আজ থেকে অনেক বছর আগে একবার কুমিল্লাতে গিয়েছিলাম। আব্বার সাথে কাজে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে। বলা যায় বড় হওয়ার পরে প্রথম পিতৃপুরুষের ভিটায় পা রাখা। আমার মনে তখন সদ্য দেখা অ্যালেক্স হ্যালির রুটসের উত্তেজনা। গ্রামের বাড়িতে রাতে জোনাকি জ্বলে, আকাশটা নিকষ কালো – প্রতিরাতেই তারার মেলা বসছে সেখানে। শহুরে যুবক বিস্ময় নিয়ে দেখে সেই দৃশ্য। বাতাসটা অ-নে-ক বিশুদ্ধ। কিন্তু এতো কিছু স্বত্ত্বেও এক চৈত্রমাসের সন্ধ্যাবেলা হঠাৎই আমাকে বিষণ্ণ করে দিল।
পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে আমি যেন সেই শহরের ডাক শুনতে পেলাম। হ্যামিলনের বাঁশির মতো। বাসার ছাদে বন্ধুদের আড্ডা, এলিফেন্ট রোডের মালঞ্চ স্ন্যাক্স অথবা কফিহাউজ আমাকে নানান প্রলোভন দেখাতে থাকে – নীলক্ষেতের পুরানো বইয়ের দোকানদার বলেছিল পুরানো কিছু সেবা রহস্য জোগাড় করে দিবে, সেই ব্যাটা আবার অন্য কারো কাছে বেচে দিল নাতো? আজকে সন্ধ্যাতে ফার্মগেটে ভিড় কেমন? চটপটিওয়ালাদের ঝাল কমাতে বললে লাভ হয় না কেন?
আমি হঠাৎই বুঝে যাই আমার শহরটা আসলে খুব জীবন্ত – আমি সেই শহরটাকে বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। দেশ কথাটা যেন তার বিশালত্ব হারিয়ে ফার্মগেট থেকে এলিফেন্ট রোডের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজের আঞ্চলিকতা নিজেকেই লজ্জিত করে।
দিন সাতেক পরে আমরা কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে চেপে বসলাম। টঙ্গী পার হওয়ার পর পরই যেন বুক থেকে পাথর সরে গেল। আমি বুক ভরে টেনে নিলাম অবিশুদ্ধ বাতাস। আমার শরীরের কোষগুলো যেন আবার নতুন উদ্যম ফিরে পেল। নিজের কাছে নিজের ফেরার আনন্দ প্রায় তুলনাহীন।
এরপর যে কয়বার ঢাকার বাইরে গেছি, সেই শহর আমাকে পিছু ডেকেছে। নানান ছুতোয় সে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে তার কাছে। সেই কারণেই হয়তো আমেরিকাগামী প্লেনটা যখন ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়েতে প্রবল বেগে দৌড়াতে লাগলো – আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল পাইলটকে একটু সাইড করে থামিয়ে আমাকে নামিয়ে দিতে বলি। পুরো থামাতেও হবে না – স্লো করলেই লাফিয়ে নেমে যেতে পারবো!!!
এর অনেক অনেক দিন পরে আরেক চৈত্রমাসে আমি ঢাকা শহরে দাঁড়িয়ে আমার সেই ‘দেশটাকে’ খুঁজতে চেষ্টা করি। এলিফেন্ট রোড আর মিরপুর রোডের সংযোগস্থলে একটা ওভারব্রিজ তৈরি করেছে কেউ। এই কুৎসিত জিনিসটা তৈরি করার আগে আমার পরামর্শ চায়নি – চাইলে আমি ভেটো দিতাম। ল্যাবরেটরি স্কুল আর ঢাকা কলেজ মিলে বারো বছর কাটিয়েছি ওই এলাকায়। আমার শৈশব এবং যৌবনকে পাওয়া উচিত ওইখানে। কিন্তু ওদের চিহ্ন মাত্র নেই। চারিদিকে মনে হয় কেউ দুঃখের পোঁচ মেরে দিয়েছে। শহরটা ধুঁকে ধুঁকে চলছে, শরীরে অকাল বার্ধক্যের ছাপ নিয়ে। বাতাসটাও কেমন ঘোলা ঘোলা…আর মানুষ কেন বাসা থেকে বাথরুম করে বের হয় না?
