তিনি একটু বিরক্তভরে ভদ্রলোকের দিকে তাকালেন।
সাতসকালেই ভদ্রলোক এসে উপস্থিত। বসবার ঘরে সোফায় বসে আছেন, চোখে গোল্ড রিমের চশমা। হাত দুটো কোলের উপর রাখা। মনে হচ্ছে ওই দুই বেচারাকে নিয়ে একটু বিব্রত আছেন ভদ্রলোক। মাথার উপর বনবন ঘুরছে ফ্যান। এই সকালেও চড়চড়ে গরম পড়েছে। এক ফোঁটা বাতাস নেই কোথাও। দুটো মাছি ইতঃস্তত উড়ছে ঘরের ভেতর।
“স্যার, আপনাকে ব্যাপারটা আবার বুঝিয়ে বলি…” ভদ্রলোক একটু থেমে থেমে উচ্চারণ করলেন প্রতিটি শব্দ। ঠিক ক্লাসে তিনি যেইভাবে পড়ান।
“আপনাকে থাকতে দেওয়ার জন্য বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ রাজী এখন। ইটালী, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, জাপান, জার্মান, নরওয়ে…”
“শুনুন ভাই, দেশটার নাম জার্মানী, জার্মান নয়। আপনারা সরকারী লোকজন সব সময়ে জার্মানীকে জার্মান বলেন কেন?” তিনি রুষ্ট স্বরে জবাব দেন।
“ও ওই একই ব্যাপার স্যার…জার্মান সরকার স্কলারশিপও দেবে। আপনি যেই বিষয়ে কাজ করেন স্যার, ওই কাজ স্যার জার্মান দেশে বসে করবেন…স্যার আমার এক ভাগনে জার্মান থাকে – ওইখানে দেশের সব কিছুই পাবেন স্যার…পায়খানার বদনাও কিনতে পাওয়া যায় সুপারমার্কেটে…স্যার মনে হবে দেশেই আছেন…” ভদ্রলোকের কন্ঠে আশ্বাসের সুর।
“না, আমি এইখানেই থাকতে চাই” – তিনি জোরালো গলায় বলেন। “আমি সরকারকে অনেকবার বলেছি, আমি এই দেশে জন্মেছি, এই দেশেই মরতে চাই।”
“ওটাতো আবেগের কথা স্যার, এই দেশের প্রতিটি লোক দেশ ছাড়তে চায়, দরকার হলে প্লেনের চাকায় উঠে তারা বিদেশে যেতে চায়। এই মরার দেশে কি আছে স্যার? আমাদের এই সুযোগ কেউ দিলে লাফিয়ে উঠতাম স্যার…” ভদ্রলোক কিছুটা মরিয়া হয়েই বলেন।
“দেখুন আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার গিয়েছি। আমাকে ডেকেও নিয়েছেন ওনারা কয়েকবার। আমাকে অনেক বুঝিয়েছেন। আপনার আর নতুন করে কিছু বোঝাতে হবে না। আমি এই দেশের শেষ সংখ্যালঘু। আমি চলে গেলে এই দেশে পুরোপুরি – কি জানি বলে -একদম হোমোজেনিয়াস হয়ে যাবে। সরকারকে সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, অসহিষ্ণুতা এইসব আর ডিল করতে হবে না…সত্যই কি তাই? পৃথিবীতে সব সময়ে সংখ্যালঘু ছিল, সব সময়ে থাকবে, পৃথিবী থেকে আপনারা সংখ্যালঘু দূর করতে পারবেন না, দশজনকে তাড়াবেন, নতুন বিশজন তৈরি হবে…আপনারা কত জনকে দেশ ছাড়া করবেন?…” তাঁর গলাটা চড়েই যায় একটু।
“স্যার, আমাদের লক্ষ্য সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত দেশ। এই বৈপ্লবিক লক্ষ্যে সরকার গত চল্লিশ বছর ধরে কাজ করে চলছে। আমরা দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে অনেক কাজ করছি। দেশে কোনো সংখ্যালঘু না থাকলেই সবচেয়ে বেশি শান্তি থাকে। সংখ্যালঘু না থাকলে কাকে মারবে, ধরবে আর কাটবে বলেন? সেই বিশাল কর্মকান্ড একদম শেষ অধ্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। স্যার আপনি ছাড়া এখন বাকি দেশ পুরো ইয়ে…মানে একতাবদ্ধ…একদম পুরোই। স্যার আপনি যদি এই দেশ ভালো বাসেন, তবে আপনার চলে যাওয়াটাই শ্রেয়। আপনার নিরপত্তার ব্যাপারটা এখন ন্যাশানাল ইস্যু হয়ে গিয়েছে। আপনার একার জন্য রাষ্ট্রে কি বিশাল খরচ হচ্ছে সেটাও স্যার ভেবে দেখবেন। এগুলো স্যার জনগনের টাকা, ট্যাক্স মানি। সংসদে আমাদের জবাবদিহি করতে হয় এইগুলোর জন্য…আমরা আর কতো দিন এইগুলো করতে পারবো জানিনা।” একটু হুমকির মতোই শোনালো কথাগুলো।
