! পূর্বসুরীরা যা দিয়ে গেছেন, সেটার মূল্যায়ন করি, তাদের ব্যর্থতার দায় থেকে উত্তোরণের কাজটা আমরা নিজেরাই করি না কেন?

স্বাধীনতা যুদ্ধের দৈর্ঘ্য বাড়লে তাতে প্রাণহানিই বাড়তো; কিন্তু চেতনার ফলাফলে তেমন কোনো প্রভাব পড়তো না। যার নয় মাসে হয় না, তার নব্বুই মাসেও হতো না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তিথীডোর এর ছবি

কোন পোস্টের শিরোনামে প্রিয় কবিতার লাইন খুঁজে পেলে পড়ার আগ্রহ বেড়ে যায়..হাসি
ভাল লাগলো লেখা পড়ে।
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ।

এখনও পর্যন্ত এই সিরিজের সবগুলোর শিরোনামই কবিতা থেকে মেরে দেওয়া। এমনকি "স্মৃতির শহর" শিরোনামটাও হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রেনেট এর ছবি

আগেও বলেছি, ভীষণ শক্তিশালী আপনার লেখা। এরকম লেখা আরো আসুক। জানতে চাই আরো।
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

তাসনীম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ রেনেট।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ফাহিম এর ছবি

পরিস্কার ছিমছাম লেখা, বেশ ভালো লেগেছে... আপনি গল্যাহাস হলে তো আমার স্কুলতুতো বড়ভাই হলেন সম্পর্কে... হাসি

=======================
যদি আমি চলে যাই নক্ষত্রের পারে —
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিম। দেখা যাচ্ছে অনেক স্কুলতুতো আত্মীয় আছে এখানে আমার হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

বোহেমিয়ান এর ছবি

গোছানো লেখা এবং স্মৃতি থেকে লেখা বলেই ভাল লাগল।
তবে সত্য গুলো স্বস্তিদায়ক নয় ।
গত চল্লিশ বছরের ইতিহাস, শুধুই নেতিবাচক পরিবর্তন বলে মনে হয় (রাজনৈতিক দিক থেকে )।
আমাদের রাজনীতিবিদ রা দলের জন্য রাজনীতি করেন, দেশের জন্য না , ক্ষমতায় বসা তাদের লক্ষ্য, আদর্শ প্রতিষ্ঠা নয়। তাই সবাই ধর্ম নিয়ে ব্যবসা/ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যা ইচ্ছে তাই বলা , ইতিহাস পরিবর্তন ...

আরো চাই এমন লেখা ।
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। আদর্শ নিয়ে ভাবার সময় কই রাজনীতিবিদদের?

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তানভীর এর ছবি

দারুণ লিখেছেন, তাসনীম ভাই।

তবে আমি এখনো আশাবাদী। স্বাধীনতার পর এমন অবস্থায় অনেক দেশকেই যেতে হয়েছে। তারওপর যেখানে কলোনাইজেশনের ভূত এখনো শক্ত হয়ে চেপে বসে আছে , সেখানে এমন হওয়াই তো স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে টের পাই এ থেকে বের হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে; আবার যখন পুনরাবৃত্তি দেখি তখন হতাশ লাগে। তবু এই চেষ্টাটার উপরই ভরসা রাখি।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ তানভীর।

আশা মাঝে মাঝে আমারও লাগে, আশাই ভরসা।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

বাউলিয়ানা এর ছবি

দারুন দারুন !

আপনার আরও অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

অগ্রজদের এইরকম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা জানা আমাদের খুবই দরকার...

সিরিজ দ্রুত চলুক...

_________________________________________

সেরিওজা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার কেনো জানি মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখার দায়টা আসলে আমাদের নিজের ওপরই বর্তায়। আমি নিজে যে প্রজন্মের মানুষ, সেই প্রজন্মে অন্তত সুস্থ, সঠিক ইতিহাসচর্চা হয়নি। কিন্তু আমি তো কখনো এই যুক্তিকে সামনে এনে সঠিক ইতিহাসচর্চায় বিরত হইনি। রাজাকারদের 'রাজাকার' আর পাকিস্তানীদের 'পাকিস্তানী' হিসেবে চিন্তা করতে তো আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমার তো ৩০ লক্ষ স্বজনের আত্মাহুতি নিয়ে কখনো সন্দেহ হয়নি। আমার তো কখনো খেলাকে খেলা হিসেবে দেখে পাকিস্তানী ক্রিকেট দলের সমর্থনে স্টেডিয়ামে বা টিভি সেটের সামনে পাকি পতাকা নিয়ে লাফানো হয়নি। আমার ঘরে তো কখনো ইমরান খানদের পোস্টার শোভা পায়নি। আমার পক্ষে তো জামাতিদের রাজনীতি মেনে নেয়া স্বাভাবিক মনে হয়নি।

