এই গল্পের সাথে দুটো ছবি আছে। প্রথমটি প্রায় কিশোরী একজন মেয়ের, ১৮/১৯ বছর বয়েসি। পঞ্চাশের দশকের। সেই সময়ে সম্ভবত এই বয়েসি মেয়েদের স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলতে হতো। কারণটা অনুমান করা খুব কঠিন কিছু না। স্টুডিওর লোকজনকে হয়ত কিছুই বলতে হতো না। ওরা হয়ত এই বয়েসি মেয়েদেরকে দেখলেই জানতো কিভাবে ছবি তুলতে হবে। এই একই ভঙ্গিমাতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো অনেকের ছবি আমি দেখেছি - এটা প্রায় সবারই সংগ্রহে থাকা বিয়ের আগে তোলা একমাত্র ছবি।
আমারও সংগ্রহে থাকা আমার মায়ের এই ছবিটা তাঁর সবচেয়ে তরুণী বয়েসের। তাঁকে সবাই রুবী বলে ডাকে, এই মেয়েটি তুখোড় ছাত্রী, সবার আশা আছে একদিন খুব বড় কিছু করে ফেলবে। তাঁর দাঁড়ানোতেও সেই আত্মবিশ্বাস আর প্রত্যয় আছে।
দ্বিতীয় ছবিটি হাসিখুশি এক বৃদ্ধার। তাঁর বয়েস প্রায় আশি। হাসপাতাল থেকে সদ্য ফিরেছেন। তাঁকে সবাই রোকেয়া সুলতানা নামে চেনে। প্রথম ছবিতে রুবী নামের মেয়েটিকে দ্বিতীয় ছবিতে খুঁজলে কি আর পাওয়া যায়? জানি না। পাশে দুই নাতনীকে নিয়ে ছবি তুলছেন। আর বছর দশেক পরে এক নাতনী তাঁর প্রথম ছবির বয়েসকে ছুঁয়ে ফেলবে।
সময়ের ট্রেন দ্রুতগামী - সেই ইন্দ্রজালে পাশাপাশি থাকা দুটো ছবির মধ্যে লুকিয়ে আছে ষাট বছরের জীবন। দ্বিতীয় ছবিটা আমার সংগ্রহে থাকা আমার মায়ের সুস্থ অবস্থায় তোলা শেষ ছবিগুলোর একটা। এর মাত্র সাত মাস পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। বলা যায় এই দুটো ছবির ব্র্যাকেটের ভেতরেই যেন কাটিয়ে দিয়েছেন পুরো জীবন, আত্মপ্রত্যয় আর দৃঢ়তা নিয়ে যেই জীবন শুরু করেছিলেন – হাসিমুখ নিয়েই সেই জীবনের কিনারাতে এসে দাঁড়িয়েছেন।
শামসুর রাহমান “কখনো আমার মাকে” নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। আমি মনে করি এই একটি কবিতা লিখলেই তিনি হয়ত অমরত্ব পেয়ে যেতেন। যখন আমার মায়ের কথা মনে পড়ে, ভেতরে কোথাও যেন এই কবিতাটি পাঠ হয় - এই ছবিগুলোর ভেতরেই যেন সেই কবিতাটা দেখতে পাই।
কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।
সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে
আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।
।।২।।
আমার মা গান জানতেন না। বাস্তবিকই আমি তাঁকে কোনদিন গান গাইতে শুনিনি। গানের গলা বা সুর কোনটাই তাঁর ছিল না।আমার শৈশবের স্মৃতির বারান্দায় দাঁড়ালে অনেক কিছুই দেখতে পাই। দোতলা একটা বাড়ি, সামনে হলুদ অ্যালামেন্ডা, গন্ধরাজ, রঙ্গন, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতি, নারিকেল গাছের সারি, অলস লম্বা একটা বিকেল, রান্নাঘর থেকে আসা রেশমি ধোঁয়া, দূরের কোলাহল, পুরনো আসবাব, একটা রেকর্ড প্লেয়ারে চিন্ময়ের গান। সব কিছুইতেই ধূলো আর ময়লা পড়লেও আমার শৈশব এখনো রয়ে গেছে ইস্পাতের মতো চকচকে। সেই রেকর্ড প্লেয়ারে বাজা গানের সাথে গলা মিলিয়েছিলেন কী? আমার মনে পড়ে না।
আমার মা নেপথ্যচারিণী ছিলেন না। বরং ঠিক ছিলেন তার উলটো। আমাদের সংসারের প্রতিটি বিভাগ ছিল তাঁর দায়িত্বে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কাজের লোককে বাজারের পয়সা হাতে দিয়ে দিনের কাজ আর রান্না-বান্না সব বুঝিয়ে দিতেন। বিকেলে অফিস থেকে ফিরে সামান্য কিছু খেয়ে গল্পের একটা বই নিয়ে শুয়ে পড়তেন বিছানাতে, বিকেলে চা-নাস্তা, বাজারের হিসেব, সংসারের ভেঙে পড়া বাজেট সামাল দেওয়া, সন্তানদের পড়াশোনার তদারকি, টিভির নিউজ, সামনের দিনটির জন্য প্রস্তুতি। কোথাও কোন বাহুল্য নেই, অপচয় নেই, ভ্যাকেশন নেই, অন্তহীন কর্মময় জীবন – ছুটির দিনে বিচিত্রার পাতাতে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন পাঠই যেন জীবনের একমাত্র বিনোদন। মাঝে মাঝে নেপথ্য সঙ্গীতের মতো বেজে ওঠা রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া আর কোথাও গান শুনতে পাই না।