হুমকি কিছুটা নিশ্চয়ই আছে। গত চল্লিশ বছরে সংখ্যালঘুরা শুধু চলেই যাচ্ছে। কারো বাড়ি কেড়ে নিয়েছে কেউ, কারও ঘরের বউ বা মেয়ে। কারোর মৃতদেহ নদীর পাশে পাওয়া গেছে, কাউকে একদম খুঁজেই পাওয়া যায় নি। গণিতের নিয়ম মেনে সংখ্যালঘুরা লঘু থেকে লঘুতর হতে হতে একদম প্রায় তলানীতে ঠেকেছে। তিনি ছাড়া এই দেশে এখন আর সংখ্যালঘু কেউ নেই। এই ব্যাপারটা ইদানিং বেশ জোরেসোরেই আসছে মিডিয়াতে আজকাল। গত কয়েকদিন আগে দৈনিক আধাঁর ও আলোতে রিপোর্ট বেরিয়েছে – পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে এগিয়ে চলেছে দেশ।
ভদ্রলোক চলে যাওয়া পরে তিনি বারান্দার খোলা দরজা দিয়ে বাইরে তাকান। বেশ তাতানো একটা সূর্য উঠে গেছে। বাইরের গাছ দুটো অনেক বড় হয়ে গেছে। ওদের পাতার ফাঁক দিয়ে এখন একটু দূরের পুকুরটা আর ভালোমতো দেখা যায় না।
তাঁর শৈশবও কেটেছে এই বাসাতেই, গাছগুলো অনেক ছোট ছিল তখন। অনেক দুপুর এই বারান্দা থেকে তিনি অলস পুকুরটাকে দেখতেন। একটা বালিশ নিয়ে এই বারান্দায় শুয়ে শুয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে তিনি বিশ্বজয় করেছেন, পাহাড়ে উঠেছেন, মরুভূমিতে গিয়েছেন, পাতালে নেমেছেন। এই পুকুরটা কখনো আলস্য নিয়ে আসতো, কখনো বা উত্তেজনা।
দেশ তো আসলে খন্ড খন্ড ভূমি, মানচিত্রের পাতায় বিভিন্ন রঙের আঁকাবাঁকা নকশা। কিন্তু দেশ বললেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে পরাভূত করে কেন যেন পৃথিবীর মানচিত্রের বদলে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে দেখা পুকুরের কথা মনে হয়।
সেই দেশটাকে এই বারান্দা ছাড়া তিনি আর কোথায় খুঁজে পাবেন?
নাহ, কলেজে যাওয়ার সময় হয়ে গেল।
।।২।।
“দুটো সিগারেট দাও” - পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে করতে তিনি দোকানদারকে বলেন।
“স্যার নাকি শুনলাম জার্মান চলে যাবেন?” একটু বিরতি নেয় লোকটা।
তিনি আকাশের দিকে তাকান। একটু একটু মেঘ জমছে। গরমটা এক ফোঁটা কমেনি। বরং চারিদিকে ভ্যাপসা একটা ভাব। দোকানদারের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
“দেশটার নাম জার্মানি…” বিরক্তি নিয়েই বলেন তিনি। দেশের সব লোক কি জার্মানিকে জার্মান বলে?
“আমাদের কথাটা একটু মনে রাখবেন স্যার।”
“আমি কোথাও যাচ্ছি না”।
“এই বাড়িঘরের ব্যবস্থা কি হবে স্যার? আমি স্যার একটু সন্ধ্যাবেলাতে আপনার বাসাতে আসি? আমার স্যার পার্টি রেডি আছে। আপনি একটু সাহায্য করলে আমার দোকানটাও বড় করতে পারি স্যার। আপনাদের দোয়াতে এখন ব্যবসা পাতি ভালো। স্যার একটা কোল্ড ড্রিংক্স নেন না…সাতটার পরে তো স্যার বাড়িতেই থাকবেন, নাকি?”