আমি তো নিজে মুক্তিযুদ্ধ করিনি, নিজের চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। পঁচাত্তরের পনেরোই আগষ্ট দেখিনি, নব্বুইএর অভ্যুথানে অংশ নেই নি। তারপরেও এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর সত্যতা উদঘাটনে তো পিছিয়ে ছিলাম না। কাউকে বেনিফিট অব ডাউট না দিয়েও তো সঠিক ইতিহাসটাই জেনেছি।

ছোটবেলায় মোটামুটিভাবে গ্রামে কাটিয়েছি। সেখানেই বড় হয়েছি। গ্রামের অবহেলিত মানুষ হিসেবেও নিজেকে ইতিহাস জানা থেকে বিরত রাখতে পারি নি।

এখন নানা সুযোগের মধ্যে থেকেও, শহরে বড় হয়েও, আশে পাশে স্তুপিকৃত বইয়ের পাশে বিচরণ করেও কেউ যখন অজুহাত হাজির করে, বলে "ইতিহাস জানতে চেয়েও পারি নি" কিংবা "ভুল ইতিহাস শিখিয়েছে প্রজন্ম, রাজনীতিবিদেরা"— তখন তাদের প্রতি আমার বেশ করুণা হয়। এরা আসলে নিজের পরিচয় সম্পর্কেই জ্ঞাত কিনা, আমার জানতে বড় ইচ্ছে হয়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তাসনীম এর ছবি

ধূগো, ধন্যবাদ আপনাকে।

যার জানার ইচ্ছা আছে সে কষ্ট করে হলেও জানবে। এই অংশের সংখ্যা বেশি নয়। কিন্তু ইতিহাস আড়াল করে গেলে একটা বিরাট অংশ জানতে পারবে না, যদিও ওদের অনেকেই হয়ত নিজের পরিচয় সম্পর্কেই জ্ঞাত। নিজের পরিচয়টা কিন্তু সব দেখে শুনেই তৈরি হয়।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তাসনীম ভাই, সেই জন্যই বললাম শুরুতেই যে জানার দায়টা আসলে আমাদের নিজেদের।

এই দায়টা যখন আমরা নিজের প্রয়োজনেই সম্পন্ন করতে পারবো তখন ইতিহাস আপনা আপনিই উঠে আসবে বিস্মৃতি থেকে। ঠিক যেমনটা (আপনি বললেন) শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা না করে উচিৎ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠিত করা। সঠিক ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হলে বঙ্গবন্ধু এমনিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান! আলাদা শ্রম দেয়ার কোনো দরকারই পড়ে না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অমিত এর ছবি

ধুগোর সাথে সহমত।
উপরে একজন বললেন "আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, জানার চেষ্টা করলে একেকজন একেকরকম তথ্য দিয়েছে।"
পড়াশোনা শেখা একটা মানুষ যখন ব্লগ পর্যন্ত আসতে পারে, তখন এই ধরণের মন্তব্য শুনলে আসলে পিছনের মানুষটার ঠিক ইতিহাস শেখার ইচ্ছাটা নিয়েই প্রশ্ন জাগে।জনে জনে যাওয়ার তো দরকার নাই। কয়েক খন্ডের মুক্তিযুদ্ধের দলিল আর ইতিহাস পড়লেই তো হয়। (সংখ্যাটা ভুলে গেছি)

তাসনীম এর ছবি

স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ১৫ খন্ডের। বিদেশের অনেক লাইব্রেরীতেও আছে খন্ডগুলো। আমার লেখাটা ৭০/৮০ দশকের পটভূমিতে লেখা।

ইতিহাস নিয়ে খোঁড়াখুড়ি করা এখন অনেক সহজ, গুগল সার্চ করে আমার কন্যার স্কুলের ইন্ট্যারন্যাশানাল ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটরও এখন ৮০ দশকের সেই তরুনদের চেয়ে বেশি জানেন বাংলাদেশের ইতিহাস।

আপনাদের সাথে সহমত, এখন জানতে না চাওয়াটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আশির দশকে জানার ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল বেশ কঠিন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভালো লাগলো। আপনার প্রজন্মের মানুষগুলো এভাবেই এগিয়ে আসা উচিত।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ ইশতিয়াক।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

