আমার প্রথম স্মৃতির বাংলাদেশ ছিল বড় বিক্ষুব্ধ, এবং বড়ই ক্ষুধাময়। তেজগাঁ স্টেশন থেকে নেমে আসা সারি সারি ক্ষুধার্ত মানুষ, প্রায়-নগ্ন শরীর ঢাকার কোনো প্রচেষ্টাই নেই ওদের। খিদের কাছে সব কিছুই যেন পরাজয় মেনে নেয়। ওদের ভাত না হলেও চলবে। একটু ফ্যান দেন না আম্মা... কী ভয়ানক আর্তি লোকগুলোর। ওটুকু পেলেই যেন আগামীকালের সূর্যোদয়টা দেখা যাবে। ভালোবাসা না পেলেও দিন চলে যায়, প্রেমিকার চুম্বন অথবা সন্তানের আলিঙ্গন ছাড়াও এক জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়, গণতন্ত্রের আশীর্বাদ ছাড়াও কায়ক্লেশে বেঁচে থাকে মানুষ, কিন্তু পরিপাকতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এই জীবন অসম্ভব।
সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি খিদে, যদিও আদতে এটি একটি অসভ্য, অশ্লীল ব্যাপার। কামনার চেয়ে তীব্র, ঈশ্বরের চেয়েও ভয়ানক এই খিদে। যারা কখনো বাঁচে নি ঠিকমতো, খিদে এসে তাদেরকে মেরে বাঁচিয়ে দিত যেন। ১৯৭৪-এর সেই দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশের সমবয়সি আমার প্রথম স্মৃতি, ওটা মনে হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রেরও প্রথম শৈশব স্মৃতি। ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের সেই শৈশব দেখা এই আমার চিরকালীন ভয় সেই ক্ষুধাকেই। সেই খিদের গল্প যেন কবেকার হাহাকার হয়ে আজও ফিরে আসে হঠাৎ পড়তে বসা কবিতায়।
দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদীনালা
গ্রামগঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী
আমার ক্ষুধার কাছেই কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা
তা না হলে মানচিত্র খাবো।
(ভাত দে হারামজাদা /রফিক আজাদ)
বড় হতে হতে বুঝে গেছি, রাষ্ট্র খেতে দেবে, পরতে দেবে, লাল টুকটুকে জামা পরিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবে, এগুলো বড়ই অলীক ভাবনা। বরং রাষ্ট্র কেড়ে নেবে, লুট করবে রিলিফের গম থেকে মেয়েদের সম্ভ্রম, রাষ্ট্র উদ্ভট উটে উঠিয়ে দেবে প্রিয় স্বদেশকে, রাষ্ট্র মিছিলে গুলি চালাবে, রাষ্ট্র এসে তুলে নিয়ে যাবে কল্পনা চাকমাকে, রাষ্ট্র লিমনকে চাকরির বদলে ক্রাচ দেবে, রাষ্ট্র প্রতিদিন মাথার কোষে দুঃস্বপ্ন পুঁতে দেবে। রাষ্ট্র প্রায় ঈশ্বরের মতোই, বিশ্বাস করলে আছে, না করলে নেই। কেউ একে জপেন, কেউ একে বেচেন।
রাষ্ট্র বললেই মনে পড়ে ধাবমান খাকি
জিপের পেছনে মন্ত্রীর কালো গাড়ি,
রাষ্ট্র বললেই মনে হয় মিছিল থেকে না-ফেরা
কনিষ্ঠ সহোদরের মুখ
রাষ্ট্র বললেই মনে হয় তেজগাঁ
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা,
হাসপাতালে আহত মজুরের মুখ।
রাষ্ট্র মানেই নিহত সৈনিকের স্ত্রী
রাষ্ট্র মানেই ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাওয়া
রাষ্ট্র মানেই রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতা
রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতা মানেই
লেফট রাইট, লেফট রাইট, লেফট...!