“কোত্থাও যাচ্ছি না আমি…” একটু রূঢ়ভাবে জবাব দিয়েই তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
রিকশাতে উঠতেই দুইজন সরকারি লোক চোখে পড়ে। সাদা পোশাকে তাঁকে অনুসরন করে চলছে।
এই ইয়ের বাচ্চা – #### ###... উঠতি মাস্তানদের খিস্তি কানে আসে।
পেছন পেছন আসা সরকারী দুই চরের প্রতি কিছুটা কৃতজ্ঞ বোধ করেন তিনি। ওদের কারণেই হয়ত ধড় আর মাথা এখনো আলাদা হয় নি।
।।৩।।
ক্লাসরুমে গিয়ে তিনি হতাশ হলেন। ফাঁকা ক্লাস রুম। একটি ছাত্রও নেই। বোর্ডের মধ্যে বড় বড় করে লেখা – “সংখ্যালঘুর ক্লাস কেউ করবেন না। দেশকে এগুতে দিন।”
প্রথম বেঞ্চে কয়েকটা লিফলেট রাখা। তিনি একটি লিফলেট তুলে নিলেন। লিফলেটের বক্তব্য প্রায় আজ সকালের আলাপচারিতার মতোই। সামান্য একটু পড়ার পরে তিনি আর পড়ার কৌতুহুল বোধ করলেন না। তিনি ক্লান্ত পায়ে টিচার্স কমন রুমের দিকে হেঁটে যান। চারিদিকে কেমন থমথমে গরম। ঝড় হবে নাকি? ঝড়ের আগেই সব কেমন নিশ্চুপ হয়ে যায়। বাসায় বসে বিকেলের ঝড় দেখা তাঁর আরও একটা প্রিয় জিনিস। ভেতরে ভেতরে শিশুদের মতো উত্তেজনাবোধ করেন।
“দেশ মানে আর কিছু না…নিজের বারান্দায় বসে শৈশবের দিকে তাকিয়ে থাকা…” হঠাৎই মাথায় কবিতার একটা লাইন জন্ম নেয়। “লিখেই ফেলব নাকি কবিতাটা?” আজকাল তাঁর বেশিরভাগ কথা নিজের সাথেই হয়।
কলেজে টিচার্স রুম আজকে প্রায় ফাঁকা। তিন-চারজন শিক্ষক দল বেঁধে গল্প করছিলেন। তাঁকে দেখেই তাঁর নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। তাঁদের উচ্চ কন্ঠের গল্প-গুজব যেন ফিসফিসানি রূপ নেয় নিমেষেই। অস্কুট উচ্চারণে তিনি যেন সংখ্যালঘু শব্দটা শুনতে পেলেন। সংখ্যা আর লঘু – দুটো শব্দের কোনটাই খারাপ নয় – তবুও কেন এই সংখ্যালঘু শব্দটা এতোটা অশ্লীল কেন?
একটু দূরে একজন সহকর্মী বসে ছিলেন। তিনি বন্ধুর মতো এগিয়ে এলেন। এই দেশে এখন আর খুব বেশি লোক বন্ধুর মতো কথা বলে না।
“কেমন আছেন ভাই?” বেশ আন্তরিকভাবেই জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
“চলছে মোটামুটি” সংক্ষেপে উত্তর দেন তিনি।
“আপনি তো ভাই বিখ্যাত হয়ে গেলেন। টিভি, পত্রিকা, ম্যাগাজিন সর্বত্রই আপনাকে দেখি…”
“এইরকম কোনো খ্যাতির প্রয়োজন ছিল না আমার…”
“তা আপনি তো চাইলে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন…”
একটু নীরবতা নেমে আসে।
তিনি আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করেন –“আপনার কাছে সংখ্যালঘুদের চলে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা মনে হয়?”
“অস্বাভাবিক কেন বলছেন এটাকে? আপনাকে একটু বুঝায়ে বলি। মনে করেন এক দেশে সবাই জাঙ্গিয়া পরে অফিসে যায়। আপনি যদি সেই দেশে স্যুট-টাই পরে অফিসে যান, তাহলে আপনি হবেন সেই দেশের সবচেয়ে অস্বাভাবিক ব্যক্তি। যেই দেশে মানুষ হাতে ভর করে হাঁটে সেই দেশে পায়ে হাঁটলে আপনি আর যাই হোন না কেন, স্বাভাবিক হতে পারবেন না। আরে ভাই স্বাভাবিক কোনটা আর অস্বাভাবিক কোনটা এইটা সংখ্যাগুরুরা ঠিক করে। স্বাভাবিকের সাথে ভালো মন্দের সম্পর্ক নেই। বুঝলেন ভাই, মেজরিটি রুলস…এইটাই গনতন্ত্রের মূল নিয়ম…আর আরেকটা ব্যাপার…আপনার বাড়ি ঘর কেড়ে নিয়ে আপনার লাশ কেউ ফেলে রাখে নি। সেটা হয়েছে অনেকের ক্ষেত্রে। আপনি তো লটারিতে প্রাইজ পেয়েছেন বলা যায়। দুনিয়ার তাবৎ দেশ আপনাকে অ্যাসাইলাম দিতে চায়, এই দেশের সম্পত্তিগুলো বেঁচে, ভালো কোন জায়গাতে গিয়ে আরাম করে দিন কাটায়ে দেন না কেন? শহরে এখন জমির যা দাম – আপনি খুব ভালো পয়সা পাবেন। আমিই ইন্টারেস্টেড পার্টির সন্ধান দিতে পারি। এই দেশে তো প্রতিটা লোকই কোন না কোনভাবে সংখ্যালঘু, এদেরকে কোন দেশ নিতে চায় বলুন? আরে ভাই আপনার তো যাওয়ার জায়গা আছে…একটা নয় ভুরি ভুরি। আমরা কই যাই বলুন?”
