বৃহত্তর কুমিল্লার চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার গোলবাহার গ্রামে আমার দাদার বাড়ি। উনি স্কুলে আরবি পড়াতেন, যদিও ব্যক্তিজীবনে তেমন ধার্মিক মানুষ ছিলেন না। বেশ জাগতিক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা করতেন, শেষ বয়েসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছিলেন এবং পরাজিত হয়েছিলেন। ডায়াবেটিস আর পরাজয়ের মনোকষ্ট নিয়ে ১৯৫৮ সালে ৭২ বছর বয়েসে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি। ওনার মৃত্যুর এক যুগ পরে আমার জন্ম, ওনার কোনো স্মৃতিচিহ্ন আমাদের বাসায় ছিল না, কেবল একটা ছবি ছাড়া। সেই ছবিতে উনি গম্ভীরভাবে বসে আছেন, তাঁর দুই পুত্র দুইপাশে দাঁড়িয়ে। ছবিটা আমি বহুদিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি, নিজের চেহারা, আকার বা উচ্চতার সাথে মিল খুঁজেছি বিভিন্ন বয়েসে।
আমার দাদার সাথে আমার পরিচয় ওইটুকুই, আমরা কেউ কাউকেই চিনি না যদিও তাঁর রক্ত আমার শরীরের প্রবাহমান। তাঁর জেনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে হয়ত আমি সকালে ঘুম থেকে উঠি...অফিস করি...শিশুপালন করি...ব্লগ লিখি...গান শুনি...কবিতা পড়ি...প্রকৃতি দেখি...হয়ত এগুলো তাঁর থেকেই পাওয়া দোষ অথবা গুণ। বলা যায় না, একদিন হয়ত ইনসুলিন নেওয়াও শুরু করতে হবে তাঁরই কল্যাণে।
ওনার বাড়িতে আমি প্রথম পা রাখি ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর মাসে। ঢাকা থেকে গোলবাহার গ্রাম - এই পঞ্চাশ মাইল যেতে সময় লেগেছিল সারাদিন। বাস, ফেরি, রিকশা ও হন্টন - পথে সাপের দেখা- আমার জীবনের অন্যতম সেরা ভ্রমণ ছিল সেটা। আমরা সাত দিন ছিলাম আমার দাদার বাড়িতে। আমার বাবার ছোট ভাই পেয়ারা চাচা হৈ-চৈ করে পুরোটা সময় মাতিয়ে রেখেছিলেন। কয়েক বছর আগেই উনি সদর্পে যুদ্ধ করেছেন খালেদ মোশারফের দুই নম্বর সেক্টরে। ওনার পদচারণায় যৌবনের তেজোদ্দীপ্ত উত্তাপটা টের পাওয়া যেত সর্বদাই। ওনার সাথে শীতের সকালে পিঠা খাওয়া, নৌকাভ্রমণ, গ্রামের মাঠে খেলা - এখন মনে হয় এই জিনিসগুলো আমার পূর্বজন্মে ঘটেছিল।
১৯৮৬ সালে আমি আর আমার বাবা আবার গ্রামের বাড়িতে যাই। মাঝের এই দশটা বছরে আমি বড় হয়ে গেছি, কলেজে ভর্তিচ্ছু দামড়া যুবক তখন। আর আগের হৈ-চৈ নেই সেখানে। গ্রামে পৌঁছেই আব্বা কেমন আনমনা হয়ে গেলেন, এদিক-ওদিক ঘুরে দেখেন, বিচ্ছিন্ন গল্প বলেন, দাদার কথা বলেন, শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন। দাদার কবরের সামনে গিয়ে তাঁর চোখটাও ছলছল করতে থাকে। তিনি যেন রাস্তা পাড়ি দিয়ে এখানে আসেন নি, এসেছেন টাইম মেশিনে চড়ে বালকবেলাতে। এই মেশিনটা বহু আগেই আবিষ্কার হয়ে গেছে, নিজের অজান্তেই মানুষ যখন তখন এতে চড়ে বসে।
বিদেশ থেকে ঢাকায় ফিরলে আমিও মাঝে মাঝে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আনমনে জায়গাটার আগের চেহারা মনে করার চেষ্টা করি। আমাদের সেই স্কুলের টানা বারান্দায় দাঁড়ালে যেন অনেক আগের কোনো এক শীতকালের সকালে ক্লাস শুরুর আগে বালকদের কোলাহল শুনতে পাই। শৈশবের তাজা বাতাসটা হঠাৎ করেই ফিরে আসে এই বায়ুদূষণমুখর শহরে - গল্প আর ছবি নিয়ে। আমি সাবধানে নেড়েচেড়ে তাদের রেখে দেই যত্ন করে বুকের কাছে...এই যানজট অধ্যুষিত নগরীতে বৃথাই খুঁজতে চাই ন্যাপথালিনের গন্ধওয়ালা শৈশব। অনেক বছর আগে গোলবাহার গ্রামের রাস্তায় আব্বার সেই ব্যাকুলতাটা টের পাই - প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে।
