মেজাজটা সকাল থেকেই খারাপ হিং এর। এইদেশে মানুষ আসে? প্রফেসর আর কোন জায়গা পেল না আসার। স্পেসশিপ ল্যান্ড করার মত খোলা জায়গাই পাওয়া ভার এই দেশে। সুখ নিয়ে রিসার্চ করবি তো কোন ভালো জায়গার যা, তা-না শেষ পর্যন্ত আসলি এই দেশে। প্রফেসর টিং-কে একটা ভেংচি কেটে কম্যুনিকেশন মডিউলটা খুলে বসল তিয়েনটান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট হিং। কাজ শুরু হতে বাকি আছে আরেকটু সময়। হিং-এর পাতলা ছিপছিপে নীল রঙের শরীর, কান দুটো একটু লম্বা, এছাড়া বাকি সব কিছুই মানুষের মত। গত একশ বছর ধরে পৃথিবীতে শুভেচ্ছার বাণী আর গবেষণার উদ্দেশ্যে আসছে আংটাং গ্রহের বাসিন্দারা। একুশশো বেয়াল্লিশ সালের পৃথিবীর মানুষ আর ভিনগ্রহের মানুষের ভয়ে ভীত নয়। দুই গ্রহের সম্পর্কে কোন টানাপোড়েন নেই, যদিও শুরুতে পৃথিবীর মানুষ একটু সন্দিহান ছিল শুরু আংটাং-এর বাসিন্দাদের উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু সেটাও আজকে ইতিহাস। তিয়েনটান বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ টিমগুলো প্রায়ই আসে এই পৃথিবীতে, এবারের রিসার্চ মিশন হচ্ছে মানুষের সুখের পেছনের ডিএনএর ফ্যাক্টরগুলো এনালাইসিস করা।
হিংয়ের কম্যুনিকেশন মডিউলে ভেসে এসেছে ছটের ছবি। অনেক দূরের গ্রহের নীলাভ মাটিতে বসে আছে হিংয়ের প্রিয়তমা ছট। এই সময়টা সবাই ছুটিছাটায় নানান দিকে যায়, হয়ত ছটও গিয়েছে কোথাও। কোথায় এটা, আশে-পাশে বেগুনী রঙ দেখে মনে হচ্ছে অরণ্যের কাছাকাছি কোথাও, রাংজিবের কাছে কোথাও নাকি?...
“কেমন আছ হিং?” হিংয়ের চিন্তাভাবনায় বাধা পড়ল ছটের প্রশ্নে ।
“এই আছি আর কি?” দায়সারা জবাব হিংয়ের।
“কেমন লাগছে পৃথিবী?”
“কেমন আবার লাগবে?” একটু বিরক্তি নিয়েই জবাব দেয় হিং।
“আমার সময়েই বাজেট কাট। অন্যসময় দলবল নিয়ে পৃথিবীর ভালো ভালো জায়গায় যাওয়া হয়, এবার বাজেট কাটের জন্য শুধুমাত্র দুইজন মিলে এই দেশে আসা। এই বাজেটের কারণেই পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা আর নোংরা ল্যান্ডিং স্ট্রিপে নামতে হয়েছে। এটাতে আসে কেউ, রীতিমত পোড়াকপাল না হলে?” এক নিঃশ্বাসে যেন ক্ষোভটাকেই ঝেড়ে দেয় হিং।
“আর গবেষণার সাবজেক্টের খোঁজার জন্য একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া দরকার, ইন্টার গ্যালাক্টিক বিজ্ঞাপনের অনেক খরচ, এই লোকগুলো ব্যবসা ছাড়া আর কিছু বোঝে না, অন্য গ্রহের লোক বিজ্ঞাপন দিতে গেলেই খরচ হয় দশগুন। ভালো কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে প্রফেসর টিং কোথায় বিজ্ঞাপন দিলেন? একটা ব্লগে...আরে এই ব্লগ পড়ে কয়জন লোক? এখনতো গবেষণার সাবজেক্ট খুঁজতে হবে হাতে হারিকেন নিয়ে।” ক্ষোভটা যেন কিছুতেই কমছে না হিংয়ের ।
“আহ...মাত্র কয়েকটা দিনইতো” ছটের গলায় যেন মধু ঝরে পড়ছে। “দেখতে দেখতেই কেটে যাবে”। এরপর তুমি ফিরলেই আমরা ঘুরতে যাব...”
কথা শেষ না হতেই কম্যুনিকেশন মডিউলে ভেসে উঠল প্রফেসর টিংয়ের চেহারা। একটু উদ্বেগ মনে হয় বুড্ডা মিয়ার মুখে।
“হিং একটু আসতো এরিয়া সি-তে”। কিছুটা আদেশের মত শোনাল প্রফেসর টিংয়ের কথাটা।
ছটের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, হিং রওনা হল এরিয়া সি-এর দিকে। ছোট মহাকাশযান, যেতে দুই মিনিটের বেশি লাগল না। এরিয়া সি আসলে এই মহাকাশানযানের বৈঠকখানা বলা যায়। বিশ ফুট বাই বিশ ফুট বর্গাকৃতির একটা ঘর, কয়েকটা দুধ-সাদা চেয়ার পাতা। এইখানেই শুরু হবে গবেষণার সাবজেক্টেদের ইন্টারভিউ। তবে সেটা শুরু হতে আরো ঘন্টা খানেক বাকি। তাহলে কি জন্য ডেকেছেন প্রফেসর হিং?