“আমি এই দেশেই মরতে চাই…”
“মরার জন্য অবশ্য খুব উপযুক্ত দেশ এটা...”
বাইরে মেঘের গর্জন শোনা যায়। এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস ভেসে আসে জানালা দিয়ে। হঠাৎই মনে হয় সবকিছুই যেন প্রাণ পেয়ে গেছে।
জোর বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। তাঁর ক্লান্তি হঠাৎই চলে যায়। প্রতি বর্ষণেই যেন তিনি একটু একটু করে তরুণ হয়ে যান।
।।৪।।
“একটু দাঁড়ান” – রিকশায় ওঠার মুখে বাঁধা দেয় ছেলেটা।
ছেলেটাকে দেখেই তাঁর মুখ আনন্দে ভরে উঠে। এই ছেলেটাকে তিনি প্রায় জন্ম থেকেই চিনেন। তাঁর পাশের বাসাতেই থাকতো এক সময়ে।
“আরে – কেমন আছিস রে তুই?” – তিনি আনন্দিত স্বরে জিজ্ঞেস করেন।
বাচ্চা একটা ছেলে ছিল। যখন-তখন ঘরে আসতো। ওর জন্য চকলেট রেখে দিতেন তিনি। কোমল একটা মুখ ছিল তখন। তাঁর নিজের সংসার নেই। তিনি বাসায় ফিরতেই ছেলেটা দৌড়ে আসতো তাঁর কাছে। ঘরে ফিরে একটা কোমল মুখ দেখলেই দিনের ক্লান্তি ভুলে যেতেন তিনি।
ছেলেটার দিকে একটু ভালো মতো লক্ষ্য করেই চুপসে যান তিনি। সেই কোমলতার কিছু মাত্র অবশিষ্ট নেই এখন। মুখে রুক্ষতা নয়, এক ধরণের হিংস্রতা দেখা যায়। অথচ ছেলেটা মাস্তান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, টিভিতে বিতর্ক করে।
“আপনি চলে যান না কেন?” কোন রকম ভূমিকা ছাড়াই জিজ্ঞেস করে ছেলেটা।
“আপনাদের ভাই বেরাদররা সব তো দেশ ছেড়ে চলে গেছে। এই দেশ তো আপনাদের না। আপনারা কোনো দিনই এই দেশকে নিজের বলে মনে করেন নি। এই দেশে শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি সবকিছুই আপনাদের ছাড়াই এগুতে পারবে…এই দেশ আপনাদের ছাড়তেই হবে।” ছেলেটার চোখ মুখ আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ।
পেছনের অনুসরনকারীর ইশারাতে সরে যায় ছেলেটা। একটু দূরেই জোরে একটা বাজ পড়ে। সেটার আলো তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। বাসায় পৌঁছানোর আগেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
একদম ধুম বৃষ্টি।
।।৫।।
“আমাকে ধরতে পারবে তুমি?”
ছেলেটার মাথায় নরম রেশমি চুল। পরণে নীল রঙের একটা হাফ প্যান্ট আর সবুজ একটা গেঞ্জি।
হঠাৎই ছেলেটা দৌড়ানো শুরু করে। তিনি ছুটেন ছেলেটার পেছনে। প্রায় ধরে ফেলেছেন তিনি। ছেলেটা হঠাৎই ঘুরে দাঁড়ায়। খুব মায়াময় একটা মুখ। হঠাৎ কঠিন হয়ে যায় সেই মুখ।
ছেলেটা সুর করে বলে ওঠে– তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও।
তাঁর ঘুম ভেঙে যায়।
বাইরে অঝোরে ঝরছে বৃষ্টির ধারা।
তিনি আমৃত্যু এই দেশে থাকতে চেয়েছিলেন। এই দেশে তাঁর জন্ম, তিনি এইখানেই মরতে চেয়েছিলেন। সেটা আর কিভাবে সম্ভব হবে?