এর পরে আর বহুবছর গ্রামে যাইনি। আমার দাদিকেও গ্রামের বাড়ি থেকে সরিয়ে শহরে আনা হয়, আমাদের বাড়িতেও বহুদিন ছিলেন উনি। ওনার কথাতেও ফুটে উঠত ফেলে আসা বাড়ির গল্প, উনি প্রায়ই গ্রামে ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠতেন - পৃথিবীর সমস্ত সমস্যা ওখানে গেলেই যেন সমাধান হয়ে যাবে। নানানভাবে ওনাকে নিবৃত করা হতো, কখনো বুঝিয়ে বা কখনো প্রবোধ দিয়ে। তারপর একদিন উনিও গোলবাহারে ফিরলেন, ওনার নিজের বাড়িতে, খাটিয়াতে করে,অনেক মানুষের কাঁধে চেপে - ওনার শেষ যাত্রায়। সেই স্মৃতিময় বাড়ি থেকে ৫০ মাইলের ভেতরেই থেকেছেন পুরোটা সময়, সামান্য পথটা অতিক্রম করাটাই কখনো কখনো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
আমার বাবা মাঝেমাঝে বলতেন রিটায়ারমেন্টের পরে উনিও গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। সেখানেই থাকবেন বাকি জীবন। কার্যক্ষেত্রে সেটার কোনো বাস্তবায়ন আমরা দেখি নি, এই মেগাসিটিতে ওনার শেকড় গজিয়ে গেছে ততদিনে। শেকড়ের ব্যাপারটা বড় অদ্ভুত, আমরা বুঝতেও পারি না যে কোথায় এবং কখন আমরা বাঁধা পড়ে যাই।
আমারও ইচ্ছে আছে রিটায়ার করার পর এক বৃষ্টির সকালে দেশে ফেরার, অনেক প্ল্যান-ট্যানও আছে। খুব আনন্দ লাগে এইগুলো ভাবতে, মনে হয় অনেক বছর পরে আব্বার সেই চিন্তাগুলো ভৌগোলিক সীমানা ভেদ করে চলে আসে এই দেশে। ওনাকে আমি আবারও উপলব্ধি করি আমার ভাবনায়, অবাস্তব কল্পনাতে। স্মৃতির শহরে ফেরার মত কঠিন কাজ আর এই ভুবনে আর দ্বিতীয়টি নেই। দূরত্ব যাই হোক না কেন, দূর থেকে আরো দূরে চলে যায় ওরা, সেখানে ফেরা আর হয়ে ওঠে না। ওরা ফিরে আসে হঠাৎই, বন্ধুর ফোনকলে বা কবিতার বইয়ের পাতা থেকে।
দুপুর ঝুঁকে পড়েছে বিকেলের দিকে, ফেরিওয়ালা
হাওয়ায় আমন্ত্রনী ডাক মিশিয়ে
দাঁড়ায় মধ্যবিত্ত দরজার কাছে আর উড়নচণ্ডী এক কিশোর
লগি হাতে ছোটে কাটা ঘুড়ির পেছনে,
কলতলায় আস্তেসুস্থে বাড়ে জটলা। ভাঙা দেয়ালে
রাঙা পাখি এক হিন্দি ফিল্মের নায়কের মত শিস দ্যায়।
ড্রেনের ধারে কান্তিমান কুকুর
সোহাগ কুড়ায় সঙ্গিনীর।
(বুদ্ধদেবের চিঠি / শামসুর রাহমান )
আমার মেয়েরা বড় হচ্ছে মার্কিন দেশের দক্ষিণে এক ছোট শহরে। এখানে শৈশব উপভোগ করার মত অনেক কিছুই আছে। এই শহরটা এখনও দারুণভাবে বেঁচে আছে, আমার ছেলেবেলার সেই শহরটার মতো ধুঁকে মরছে না সে। আমার শৈশবের গল্পের সাথে ওদের শৈশবের গল্পের কোথাও কোনো মিল নেই, ঠিক যেমনটা নেই আমার বাবার শৈশবের গল্পের সাথে আমার গল্পগুলোর। শুধু কোথাও যেন অদেখা একটা মায়া রয়ে গেছে।
আমার ভাইয়ের ছেলে-মেয়েরা বড় হচ্ছে আরও দূরের এক মহাদেশে, ওখানে ডিসেম্বর মাসে বেজায় গরম থাকে। ওদের জীবনের বাস্তবতাও আমাদের থেকে কত ভিন্ন যদিও দাদার বদলে ফেলা নামের শেষাংশ আর তার জিনের যাবতীয় দোষগুণ নিয়ে আমরা দিনাতিপাত করি হয়ত সেই প্রাচীন নিয়মেই। ইউরেনাস গ্রহের সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে নাকি কয়েকশ বছর লাগে, আর এই অল্প কয়েক দশকেই আমাদের বড় হয়ে ওঠার গল্পগুলো কী নিদারুণভাবে ভিন্ন। মহাকালের নিরিখে এই সময়টা কতই সামান্য অথচ আমাদের জীবনের সময়ের আঁচড় কতই না প্রবল।