“তুমি তো বিজ্ঞাপন দিয়েছিলে একটা ব্লগে, তাই না?”
“হ্যাঁ স্যার, এরা যে পয়সা চায় তাতে ভজঘট ডট কম ছাড়া আর কোথাও দেওয়া যায়নি এই বিজ্ঞাপন। কেন স্যার কি হয়েছে?“
“এই বিজ্ঞাপনতো কারো চোখেই পড়ার কথা না...কিন্তু বাইরে এত লোকজন কেন?” প্রফেসর টিংয়ের কন্ঠে বিস্ময়।
বাইরে উঁকি দিয়ে হিং দেখে প্রফেসরের কথাই ঠিক। ডকিং এরিয়ার বাইরে হাজার খানেক লোক জমা হয়েছে। ভিড়টা মনে হয় বাড়ছে। নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কালো পোশাক পরা একদল লোক ঘোরাঘুরি করছে। হিং কম্যুনিকেশন মডিউলের ওয়েব ইন্টারফেসে গিয়ে দ্রুত বিজ্ঞাপনটা বের করে।
আংটাং গ্রহের তিয়েনটান বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান জেনেটিক্স বিভাগে “সুখের ডিএনএ ম্যাপিং” প্রজেক্টের গবেষণার জন্য সাবজেক্ট খোঁজা হচ্ছে। প্রার্থীকে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে বাছাই করা হবে। আগ্রহী ভলান্টিয়ারদের আংটাং গ্রহে তিনমাস থাকতে হবে এবং এই সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ তিয়েনটান বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। ভলান্টিয়ারদের আকর্ষনীয় অর্থনৈতিক প্যাকেজ দেওয়া হবে এবং প্রজেক্ট শেষে আংটাং গ্রহে ভ্রমণের জন্য বিশেষ সুবিধাও আছে।
“স্যার কোন ভুল হয়েছে?”
“না, না, না, এই বিজ্ঞাপনের ড্রাফটতো আমি দেখেছি আগে। আমাদের যে বাজেট, এবার ধনী দেশগুলোর ভলান্টিয়ার কাউকে নিতে পারবো না, তাছাড়া ওই দেশগুলোর স্পেসশিপ ডকিং ফি, বিজ্ঞাপনের খরচ এগুলো দিতে গেলে আমার প্রজেক্টই বাতিল করতে হয়। সব হিসেবে এই বাংলাদেশই বেশ ভালো চয়েজ ছিল। এদিকে কখনো আসাও হয়নি। কিন্তু এই অখ্যাত ব্লগের বিজ্ঞাপন দেখে এত লোক কেন? এই ব্লগের বাকি সব পোস্টে হিট দেখাচ্ছে দুইশর ঘরে আর এই তোমার বিজ্ঞাপনে বাইশ হাজার কেন?” একটু চিন্তা প্রফেসরের কন্ঠে।
হঠাৎ এরিয়া-সিয়ের কম্যুনিকেশন মডিউলের ভেসে উঠে, ইনকামিং কল। এটা বাইরে থেকে, স্থানীয় নিরাপত্তার লোকজন। ট্র্যান্সলেটরটা অন করে দিয়ে গুরু-শিষ্য আলাপ শুরু করেন।
“স্যার আমি মেজর আলাউদ্দীন র্যাবের সাথে আছি।” ধাতব অনুবাদিত কণ্ঠ শোনা যায়। ছোট একটা রেফারেন্স ভেসে আসে মডিউলের স্ক্রিনের ফুটনোটে...
র্যাব এই দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত প্যারামিলিটারি বাহিনী, জনগনের প্রচুর আস্থা এই বাহিনীর উপর, যদিও এদের বিরুদ্ধে...