তাঁর চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার মতোই টপটপ জল ঝরতে থাকে।
একটাই উপায় আছে।
।।৬।।
ডেস্ক রিপোর্ট – গত রাতে দেশের শেষ সংখ্যালঘু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে তিনি দেশত্যাগে করতে চাননি এই দেশে তাঁর জন্ম তিনি তাঁর জন্মভূমিতেই আমৃত্যু থাকতে চেয়েছেন।
এই আত্মহননের মাধ্যমে হয়ত তিনি তাঁর শেষ ইচ্ছাই বাস্তবায়ন করলেন। এদিকে তাঁর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন যে এই মৃত্যু একজন দেশপ্রেমিকের মৃত্যু। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকই এই ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন।
তাঁর মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।
###
মার্কিন দেশে সংখ্যালঘু জীবনে খুব বেশি না হলেও কয়েকবার বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রতিবারই আমাকে নানান “উপাধিতে” ভূষিত করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কখনো উচ্চকিত, কখনো মৃদুস্বরে আমি মোটামুটি একই বক্তব্য পেয়েছি। মনে হয় বিশ্বব্যাপিই সংখ্যালঘুদের অন্য কোথাও চলে যেতে বলা হয়। নানান রঙে, নানান মোড়কে এই মেসেজই তাদের দেওয়া হয়।
আমার একটা দেশ আছে। সেই দেশে আমি সংখ্যাগুরু, আমাকে সেই দেশ অবশ্যই ফিরিয়ে নেবে। চলে যেতে বললে সেখানে ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আমার সন্তানদের তো এটাই নিজের দেশ। ওদের চলে যেতে বললে ওরা কোথায় যাবে? পৃথিবীর অযুত-নিযুত সংখ্যালঘু নিজের দেশ ছেড়ে কোথায় যাবে? এটা কোনো দেশের সংখ্যালঘুর গল্প নয়, এটা শুধু সংখ্যালঘুদের গল্প।
সংখ্যালঘুদের উপর অশ্লীল এই অত্যাচার বন্ধ হোক।
মন্তব্য
কোনদিন হয়তো এমন একটা লেখা কেউ ব্লগে পোস্ট করবে- শুধু ট্যাগে গল্পের জায়গায় হয়তো থাকবে- অবিচুয়ারি, সমসাময়িক, দেশচিন্তা ইত্যাদি। চিন্তা নেই... খুব দ্রুত আমরা শুদ্ধতার দিকে এগুচ্ছি
প্রায় একই রকম থীমে কার যেনো একটা গল্প পড়েছিলাম, শেষ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু নিয়ে। তবে তাতে কিছু আসে যায় না... কারণ এইটা বোধহয় গল্প না, বরং দূরদৃষ্টি।
অলমিতি বিস্তারেণ
হিমুর বিলুপ্তি। -রু
হিমু ভাইয়ের মনে হয় গল্পটা, শিরোনাম মনে পড়ছে না। দ্বিতীয়বার সেই গল্প পড়ার শক্তি ছিলো না আমার, যেমন এটা দ্বিতীয়বার পড়ার শক্তি নেই।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
বিলুপ্তি
- সাম্য
খুব দরকার ছিলো এই লেখাটা এসময়ে।
মন খারাপ হয়ে গেল, তাসনীম ভাই। এই জিনিশগুলা কমার বদলে দিন দিন বাড়ছে।
কেবলই ভয় হয়, এটা গল্প নয়, ভবিষ্যদ্বাণী। সংখ্যালঘুদের কষ্ট মনে হয় সংখ্যালঘু না হলে কেউ বুঝতে পারবে না। নিজ দেশে আমিও বুঝতে পারতাম না হয় তো। আপাতঃদৃষ্টিতে দেখলে মনে হয় অনেকেই ভালো আছে, এট লিস্ট আমাদের চারপাশে যারা আছে। তারা চাকরি করছে, স্কুলে পড়ছে, সম্মান নিয়ে বেঁচে আছে, খারাপের কী? কিন্তু কেউ কী খেয়াল করে, আড্ডায় হুট করে বলে শুধুমাত্র বিশেষ এক ধর্মের অধিকারী বলে কেউ বলে ওঠে, "আপনার আর চিন্তা কী? কিছু হলেই তো চলে যাবেন বাপের দেশে!" শুধুমাত্র ধর্ম আলাদা বলেই আমাদেরই মাঝে কেউ তার প্রতিবেশিকে জানিয়ে দিচ্ছে, এটা তার দেশ না, যে দেশে তার জন্ম, সে মাটি তার আপন মা না, সৎ মা, রূপকথার ডাইনি।
অথবা ম- বর্গীয় একটি শব্দ উচ্চারণ করে গালি দেওয়া। এই গালিটার চেয়ে অশ্লীল কোন গালি বাংলা ভাষায় আছে বলে আমার মনে হয় না। এবং বাঙালি কেউ এই গালিটা দিতে পারে, সেটাও আমার বিশ্বাস হত না, গালিটা পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালিদের মারার জন্য ব্যবহার করত বলেই জানতাম। একজন বাঙালি কীভাবে সেই ইতিহাস ভুলে আরেক বাঙালিকে সেই গালিটাই দিয়ে বসে অবলীলায়, জানিয়ে দেয়, এই দেশে তোমার কোন অধিকার নেই?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের তালিকায় ভিন্নধর্মের কয়েকজন আছে। দূর্গাপুজোর নাড়ু এখনো আমার প্রিয় খাবারগুলোর একটা - আমার এক বন্ধুর মা আজো আমার জন্য আলাদা করে নাড়ু রেখে দেন - আমার মা যেমন ঈদের দিনে রাখেন বুটের বরফি আমার দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বন্ধুর জন্য। ছোটবেলায় কখনো বুঝিনি সংখ্যালঘু কাকে বলে, কেন বলে।