আমার কন্যা আর ভাস্তে-ভাস্তিদের জন্য ওদের দাদাভাইয়ের শৈশবের সেই গ্রামটা মনে হয় ভিনগ্রহের কোন জায়গা। কয়েক পুরুষ পরে আমাদের উত্তর পুরুষরা হয়ত বিভিন্ন দেশের নাগরিক হবে, ভুলে যাবে বিনিসূতায় গাঁথা ইতিহাসের গল্প। কেউ কাউকে চিনবে না, জানবেও না একই বাড়িতে বড় হয়েছিল ওদের পূর্বপুরুষেরা। দুই দেশের যুদ্ধ হলে হয়ত তুলে নেবে অস্ত্র, নিজের অজান্তে রক্ত ঝরাবে ভিনদেশে থাকা নিজেরই ভাইয়ের। কে জানে যাদেরকে নিয়ম করে সকাল-বিকাল গালি দেই আমরা, তারাও হয়ত আমাদের কাছেরই মানুষ।
বিগ ব্যাংয়ের পরে নাকি মহাবিশ্ব শুধু ছড়িয়েই পড়ছে, আমরা মধ্যবিত্ত বাঙালীরা যেন সেই সূত্র ধারণ করছি আমাদের নিজেদের জীবনে...বেঁচে থাকার তাগিদে ছড়িয়েই যাচ্ছি এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এক স্মৃতিময় শহর থেকে অন্য এক বিস্মৃত নগরীতে। আমাদের একদা সার্বজনীন গল্পগুলো ভিন্ন চেহারা পাচ্ছে অতি দ্রুতই। ঐতিহ্য শব্দটা হয়ত একসময়ে সামান্য সময়ের ইতিহাসে গিয়ে ঠেকবে।
দিনে দিনে আমি টের পাই ফেরা বড়ই দুষ্কর...বড়ই কঠিন।
আজকের ছবিগুলো...
গোলবাহার গ্রাম
From sachalayatan |
From sachalayatan |
From sachalayatan |
পেয়ারা চাচার কবর
From sachalayatan |
স্কুলের ছবি
From sachalayatan |
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ভ্রাতৃসংঘ
###
মন্তব্য
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ছাইপাঁশ
অতি অসাধারণ লেখা। কিন্তু শেষের দিকে পড়ে বিষন্ন হয়ে গেলাম। এইরকম একটানা চলতে থাকলে আপনার লেখা বয়কট করা হবে মন খারাপ করে বসে থাকতে ইচ্ছা করে না মাঝে মধ্যে "ড্রিম জব" টাইপের কিছু চাই
বিষন্নটা কাটাতে এই লাইনটা ফিরে গিয়ে আবার পড়লাম,
এই লোকের জীবন তেজপাতা করে ফেলেনাই লোকে?!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
তাড়াতাড়ি এক পর্ব মার্কিন মুল্লুকে দেব। খসড়াটা ফাইন্যাল করা আর হচ্ছে না।
মার্কিন দেশে অনেক অদ্ভুত লাস্ট নেইম আছে। বিয়ের দিন হুকার সাহেবের বউ নাকি বলেছিল যে আজ থেকে আমি হুকার হচ্ছি
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ওরে
আক্ষরিক অর্থেই পেট চেপে ধরে হাসলাম এতক্ষণ! এই মেয়ে তো মারাত্মক রসিক!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
'
একই গল্প। মন খারাপ হলে এভাবেই ভাবতে চেষ্টা করি। নিজের স্মৃতির সাথে সন্তানের স্মৃতির যোগ ঘটিয়ে দেয়ার খুব উপায় খুঁজি। এখন জানি আমার বাবা-মা ঠিক এমনটিই চাইতেন..এই লেখা আমার অনুভূতি খুব করে ছুঁয়ে গেল।
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মণিকা। প্রবাসী বাঙালীর গল্পগুলো প্রায় একই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
মায়ার টানে, নিজের মাতৃভূমির টানে চলে আসুন নিজের মায়ের কোলে, নিজের শিকড়ের মাটিতে। এই মাটির এখন আপানাদের মত ছায়ার দরকার। নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখান, আপনি কত আনন্দে আপনার শৈশব, কৈশোর কাটিয়াছেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। যদি ফিরতে পারি তবে সেটা হবে জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
দিলেন তো মন খারাপ করিয়ে!