স্কিপ বাটনটা চেপে ধরেন প্রফেসর টিং। মিলিয়ে যায় ফুটনোট। মনে মনে একটা গালি দেয় শিষ্য হিং, আরেকটু জানা ইচ্ছে ছিল র্যাবের গল্প।
“সুদূর আংটাং গ্রহের বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা গ্রহন করুন অফিসার। আমরা শুভেচ্ছা মিশনে আপনাদের পৃথিবীতে এসেছি। রোজেন-আইনস্টাইন ব্রিজের সার্থক প্রয়োগ এই সফর, আমাদের এবং আপনাদের বিজ্ঞানের পিপাসাকে... ”
হিংয়ের মুখ দিয়ে হয়ত একটা গালি বেরিয়ে যেত এবার, কিন্তু বাধা দিলেন আলাউদ্দীন।
“স্যার, ইন্টারভিউটা কি একটু তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়? ভিড় সামলাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে আমাদের। ডিউটিতে বেশি লোক নেই আজকে, কয়েকজন আবার ছুটিতে আছে।”
“অবশ্যই অবশ্যই, ইন্টারগ্যালাক্টিক নিয়ম অনুযায়ী আমরাতো আপনাদের লোকের কোন তালিকা করতে পারি না। আপনার লিস্ট অনু্যায়ী প্রার্থীদের পাঠিয়ে দিন।”
“হিং, দ্রুত কোয়ারেন্টাইন এরিয়াটা রেডি কর। শুনলেতো লোকজন আসছে।” ব্যস্ত কন্ঠে প্রফেসরের আদেশ।
হিং কাজে লেগে পড়ে। এরিয়া-সিয়ের অর্ধেক অংশ কাচের মত পাতলা একটা জিনিস দিয়ে আলাদা করে, দুটো ভাগ হয়ে যায় তাদের এই বৈঠকখানা। এক অংশে গুরু আর শিষ্য, আর অন্য অংশে ভলেন্টিয়ার হতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা। কম্যুনিকেশন মডিউল দুই অংশেই আছে সুতরাং কথা বলতে অসুবিধা নেই। এবার অপর অংশের বাতাসের চাপ, তাপমাত্রা আর অক্সিজেন লেভেল পৃথিবীর সমান লেভেল নিয়ে আসা, কাজটা করতে মিনিট দুয়েক লাগলো। এই গ্রহের মানুষেরা পানি পান করে, তাই এক্সডিপি-১১ রোবট দিয়ে টেবিলের উপর পানির বোতল আর গ্লাস রাখা হোল। এরা ফুল ভালোবাসে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিতে তৈরি একগুচ্ছ গোলাপ ফুলও দেওয়া হল। ধাতব মহাকাশাযানের ক্ষুদ্র এই অংশে মোটামুটি পৃথিবীর মানুষের পছন্দসই একটা ছোট ঘর তৈরি হল মাত্র কয়েক মিনিটেই।
মহাকাশযানের থেকে স্বয়ংক্রিয় ছোট গাড়িটা বের হয়ে গিয়েছিল আগেই। প্রায় আধা-মাইল দূরে মানুষের সারি দেখা যাচ্ছে, আর তার একটু পেছনেই ময়লা ময়লা বাড়ি ঘর। মহাকাশযান ল্যান্ডিং স্টেশনের এতকাছে বাড়িঘর গুরুশিষ্য কেউই দেখেনি। বাড়িগুলোর পেছনে যে আকাশটা দেখা যাচ্ছে সেটার অবস্থা প্রায় বাড়িগুলোর মতই, ভাগ্যিস তাদের বাইরে যেতে হচ্ছে না, হিং ভাবলো।
“হুম, দেখেছ, ল্যান্ডিং স্টেশনের এতকাছে জনসমাবেশ বাড়ি ঘর...ইন্টার গ্যালাক্টিক নীতিমালার কোন একটা ধারায় বলা আছে যে স্টেশনের এত কাছে কোন স্থাপনা করা নিষেধ”। গুরুর গলাটা মনে হয় শুকনো শোনাল এইবার।
নাহ, এই বুড়োটা নীতিমালা ছাড়া মনে হয় আর কোন কথাই জানে না। সবাইকে নীতিমালা শেখানো গুরুদায়িত্বটা মনে হয় ওরই হাতে।
“ক্যান্ডিডেট আইডি ০০০১, এখানে হাজির, সিকিউরিটি ক্লিয়ারড”। বাইরে থেকে স্পেসশিপের ইন্টালিজেন্ট সিকিউরিটি মডিউলের ঘোষনা শোনা যায়।
“দরজাটা খুলে দাও”।
খুলে গেল ধাতব দরজা। কাঁচুমাচু ভংগীতে দাঁড়িয়ে আছে একটা মানুষ। মানুষটার হাতে একটা কাগজের পোটলা, হাবেভাবে ফুটে উঠছে ভয় মেশানো সমীহ। কাল একটা কাপড়ে ঢাকা সারা শরীর।
“ক্যান্ডিডেটের নাম সাবিহা বেগম, বয়স ২৯, মহিলা”। ধাতব কন্ঠের ঘোষণা।
“আপনি আসন গ্রহণ করুন ম্যাডাম”। প্রফেসর টিং মাপা অনুরোধ জানান।
মেয়েটা একটু ইতস্তত করে বসে পড়ল নরম চেয়ারে। মুখের কাপড়টা সরাতেই ভেসে উঠল একটা মায়াকাড়া ভীত মুখ।