স্নিগ্ধা এর ছবি

খুব ভালো একটা লেখা তাসনীম! হাসি

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ স্নিগ্ধা।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমার আর আগের ক্রোধ নেই, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, মেধা মননে উন্নত একটা দেশের প্রত্যাশা নেই আর, আছে শুধু স্বপ্নভঙ্গের বেদনা।

......................................................................................
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

অভিমান তো মায়ের (এখানে পড়ুন 'দেশ') সঙ্গেই চলে, না? তারপরও আমরা মায়ের কাছেই এসে করি যত আবদার! আমারও লাগে অনেক মাঝে মাঝে, দেশের অবস্থা দেখে। সেজন্যই মনে হয় ক'দিন পর পর উড়াল দেই দেশ ছেড়ে। তারপরও রক্ষে নেই, কিভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে মায়ায় বেঁধে রাখে! মনে হয় এই লুকোচুরি থেকে সারাজীবন রক্ষা পাবো না, একটা সময় ঠিকই কড়ায়গন্ডায় জন্মের হিসেব বুঝে নেবে।

আর সেটা নয়ই বা কেন? আমাদেরই তো করতে হবে হিসেবের ভুলচুক। অনেকদিনের 'গোজামিল' মিলে জঞ্জাল হয়ে গেছে অনেক - কি রাজনীতিতে, কি শিক্ষাব্যবস্থায়, কি মানুষের মননে। আস্তে আস্তে যদি আমরা-আপনারা তা পরিষ্কার না করি, তাইলে আমাদের পরের 'তোমাদের' প্রজন্ম আগিয়ে আসবে কিভাবে?

আশার কথা, একটু একটু করে হলেও তা শুরু হয়েছে। এখন অন্তর্জালে ভালমতো খোঁজ করলেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়, দেশের অতীত আর সমকালীন অবস্থার কথা জানা যায়। খালি একটুখানি সজাগ থাকলেই হলো। অনেকের মধ্যে কিছু একটা করার ইচ্ছা।

তাসনীম ভাই, ভাবছেন মনে হয়, কি হলো? আপনার লেখা পড়ে আমার আব্বুর কথা মনে হলো। উনি মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু অনেক অভিমান ওনার দেশের ওপর। দেশ ছেঁড়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ ছিলো ওনার কিন্তু কখনো ভুলেও চিন্তা করেননি। কিন্তু এখন অবস্থা দেখে আমাদের ভাইবোনকে বলেন দেশে ফেরত না আসতে! কতখানি কষ্ট বুকে না থাকলে আব্বু একথা বলতে পারেন! ক'দিন আগেও বললাম যে কামাল্পুরের যুদ্ধ নিয়ে লেখতে, একদম না করে দিলেন। কতবছর আমরা বাসায় যুদ্ধের কথা শুনি না, আর '৭৫ পরবর্তী ঘটনাগুলো আবছাভাবে শুনেছি। অথচ, মুক্তিযোদ্ধারা তো অনেকেই আজকে বেঁচে নেই। এখন যদি সামনা-সামনি বসে, জোর করে লেখাই, বা ভিডিও করতে পারি, তাইলে একটা কাজের কাজ হবে। দেখা যাক।

লেখা পড়ে অনেককিছু তাই মনে হলো। আশা করি, আপনার মন্তব্যের খাতা অনেকখানি ভরে ফেলাতে রাগ করেননি আপনি। হাসি

ভাল থাকবেন।
-----------------------
অস্টিনে প্রায় একবছর ইউটি-অস্টিনে পড়িয়েছি। অনেককেই চিন্তাম, আপনার সঙ্গে দেখা হলে ভাল হতো।

- শরতশিশির -

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ খুব সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আপনি অস্টিনে কবে থাকতেন? আমাকে ডাকনামে চিনলেও চিনতে পারেন।

একটা ই-মেল করুন না...tmhossain@gmail.com

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে লেখার পর আমি কাঁদছি বসে বসে, আব্বুর কথা, দাদার (দাদা তখন সিটিং এম.এন.এ ছিলেন) কথা মনে পড়ল। হায় রে অভাগা দেশ!