এর পরে চেষ্টা করব মন ভালো করা লেখা দিতে
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
মনের কথাগুলো বলে দিলেন তাসনীম ভাই। প্রায়ই মিতুকে বলি, শেষ জীবনটা টাঙ্গাইলে কাটাব !! আমাদের দূজনেরই শেকড় যে ঐখানে।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
মনের বাসনা যেন পূর্ণ হয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বেশিরভাগ প্রবাসী বাঙালিই মনে হয় মনে মনে ভাবে যে দেশে ফিরবে, কাটাবে বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধবের সাথে কিন্তু বেশিরভাগেরই সেটা আর হয়ে উঠে না। প্রথম প্রথম এসে সবসময় এটাই চিন্তা করতাম, স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু এখন চিন্তা করলে কষ্ট লাগে, মনে হয় যদি ফিরতে না পারি।
আপনার লেখা যথারীতি ভালো লাগলো।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
ধন্যবাদ পাগল মন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লন, আপনার লগে একহাঁড়ি রসগোল্লা। যেই অনেকদিন পর সচলে ঢুকলাম দেখি আপনি আমার অনারে পোস্ট দিয়েছেন।
রসগোল্লা সাদরে গৃহীত হলো। আমি নিজেও সচলে অনেকদিন পরে ঢুকলাম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
পড়লাম...
উদ্বৃত করবার মতো বেশ কিছু বাক্য আছে, করতে ইচ্ছে করলো না। আমাদের সবার একটা করে একই রকম দাদা-দাদি ছিলো বোধহয়।
ধন্যবাদ সুহান।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নিজেদের জীবনেই দেখছি পৃথিবীটা কত বদলে গেছে!!! হয়তো আরো বদল হবে, কিন্তু অনুভুতিগুলি যদি ছড়িয়ে দিতে পারি, শিকড়ের গল্প গুলি যদি লিখে যেতে পারি, সেই চেস্টাই এখন থেকে করেছি। আপনার স্মৃতিগুলি আমাকে ছুয়ে গেছে, অনেক ধন্যবাদ তাসনিম। ভালো থাকবেন।
সবারই নিজেদের শেকড়ের গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করা উচিত। এইভাবেই হয়ত একটা সমাজের গল্প ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকে। ভালো থাকবেন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
পড়েছি তো আগেই, আবারো পড়লাম..
ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।
মায়া রয়ে গেছে, রয়ে যায়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথী...বানানশুদ্ধি অব্যাহত থাকুক।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
- এজ্যাক্স লম্ফ ঘ্যাচাং -
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার লেখা পড়লেই দেশের জন্য আপনার হাহাকারটা টের পাওয়া যায়। একই হাহাকার আমাদের মধ্যেও কাজ করে বলে আবেগে অভীভূত হয় যাই। আর দুঃখবোধে ছটফট করি।
প্রথম জেনারেশনের ইমিগ্র্যান্টরা মনে হয় এই হাহাকার এক জীবনেও কাটিয়ে উঠতে পারে না
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অদ্ভুদ সুন্দর আর বিষাদমাখা লেখা।
love the life you live. live the life you love.
ধন্যবাদ তারাপ কোয়াস।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমার শিকড় কোথায় বলতে গেলে আস্ত বাংলাদেশটার নাম বলে দেয়া যেতে পারে - আমার নিজের বলতে কোন জায়গা নেই পৃথিবীতে। 'গ্রামের বাড়ি' কোথায় বললে উত্তর দেই না (সেটাকে খুব একটা ভালোভাবেও দেখা হয় না অবশ্য, ওটা না থাকা সামাজিক অপরাধবিশেষ)। কিন্তু যেসব জায়গাগুলোয় হেঁটে-দৌড়ে বড় হয়েছি সেগুলোর প্রতি কেমন একটা টান যেন রয়েই গেছে। জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে বাংলাদেশের একটা ছোট্ট, একটা মাঝারি আর একটা বড় শহরে - সেগুলোর প্রতি টান কীভাবে তৈরী হয়েছে জানি না, কিন্তু হয়েছে এবং সেটা সেরকমই রয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে ফিরে যাই।
বাংলাদেশের সমাজের সাথে আমার স্মৃতি হিসেব করলে সেখানে আনন্দের কিছু খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। ওই সমাজের প্রতি কোন দায়বদ্ধতাও বোধ করি না, কিন্তু তারপরেও কেন যেন ওখানেই ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। ঢাকার জ্যামভর্তি রাস্তাও এখানকার পরিষ্কার রাস্তার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।
কিন্তু আপনি তো জানেনই, ফেরা আসলেই দুষ্কর। আমি হয়তোবা ফিরতে পারবো কারণ আমার সিদ্ধান্ত নিতে হয় শুধুমাত্র নিজের চিন্তা করে। কিন্তু যাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হলে আরো অনেকের চিন্তা করতে হয়, বিশেষত পরবর্তী প্রজন্ম সহ, তাঁদের জন্য কাজটা আসলেই আরো অনেক অনেক বেশি কঠিন।
চমৎকার লেখাটার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি না, আপনার প্রতিটা লেখাই আগেরগুলোকে ছাড়িয়ে যায়।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ অপছন্দনীয়।
আসলেই...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বরাবরের মতই দারুন। মন ছুঁয়ে গেল । ধন্যবাদ ।
পড়াচোর।
ধন্যবাদ পড়াচোর।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার স্মৃতিকথা লেখার ধরন খুব ভালো লাগে। এত সরল ও আবেগঘন যে পরিষ্কার মনে হয় চোখের সামনে সব দেখছি।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ ফাহিম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমি সবসময়ে আপনার পোস্টগুলো জমিয়ে রাখি আরাম করে গরম চায়ের মগ হাতে নিয়ে চেয়ারে পা তুলে বসে পড়ার জন্যে।
আর প্রতিবারই পড়তে গিয়ে খানিক হাসি, খানিক মন খারাপ হয়, আর অনেকখানি ভালোলাগা থেকে যায়...