ভিড়…ধূলা-ময়লা…পোস্টার…মুখ ঢেকে যাওয়া বিজ্ঞাপন…আমার সেই ‘দেশটা’ কই? আমাকে স্বপ্নে ডাক দিত যেই প্রবল জীবন্ত শহর…আমি যার ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম, কাজের অবসরে দেখতাম ধানমন্ডি লেকের পাড়ের সবুজ গালিচা – সেখানে ঘাস আর জন্মাবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে…প্রেমিকাদের মতো শহরও এমন অচেনা হয়ে যাওয়া শিখতে পারে?
হঠাৎই আমার নিজেকে কেমন ভূমিহীন -ভূমিহীন মনে হতে থাকে। এক চৈত্রে যেই শহরকে বুকের ভেতরে পেয়েছিলাম এই কয়েক বছরের মধ্যে আরেক চৈত্রে সে হারিয়ে গেল কীভাবে? নাকি আমি হারিয়ে ফেলতে এমনি ওস্তাদ যে গোটা একটা শহর আমার হাত গলে বেরিয়ে গেল?
শুধু একমাত্র কল্পনাতেই এই নরকের চেহারা পালটে দিতে পারি আমি। পায়ের নিচের এই রাস্তা দিয়েই আম্মা আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। একটু চেষ্টা করলেই নিজেকে দেখতে পাই – আরেক চৈত্রমাসের কালবৈশাখীতে আমাদের চোখের সামনে বাজ পড়েছিল একটা – সে কি ভয়ংকর…একটু এগিয়ে গিয়ে বালকগুলোকেও দেখতে চেষ্টা করি, ওরা এখন বড় হয়ে গেছে, নিজেরাই স্কুল থেকে লুকিয়ে বের হতে পারে…গন্তব্য চিটাগং হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট…স্মৃতির অদৃশ্য রিমোটে বোতাম চেপে আরো একটু এগিয়ে গেলেই সেই ওদেরকে আবারও দেখতে পাই…লায়েক হয়ে গেছে…ওরা আপাতত নিউমার্কেট আর বলাকা হলমুখী…ম্যাকেনাস গোল্ড ছবিটা নাম করেছে…আরে সর্বনাশ এরাতো ইয়ে হয়ে গেছে…ঢাকা কলেজ থেকে বের সরাসরি গোল্ডেন গেট বারে…রসাতলে যেতে বাকি নেই আর…এই শহরে লাফিয়ে বেড়ানোর একটাই মাত্র উপায়…দৌড়াতে হবে কল্পনার পথে, মানুষের ভিড়ে শহরের পথগুলো সব বন্ধ হয়ে আছে।
আমি স্মৃতির শহরে ঢোকার চাবিটা পেয়ে যাই…আসল শহরটা আমাকে বিতাড়িত করেছে অথবা বলা যায় না…আমিই হয়ত তাড়িয়ে দিয়েছি তাকে। তবে সব মন্দেরই ভালো আছে। আমার সেই মিথ্যে শহরটাতে এক নিমিষেই ঢুকতে পারি। পাসপোর্ট, টিকিট লাগে না। সকালে চা-খেতে খেতে অথবা বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে বসে সেখানে যাওয়া যায়। ওখানে সকালগুলো দীর্ঘ, প্রতি শীতকালে বেজায় শীত পড়ে, আব্বা বলেন…এইবারের মতো শীত আগে পড়ে নাই…কারওয়ান বাজারের মাছের দাম চড়া…সেখানে প্রতি রাতেই রেললাইনের ধারে বাঁশি বাজায় কেউ…ক্যান্সারমুক্ত সিগারেট একমাত্র ওখানেই মিলে। নির্বাসনের দিনে সকালবেলার আলস্যের মতো দু’দন্ড শান্তি নিয়ে আসে স্মৃতির শহর। এইগুলো নকল হলে আসল কোনটা?