আমি পড়া শেষ করে ফিরে যাচ্ছি জুনে সম্ভবতঃ। মেইল করবো, এখন একটু ব্যস্ত। আমি ২০০৫-০৬-এ ছিলাম, এশিয়ান স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে। ফুলব্রাইটে যারা আসে, তাদের মধ্যে ছিলাম সেবছর। এখন নিউইয়র্কে পড়ছি।

ভাল থাকবেন।

- শরতশিশির -

অতিথি লেখক এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। মর্মস্পর্শী।

কৌস্তুভ

তাসনীম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কৌস্তুভ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

লাবণ্য [অতিথি] এর ছবি

আপনি বাংলাদেশের ৭১ পরবর্তী রাজনীতির ধারাটা বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। মন খারাপ হলেও এক জায়গায় আমি অনেক মজা পেলাম।

“বিসমিল্লাহ বলে কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে, ইনশাল্লাহ তার ভরবেগের পরিবর্তন হবে”।

আশা করি এটা যদি আমার বন্ধুদের কাছে কোট্‌ করি, কিছু মনে করবেননা।

তাসনীম এর ছবি

----------------------------------------------------------------------

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ। মনে করব কেন? আপনাদের জন্য বেধর্মী নিউটন সাহেবের যদি একটা নসিহত হয় হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশের সমবয়েসী এই আমার আর আগের ক্রোধ নেই, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, মেধা মননে উন্নত একটা দেশের প্রত্যাশা নেই আর, আছে শুধু স্বপ্নভঙ্গের বেদনা।

বেদনা, বেদনা, বেদনা....

হায়, বাংলাদেশ...কোথায় তুমি...খুজেঁই তো পাই না আর...

সৌরভ এর ছবি

হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেলো। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রযন্ত্রের শৈশব আর কৈশোরের গল্প এভাবে বলতে পারতেন জুবায়ের ভাই।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তাসনীম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সৌরভ। জুবায়ের ভাইয়ের সাথে তুলনা দিয়ে লজ্জায় ফেললেন, উনার তুলনা বোধহয় উনিই। আরেকটা কথা মনে করিয়ে দিলেন, সচলে আসতাম প্রথম প্রথম কয়েকজন লেখকের লেখা পড়তে, জুবায়ের ভাই তাঁদের একজন। এতকাছে থাকতেন, তাও দেখা হয় নি কখন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নীল রোদ্দুর এর ছবি

তাসনীম ভাইয়া,
মাঝে মাঝে মনে হয়, সাহসটা বড় বেশী দরকার আমাদের, নইলে ভবিষ্যতে আমরা বোবা হয়ে জন্মাবো, মরেও যাবো বোবা জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে।

এইরকম সাহসী কিছু পদক্ষেপ দেখতে ভালো লাগে, অন্তত শান্তি লাগে, আমরা এখনো বোবা হয়ে যাইনি দেখে।

আজ স্বপ্ন ভঙ্গের কথা শুনলাম, আমাদের সেইসব স্বপ্নের কথা শোনাবেন, যা ছিল একদিন? ওগুলোও লাগবে আমাদের।.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় সত্য কথা বলা মনে প্রায় বাতুলতা। নতুন জেনারেশনকে দেখেই এখন নতুন স্বপ্ন দেখি, আপনারাই শোনান আমাদের
সেই গল্প প্রতিদিন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ওডিন এর ছবি

ধুসর গোধূলি লিখেছেন:
- আমার কেনো জানি মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখার দায়টা আসলে আমাদের নিজের ওপরই বর্তায়। আমি নিজে যে প্রজন্মের মানুষ, সেই প্রজন্মে অন্তত সুস্থ, সঠিক ইতিহাসচর্চা হয়নি। কিন্তু আমি তো কখনো এই যুক্তিকে সামনে এনে সঠিক ইতিহাসচর্চায় বিরত হইনি। রাজাকারদের 'রাজাকার' আর পাকিস্তানীদের 'পাকিস্তানী' হিসেবে চিন্তা করতে তো আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমার তো ৩০ লক্ষ স্বজনের আত্মাহুতি নিয়ে কখনো সন্দেহ হয়নি। আমার তো কখনো খেলাকে খেলা হিসেবে দেখে পাকিস্তানী ক্রিকেট দলের সমর্থনে স্টেডিয়ামে বা টিভি সেটের সামনে পাকি পতাকা নিয়ে লাফানো হয়নি। আমার ঘরে তো কখনো ইমরান খানদের পোস্টার শোভা পায়নি। আমার পক্ষে তো জামাতিদের রাজনীতি মেনে নেয়া স্বাভাবিক মনে হয়নি।

আমি তো নিজে মুক্তিযুদ্ধ করিনি, নিজের চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। পঁচাত্তরের পনেরোই আগষ্ট দেখিনি, নব্বুইএর অভ্যুথানে অংশ নেই নি। তারপরেও এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর সত্যতা উদঘাটনে তো পিছিয়ে ছিলাম না। কাউকে বেনিফিট অব ডাউট না দিয়েও তো সঠিক ইতিহাসটাই জেনেছি।
...