(রাষ্ট্র / শহীদ কাদরি)
আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। খিদে লাগলেই ব্রেনে শর্ট-সার্কিট হয়ে যায়। মনে হয় জগৎ সংসার সব থেমে গেছে। খিদে লাগলে আমার ইন্টারভিউ খারাপ হয়ে যায়, ড্রাইভিং বিপজ্জনক হয়ে যায়, মেজাজের অবস্থা ৪২-এ গিয়ে ঠেকে, “চ”-বর্গীয় গালি ছাড়া আর মোলায়েম কিছু মাথায় খেলে না, জীবনানন্দও ব্যর্থ হন রক্তের চাপ ঠেকাতে। আর পেট ভরা থাকলে ইভা রহমানের গানগুলোও সুমধুর লাগে, সরকারী প্রেসনোটও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, কুকুর নিয়ে জগিং করা মোটা মোটা মেয়েগুলোকেও অপ্সরীর মামাতো বোন মনে হয়। ভাত খেলে যেন প্রতিবেলাতেই একবার করে নির্বাণপ্রাপ্তি হয়।
মার্কিন দেশটা প্রায় সর্বত্রই চকচকে ঝকঝকে। রাস্তাগুলো দুর্দান্ত, গাড়িগুলো আরও বেশি ভালো। মাইক্রোচিপের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে এরা শতকোটি ট্র্যানজিস্টর, ফাইবার অপটিক দিয়ে মুড়ে দিয়েছে চারদিক, আইপি অ্যাড্রেসগুলো ফুরিয়ে গেলে কী হবে, এই বিষয়েও ভাবনা আছে বিস্তর। সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে ওদের রকেট, ইরাকের বাজারে আঙুর ফল নড়লেও সেটা অজানা থাকে না নিরাপত্তা বাহিনীর, রাষ্ট্রপতি ইন্টার্ন নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করলে তাঁকেও ক্ষমা চাইতে হয়, তবুও পুষ্পে কীটসম হেথা ক্ষুধা জেগে রয়। এই দেশের প্রতি ছয়জন লোকের একজনকে ক্ষুধার সাথে বাস করতে হয়, প্রতি রাত্রেই।
এই বিলবোর্ডের মতে মার্কিন দেশের প্রতি ছয় জনের এক ক্ষুধার্ত মানুষ। এই সংখ্যাটা বিশাল বড়। ওয়েবসাইটে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম শুধু গৃহহীন দরিদ্র মানুষই এর শিকার নন। সকল অসুখ যেমন শিশুদের বেশি হয় তেমনি এই নাছোড়বান্দা রোগেও এই দেশের বহু শিশুই আক্রান্ত। শিক্ষিত কলেজ গ্র্যাজুয়েটও আক্রান্ত হতে পারেন এতে। শহর আর গ্রাম – এই দুই জায়গাতেই এই রোগ আছে বেশুমার। আমি ক্ষুধা বিষয়ক কুইজে ১০/১০ পেয়েছি, মার্কিন দেশের ক্ষুধার পরিসংখ্যান আমাকে বিস্মিত করে নি।
আমি ছাত্রাবস্থায় থাকতাম হতদরিদ্র এক পাড়ায়। ওখানে ক্লাস নাইন-টেনে পড়ুয়া ছেলেরা রাতেরবেলা গাঁজা বেচত। স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা আর কি। মাঝে মাঝে প্রতিবেশি একটা বাচ্চা ছেলে আসত আমার তেলাপোকা অধ্যুষিত অ্যাপার্টমেন্টে। গপাগপ সস্তা বিস্কুট সাবাড় করত। বাসায় ঢোকার মুখে দেখেছি খেলার সময়ে আমার দরজার দিকে নজর তার, আমি কখন আসব সেই অপেক্ষায় যেন। অচেনা লোকের কাছ থেকে কিছু খেতে হয় না- এই শিক্ষার মূল্য ক্ষুধার কাছে অর্থহীন।