“আমাদের অভিবাদন গ্রহণ করুন, আমাদের উদ্দেশ্যটা ব্যাখ্যা করি ম্যাডাম। আমি আংটাং গ্রহের তিয়েনটান বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান জেনেটিক টেকনোলজির হেড প্রফেসর টিং, আমার সাথে উপস্থিত আছে আমার ছাত্র হিং। আমরা মানুষের বেসিক অনুভূতি নিয়ে গবেষণা করছি অনেকদিন। মানুষের দুঃখ, সুখ ইত্যাদি মৌলিক অনুভূতির জেনেটিক ম্যাপ বের করার চেষ্টা করছি। এই ফলাফল আমরা আপনাদের বিজ্ঞানীদের সরবরাহ করব যাতে তাঁরা ভবিষ্যতে আরো নিখুঁত মানুষ তৈরি করতে পারেন। ইন্টার গ্যালাক্টিক নীতিমালা অনুযায়ী আমরা মানুষ নিয়ে রিসার্চ করতে পারি শুধু তখনই যখন এটা মানবজাতির কল্যাণে আসবে। আমরা প্রযুক্তিতে আপনাদের চেয়ে একটু এগিয়ে আছি কিন্তু প্রযুক্তির আদান-প্রদানের মাধ্যমেই সভ্যতা এগিয়ে যায়। তাছাড়া আমরা নিজেরাও আগ্রহী আপনাদের ব্যাপারে জানার জন্য। এই মিশনটা শেষ করতে আপনাদের সময়ের হিসাবে তিন মাসের মত লাগবে। আপনি রাজি থাকলে আমরা কিছু ছোট টেস্ট করব আপনার উপর”।
“স্যার আমাকে আপনার এইখান থেকে নিয়ে যান, দোহাই আপনাদের”। মেয়েটা প্রায় আতর্নাদ করে উঠল।
“এখানে মানুষের থাকা সম্ভব না স্যার...পশু... পশুও থাকতে পারবে কিনা জানি না। তিন মাস বাসায় পানি নেই, বিদুৎ নেই যে কতদিন ধরে। স্যার খাওয়া নেই, পানির কষ্ট, গরমে সেদ্ধ হই, মশা আর পোকার জ্বালায় টিকতে পারি না। বাচ্চাটা মরেছে কয়েক বছর আগে, জামাই পালিয়ে বেঁচেছে। আমি মেয়েমানুষ, মনে হয় এই দেশে জন্মে পাপ করেছি, স্যার আমাকে বাঁচান। আপনাদের সাথে নিয়ে যান আমাকে।” সাবিহা বেগম একনাগাড়ে বলে গেলেন।
“আপনি ভুল করছেন ম্যাডাম, আমরা একটা স্পেসিফিক মিশনে এসেছি ম্যাডাম, মাত্র তিন মাসের জন্য কিছু ভলান্টিয়ার নেব। ইন্টার গ্যালাক্টিক নীতিমালা অনুযায়ী আমরা দেশের অভ্যন্তরীন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারি না”।
“স্যার...প্লিজ, আমি জানি আপনারা কে। এই দেশে মেয়েদের পড়াশুনা নিষেধ, বোরখা ছাড়া বের হওয়া যায় না। নিজে নিজে সামান্য লেখা-পড়া শিখেছি আমি। বাবার ইচ্ছা ছিল বিদেশে পাঠিয়ে দেবেন, পারলেন কই। তারপর বিয়ে হল, খেয়ে না খেয়ে ভালোই ছিলাম। ওদের নজরে পড়ে গেলাম, ইজ্জত খোয়ালে এইদেশে মেয়েদের সব শেষ হয়ে যায়। স্বামীটা পালিয়ে গেল, বাচ্চাটাও অসুখে-বিসুখে পড়ে মারা গেল, মেয়ে বলে কাজ করতে পারি না স্যার। না খেয়ে মরার দশা, আমি আপনাদের গোলাম হয়ে থাকব স্যার”। মেয়েটা গলা ধরে এল, মনে হয় কাঁদছে।
হিং কম্যুনিকেশন মডিউলের রেফারেন্সগুলো দ্রুত চেক করে চলে।
২০৬০ সালে বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হয়। বহু লোক নিহত হয় এতে। বাংলাদেশে নারীদের পড়াশুনা ও চাকরি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও জলবায়ুর প্রভাবের ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষতে মারা যায় আরো অনেক লোক। এরপরও জনসংখ্যার চাপ সামলাতে না পেরে সরকার সিদ্ধান্ত নেন যে, দেশের টেকনোলজি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সকল সুবিধা পাবে একটি বিশেষ শ্রেণীর লোক, এদের নাম আলেম সম্প্রদায়। বাকিরা (যাদের বলা হয় কাফির) সুবিধাগুলোর সামান্য একটা অংশ পাবে। দেশের জনগন দুটো ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। প্রচুর অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠে এতে কাফিরদের মধ্যে। বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংস ঘটনা ঘটলেও দেশে স্থিতাবস্থা বজায় আছে, সরকারের পুরো নিয়ন্ত্রনে আছে দেশ। আলেম অধ্যুষিত এলাকা জীবনযাত্রা বেশ আধুনিক, প্রযুক্তিও সহজলভ্য...
“আপনি কাফির নাকি?” একটু বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে হিং। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে গুরুকে, উনি স্পষ্টতই বিরক্ত এই প্রশ্নে।
“জ্বি, জ্বি ওরা আমাদের কাফির বলে...স্যার এইগুলি ওদের কথা। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, স্যার পুরোপুরি বিশ্বাস করি...নামাজ পড়ি নিয়মিত”।
মুসলিমরা ঈশ্বরকে আল্লাহ বলে, আল্লাহতে যারা বিশ্বাস করেনা তাদের কাফির বলা হয়...