আরেকটা সেই রকম দারুণ লেখা পড়লাম তাসনীম ভাই। ভালো থাকুন, স্মৃতির শহরের জন্যে মায়া জেগে থাকুক, আপনার মেয়েরাও যেন আপনার মতন করেই বাবার ছেলেবেলা আর সেই থেকে নিজেদের ছেলেবেলার স্মৃতিগুলোকে চেরিশ করতে শেখে...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভালোলাগা জানানোর জন্য ধন্যবাদ যাযাবর ব্যাকপ্যাকার।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আসলেই, ফেরা আর হয় না তাসনীম ভাই। এটাই নিয়ম। কোথায় ফিরবেন ? ফিরেনও যদি, দেখবেন যেখানে ফিরতে চেয়েছিলেন সেখানে ফেরেননি - এ অন্য কোন জায়গা ! তখন বলবেন, হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোনখানে...
তবু ন্যাপথালিনের গন্ধওয়ালা শৈশবের বা স্মৃতির শহরের ছায়াচ্ছন্ন মায়ামেদুর স্মৃতিগুলি উস্কে উঠে হঠাৎই কোন বাল্যবন্ধুর ফোনকলে, কবিতার কয়েকটি লাইনে (আপনার উদ্ধৃত কবিতাটা আমার একদম মনোমত হয়েছে), কিম্বা কোন পুরনো গানের সুরে...
আপনি একটা কবিতা উদ্ধৃত করেছেন, আমি আপনাকে তিন-তিন'টি গান দিচ্ছি এখানে। এগুলি আমার স্মৃতির শহরের সবচেয়ে পুরনো স্মৃতিমাখা গান। একটা ক্লাস-থ্রিতে বন্ধু নাইমুল ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে ডায়াসে দাঁড়িয়ে পুরো ক্লাসকে গেয়ে শুনিয়েছিল। সেই প্রথম শোনা এটা। অন্যটাও বন্ধুদের মুখে মুখে শোনা প্রথমে, পরে মনে হয় রেডিওতে। এই গানদু'টির কথা হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল সম্প্রতি খবরের কাগজের বিষন্ন এক খবরে। আপনি তো '৭০ দশকের মানুষ, দেখুনতো এগুলিতে কোন ন্যাপথালিনের গন্ধ পান কিনা ! আমার কিন্তু এই গানদু'টি শুনলেই শৈশবের তাজা বাতাসটা হঠাৎ করেই ফিরে আসে এই বায়ুদূষণমুখর শহরে - গল্প আর ছবি নিয়ে।
পূর্বপুরুষ-উত্তরপুরুষ নয়, এক পুরুষেই এটা হয়। উপরে বলা আমার স্মৃতির-শহরের তৃতীয় গানটা প্রথম শুনেছিলাম ঐ স্মৃতির শহর থেকেই হারিয়ে যাওয়া আমার প্রায় স্মৃতি হয়ে যাওয়া বড় ভাইয়ার কন্ঠে। হাইকোর্টের মাজারে কত ফকির ঘুরে.... । মনে পড়ে বাসার বিশাল এলপি লাগানো রেডিওগ্রামের পাশে দঁড়িয়ে ঝাঁকড়া-চুল আর বেল-বটম নিয়ে তাঁর গানের তালে তালে নাঁচা আর আমরা পিচ্চিপাচ্চারা তার জানালার পর্দার ফাক দিয়ে সেসব উঁকি মেরে দেখা। আমি জানি না তার এইসব গানগুলি আর মনে পড়ে কিনা পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে বসে। জানার উপায় নেই। এই অল্প কয়েক দশকেই আমাদের বড় হয়ে ওঠার গল্পগুলো কী নিদারুণভাবে ভিন্ন হয়ে গেছে । এখন যদি হঠাৎ করে দেখা হয়ে যায়, তাহলে কি আমরা একে অপরকে এমনকি চিনতে পারব ? নাকি চেনার পর হাই-হ্যালো বলার চেয়ে বেশি কিছু কথা বাকি থাকবে ? জানিনা। তবে এটা জানি যে, আমাদের আর কোনদিন ফেরা হবে না কোন স্মৃতির শহরে - অন্তত একই শহরে তো নয়ই। ফেরা হয় না। তবু গানগুলি, কবিতাগুলি, এক টুকরো হাসি, একটা চাহনি, সাদাকালো একখণ্ড স্মৃতিচিত্র - অক্ষয় হয়ে থেকে যায় স্মৃতির মণিকোঠায়। যত ফেরা, যত ডুব, আসলে সেখানেই। তবে এটাও মন্দ নয় -- অবাক হয়ে লক্ষ্য করি স্মৃতির শহরে নতুন নতুন মানুষ এসেছে।
মজার