যেই শহরে আমি বর্তমানে থাকি সেটা বেশি পুরানো নয়। আমার একজন ৭০ বছর বয়েসী বন্ধু আছেন। এখানেই জন্মেছেন এবং বড় হয়েছেন। পুরানো শহরটা খুঁজতে তাঁর বেশি কল্পনা হাতড়াতে হয় না, যেই বাড়িতে জন্মেছিলেন সেটা এখনো দিব্যি বহাল তবিয়তে আছে, আমার শহরের বাড়িগুলোর মতো আকাশের দিকে হাঁটা দেয় নি তারা। তাঁর কাছে পুরানো শহরের গল্প শুনি…দেখি নতুন শহরটাও সেই পুরানো গন্ধ জড়িয়ে রেখেছে গায়ে…শুধু যোগ করেছে আধুনিক কিছু সুবিধা। বুকে ঈর্ষা নিয়ে ভাবি …একদিন আমরাও…
নিজের দেশে যাচ্ছি অনেকদিন পরে। স্মৃতির শহরকে আমি স্মৃতির বাইরে খুঁজি না। এবারও খুঁজব না। শুধু কিছু কিছু জায়গাতে গেলে মনে হয় এখানে এখনো গল্প আর ছবির রেশ রয়ে গেছে। মনে হয় এই শহরে আমার নিজের কিছু জিনিস এখনো রয়ে গেছে সবার অগোচরে। এই অচেনা শহরের বিরক্তিগুলোকে শুষে নিতে পারে ওইটুকু স্মৃতিচিহ্ন। হয়ত ওদেরকে দেখতেই বারবার ফেরা…ফিরে যাওয়ার দিনে তাই বুকে বাজে বিসর্জনের ব্যথা…
মনে হয় একদিন আকাশের শুকতারা দেখিব না আর;
দেখিব না হেলেঞ্চার ঝোপ থেকে এক ঝাড় জোনাকি কখন
নিভে যায়; দেখিব না আর আমি পরিচিত এই বাঁশবন,
শুকনো বাঁশের পাতা-ছাওয়া মাটি হয়ে যাবে গভীর আঁধার
আমার চোখের কাছে; লক্ষ্মীপূর্ণিমার রাতে সে কবে আবার
পেঁচা ডাকে জ্যোৎস্নায়; হিজলের বাঁকা ডাল করে গুঞ্জরণ…
(মনে হয় একদিন/ জীবনানন্দ দাশ)
###
মন্তব্য
ভালভাবে ঘুরে আসুন বউ বাচ্চা নিয়ে। আমাদের অনেকের মনের কথাই আপনি বলে দিয়েছেন।
দেশ টার এত রকম সমস্যা তবুও সেখানে প্রায় প্রতিদিনই ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।
আমি বলতে গেলে জন্মের পর থেকেই ঢাকাতে আছি। ফাঁকা ফাঁকা একটা শহর চোখের সামনেই বস্তি হয়ে গেলো, কাঁঠালবাগান থেকে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হল দুই টাকার রিকশা ভাড়া হয়ে গেলো বিশ টাকা- স্কুলজীবনে যেই বিশাল রমরমা বইয়ের দোকান থেকে সেবার বই কিনতাম, ওটা ছোট হতে হতে আর আছে নাকি জানি না; সোবাহানবাগ আর ধানমন্ডির সেই ফাঁকা রাস্তাও উধাও আজ অনেকদিন। আমি প্রতিদিন, প্রায় প্রতিটা ক্ষণ এই শহরটাকে শাপ শাপান্ত করতাম, অথচ এই শহর ছাড়া আমার কোথাও বেশিদিন ভালো লাগতো না। অসহ্য ট্রাফিক জ্যাম, ধোয়া, ধুলো, হর্নের উৎকট শব্দ- সবকিছুর পরও নিজের শহর।
দেশ ছেড়ে আসার আগে আমার সবচে বেশি খারাপ লাগা ছিলো এই শহরকে নিয়েই। লেখাটা পড়ে মন ভার হয়ে গেলো।
অলমিতি বিস্তারেণ
তাসনীম ভাই, পুরোটা পড়তে পারলাম না। সাড়ে তিন বছর দেশে যাই না তো। কিছুদুর পড়েই বুক ভারী হয়ে আসল।
দেখা হবে সামনের মাসে। লেখা নিয়ে তো কিছু বলার নাই নতুন করে-
facebook
আটমাস আগে শহরটাকে যখন ফেলে এসেছিলাম তখন সব থেকে শুরুতে মনে পড়েছিল সদ্য এসএসসি পাশ এক কিশোরের কথা, এক বৃষ্টিস্নাত ভোরে ঘুমঘুম চোখ নিয়ে সে পদার্পন করেছিল ভারী বাতাস আর কোলাহলের সেই শহরে। ধীরে ধীরে শহরটা আপন হয়ে গেল, কলেজ-ভার্সিটিও শেষ হয়ে গেল। বাড়ি গিয়ে থাকতে পারতাম না বেশিদিন, অস্থির লাগত দম আটকে আসত। কবে যে আবার ফিরব ভারী বাতাস-রিক্সার শহরটাতে!!! কবে যা আবার রাস্তার টং বসে সিগারেট আর "দুধ-লিকার বেশি, চিনি কম" এক কাপ চা খেতে পারব!!!