মিলটা কোথায় এখনো ধরতে পারি নি – তবুও কেন যেন নিচের লাইনগুলো পড়লে আমার মায়ের কথা মনে পড়বেই।
যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,
যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো
বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান
লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,
পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর
সংসারেও এসেও মা আমার সারাক্ষণ
ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর
জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল
কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে
অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন
ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন
সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,
ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে
আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে
অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না
এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।
।।৩।।
আমি দেশ ছেড়েছি অনেকদিন। শুধু আমি একা নই – তাঁর আরেক সন্তানও প্রবাসী হয়েছে। প্রবাসের ব্যস্ততা আমাদের গ্রাস করেছে ভীষণভাবে। আমি নিজেকে নিয়ে ভাবিত হয়েছি, নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবিত হয়েছি, নিজের স্বদেশকে নিয়ে ভেবেছি, নিজের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের নিয়ে ভেবেছি, নিজের পাল্টানো শহর নিয়ে ভেবেছি, আন্তজার্তিক সমস্যা নিয়ে ভেবেছি, ইমিগ্রেশন আইন নিয়ে ভেবেছি - কিন্তু তাঁকে নিয়ে ভাববার সময় হয় নি। তাঁর সাথে বসে দু'দণ্ড কথা বলার ফুসরত পাই নি। হঠাৎ যেন আমার জীবনের নাটকের এক সময়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র – পালটে হয়ে গেল পার্শ্ব-চরিত্র, যাঁকে মাঝে মাঝে দেখা যায় দুই একটা দৃশ্যে। এই বিশাল পৃথিবীতে আমি একাই চলছি, ভূতের ভয়ে রাতের বেলা আর কারো কাছে যেতে হচ্ছে না, সকাল বিকাল নিজেই অফিস করছি - স্কুল শেষে আর কারো সাথে মিরপুর রোড ধরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি গিয়ে রিকশা ধরার প্রয়োজন নেই, খেলনার দাম এতো কেন – এই প্রশ্নের আর প্রয়োজন নেই – আমি নিজেই আজ হয়ত নিজের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি। সম্ভবত হারিয়ে যাওয়া সময়ের মতো আমিও তাঁর কাছ থেকে হারিয়ে গেছি, দূরে কোথাও।
কিন্তু কবিতাটার শেষ লাইনগুলো মনে হয় তাঁকে নিয়েই লেখা। হয়ত কোথাও কোন গান লুকানো ছিল। জানা হয়নি। গানগুলো তিনি যেন লুকিয়ে রেখেছিলেন – হয়ত আশা ছিল একদিন আমি সেই সুরগুলো খুঁজে পাবো।
তার বদলে ন্যাপথালিনের গন্ধ নিয়ে কেটে যাবে বাকিটা জীবন।
যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে
রেখেছেন বন্ধ ক'রে আজীবন, কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে!