****************************************
ওই বিষণ্ণ খবর পড়ে আমিও গানগুলো অনেকবার শুনেছি গত কয়েকদিনে। নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিলাম।
স্মৃতির শহরের এই পর্বে লিখেছি কিছু কথা।
আপনার মন্তব্য আমাকে আরো একদফা স্মৃতিকাতর করে দেয়, এইবারও তার ব্যতিক্রম হলো না
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কী মায়া্ময় একটা মন্তব্য!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
লেখাটা পড়েই মাথা চুলকাচ্ছিলাম তাসনীম ভাই। আপনার নামের শেষে 'বক্স' থাকলে মন্তব্যটা কেমন হতো, এই ভেবে!
"তাসনীম বক্স ভাই রক্স!"
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হা হা হা, মন্দ নয়
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখাটা পড়ে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে ছিলাম। অনেকগুলো লাইন যেন আমার হয়ে বলে দিয়েছেন।
জানি ফেরাটা খুব কঠিন। কিন্তু কেউ কেউ পারে। মনেপ্রাণে চাইলে আপনিই নিশ্চয়ই পারবেন।:-)
অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অনিন্দিতা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আসলে কি ফেরা যায়?
আসলে কি ফেরা হয়?
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
উত্তরটা সংক্ষেপে হবে..."না" শুধু ফিরতে চাইলেই হয় না, যেখানে ফিরতে চাইছি, সেই জায়গাটাও একসময়ে অচেনা হয়ে যায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বিষণ্ন বিষাদে জড়ালাম। আপনার স্মৃতিচারণ খুব আকর্ষণীয়। । আমাদের সবারই বোধহয় এরকম একেকটা আক্ষেপ থাকে!!!
আচ্ছা ভাইয়া এখানে
কাদের কথা বুঝালেন? যারা জ্ঞাত কাছের মানুষ তাদের গালি কেউ কি দেয়?!
ধন্যবাদ কবি-মৃত্যুময়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অসাধারণ বর্ণনা।
স্মৃতিই ফিরে আসে বারবার
ফেরা আর হয়নাকো তার!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল ভাই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ভালো লাগলো লেখাটা। আবার একটু খারাপও লাগলো বিষয়বস্তুতে।
ছবিগুলা সুন্দর তুলেছেন। তিন নাম্বার ছবিটাতো অসম্ভব ভালো।
...........................
Every Picture Tells a Story
অনেক ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই। গ্রামের ছবিগুলো আমার ভাইয়ের তোলা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কী মায়াবী আর বিষণ্ন একটা লেখা!
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আশরাফ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার লেখার মাঝে একটা অব্যাখ্যাত ব্যাপার আছে---একেবারে বুঁদ করে ফেলে।
এত চমৎকার বর্ণনাভঙ্গী আপনার---আপনার শৈশবটা নিমেষেই আমাদের সবার শৈশবের কাহিনী হয়ে যায়। আপনার সাথে ঘুরে আসা হয় অদেখা গোলবাহার গ্রাম। পাঠককে মানস ভ্রমন করাতে হয়ত অনেক লেখক পারেন---কিন্তু নিজের স্মৃতিটা অন্যের স্মৃতির মাঝে সংক্রামিত করে দেবার ক্ষমতা কতজন নিয়ে আসেন--আমি নিশ্চিত নই।
আমি আশা করি আপনি জানেন, আপনি কতটা ভাল লেখেন!
আর একটা ছোট্ট শুদ্ধি---ইউরেনাস গ্রহের সূর্যের চারপাশে ঘুরতে কয়েক শ বছর না---পৃথিবীর হিসেবে ৮৪ বছরের মত লাগে।
অনেক অনেক শুভ কামনা!