চাকরি শুরুর পরে মধ্যবিত্ত একটা পাড়াতে বাসা নেই। পাশের বাসায় থাকত চার ভাইবোন। ভাইটা বড়, হাই স্কুলে পড়ে, কালেভাদ্রে দেখতাম তাকে। বোনগুলোর বয়স ৮, ৬ আর ৪। ওদের বাবা বেকার, আর মা প্রায় ষাট ঘণ্টা কাজ করত। বিকেলে বোনগুলো বাসার সামনে খেলত। ছিমছাম সুন্দর পাড়া, বাচ্চাদের খেলার কোলাহল। একদিন ছোট বাচ্চাটা এসে জিজ্ঞেস করল আমাদের বাসায় স্ন্যাক্স আছে কি না, আমি সর্বদাই ক্ষুধার ভয়ে থাকি, তাই বাসাভর্তি টুকটাক খাবার। আমি ঠিক অচেনা লোক নই – তাই আমাকে জিজ্ঞেস করা যায়। বাচ্চাটা প্রায় দেবশিশুর মতোই দেখতে। আমি কিছু খাবার এনে দিতেই একটু ইতস্তত করে অন্য বোনগুলিও হাজির। ওরা বাসার ভেতরে ঢুকবে না - কিন্তু বাইরে ওদের স্ন্যাক্স দিলে সেটা ওরা খেতে পারে। এরপর প্রায়ই হয়েছে এটা। প্রচণ্ড গরমের দুপুরে বা শেষ বিকেলে আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে গোগ্রাসে খাচ্ছে ওরা - শৈশবের তেজগাঁর রাস্তা অথবা মার্কিন দেশের ছিমছাম পাড়া - সর্বত্রই খিদের জয়গান – বিভিন্ন মোড়কে।
এই দেশে আয়ের তুলনায় খাবারের দাম খুব বেশি নয়, তারপরেও পূর্ণিমার চাঁদকে অনেকেরই ঝলসানো রুটি মনে হয়। এই রোগের ওষুধ এখনো পৃথিবীর সব মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় নি। আমার জীবনে হয়ত আর সেটা দেখে যেতে পারব না, জানি না অন্য কেউ অন্য কোনো সময়ে এটা দেখতে পারবে কি না।
ক্ষুধার বিরুদ্ধে কবে আমাদের যুদ্ধ শুরু হবে?
আজকের ছবিঃ
From sachalayatan |
মন্তব্য
মাথায় ঢুকে গিয়েছিল তাসনীম ভাই মানেই মজার মজার সব গল্প, রেস্পেক্টফুলি পিট্টা খাবার গল্প, ড্রীম জব এর গল্প আর কিছুই নাহলে এমনিতেই হুটহাট স্মৃতির শহর থেকে ঘুরে আসা।
আজকের লেখাটা বড্ড বেশি ভাবালো। সবকিছুতে মজা নেই, সবটাতে মজা পেতে নেই। বেলাশেষে পৃথিবীর আনাচে কানাচে কেবল ক্ষুধা জেগে থাকে।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
আসলেই...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ক্ষুধা কোনো নতুন বিষয় নয়। দুচারশ মানুষ মরে গেলেও নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি। হালকা পাতলা অত্যাচার, নির্যাতন অথবা ক্ষুধা সেখানে পাত্তা দেয়ার মতো কিছু না। কিন্তু আমি আপনার শব্দকে পাত্তা দেই।
আপনি আপনার শব্দ-ভাষায় আমাকে পাত্তা দিতে বাধ্য করেন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পাত্তা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ক্ষুধা নতুন বিষয়ে না হলেও পাত্তা পাওয়ার যোগ্য।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বাহ্! বরাবরের মতনই একটু হেসে ফেলে তারপর মন খারাপ হয়ে গেল...
আচ্ছা, শেষাংশে এসে একটা জিনিস মনে হলো, মোটামুটি মধ্যবিত্ত এলাকাতেও কেন বাচ্চাগুলো না খেয়ে থাকতো বিকালে, বাবাতো বেকার ছিলো বললেন, বাচ্চাদের প্রতি কি তাহলে বাবা-মায়েরা উদাসীন?
আর ছবিটা দেখতে পাচ্ছি না...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ওদের বাবা ছিল যাকে বলে "স্টে হোম ড্যাড" - ব্যাটা বিকেল হলেই পাবে যেত মদ খেতে। এটা একটা কারণ হতে পারে। অন্য কারণও থাকতে পারে। অল্পকিছু দিন পরে ওরা বাড়ি ছেড়ে দেয়। ওদের মা সম্ভবত আরও ভালো চাকরি পেয়েছিল।
ছবিটার পারমিশন তো পাব্লিক করা আছে...দেখি অন্যদের অসুবিধা হলে সাইজে ছোট করে দেব।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ভালো লাগলো পড়ে...শুন্য পেটে কিছুই ভালো লাগে না.........।তাই তো মানুষ অন্নের সন্দানে ছুটে আ মৃতূ পরজন্ত.........