মন্তব্য
আমার কাছে সুপার উইম্যান শব্দের মানে আমার মা।
বরাবরের মতোই চমৎকার লেখা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অনেকদিন সচলে ঢোকা হয় না। আপনার লেখা দেখে চট করে ঢুকে পড়লাম। বরাবরের মতই মন খারাপ করে দিলেন। আপনার মায়ের সাথে আপনার চেহারার অদ্ভুদ মিল।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চমৎকার লেখা।
অনেক সুন্দর লেখা।
৫ তারা। আর নৈ:শব্দ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মাসুদ সজীব
মন খারাপ করা লেখা।
"সময়ের ট্রেন দ্রুতগামী " কিন্তু নিজেকে এক সময় পার্শ্বচরিত্রে ভাবতেই বিষণ্ণ হয়ে যাচ্ছি।
অসাধারণ! এই কবিতাটাও বহুদিন বাদে আবার পড়া হলো।
আপনার লেখা নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই...
অলমিতি বিস্তারেণ
'আব্বু- আম্মু'-কে নিয়ে লেখা মোটামোটি অসম্ভব একটা কাজ! আছেন যখন তখনো কলম (বা কী বোর্ড) থেমে থাকে- কী লিখি কী লিখি মনে হয়- যখন না থাকেন, তখন শব্দ ঝাপসা হয়ে আসে। শেষটায় এসে সে বাষ্পটুকু টের পেলাম লেখায়!
যেখানেই থাকুন তিনি, ভাল থাকুন।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
অসাধারণ দুটি ছবি।
--
কচু পাতা
মায়ের কথা এতো সুন্দর আর মন ছুঁয়ে যাওয়া, অসাধারণ!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমার বাবার কথা মনে পরে গেল ১৫ বছর আগে আজকের দিনে তিনি আমাদের রেখে চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে
রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা আছে এরকম,
মনে-পড়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে
একটা কি সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে।
মা বুঝি গান গাইত আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে-
মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে।
মাকে আমার পড়েনা মনে।
শুধু যখন আশ্বিনেতে ভোরে শিউলিবনে
শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে ফুলের গন্ধ আসে
তখন কেন মায়ের কথা আমার মনে ভাসে।
কবে বুঝি আনত মা সেই ফুলের সাজি বয়ে-
পূজোর গন্ধ আসে যে তাই মায়ের গন্ধ হয়ে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে,
জানলা থেকে তাকাই দূরে নীল আকাশের দিকে-
মনে হয় মা আমার পানে চাইছে অনিমিখে।
কোলের পরে ধরে কবে দেখত আমায় চেয়ে,
সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
রবীন্দ্রনাথের এই 'মনে পড়া' কবিতাটি নিয়ে মুজতবা আলীর ভবঘুরে বইয়ে একটা দারুণ উল্লেখ আছে। মুজতবা আলী জার্মানের কোনো এক গ্রামের এক মাতৃহারা কিশোরীকে কবিতাটি জার্মান ভাষায় তরজমা করে শোনায়। এরপর মেয়েটির মুখচ্ছবি দেখে লেখক কিছুটা অনুশোচনা বোধ করেন এবং মনে মনে বলেন- গুরুজি এই মেয়েটিকে এখন এভাবে দেখলে হয়তো তাঁর কবিতার বই থেকে 'মনে পড়া' কবিতাটি অপসারন করতেন।
"সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে"- এমন একটা লাইনের মর্ম শুধু তারাই সম্পূর্ণ রুপে বুঝবে যাদের মায়েরা বেঁচে নেই।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
চমৎকার একটি ঘটনা জানলাম, ধন্যবাদ।
এ লেখাটিও মন ছুঁয়ে যায়।।।
তাসনীম ভাই, অসাধারণ লেখা হয়েছে।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
খুব প্রিয়!