রেফারেন্স চেক করে একটু ধাঁধায় পড়ে হিং। কাফির তাহলে ঈশ্বরে বিশ্বাসের ব্যাপার, এটা কোন সম্প্রদায়ের নাম নয়।
“আমাদের নাম দিয়েছে কাফির। ওরা স্যার ভয়ঙ্কর লোক। এগুলো বলছি জানলে আমাকে মেরে ফেলবে। স্যার দয়া করুন, নিয়ে যান আপনাদের সাথে” । মেয়েটার ব্যাকুলতা ফুটে উঠে তার মুখের প্রতিটি রেখায়।
“দেখুন ম্যাডাম, এগুলো ইন্টার গ্যালাক্টিক ইমিগ্রেশন নীতিমালা অনু্যায়ী নিষিদ্ধ, হয়ত আমার বলাই উচিত হচ্ছে না”। টিং স্মিত কিন্তু দৃঢ় কন্ঠে জানান।
“স্যার আপনাদের ইমিগ্রেশন দিতে হবে না। আমাকে নিয়ে চলুন এই থেকে। শুধু নিয়ে যান আপনাদের দেশে, বাকিটা আমি করে নেবো” ।
“দেখুন, এটা পুরো নীতিমালা বিরোধী কাজ। তাছাড়া আমাদের দেশে সাঙ্ঘাতিক মন্দা চলছে...আমাদের নিজেদের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তাটাই কমে গেছে।” গুরু এবার বোঝানোর চেষ্টা চালান।
“আমি রবীন্দ্র সঙ্গীত জানি স্যার। দরকার হলে গান গেয়ে খেতে পারব।“
২০৬০ সালে বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবের পর রবীন্দ্র সঙ্গীত নামক গান নিষিদ্ধ হয়। এইগান প্রায় দুইশ বছর ধরে চালু ছিল। কিন্তু ইসলামী সরকার এগুলো মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে এগুলো নিষিদ্ধ করেন। এই বিপ্লবের একশ বছর আগেও এক সরকার এগুলো বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেবার সম্ভব হয় নি। দেশে হামদ-নাত নামে একধরনের হালকা সঙ্গীত চালু আছে। কিছু কিছু লোক গোপনে রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ আর কিছু সঙ্গীত চর্চা করে, যদিও এগুলো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
কম্যুনিকেশন মডিউলের হিস্টোরিক্যাল রেফারেন্সগুলো ছাত্র আর শিক্ষক দুজনেই দেখেন এইবার।
হঠাৎ বেজে উঠে কম্যুনিকেশন মডিউলের ঘন্টি। বাইরে থেকে আসা কল।
“স্যার আমি আলাউদ্দীন স্যার। স্যার এইখানে অবস্থা একটু শোচনীয় স্যার। ভিড় বেড়ে গেছে, মানুষ স্যার আনরুলি হয়ে গেছে স্যার, ওরা সবাই স্যার আপনাদের সাথে যেতে চায় স্যার। আমাকে মনে হয় স্যার লেজার গান ব্যবহার করতে হবে স্যার। স্যার র্যাব কিছু করলেই হাজারটা বদনাম স্যার, আগের বার কাফির মেরে বান্দরবানে বদলি হয়েছিলাম স্যার। এইবার স্যার আর যেতে চাই না ওখানে স্যার। ওইখানে স্যার সমস্যা আরো দ্বিগুণ স্যার। স্যার মেয়েটাকে নামিয়ে দিন স্যার, আর আমি চলে আসি স্যার। আমি স্যার দরকার হলে আপনাদের সিকিউরিটির কাজ করব স্যার, আপনাদের গাড়ি পাঠানো লাগবে না স্যার, আমি পাঁচ মিনিটেই আসতে পারব স্যার। এই কাজ করতে ভালো লাগেনা স্যার...” ধাতব কন্ঠেও মনে হয় উত্তেজনা বোঝা যায় কিছুটা।
প্রফেসর টিং বেশ ঠান্ডা মাথার লোক। লঞ্চ মডিউলকে মৌখিক নির্দেশ দিলেন ইঞ্জিন চালু করতে, এটা করার এক মিনিটের মধ্যে স্পেসশিপ উড়ে যাবে আকাশে। রোবটটাকে বললেন মেয়েটাকে বাইরে রেখে আসতে। পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই পাঁজাকোলা করে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে গেল রোবটটা মেয়েটাকে। এরই মধ্যে মেয়েটা খাবলে ধরেছে আধা লিটারের পানির বোতলটা।
“স্যার আরো কয়েক বোতল পানি পাওয়া যাবে?” মেয়েটার শেষ অনুরোধটা উপেক্ষা করতে হয় দুজনকেই।
পরদিন সকালে দৈনিক “আঁধার ও আলোয়” খবরটা বের হয়। এইগুলো আজকাল পত্রিকার তৃতীয় পাতায় স্থান পায়। প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির যুগে প্রথম পাতা দখল করার মত খবরের অভাব নেই।
পালিয়ে গেল এলিয়েনরা
রিসার্চ টিমের ছদ্মাবরণে নাস্তিকতা প্রচারের উদ্দেশ্যে ভিনগ্রহ থেকে আসা এলিয়েনদের হটিয়ে দিয়েছে তৌহিদী জনতা। ঘটনাটা ঘটে গতকাল সকালে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে। রিসার্চ টিমের নামে ধর্মহীনতা প্রচারের কুটিল অভিপ্রায় টের পেয়ে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে বিধর্মী আংটাং গ্রহের একদল লোককে। উত্তেজিত লোকজনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাবকে লেজার গান ব্যবহার করতে হলে ঘটনাস্থলে ২০ জন লোকের মৃ্ত্যু ঘটে। র্যাব ভিনগ্রহের নাস্তিকদের সাহায্যের