তথ্য শুদ্ধির জন্য ধন্যবাদ। আমি পরে এটা ঠিক করে দেব।
সদয় মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি অনেকটা নিজের খেয়ালেই লিখি, আপনাদের ভালো লাগে জেনে আনন্দিত বোধ করি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অসাধারন লেখা, নতুন করে কিছু বলার নেই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ি আর পড়ি। স্মৃতিচারনমূলক লেখাগুলো সবসময়েই পাঠককেও অতীতে নিয়ে যাই। আনন্দ আর বিষাদ এসে ভর করে।
আমার পিতামহ খুন হয়েছিলেন যখন আমার পিতা নিতান্তই শিশু। তিনি একজন অত্যাচারী লম্পট তালুকদার ছিলেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে ৪ জন বৃদ্ধাকে দেখেছি এবং অন্য ২ জনের কথা শুনেছি যারা বিভিন্ন সময়ে আমার দাদি ছিলেন। তার সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি তাতে ধারণা করা যায় যে তার মতো জাউরা লোক এই ভূবনে খুব কমই এসেছেন।
আমাদের এলাকায় একজন নামকরা চোর ছিলেন। তিনি দূর-দূরান্তরের এলাকায় চুরি করে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছিলেন। তার ছিলো অপরূপা রূপসী একমাত্র কন্যা সন্তান। আমার দাদা সেই কন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠালেন এবং বিয়ে করলেন। বিয়ের পর দাদা তার শ্বশুরের যাবতীয় সম্পত্তি তার কন্যার নামে লিখিয়ে নিলেন এবং তার পরপরই স্ত্রীর কাছে থেকে নিজের নামে লিখিয়ে নিলেন। সব সম্পত্তি কুক্ষিগত করার পর দাদা আমাদের সেই দাদিকে নবজাতক এক পুত্রসন্তানসহ তালাক দিলেন দুশ্চরিত্রের কলঙ্ক দিয়ে। আমার পিতা এবং সেই বারেক চাচার জন্ম অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে। আমার চাচারা-ফুপুরা বারেক চাচাকে কোনওদিন স্বীকৃতি দেননি। আমার পিতা ভাই বোনদের প্রবল আপত্তি সত্বেও বারেক চাচাকে ভাইয়ের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তার নিজের বসতবাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন বারেক চাচাকে যেখানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করন।
আমার নিজের দাদি আমার বড় দাদির খালাতো বোন এবং এক গ্রাম্য গৃহস্থ কানা মেসেরের স্ত্রী ছিলেন। একদা আমার বড় দাদি খুব অসুস্থ হলে তিনি বোনকে দেখতে আসেন। তখনই তিনি নজরে পড়ে যান আমার দাদার। দাদা তাকে আটকে রেখে গোমস্তা-লাঠিয়াল পাঠিয়ে দেন কানা মেসেরের কাছে যেনো সে পত্রবাহকের কাছে স্ত্রীর তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। কানা মেসেরের সাহস হয়েছিলো না তালুকদার সাহেবের নির্দেশ অমান্য করার।
এই লোকের রক্তও আমার শরীরে বহমান।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ রাতস্মরণীয়। আপনাদের পরিবারের ইতিহাস নিয়ে আপনার উপন্যাস লেখা উচিত। গল্পের অনেক মেটেরিয়াল আপনার পরিবারের আছে দেখছি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এমিল ভাই, এই লেখাটা পড়ে আপনাকে খুন করতে ইচ্ছে করছে বস্! কতো ভয়ঙ্কর সব সত্য কী অবলীলায় বলে দিলেন। আপনার গদ্যের ভাষার শক্তি দেখে আমি অবাক হবার সাথে সাথে গর্বিতও হই। ব্লগ নিয়ে উন্নাসিকতা আছে এমন লোকজনকেও দেখেছি আপনার গদ্যের ভক্ত।
আপনারটা লেখাটা পড়ে মনে মনে আমাদের অনেকেই হয়তো প্যারালালা একটা গল্প লিখেও ফেলেছেন। নিশ্চিত ভাবেই ঐসব গল্পের ভাষা, উপস্থাপনা, রস এক হবেনা তবু সেগুলো তাদের ফেরার গল্প হবে। কে জানে একদিন আমিও হয়তো অমন ফেরার গল্প লিখে ফেলতে পারবো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি মোটামুটি যেই ভাষাতে চিন্তা করি আর কথা বলি প্রায় তার কাছাকাছি ভাষাতেই লিখি, যদিও আমার মুখের ভাষাকে কেউই শক্তিশালী বলেনি ফেরার এই গল্পটাও আমার মাথাতেই ছিল অনেকদিন, লিখতে পেরে শান্তি পেয়েছি।