পেটে গেলে মুখে কয়,
এইটা হলে মানুষ সবাই ভালো রয়।
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এই লাইনটা যখনই যেখানে দেখতে পাই...তখনই 'গুজ বাম্প' হয়।
তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ মাখা আপনার এই কষ্টের লেখাটা, হয়তো 'অনুভব' করতে পারবো কিন্তু সত্যিকার অর্থে ক্ষুধার কষ্ট না পাওয়া পর্যন্ত সম্ভবত আমি কখনোই বুঝবো না। পেট ভরা বলেই নিশ্চই এত শব্দের সমাহারে কমেন্ট করার বিলাসিতা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হ
বাংলাদেশে কৈশোরকাল থেকেই সেলফ ম্যানেজড আর সেলফ সাপোর্টেড হবার অহংকার অর্জনের সাথে সাথে ক্ষুধার মানচিত্রটাও আমার চেনা হয়ে গেছে খুব কাছে থেকে
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আসলেই ইন্টারেস্টিং। মাঝারী আকারের শহর থেকে বড় শহরে এসে কিছু নতুন ব্যাপার আবিষ্কার করলাম। প্রচুর মানুষ আসলেই বেকার। খবরের কাগজে যেটা পড়ে এসেছি শিকাগো শহরে এসে সেটা চোখের সামনে দেখলাম। ডাক্তারী পাশ করে দেখি একাউন্টেন্টের কাজ করছে, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মুভার।
ডাক্তারী পাশ করে অ্যাকাউন্টেন্ট... ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মুভার...!! কী কন! অবস্থা কি তাইলে দেশের মতই নাকি অনেকটা?! আপনার রিসেন্ট পোস্টটা সংক্রান্ত আরো তথ্যের খোরাক মনে হচ্ছে...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আমেরিকার অবস্থা টাইট...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তারপরেও মানুষ খোয়াব দেখে এই আমেরিকাকে নিয়েই, এখনো...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পেটের দায়েই তো এতকিছু করা। নইলে তো বসে বসে সচল পড়তাম আর খেলা করতাম আর...
আসলেই...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বাংলাদেশে বাস করবো আর ক্ষুধা কী জিনিস তা চিনবো না তা কী করে হয়! ক্ষুধা কী জিনিস তা আমি দেখেছি - আর দেখতে চাইনা। ক্ষুধা কী জিনিস তা আমি মর্মে মর্মে বুঝেছি - আর বুঝতে চাইনা। যেদিন পৃথিবীতে আর একটা শিশু একবেলাও না খেয়ে থাকবেনা সেদিন পৃথিবীটাই স্বর্গ হয়ে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নিঃসন্দেহে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার প্রত্যেকটা লাইন তো মাথায় আগেই গেঁথে আছে।
অসাধারণ গদ্যের জন্যই যেন এগুলো আবার প্রাণ পেয়েছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখা তো বরাবরের মত দারুন, কিন্তু লেখার বিষয় নিয়ে ভাবতে গিয়ে মাথায় গিটঠু লেগে যাচ্ছে
হুম...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ছোট বেলায় দেখতাম ভিক্ষুকেরা ভাতের সাথে খাবার মত আর কোন তরকারি না পেলে বাঁটা মরিচ গুড়ো দিয়ে কি পরম তৃপ্তি নিয়ে গপাগপ ভাত খাচ্ছে, ভাবতাম কিভাবে তারা পারছে, তখন বুঝিনি ক্ষুধার কি কষ্ট, এখনও কি আদৌ বুঝি............ বুঝলেতো আশেপাশে এত অভুক্ত শিশু রেখে KFC আর PIZZA HUT এ ছুটতে পারতাম না
নির্ঝরা শ্রাবণ
আমিও ঠিক বুঝি না - কিন্তু ক্ষুধার ভয়ে সর্বদাই পেট ভরা রাখি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হাসতে হাসতে শেষ।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নিরন্নের কালের অসাধারণ চালচিত্র এঁকেছেন। এই যে আমি, আমিও তো একবেলা ভাত আর একবেলা ফেন খেয়ে কাটিয়েছি কতদিন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুন। মঙ্গা যেন ক্ষুধিত গরুড়ের মতো বিকট হা মেলে 'নিষাদ' ভক্ষণে বেরুত। কত কচি শিশু লঙ্গরখানার পাশেই চক্ষু মুদেছে অভ্যস্ত দৃষ্টিতেই দেখেছি। সেই বোধই বুঝি আবুল হাসানকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল,
"শুধু আমি জানি আমি একটি মানুষ
আর পৃথিবীতে এখনও আমার মাতৃভাষা, ক্ষুধা!’