অভিযোগে সাবিহা নামের এক তরুণীকে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য তার বিরুদ্ধে গাজীপুর থানায় পতিতাবৃত্তির মামলা আছে। পাবলিক ডাটাবেজের পুরানো মামলার লিঙ্ক দেওয়া হল। এদিকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের র্যাবের কমান্ডার আলাউদ্দীনকেও সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাবলিক রেকর্ড অনুযায়ী তিনি পাঁচ বছর আগেও একবার সাসপেন্ড ও বদলি হয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা কাজিম এর সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি আবারো ধর্ম ও দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালু রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সেই সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের কেউই বিচারের উর্ধ্বে নয় বলেও জানিয়েছেন।
মন্তব্য
কিছুদিন আগে একটা ঘোষণা এসেছিল যে সচলায়তন একটা সায়েন্স ফিকশন সংকলন বের করবে। এই গল্পটা সেই সংকলনের জন্য লেখা হয়েছিল, লেখার পরে মনে হলো এতে সায়েন্স নেই, যা আছে তার পুরোটাই ফিকশন।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ভয়াবহ একটা ছবি আমি দেখি...সেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ "এলিয়েনের" মত বাস করছে তাদের নিজ বাসভূমে।
সেই বাংলাদেশের গল্পই বলতে চেয়েছি মনে হয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
খুব ভাল লেখা, বিষয়বস্তু জটিল এবং ভয়ানক সিরিয়াস, তাই ভাবছি বসে বসে।
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
ধন্যবাদ হরফ। যেটা বলেছি উপরে, দেশের এক ভয়ানক চিত্র ভাসে মাথার ভেতর, সেটা যেন ফলে না যায়...মানুষের শুভবুদ্ধির যেন জয় হয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
প্রচন্ড খারাপ লেগেছে আপনার লেখা পড়ে...জানি না কেন...???
tofayel71@gmail.com
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ তোফায়েল...আমি নিজেও চাই না এই বাংলাদেশ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ভবিষ্যৎ এ এই বাংলাদেশ যেন না দেখতে হয় আমাদের ।
লেখা পছন্দের পোস্টে যুক্ত করলাম।
love the life you live. live the life you love.
ধন্যবাদ তারাপ...
সহমত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
যদিও বড় একটা সাইফাই ভক্ত নই,
তবু দারুণ লাগলো পড়ে!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বানান সাইজ ও মন্তব্যের জন্য এক্সট্রা লার্জ ধনব্যাদ তিথীডোর...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
রাইখ্যা যাই, সময় করে পড়ুম বড় গল্পখান...
ওক্কে...সময় করে ফিরবেন কিন্তু...ইট রইল আমার জিম্মায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
গ্রিম মুড, কিন্তু অসাধারণ লেখা। এ দিন দেখতে চাই না।
কয়েকদিন ধরে মু.জা.ই.'র কল্পবিজ্ঞান পড়ছি। এটাতে বিজ্ঞান খুব বেশি না থাকলেও কল্পে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন। এমন আরো লিখুন।
দুঃখের বিষয়, এটা পড়ে আপনার লেখার ভক্ত হয়ে গেলাম, এটা বলতে পারছি না। কেননা... কেননা আগে থেকেই আছি!
একটু বেশিই নৈরাশ্যবাদী গল্প। আমি বিশ্বাস করি ২০৫০ এর মাঝেই দেশ ট্র্যাকে চলে আসবে। আমাদের তখন ভিনগ্রহ কেন, ভিনদেশেও যাওয়া লাগবেনা।
সজল
এটা না হলে আমিও খুব খুশি হব। তবে নৈরাশ্যের কারণও আছে, সম্মুখের চেয়ে পশ্চাৎগমণ বেশিই হয়েছে আমাদের, অন্তত আমার চোখে তাই দেখছি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখা ভালো লেগেছে।
আমি কিন্তু নৈরাশ্যবাদীদের দলে নই।
...........................
Every Picture Tells a Story
মন্তব্য ও ভালোলাগা জানানোর জন্য ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম ভাই,
নীতির চ্যালা বুঝবি ঠ্যালা দেশেই হবি নিরুদ্দেশ!
রোমেল চৌধুরী
আনিসুল হক সাহেবের একটা চমৎকার উপন্যাস আছে। " অন্ধকারের একশো বছর"- ভবিষ্যত একটা দেশের ছবি, যে দেশ চালায় মৌলবাদীরা,যে দেশে কেউ হাসে না- যে দেশে কোন শিল্পী নেই- যে দেশে কবিতা পাঠের পরিবর্তে কেবল ধর্মীয় স্তোক পাঠ করা হয়...