প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছিলাম যখন আমার এক বন্ধু সপরিবারে চলে গেল পাশের দেশে - পৃথিবীটাকে শূণ্য মনে হয়েছিল তখন। আবার পাশাপাশি আমার আশেপাশে কলিগ আর বন্ধুদের তো দেখি- কোন পার্থক্য করা হয় না তাদের সাথে আমাদের। যোগ্যতার মাপকাঠিতেই বিচার হচ্ছে তাদের।
-অয়ন
সংখ্যালঘুদের উপর অশ্লীল অত্যাচার বন্ধ হোক।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
'সর্বশেষ সংখ্যালঘু' বলে কিছু নেই, হতে পারে না। প্রতিনিয়ত মানুষ নানা প্যারামিটার খুঁজে বের করে নতুন নতুন সব সংখ্যালঘু শ্রেণী আবিষ্কার করে। আমাদের এই শহরে একই নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের মানুষদের মধ্যে কাইল্যা, কুট্টি, ঘটি, বইঙ্গা, আবাইদ্যা, পূব্বা, মফিজ, চউড়্যা এমন নানা প্রকার বিভাজন ও সেই বিভাজনজনিত কারণে তাদের প্রতি সংখ্যাগুরুর অন্যায় আচরণ দেখেছি, দেখছি। সংখ্যাগুরুরা কিলিয়ে হাতের সুখ করে নেবার জন্য সব সময়ই একটা পাঞ্চিং ব্যাগ খোঁজে। কিল দেয়ার সুযোগ না থাকলে গালি দেবার সুযোগটা কেউ হাতছাড়া করতে চায় না।
সংখ্যালঘু যেখানে সংখ্যালঘু, সেখানে তার কাছে যে আচরণটাকে অন্যায় বলে মনে হয়; যেখানে সে সংখ্যাগুরু সেখানে ঐ একই আচরণটাকে তার স্বাভাবিক বলে মনে হয়। এই মজ্জাগত বদমনোভাব দূর করতে গেলে আমাদেরকে আরো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সহমত, এই একই প্রশ্ন আমার মাথায়ও ঘুরপাক খায় জাতিগত দাংগার খবর পড়লে, আসলেই সংখ্যালঘুরা শেষ হবে না। যখন সব সম্প্রদায়/উপসম্প্রদায় শেষ হবে, সংখ্যাগুরুরা কিছু না পেয়ে তখন নিজেদের ভিতরেই বিভাজন তৈরি করবে, তৈরি করবে আরেক সংখ্যালঘু -- সমস্ত জাতিগত দাংগার পিছনের মূল সাইকোলজি মনে হয় মানুষের লোভ।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি এরা আসলে কি চায়, অমুসলিম সংখ্যালঘুরা শেষ হবার পর কি হবে? আহমাদীয়া? তারপর শিয়া-সুন্নী? শিয়া শেষ হইলে? আহলে হাদীস-হানাফী? তারপর কি? কিন্তু এই বিভাজন মনে হয় আরো ব্যাপক।
এই গল্পের কোন শেষ দেখতে পাচ্ছি না।
-- রামগরুড়
আমাদের আর কতদিন এরকম গল্প লিখে যেতে হবে?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এমন অসাধারণ অভিজ্ঞান আমাকে মোহিত করলো! আপনার লেখনীকে কুর্ণিশ!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
মানুষের যুদ্ধ গুলো দুর্ভাগ্যজনকভাবে বারবার করতে হয় - এর যেন কোন শেষ নেই
মুক্তিযুদ্ধের মত এত মহান একটা সংগ্রাম যে জাতির গৌরবময় অধ্যায় তাদের এখনো এমন বাস্তবতা নিয়ে গল্প হয়, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়------ হতাশ লাগে, কষ্ট বাড়ে------
সবসময় সংখ্যালঘুদের নিজের দেশ থাকে অন্য দেশে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ইশকুল বেলায় আমার এক বন্ধু ছিল।এক রাতে ওরা ঘরের দোরে প্রদীপ জ্বেলে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে,আর কোন খোঁজ পাইনি।গল্পটা পড়ে ওদের কথা খুব মনে পড়ছে।
সংখ্যালঘুরা চলে যাবে, তাদের চলে যেতে হয়।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বিএনপির দ্বিতীয় টার্মে যখন দেশে আবার হাঙ্গামা শুরু হলো, আমার এক গুরুজনের ওপরে দায়িত্ব পড়েছিল এই দেশ থেকে আমার চলে যাওয়ার ব্যাপারে যেন আমাকে বোঝাতে পারেন। তাঁর একটা কথা এখনও মনে দাগ কেটে আছে, 'এই দেশটা আর আমাদের দেশ নয়।' তাঁর প্রতি সম্মানবোধের কারণে মাথা তুলে কিছু বলতে পারি নি।
কিন্তু সে দিন আমার ডায়েরিতে লিখেছিলাম, দেশপ্রেম আর মাতৃভূমি এই দুটো শব্দের জন্ম হয়েছিল কাদের জন্য?
পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই মানুষের জন্য যেন মানুষ বেঁচে থাকে।
আপনার লেখায় পাঁচতারা।
'দেশ' জিনিষটা আসলে কোথায়? এক টুকরো রাজনৈতিক জমির প্লটে? ঐ প্লটনিবাসী মানুষের মধ্যে? নাকি একটা 'আইডিয়া'র আকারে, নিজের মস্তিষ্কের কোষে কোষে নিউরনের অনুরণনে?
****************************************
এ ধরনের লেখা গুলো খুব কষ্টের।সাম্প্রদায়িকতার ঘুণ পোকা আমাদেরকে দিনে দিনে পিছিয়েই দিচ্ছে।
লেখা ভালো লেগেছে।কিন্তু বিষয়টা যথারীতি যন্ত্রণার। সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরুর বিষয়গুলো বাদ দিয়ে কবে যে আমরা শুধুই মানুষ হয়ে উঠব? সে দিন কী আসলেই আসবে কোনোদিন?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অমানুষ থেকে যেন মানুষ হই।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
খুব জরুরী লেখা, চিরায়ত কালের নিষ্ঠুর সত্য।
facebook
বানানো গল্প নয়, যেন বাস্তব প্রতিবেদন। এই পথেই কি আমরা এগোচ্ছি না?
সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে...???
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আমরা মনে হয় নিখাদ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকেই যাচ্ছি। তবে সংখ্যালঘুদের সহায় সম্পদ লুটপাটে জনতার যত আগ্রহ দেখা যায় তাতে আরও নির্মম একটা পরিণতি চোখের সামনে দেখতে পাই। ধীরে ধীরে কমে মাত্র একজন সংখ্যালঘুতে নেমে আসার মত ধৈর্য্য মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ দেখাতে পারবে না। আমাদের বড়ই তাড়াহুড়া
খুব ভালো লেগেছে।
মার্কিন মুলুকে এরকম হয় নাকি?
হ্যাঁ, আমার সন্তানের দেশ তো এটাই।
সব মুল্লুকেই সংখ্যালঘুদের অপমানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মার্কিন দেশে রাস্তায় অশ্লীল গালি আর এয়ারপোর্টে হয়রানি - এইগুলোর দেদার হয়। তবে বাসায় বা উপসানালয়ে আগুন দেয় না কেউ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সংখ্যালঘুদের উপর অশ্লীল এই অত্যাচার বন্ধ হোক।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
অসাধারণ একটি গল্প- মানবিক বোধকে নাড়া দেয়ার মত।
ঠিক এই কথাটার প্রতিধ্বনি জীবনে কতবার শুনেছি- গুণতে পারবো না! যতবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নারকীয় নির্যাতন ও প্রশাসনিক বৈষম্যের কথা বলেছি, তথাকথিত মডারেট বন্ধুরাই বলেছে, "তোদের দিয়ে কী লাভ, তোদের তো এক পা ভারতে।"
অথচ আমার পিতা আজীবন বাংলাদেশ সরকারকে সেবা দিয়ে ঘুষ না খাবার কারণে উচ্চপদে থেকেও অবসর নেবার আগে বাড়ি করতে পারেননি। শুধুমাত্র ভারত ভালো লাগে না বলে আইসিসিআর এর বৃত্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম আমি। যেসব সংখ্যালঘু দেশ ছেড়ে যান -তারা সবাই কি স্বেচ্ছায় যান। অনেক বিকৃত মস্তিষ্ক লোক অবশ্য ধর্মের কারণে পাশের বাড়ির খানের চেয়ে ওপারের বাঁড়ুজ্জেদের বেশি পছন্দ করেন! তাদের আমরা ভারতীয় দালালই বলি! কিন্তু যারা বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ছেন, বা ছেড়েছেন বা ছাড়বেন- তাদের কী বলব?