স্মৃতির শহরে যাত্রা শুভ হোক তাসনীম ভাই, আমাদের মত অভাগার কথা তাকে ভুলতে নিষেধ কইরেন।
--বেচারাথেরিয়াম
শেকরের সন্ধান নাকী স্মৃতি রোমন্থন বুঝতে পারি না!
ইন্টার পাস করে তখন ঢাকার শহরতলী যাত্রাবাড়ীর থেকে চিটাগাং রোডে শনির আখড়া-য় লজিং থাকতাম। ব্যবস্থাটা ভালই ছিল। থাকা খাওয়া ফ্রী। বিনিময়ে বাচ্চাদের পড়ানো। আমাদের মতো গ্রামের ছেলেদের পড়ালেখার এর চেয়ে ভাল উপায় ছিল না।
যে সংসারে লজিং থাকতাম; তাদের বড় মেয়ে আমার সহপাঠিনী ছিল। তার ছোট বোনটির ডাক্তার হওয়ার খুক সখ ছিল। মেয়েটি তখন নাইনে পড়ত। ছোট ভাই দুটো পড়ত ফাইভ সিক্সো। ভাই দুটোর কোন ভাল ভবিষৎ (পড়া-লেখায়) তখন আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু মেয়েটি খুব যত্ন নিয়ে পড়ত।
দেশে গিয়ে অনেকবার ইচ্ছে করেছে খোঁজ নিতে ঐ মেয়েটির কী হল? কখনো সময় হয়নি। ঐ বাড়িতে মাস ছয়েক থেকে টিউশনি যোগার করে মেসে উঠে গেলাম। নয়াপল্ট। সেখান থেকে হেঁটে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে টিএসসি। প্রতিদিন কমপক্ষে দুবার। সেই জায়গা গুলো দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মার্চে দেশে গেলাম চার দিনের জন্য। আর াগের বারের মতোই কিছুই না দেখে ফিরতে হল।
গ্রামের স্কুল ডিবেটে খুব হিরো হয়ে গেয়েছিম; দাও সে অরণ্য, লহ এ নগর এর পক্ষে কথা বলে। আমি গ্রামের ছেলে। আমার গ্রামকে ঘিরেই আমার দেশ। কিন্তু শহরবাসী বন্ধুদের শহরের স্মৃতির মতো সুন্দর করে লিখতে পারি না! দশ বছর আগে গ্রামে গিয়ে মনে হয়েছে "এ টা কোন জঙ্গল!" সব খানে কারেন্ট নাই বলে চিল্লাচিল্লি! টিভি সারিয়াল না দেখতে পারার আফসোস!
আমার স্মৃতির গ্রামে হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে যাত্রা নেই, বেল্লার গীত নেই, শরিয়ত/মারফতী পাল্টা গানের আসর নেই! ওহেদ আলী বয়াতীও নেই! খেজুর গুরের মোয়া আর ঝালের নাড়ুর বদলে মা দিচ্ছেন গ্লোকুজ বিস্কুট!
আমার গ্রামও কেবল আপনার শহরের মতো কল্পনায় আছে। সুবিধা হচ্ছে; সে খানে যেতে উড়োজাহাজ ভিসা-টিকেট কিছু লাগে না।
গতবারে আড্ডামেরে তৃপ্ত হতে পারি নি। আমি যাচ্ছি ১১ তে আসব ২৩ শে ডিসেম্বর। ছুটি পেলাম মাত্র দুই সপ্তাহ! এর মাঝে একটা আড্ডার ব্যবস্থা হলে খুব ভাল হয়।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ঢাকায় না মেট্রোরেল হবার কথা হচ্ছিল, সেটার কী পূর্বাভাস? তৃতীয় বিশ্বের শহরগুলোয় ট্র্যাফিক আর (অনেকটা তৎপ্রসূত) দূষণই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর ঢাকায় জনসংখ্যা এত যে এগুলো আরো প্রকট।
একটু আপডেট আছে।
_____________________
Give Her Freedom!