এ গল্পটা কিছুটা রম্য হলেও ভেতরের চিত্রটা কিন্তু একই রকমের ভয়ংকর।
উপন্যাসটা পাঠ করে যেমন হয়েছিলো, তেমনি ভেবে শিউরে উঠলাম আবার।
_________________________________________
সেরিওজা
কষ্টের গল্প।
কিন্তু তারপরও পড়ে কিছুক্ষন ভাবলাম, এমন কোনো পরিস্থিতি কি ভবিষ্যতে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে? আমার মনে হয় না।
দারুণ প্লট, আর আপনার লেখনির কারণে ফুটে উঠেছে লেখাটা। তবে এ জিনিস হবে না কোনদিন এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিন্ত, যদি হয় তা কিন্তু আমাদেরই ব্যর্থতা হবে। যদি এখন থেকে রাজাকার, জামাত এবং এসংক্রান্ত ব্যাপারে নতুন প্রজন্মকে আলোকিত না করি, তাহলেই একমাত্র এহেন সিনারিও সম্ভব। আপনার এই লেখাটা সেই খাতে একটা দারুণ হাতিয়ার, জামাত ক্ষমতায় আসলে কি হবে, তা এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন যে কি বলব!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
জামাতি রা তো একটা দুই টাকার দল। নিজেদের দলের লোক হিসাব করার সময় পায়জামা আর পান্জাবীও আলাদা হিসাব করে। ওরা দখল করবে বাংলাদেশ! ধুর মিয়া কী বলেন।শ
প্রগতিশীলরা ব্যার্থহলে শুন্যস্থান পুরন করবে কারা? একটু ভেবে দেখেন। আর ছাত্রলীগ যেভাবে যাকে তাকে রেপ করা শুরু করেছে তাতে আপনার লেগেছে কিনা যানি না তবে আমার লেগেছে। আমার ভোট নৌকা আর কখনো পাবে না।
ভাবতাম মেজর ডালিমের কিচ্ছা কাহিনীতে বুঝি মিথ্যা আছে। এনিয়ে কত বিতর্ক করেছি। এখন সন্দেহ হয়, আমি বোধহয় ভুল তর্ক করেছি। আমি বোকা আদর্শবাদী প্রগতিশীল। আমাকে বোকা বানিয়ে ওরা সব নিয়ে যাচ্ছে। আমার দেশ মাতাকে আমার চোখের সামনে রেপ করছে।
উপরের সবাইকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান শুধু একমাত্র সমস্যা নয়। এই ছোট দেশটা জনসংখ্যার চাপেও দিশেহারা। সম্পদের সুষম বন্টন সম্ভব যেখানে সম্পদের প্রাচুর্য অনেক। কিন্তু সম্পদ যেখানে জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল, সেখানে মানুষ চায় কেড়ে নিতে। এই "কেড়ে নেওয়ার" কাজে ধর্মটা অবশ্যই একটা হাতিয়ার, এই শোষণ প্রক্রিয়া এখনও চলমান, এর জন্য ভবিষ্যতে তাকাতে হবে না। আমি মনে করি ভবিষ্যতে এটা আরো বেগবান হতে পারে।
লেখাটা নৈরাশ্যবাদী বলে অনেকেই মনে করেছেন। আমার এই কল্পনা সত্যি না হলে আমি নিজেই সবচেয়ে খুশি হব।
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
Pore valo laglo....
ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ভয়াবহ একটা ছবি আমি দেখি...সেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ "এলিয়েনের" মত বাস করছে তাদের নিজ বাসভূমে।
" Onek shomossha ache amader desher ja niye voy pai, tobe moulobadi der niye oto ta voy ekhon ar keno jeno pai na. Ami shopno dekhi 2060 er onek agei jhetiye mere biday korte moulobad amader desh theke "
ভবিষ্যতের এই রকম ভয়ানক চিত্র দেখে শঙ্কিত হয়ে উঠছি। আশা করব এই চিত্র গল্প ছাড়া বাস্তবে দেখতে হবে না।
লেখাটা ভাল লাগল।
আদনান0০৭
ভবিষ্যতের এই রকম ভয়ানক চিত্র দেখে শঙ্কিত হয়ে উঠছি। আশা করব এই চিত্র গল্প ছাড়া বাস্তবে দেখতে হবে না।
লেখাটা ভাল লাগল।
আদনান0০৭
কী জানি তাসনীম ভাই, ছোট মানুষ, বুঝি কম। কিন্তু এই গল্পটা অত ভালো লাগল না, কেমন জানি খাপছাড়া ভাবটা বেশি। মানে শুরুর সাথে শেষটা অত মিলল না যেন। আপনি আরো অনেক ভালো লেখেন বলেই কিনা জানি না...
হয়ত আপনার ভয়গুলো মনে হঠাৎ করে বেশি প্রকট হওয়ায় গল্পটা গল্প হিসেবে যত সুন্দর হতে পারত অতটা হয় নাই... কী জানি...