আপনার লেখাটা পড়ে যখন ভাবতেছিলাম কি কমেন্ট করবো তখন দেখি ধুগোদা আমার মনের কথাগুলোই বলে দিয়েছেন- এইজন্যে ওনাকে কইষ্যা মাইনাস!

আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি এই সিরিজটা। আশা করি আগামীতে লেখাগুলো মনিটরে না পড়ে হাতে নিয়ে পড়ার সৌভাগ্য হবে।

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ ওডিন আপনাকে।

আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি এই সিরিজটা। আশা করি আগামীতে লেখাগুলো মনিটরে না পড়ে হাতে নিয়ে পড়ার সৌভাগ্য হবে।

কিন্তু সেই দুর্ভাগ্য কোন প্রকাশকের হবে? হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো লাগলো। চমৎকার লেখা ও ঘটনাপঞ্জী।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে প্রকৃতিপ্রেমিক।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শাফক্বাত এর ছবি

কথাগুলো খুব ভাবায়। দেশটা আমার, আমার-ই দেশ, তবুও এমন জিম্মি হয়ে আছি, কয়দিন এভাবে চলবে কে জানে... মন খারাপ
================================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

তাসনীম এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ট্রাকের ফুয়েল ট্যংকে দেখেছেন লেখা থাকে "জন্ম থেকে জ্বলছি", আমাদের হয়েছে সেই অবস্থা হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

একজন [অতিথি] এর ছবি

আবারো আরো একটি অসাধারণ স্মৃতির শহর।

তাসনীম এর ছবি

আবারো ধন্যবাদ অচেনা একজন।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

বাহ খুব ভাল লিখলেন তো। একপেশে মনে হয়নি, লোকদেখান আবেগের ঘনঘটাও দেখলামনা। এইসব বিষয়ে খুব কম লেখাই পাই যেখানে আসলে ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায়। দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট পাওয়ার উদ্দেশ্যে যেসব লেখা হয় আপনার লেখাটি সেরকম লাগেনি। অভিনন্দন।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট পাওয়ার উদ্দেশ্যে যেসব লেখা হয় আপনার লেখাটি সেরকম লাগেনি

দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট দরকার নেই। আর সব প্রেমের মত এইখানেও ব্যর্থ আমি হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

গীতিকবি এর ছবি

খুব ভালো লাগল লেখাটি। চালিয়ে যাও।

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ ভাস্কর ভাই।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

যদিও কষ্টকর, তবুও নির্মম সত্য এই যে, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে চলছে নানান বানিজ্য প্রথম থেকে । আমরা আম জনতা টেনিস বলের মত একবার এই কোর্টে, আরেকবার ঐ কোর্টে...... তবে সময় বোধ হয় এসেছে আমাদের "আম জনতার" নিজেদের ইতিহাস নিজেরাই লেখার ।

আপনার লেখার ধরনটি খুব ভাল লেগেছে । শুধুতো ইতিহাস নয়, স্বাধীনতার জন্য সাধারন মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার ও স্বপ্নভঙ্গের মানবিক গল্পটিও বলেছেন দরদের সঙ্গে । এরকম আরো লিখুন ।

.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। চেষ্টা করব।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

বর্ষা এর ছবি

এই লেখাটি চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। আপনার বন্ধু বারেক ( আসল নাম নয় যদিও) এর মায়ের কথা মনে করে চোখে পানি চলে আসলো।
খুব ভালো লাগলো।
তবে জিয়াকে এতো সরলীকরণ করা উচিত নয়। আমাদের দেশের মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন কারণ ব্যক্তিগতভাবে উনি লুইচ্চা বা চোর নন। কিন্তু ক্ষমতার লোভে উনি দেশের যে ক্ষতি করেছেন সেটা সামনে আসা উচিত।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

তাসনীম এর ছবি

ধন্যবাদ বর্ষা, এই লেখার পরে আমার দুই একজন পুরানো বন্ধু বারেককে (নকল নাম কিন্তু আসল মানুষটাকেই) খুঁজে বের করেছে। এটা আমার জন্য একটা ব্যক্তিগত বিজয়। ওকে আমরা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম।

জিয়ার সততা সর্বজনবিদিত, আমারো শ্রদ্ধা আছে তাঁর প্রতি। কিন্তু রাজাকার উত্থানে তাঁর ও রাজাকার প্রতিপালনে বর্তমানে তাঁর দলের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি নমস্য ... কি সহজ সাবলীল ভাষায় সত্যটি বললেন .. ভালো লাগলো...আপনার লেখা পরে এখানে সচল হবার তাগিদ অনুভব করছি ....

-অর্ফিয়াস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।