সচলে সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করি আপনার লেখার জন্য।
ভগিনিত্বের সুবাদে বেশিরভাগ পোস্ট-ই খসড়া অবস্থায় পড়ে ফেলার সুযোগ হয়। তারপর অগ্রিম বিষণ্ন মন নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
'নট ফেয়ার'।
লেখা নিয়ে বাড়তি কিছু বলার নেই।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ঢাকা শহরে বসে একটা দুটা ছোট পোস্ট দিয়েন তাসনীম ভাই। এইরকম স্মৃতির শহরের গন্ধমাখা পোস্ট।
..................................................................
#Banshibir.
প্রবাস থেকে ফেরার পর পরিবর্তনগুলো নিশ্চয়ই কষ্ট দেয় খুব। আর এখানে বসে নিরন্তর যে বদলে যাওয়া দেখছি... কিছুই বলার নাই!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
ঢাকা-র মধ্যে আসলেই একটা জাদু আছে। আমি অবশ্য বেশিদিন থাকিনি ঢাকায়। এবং হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকায় আসল ঢাকার কিছুই দেখিনি তেমন। আমার কাছে ঢাকা মানে ঢাবি ক্যাম্পাস, একুশে হল, টিএসসি, নীলক্ষেত, পলাশী, আনন্দবাজার বা বঙ্গবাজার, নীরব আর নান্না মিয়া। পরে বুঝেছি, ঢাকা আসলে একেকজনের কাছে একেকরকম। কিন্তু ঢাকার জন্যে টানটা কেমন করে জানি সবারই একরকম।
দেশে সময় আনন্দের কাটুক আপনার।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
শহরের যে প্রাণ থাকে সেটা আমিও বলি। বলতে কি, এই এই অদ্ভুত শহরটায় জীবন শুরু করবার পর যে সময়টা গড়িয়েছে সেটা নিয়ে লিখবার প্ল্যান আমার অনেকদিনের। মাঝে মাঝেই ঝোঁক চাপে ছোট একটা সিরিজ শুরু করবার। কিন্তু অনেক কিছুর মত এটাও হয়ে ওঠেনা আরকি।
আপনার লেখা নিয়ে আবার করে কিছু না-ই বলি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনার লেখা পড়লেই বুকের ভেতর কেমন খালি খালি লাগে ভাইয়া।
প্রতিবার দেশ থেকে আসার সময় আমার এই অনুভূতি হয় । অনেক ভেবে ভেবে আমি জেনেছি এ কারনেই উড়োজাহাজের জানালাগুলো "এয়ার টাইট" বন্ধ । তা নইলে অনেকেই লাফিয়ে নেমে যেত ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অসাধারণ তাসনীম ভাই।
শহরের প্রতি আমার প্রেম হাঁটাহাঁটির মধ্যে, সপ্তাহে দুইতিনদিন হাঁটাহাঁটি না করলে দমবন্ধ লাগে- সত্য কথা হলো অসুস্থ হয়ে যাই। হাঁটাহাঁটি রাত ৯ টার পর...........জীবন ফিরে পাবার মতো..........
একটু স্বার্থপরের মত কথা বললে বলবো শহরটার কোন সমস্যা নাই, সমস্যা এর অধিবাসীর তৈরী করা। তবুও আমি এর প্রেমে অন্ধ, এর অধিবাসীদেরও অপছন্দ করি না....................
তাসনীম ভাই, দেখা পাবার দাবি জানায় রাখলাম।
_____________________
Give Her Freedom!