(মাতৃভাষা/রাজা যায় রাজা আসে)
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল ভাই। আপনিও সেই সময়ের গল্প লিখুন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখা ভাল লাগল।
আসলে বিলবোর্ডটা ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। বছর দশেক আগে এক বৃটিশ ভদ্রলোক বৃটেনে অক্সফ্যামের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলেছিল। আমাদের মত ‘তৃতীয়-বিশ্বের’ দেশের অনাহারী মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দিবার জন্য চেরিটিতে দান করতে কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু যখন বলা হল বৃটেনের কোন একটা শহরে অনাহারী মানুষের জন্য – লোকজন শকড হয়েছিল। টাকা দেয় নাই। সেখানে শহরে অনাহারী মানুষ ব্যাপারটাই নাকি অ্যাকসেপ্ট করতে অসুবিধা হয়েছিল...।
ঠিক। অনেকেরই ধারণা ঝকঝকে দেশে অনাহার নেই। এই বিলবোর্ডটা যাদের ওদের জন্য একবেলা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছিলাম। এই দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যাটা প্রায় অবিশ্বাস্য।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এক কথায় অসাধারণ
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
জীবনে এতো কষ্টের ভিতর দিয়ে যেতে হয়নি।
তারপরও যখন ভাবি ক্ষুধায় মানুষের কষ্ট, সবকিছুতেই স্হবিরতা নেমে আসে।
শুধু মার্কিন দেশ নয়। জার্মানী, বৃটেনের মতো দেশ যেখানে সবারই স্বাস্হ্য, খাবারের নিশ্চয়তা থাকে, সেখানেও একই সমস্যা।
আশাকরি এই কষ্ট পেতে হবে না কখনো। ক্ষুধা পৃথিবীর সমস্যা, কোনো দেশের নয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কাজের খাতিরে আমি এখন দু-বেলা নিম্নবিত্ত একদল পোশাকশিল্প কর্মীর মুখোমুখি হই। এঁদের দৈনিক খাবারের ভাতা ৫ টাকা, বেসিক পে ১৭৪০/= থেকে শুরু এমন কর্মীও আছেন।
তুইতুকারি আর গালিগালাজ চুপচাপ হজম করা শ্রমিকদের এ জীবনের অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। যদিও বয়সে বড় এমন কোন মানুষকে সম্মোধন দিয়েই অসম্মান শুরু করার কৌশল এ জনমে শিখতে চাইনা কিছুতেই।
এরা কারণে-অকারণে অবলীলায় মিথ্যে বলে-- এমন অভিযোগ অহরহ ঝোলে কাজের তদারককারিদের মুখে। হয়তো সত্যিই তাই। শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, পাওনা বেতন—এসব নিয়ে দেওয়া তথ্যের গরমিল আমারো চোখে পড়েছে।
তা আমি, আমরাই বা কোন সত্যবাদি যুধিষ্ঠির?? ক্লাসে, পরীক্ষার হলে চাকরির ইন্টারভিউতে ঠেকায় পড়ে কথা বানাইনি কখনো? একটু হলেও বাড়িয়ে বলিনি কখনোই সদ্য কেনা জামদানি, কিংবা আইপডের দাম?
বুকে হাত রেখে এমন কথা বলতে পারবে কেউ?
আমি নিজেও গরীবঘরেরই মেয়ে। তবু গেটপাস নিতে আসা শ্যামাঙ্গী বালিকাটির গভীর কাজলচোখের দিকে তাকিয়ে ভাবি--
ইশশ..বিউটিশিয়ান ফারজানা শাকিলের হাতে এই মেয়েটি সাজতে পারলে না জানি কী চমৎকারই দেখাতো!