তবে আমিও নৈরাশ্যবাদীদের দলে নই। আমার বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। বোকা বলেই মনে হয়! আমার সব সময় মনে হয়েছে আমাদের দেশের আসল মানুষেরা মানে সাধারণ জনগণ, যারা শহরের বাইরে থাকে, অনেক সাদাসিধা মনের ভালোমানুষ বলেই এরা প্রতিবাদ কম করে, দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত লড়ে না। কিন্তু এটাকেই যারা সুবিধাবাদী তারা আসল রূপ ভেবে ভুল করে, জোর জবরদোস্তি চালাইতে চায়। কিন্তু আসলে না আমাদের দেশের এইসব সাধারণ মানুষেরা যখন ফুঁসে ওঠে, তারা কোনকিছু মানে না। ৩৯ বছর আগে একবার প্রমাণ দিয়েছিল, ভুলে যাচ্ছে সবাই... দরকারে আবার দেবে। জীবন যতক্ষণ আছে আপনার গল্পের মতো হতে আমরা, আমি অন্তত দেব না এইটা জানি!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ যাযাবর ব্যাকপ্যাকার।
বাংলাদেশ নিয়ে আমারও অনেক স্বপ্ন, কিন্তু মনে স্বপ্ন যত বেশি থাকে স্বপ্নভঙ্গের বেদনাও তত বেশি হয়। যেটা আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশকে অনেক জনসংখ্যার বোঝা টানতে হয়, আমাদের সম্পদ খুব সীমিত, এখানে প্রিভিলেজড ক্লাস অন্যেরটা কেড়ে নেয়। ধর্মীয় রাজনীতি একটা সহায়ক শক্তি এখানে।
তোমার ভালো না লাগার কারণ কী নেতিবাচক কাহিনী? নাকি লেখার গাঁথুনী? নাকি খাপছাড়া গল্প? নাকি অল অফ দ্য এবোভ?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হরফ, তোফায়েল, তারাপ, তিথীডোর, কৌস্তুভ, সজল, মুস্তাফিজ ভাই, রোমেল ভাই, সুহান বাউলিয়ানা, সাইফ, শেহাব, স্বপ্নবিভা, আদনান।
তোমাদের/আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কুখ্যাত, ঘৃণ্য রাজাকার জামাতিদের নিয়ে যেভাবে টম এন্ড জেরি খেলা শুরু করছে এখনকার সরকার, তাতে আপনার এই কল্প-গল্পটা সত্যি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
রাজনীতিবিদ, এদের আদৌ কোনো নীতিবোধ আছে কিনা, সেইটা নিয়েই আমি ব্যাপকভাবে সন্দিহান।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ধূগো।
অধিকাংশই নীতিহীন সন্দেহ নেই, তবে ভালো লোকও আছেন, কিন্তু তারপরেও নীতিহীনরাই বেশি সক্রিয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম ভাই, এটা একটা দুঃস্বপ্ন। দুঃসহ দুঃস্বপ্ন। আমি বরং অনেক বেশি আশাবাদি। নদীর স্রোতে যেমন আবর্জনা দূর হয়ে যায়, তেমনি সময়ের স্রোতেও দেশের এই সমস্যা গুলো থাকবে না।
তবে, গল্পটা ভাল লেগেছে।
অনন্ত
লেখা খুব ভালো লেগেছে। তবে আর সবার মতো আমিও আশা করি এইটা সত্যি হবে না। আরে, আমরা আছি না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
গল্পটাকে ভাবতে গিয়েই চমকে উঠলাম! স্বপ্ন আছে, চেষ্টাও থাকবে বাস্তবটাকে এরকম যেন দেখতে না হয় তা নিশ্চিত করতে!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
অনন্ত, ওডিন এবং বালিকা মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তোমরা আছ দেখেই ভরসা...দুঃস্বপ্ন যেন আর বাস্তব না হয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কিভাবে যেন এই একই দুঃস্বপ্ন আমাকেও কুরে কুরে খাচ্ছে বেশ কিছুদিন যাবত। প্রগতিশীল সরকার ব্যার্থ হলে মৌলবাদীরা শুন্যস্থান পুরন করবে স্বাভাবিক নিয়মেই। তারা যদি নাও পারে চিত্রে কোনই পার্থক্য থাকবে না। মানুষ পালাতে চাবে প্রগতিশীল মৌলবাদীদের হাত থেকে। হ্যা প্রগতিশীলরাও মৌলবাদী হয়। তারা এতোমৌলবাদী হয় যে নিষ্ঠুর হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয়। নিয়োগ দেয় যোগ্যতা নয়, দল বিবেচনায়। নিয়োগপ্রাপ্ত কুত্তারবাচ্চারা ছাত্রীদের বেধেরেখে ধর্ষন করে মিউচুয়াল সেক্স শেখাতে চায়। দুদিন পরে আমার মেয়েকে কোথায় পড়াবো?
এখানে মানুষ বাস করে না। মুদ্রার উভয়পিঠ সমান এখানে। প্রগতিশীলদের তো দেখছি। মৌলবাদী প্রগতিশীল সবাই এক আমাদের কাছে। ডিজিটাল সরকার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে আর স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন দেখানোর আর কেউ বাকি নাই। এখানে সবাই হিংস্র কয়োট। পচা বাসী যে যেখানে যা পায় ছিরে ছুবরে খায়।
বঙ্গবন্ধু সত্য উপলব্ধি করেছিলেন এবং বলে গেছেন অনেক আগেই। "আমার কম্বলটা গেল কই?" বাংলাদেশে নৈতিকতা বোধশুন্য চোরের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তিনি মরে বেচেছেন।
আমি পালাতে চাই।
আমি পালাতে চাই।
আমি পালাতে চাই।
এখুনি।
নতুন মন্তব্য করুন