এই গল্পগুলো শুনতে পারলে আমার এই লেখটা একদম সার্থক হবে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
মেয়েটেকে খুব জোড় করে বাংলা শেখাচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় থাক কী দরকার। ওতো আর বাংলাদেশে যাবে না। ওর দেশ তো এইটা। স্মৃতির শহর বা গ্রামে তো আমিই যেতে পারবো না! কিন্তু আগামী দিনের গ্রাম বা শহর হয়তো এই বিশ্বপল্লীই। হয়তো তার কোথাও তখনো মানুষ বাংলা বলবে। এই এই ভেবে কষ্টটা করি আর কী।
কিন্তু একটা কথা না বলে পারছিনা; এতো ভাল লিখেন কী করে বস! শুভেচ্ছ জানবেন।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমার মেয়েটাকেও বাংলা শিখিয়েছিলাম। ওই একটা ভাষাই জানি মোটামুটি। মেয়েটাও রিনেরিনে গলায় ছড়া বলত, আয় আয় চাঁদ মামা "টিপি" দিয়ে যা...স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ইংরেজী ছাড়া আর কিছুই বলতে চায় না। আমি বাংলা ছড়া-টড়া বলতে গেলেও সেগুলো আর বেশি পাত্তা পায় না।
আসলে নিজের মত করে সন্তানকে গড়ে তোলার চেষ্টাও করা উচিত নয়। আমরাও কি বাবার মত হয়েছি? হঠাৎ মাঝবয়েসে এসে বাবাকে উপলব্ধি করি নিজের কর্মে ও ভাবনায়। বিনিসূতোতে গাঁথা প্রকৃতির নিয়মে।
কাহলিল জিব্রানের একটা কবিতা আছে, সন্তান নিয়ে...বহুল পঠিত, আমার খুব প্রিয়...দিয়ে দিলাম এখানে। আশা আছে একদিন কবি রোমেল চৌধুরি অনুবাদ করবেন এই কবিতাটা।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এমিল তোমার লেখায় ফিরে গেলাম ৩৫ বছর আগের এক শীতের সকালে, গোলবাহার গ্রামে....সেসব অপরূপ ছবি অবলীলায় আবার ফিরে এলো স্মৃতিরপাতায়, কি ভাবে পারো সাধারণ কথা গুলি এত অসাধারণ ভাবে বলতে ?
পেয়ারা চাচার কথা মনে করে চোখটা ভিজে গেল, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন, অথচ জীবন যুদ্ধে ধুকে ধুকে মরেছেন এই মানুষটা, ওনার মত সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি এটা কি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখবে ?
পেয়ারা চাচার কথা ভোলাটা অসম্ভব। ওদের মত মানুষরাই তাদের বর্তমানটা তুচ্ছ করেছিলেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অবশেষে লগ ইন হলো।
লেখা অসম্ভব ভালো লেগেছে ভাইয়া, আগেই বলেছি...আবার বললাম...
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
অনেক ধন্যবাদ তারানা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নতুন নতুন বিদেশে এসেছি, দেশের জন্য মন কান্দে একথা নতুন করে বলার দরকার নেই বোধহয় । দেশে থাকাকালীন সচলায়তনের নিয়মিত পাঠক ছিলাম না, দেশের বাইরে এসে সচলায়তনের পথ মারাই একটুখানি দেশের গন্ধ পাবার জন্য । খুব আগ্রহ নিয়ে আপনার লেখাটা পড়া শুরু করেছিলাম, ঝাপসা চোখে শেষ করতে হলো, ঠিক করেননি কাজটা...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমিও আপনার মতই দেশের গন্ধের লোভে লোভে এখানে আসি, এখানে মন ভালো করার মত অনেক উপাদানও কিন্তু আছে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সব কিছু ছেড়ে-ছুড়ে সোজা চলে যাই - চলেন। সমস্যা কি জানেন, যেখানে ফিরতে চাই সেখানে ফেরা হবে না কখনোই। সব কিছু পাল্টে গেছে। সময় কারো জন্য বসে থাকে না। বহমান জীবনের সব কিছুই পরিবর্তনশীল।
তাসনিম, আপনি ভুল পেশা নিয়েছেন; আপনাকে ফুল টাইম না পেয়ে বাংলা সাহিত্যের বড়ো ক্ষতি হয়ে গেলো.............
কতকাল আগে পড়া এই লেখা-- তারপরেও বারবার ফিরে ফিরে আসি এই লেখাটার কাছে, এই লেখাগুলোর কাছে।
বুঁদ হয়ে যাই প্রতিটা বারেই--বারবার এই কথাগুলো হৃদয় অলিন্দে থমকে দাঁড়ায়
কড়ি আর কোমলে ছুঁয়ে যাওয়া অমৃত-বচন
নতুন মন্তব্য করুন