ঢাকা শহর আমাকে মোটেই টানেনা, বরঞ্চ আমার সব টান খুলনাকে ঘিরে। এটা এজন্যে হতে পারে যে ঢাকায় কখোনো একটানা থাকিনি, ছাত্রজীবনের পুরোটাই কেটেছে এখানে, পরিবারের সদস্যেরা সবাই খুলনায় থাকে, এজন্যে। নিজের শহরের জন্যে টানটাই আলাদা, আপনার যেমন ঢাকা, তেমনই আমার খুলনা। তাইতো একটু সুযোগ পেলেই বাড়ি চলে আসি।
আপনি কতোদিন থাকছেন দেশে? যদি সম্ভব হয় একটা কল দিয়েন। আমি অবশ্য খুলনায় আছি জানুয়ারী ২০১৩'র প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত, ওয়ার্কিং ফ্রম হোম এবং খন্ডকালীন ছুটি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনি খুব খারাপ একজন মানুষ। খুবই খারাপ। অনেকটা পড়ন্তবেলার শচীনের মতো। এত দেরী করে করে এরকম মহাকাব্যিক ইনিংস খেললে আমাদের মতো দর্শকগুলোর কি অবস্থা হয় আপনি বোঝেন সেটা? আপনাকে ৭ দিনের ফাঁসী দেয়া উচিৎ।
স্বাগতম আপনার স্মৃতির শহরে। অসম্ভব মায়া, আদর আর ভালোবাসায় আপনাকে বুকে জড়িয়ে রাখুক পুরোটা সময়।
ফারাসাত
ঢাকার আসলে অন্যরকম একটা মজা আছে। প্রথম যখন ঢাকায় আসি, ফেলে আসা রাজশাহীর জন্য সবসময় মন কেমন করত। তারপর একটু একটু করে ঢাকাকে ভালবাসলাম। ঢাকাও যে কখন আমার এত আপন হয়ে গেছে টের পাইনি। এই শহরটা বড্ডও বেশি টানে এখন।
লেখার কথা আর নাইবা বললাম। এমন মন কেমন করা লিখা খুব কম মানুষই লিখতে পারে।
ভালভাবে ঘুরে আসুন আপনার স্মৃতির শহর থেকে।
শুভ জন্মদিন প্রিয় তাসনীম ভাই।
আমি ঢাকা শহরে থেকেই মনের মধ্যে শহরটাকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট অনুভব করি।
স্মৃতির শহরে বেড়াতে এসে পুরনো স্মৃতিগুলো নতুন করে খুঁজে নিন।
ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।
আপনার লেখার জন্য প্রতীক্ষায় থাকি। লেখা পড়ার পর বাড়বরই কিছুক্ষন থম ধরে থাকি । স্বাগতম স্মৃতির শহরে।
আসুন। যাত্রা শুভ হোক।
যারাই দেশে যায়--তাদের সবার জন্যে বুকে বিশুদ্ধ হিংসা পুষে রাখি
আপনার জন্যেও রাখলাম
এই মুহুর্তে আপনি আমার ভীষন অপছন্দের মানুষ---
ভিন্ন প্রসঙ্গ-একঃ শুভ জন্মদিন
ভিন্ন প্রসঙ্গ-দুইঃ স্বদেশ যাত্রা শুভ হোক
সুস্থ ভাবে ফিরে আসেন দেশে সেই কামনাই করি। আপনার লেখার দারুণ ভক্ত আমি। কাজেই লেখার মিষ্টি মধুরতা নিয়ে বলার কিছু নেই।
আহা কত সুন্দর করে স্মৃতির শহরের বর্ণনা। অসাধারণ তাসনীম ভাই।
একটা মন্তব্য করার জন্য বসলাম। মিনিট দশেক পর খেয়াল হল এতক্ষণ যেন ঢাকায় থাকা আমার ২৬টা বছরের বিভিন্ন স্মৃতি মুভির ট্রেইলারের মতন দেখলাম।
শিকড় ঢাকাতেই। কিছু সময়ের জন্য এখানে আছি মাত্র।
স্বদেশ যাত্রা আনন্দময় হোক
তবু মাঝে মাঝে কেন জানি নিজের কাছ থেকে পালাতে ইচ্ছে করে!
আমার খুব কস্ট লাগে যখন দেখি এ শহরটাকে অনেকেই নিজের ভাবেনা - নানা তাগিদে নানা জায়গা থেকে মানুষেরা এসে ব্যবহার শেষে ছুড়ে ফেলে দেয় শহরটাকে - পাড়ার ছেলেপিলে মিলে একবার নিজেরাই নিজেদের এলাকা পরিস্কার রাখব এমন কাজ শুরুর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে গেল - এত বিপুল সংখ্যক মানুষের অসহযোগিতায় চালু রাখা অসম্ভব ছিল - তাদের ই কয়েকজন কথা প্রসঙ্গে তাদের গ্রামের বা আসল বাড়ির পরিচ্ছনতার কথা গর্বের সাথে জানাতে ভোলেনি!