এখন তবু বেঁচে আছি, ব্লগ লিখছি। যুদ্ধাপরাধের বিচার না হলে আবার ক্ষমতায় আসবে ওই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। তখন বেঁচে থাকবো তো? নাকি সংখ্যালঘুদেরও সংখ্যালঘু হয়ে দেশ ছাড়তে হবে চিরতরে?
নির্ঝর অলয়
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আমার শিশুদের বড় হওয়ার এই সময়টা আমার জন্য খুব আনন্দময়।
ওদের কল্যাণে আমি বাস করি এক রূপকথার মতো জগতে। সেইখানে সবচেয়ে খারাপ লোকের নাম হচ্ছে প্ল্যাঙ্কটন। এক ইঞ্চি উচ্চতার এই প্রাণীটার উদ্দেশ্য হচ্ছে উলটো দিকের রেঁস্তোরার গোপন ফরমূলা চুরি করা।
ওদের সাথে আলাপচারিতা বাদ দিয়ে পত্রিকা পড়লে এক কুৎসিত দুনিয়া দেখতে পাই। বাস্তবের ভিলেনেরা বড় ভয়ঙ্কর। ওদের হাত থেকে কেউই নিরাপদ না।
ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারী এক ছবিতে এক বৌদ্ধ যুবককে ট্যাগ করায় পুড়তে হয়েছে মানুষকে, চুরমার হয়েছে উপসানালয়।
আরও জানতে পারি যে ইতিমধ্যে আমরা আমাদের দেশের নয় লাখ মানুষকে অন্য দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি।
আমরা ভিন্ন মত বা ধর্মের কাউকেই এদেশে থাকতে দেব না। সব্বাই চলে গেলে নতুন পাঞ্চিং ব্যাগ তৈরি করে নেব।
আমরা এক অসভ্য দুনিয়াতে বাস করি। ক্রমে ক্রমে সেই পৃথিবী আরও অন্ধকারের দিকে ধাবমান।
ধর্মের নামে এই অনাচার কবে বন্ধ হবে?
আমি সাধারণত পাঠকদের সব মন্তব্যের জবাব দেই। আজ বলার মতো কিছুই নেই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
খুবই সময় উপযোগী একটা লেখা। জানিনা, আপনি রামুর ঘটনা জানার পর লিখেছেন কিনা। আমাদের সংখ্যাগুরু বাঙালী মুসলিমদের বিদেশে কিছুদিন থাকতে দিলে হয়তো তারা সংখালঘুদের বেদনা বুঝতে পারতেন। অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই আপনাকে লেখাটির জন্য।
মেটাফোরিক লেখা মনে হল? পৃথিবীতে এখন কেবল মানুষ সংখাগুরু আর সব প্রানি সংখালঘু! তাই, মানুষের মাঝে এই ভেদাভেদ একধরনের দু:খবিলাস। কেমন হতো যদি সুন্দরবনের একটা বাঘ প্রেসক্লাবে ব্রিফিং দিত মানুষের বিরূদ্ধে যে তাদের উপর নির্যাতন হচ্ছে?
(স্বপ্নীল সমনামবিউলিস্ট)
সচলে ঢু মারি নাই বেশ কদিন সেভাবে। আজ সময় পেয়ে পড়তে গেলাম। প্রথম লেখাটাই কী অসম্ভব মন খারাপ করা। আহা, যদি একদিন সকালে উঠে দেখতাম যে এই সব কিছুই আসলে একটা স্বপ্নছিল। আমরা আসলে এরকম ছিলাম না কখনোই।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
সেইদিন কখনো না আসুক। হারামিরা যতই আশা করুক তেমন দিন আসতে এখনো দেরি আছে। ধর্ম বিশ্বাসের কারণে সংখ্যায় হালকা এমন মানুষদের বুক আগলে রক্ষা করতে এগিয়ে আসার মতো মানুষ এখনো আছে। মাত্র শেষ করলাম নোয়াখালির ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অর্থ সাহায্য সংগ্রহ। সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষেরা পকেট উপুড় করে দিয়েছেন আমাদের দেশের এই বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোকে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য। শকুনের দল যত সহজ ভেবেছিল, অত সহজে হাল ছাড়ছি না আমরা।
তবে খালি দুঃখ জাগানিয়া হা হুতাশ না করে আসুন যেভাবে পারি মানুষ হিসেবে মানুষকে সাহায্য করি। হয়ত আমার লাভের ঘরে কিছুই জুটবে না, তবু মরার সময় নিজেকে অন্তত মানুষ ভাবতে পারব।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
নতুন মন্তব্য করুন