লেখায় হ্যাটস অফ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বানানশুদ্ধির জন্য ধন্যবাদ। তোমার কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও লেখা দিও।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
দারুণ লাগলো, যথারীতি তাসনীম ভাই।
এখানে স্টেশনে মাঝে মধ্যে ইউনেস্কোর একটা বিলবোর্ড দেখি, "ব্রোট ফুয়ের ভেল্ট"- 'পৃথিবীর জন্য রুটি'। তাতে কখনো আফ্রিকার কোনো দেশের একটি শিশুর মুখ থাকে।
আচ্ছা, আমাদের দেশেও তো ইউনেস্কোর নানা শাখা-প্রশাখা আছে নানা রকম ইস্যু নিয়ে কাজ করার জন্য। আছে আরও হাজারটা এনজিও। তো এদের কাজগুলো কাদের নিয়ে? যাঁরা রাস্তায় ঘুমায়, ট্রাফিক সিগনালে ফুল বিক্রি করে, ইটের ভাটায় ইট ভাঙে দুধের বাচ্চাকে চৈত্র মাসের কড়া রোদে ছেঁড়া ছাতার ছায়ায় শুইয়ে রেখে— তাঁদের নিয়ে নাকি নিজেরা এসির বাতাসে বসে ৯-৫ টা অফিস করে, চকচকে গাড়ি হাঁকিয়ে সুউচ্চ প্রাসাদে গিয়ে মুরগীর ঠ্যাঙ চিবানোদের আরেকটু সুবিধা দেয়ার জন্য! এই ব্যাপারটা ক'দিন থেকে খুব জ্বালাচ্ছে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এনজিও ব্যাপার-স্যাপার এখনও বুঝে উঠতে পারি নি। নিজে যেইদিন এনজিওর মালিক হব, সেই দিন হয়ত বুঝে ফেলব
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
দ্রুত যেভাবে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যত বা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিন্তাই হচ্ছে! পাশ্চাত্যে তাও সরকার কোনো না কোনো ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে, কিন্তু আমাদের মত দেশে ক্ষুধা সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করছে কেবলমাত্র "আমি বা আমার" চিন্তায় সাধারণ মানুষকে গ্রাস করার কারণে!
জানি না, এখনো কেন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না "আমি বা আমার" চিন্তা না করে "আমাদের" চিন্তা করার!!
MIU
আগামী দিনে ক্ষুধার প্রকোপ আরও ভয়ংকর হবে বলে আমারও ধারণা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হায় ক্ষুধা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখাটা অসাধারন লাগলো!
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কিভাবে যে কলমের ডগায়(কিবোর্ডের আগায়) পাঠককে নাছিয়ে বেড়ান তা ভেবে পাইনা। লেখাটা নাড়া দিয়ে গেলো। কাজের থেকে আমিও এখানের ফুড ব্যাঙ্কে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। যে পরিমাণ খাবার প্রতিদিন প্যাক করা হয় তা আসলেই বিস্ময়কর। আরেকটি পার্শ্বপ্রকল্পে এরা স্কুলে অভাবী পরিবারের বাচ্চাদের প্রতি শুক্রবার একটি খাবার ভরা ব্যাকপ্যাক দিয়ে দেয় যাতে এরা উইকেন্ডে না খেয়ে থাকে। সপ্তাহের দিনে স্কুলে খেলেও সপ্তাহান্তে অনেক বাচ্চারাই ঘরে না খেয়ে থাকে। তাদের জন্যই এই প্রকল্প। এতে এদের ভাইবোনরাও খাবার পায়।
মানুষকে প্রতিদিনই খেতে হয়, হার্ট সার্জারি বা নতুন কাপড় অথবা নতুন আশ্রয় প্রতিদিন লাগে না। এই সত্যটা ফুড ব্যাঙ্কে কাজ করলে খুব ভালো ভাবে অনুধাবন করা যায়। আপনাকে ধন্যবাদ মারভিন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ জাকির হোসেন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো।
অ্যামেরিকা আসার আগেই মনে হয় দেখেছিলাম নিউইয়র্কের শিশুদের একটা বিরাট অংশ না খেয়ে থাকে, লঙ্গরখানার ছবিও দেখেছিলাম।
এই গানটা অনেক ভালো লেগেছিলো।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
গানটা আমারও খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ সজল।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ফুডব্যাঙ্কের সামান্য অভিজ্ঞতা আমারও আছে। অবাক হয়েছি যখন দেখেছি আপাতঃ দৃষ্টিতে সচ্ছল মনে হওয়া ছেলেটিও দুই দিনে একবেলা খেয়ে থাকে। দুঃখ পেয়েছি যখন দেখেছি মেয়াদত্তীর্ণ খাবার কেউ কেউ দান করার নামে ফুডব্যাঙ্কে ফেলে রেখে যায়।
লেখার জন্য ধন্যবাদ। ক্ষুধার্থ মানুষ আছে, এই বোধটাই আগে জাগাতে হবে। এরপর অন্য কিছু।
মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ অমিত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নতুন মন্তব্য করুন