নিজের গাড়ীতে রিক্সার একটু টোকা লাগ্লে তেড়েফুড়ে বেরিয়ে আসা আবার পাব্লিক বাস এ বসে সিটের কভার ছিড়ে ফোম বের করা লোকের সংখ্যা এখন অনেক।
তবুও আমাদের, আপনার এ শহরে স্বাগতম আবারও
স্যাম
চমৎকার!
****************************************
সময়াভাবে প্রত্যেকের মন্তব্যের আলাদা জবাব দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দেশে গেলে সবার সাথে দেখা হওয়ার আশা রাখি।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমিও ধন্যবাদ নিলাম।
নিরাপদে দেশে আসেন।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দেশে এসে তারপর তো খোঁজ-খবর নাই, তাস্নীম ভাই আওয়াজ দেন - একটা আড্ডা হয়ে যাক ঢাকায়।
চোখ ভরে গেছে এই লেখাটা পড়ে! আমি জানি না ভাইয়া আপনার সেই স্মৃতির শহর কেমন ছিল তবে আমার শহর এখনো প্রাণের শহর আছে। ধুলো পরা, ময়লা, এলোমেলো একটা শহর হয়ত। তবে প্রাণ প্রাচুর্য্যে ভরা একটা শহর। এখানে প্রত্যেকদিন আমরা বাঁচার মত করে বাঁচি। আনন্দ বেদনা নিয়ে বাঁচি। ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াই না বেশির ভাগ। রাস্তার পাশে এক কাপ চা নিয়ে বসে বসে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে যাওয়া গাড়ি দেখাও এখানে আনন্দের!
মন ছুঁয়ে গেছে এই অংশটা! পরিবার নিয়ে আসুন ভাইয়া আমরা দেশে যারা আছি আপনার স্মৃতির শহরে আমরা আর কিছু না পারি ভালবাসা, আন্তরিকতা, প্রাণের ছোঁয়ায় বরণ করে নেবো আপনাদের। আশা করি খুব চমৎকার স্মৃতিময় সময় কাটবে আপনার।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
খুব গভীরে কোথাও ছুঁয়ে গেল লেখাটা। শহরেরও যে প্রাণ আছে, এটা একদম সত্য। আমি নিজেও বিশ্বাস করি এটা। মাঝে মাঝে অনুভবও করি। ঢাকা আমার শেকড় না। তবে অনেক বছর হলো এখানে আছি। ভেতরে একটা টান ঠিকই বোধ করি। যাই হোক, অনেক বছর পর এই শহরের সাথে আবার দেখা হবে আপনার। আশা করি সে স্মৃতি আনন্দময় হবে।
এমিল ভাই,
আমার মনে হয় ঢাকা শহরটা আগের মতোই নিজের আমেজ নিয়ে ছুটে চলেছে জীবনের পানে। আজো কোন এক কিশোর ঢাকাকে সেই আঙ্গিকেই দেখে যে আঙ্গিকে ২৫ বছের আগে আরেক কিশোর এমিল দেখেছিল। তবে সমস্যা হলো গত ২৫ বছরে এমিলের দেখার চোখ পাল্টে গেছে অনেক।
কিশোর এমিল যখন এলিফ্যান্ট রোড আর ফার্মগেট দেখতো তখনো তার চোখে ভ্যানকুভার, অস্টিন আর সাউথ ডেকোটার ঘোর লাগে নি। ২৫ বছর আগে ময়লা আবর্জনা পেরিয়ে শীর্ণ নদীর মতো ড্রেনকে একপাশে রেখে এলিফ্যান্ট রোড থেকে ফার্মগেট যাওয়া ছিলো এমিলের জন্য নিত্যদিনকার ব্যাপার। তা-ই আবর্জনার স্তূপ, আর ড্রেনের নোংরা পানিকে এমিলের কাছে কখনো অস্বাভাবিক লাগেনি। আজ ২৫ বছর পর তিলোত্তমা (!) ঢাকা সে-ই তিলোত্তমাই রয়ে গেছে শুধু এমিলের চোখ তিলোত্তমার নতুন (এবং প্রকৃত) অর্থ খুঁজে পেয়েছে। তা-ই এমিল তার ফেলে যাওয়া ঢাকা আর খুঁজে পায় না।
নতুন মন্তব্য করুন