অতি আশ্চর্যজনক ভাবে আর কিছুক্ষন পরেই আমি বাড়ীর দিকে রওনা দিবো, ওখানে আমার মা থাকেন। ছুটি নিলাম কাল।
লেখাটা পড়ে মনখারাপ হয়ে গেলো। আর 'মনে পড়া' কবিতাটা পড়ে আমার রীতিমতন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অফিসে তো, মনের ভাব প্রকাশ করাটাও কষ্টসাধ্য
...
বেশ কদিন আমার মা কে ব্যাস্ততার কারনে ফোন দেয়া হয়নি । আজ আপনার লেখা পড়তে পড়তে ফোন দিয়েছি আর ভেতর ঠেকে কেন জানি হু হু করে অজানা এক কান্নায় হৃদয় শিক্ত হয়েছে। আনমনে আর অনেক কিছু ভুলে গেলেও আপনার লেখা পড়ে মা কে মনে পড়বেই।
লেখার জন্য আপনাকে স্যালুট আর শ্রদ্ধা তাসনীম ভাই। ভালো থাকবেন সব সময়।
লেখাটা পড়ে কারো মন খারাপ হবে, কারো মন ভালো হবে। যারা মায়ের কাছ থেকে দূরে তারা কাঁদবে। আমি এখনো ভাগ্যবান আমি মায়ের কাছে থাকি। তাই আমার মনটা খুব ভালো হয়ে গেল এই সুন্দর লেখাটা পড়ে।
শিরোনামটা দেখে পুরোনো একটা জিনিস মনে পড়ে গেল- আমার সবচেয়ে ছোট বোনটা ছেলেবেলায় 'কখনো আমার মাকে' এই কবিতাটা শুনতে পারতো না, আমরা এই কবিতার প্রথম লাইনটা শুনলেই কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলতো।
মায়ের জন্য অনেক শ্রদ্ধা! নাতনিদ্বয়কে অনেক আদর।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বিধাতার শেষ্ট্র উপহার মা । লেখাটি অনেক ভালো লাগল।
কিছু বলার নেই...
আমার মা প্রবাসী, কতোদিন দেখি না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অনেক দিন পর একটা মন ছোঁয়া লেখা পড়লাম। আমার মা ও সাংসারিক সব কাজ শেষ করে অফিস যেতেন। ফিরে এসে গল্পের বই নিয়ে বসতেন সবার শেষে।তবে মা গুন গুন করতেন প্রায়ই। আজকাল রেডিও শুনতে খুব পছন্দ করেন।এমনকি সিডি প্লেয়ার দিয়ে গান শুনছেন।আমি আমার মা এর এই আনন্দটুকু উপভোগ করি সুদূরে থেকে। যদিও তার কাছে গিয়ে তার আনন্দ নিজের চোখে দেখা হয় না অনেক দিন.
শিশির অশ্রু
আপনার মা একজন অসাধারণ মা ছিলেন।
মা'কে নিয়ে আপনার লেখাটা খুব খুব ভালো লাগছে।
আত্মপ্রত্যয়ী সেই তরুণীটির পরিনত বয়সের হাসিখুশি মাখা ছবিটি দেখে বড় ভাল লাগলো। কামনা করি, সবাই যেন জীবনের অনিবার্য গন্তব্যে পর্যন্ত এরকম হাসিখুশী জীবন অতিবাহিত করে যেতে পারেন।
কখনও দেখিনি, কিন্তু আপনার সাথে পরিচয়ের সুবাদেই জানি কী চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন উনি।
আপনার লেখাটা বরাবরের মতোই ছুঁয়ে গেল।
মাকে মিস করি খুব। সারাদিনের কতশত গল্প, ফোনে কি আর অত স্বতঃস্ফূর্ত গল্প হয়?
লেখা নিয়ে আর কি বলবো! মাকে নিয়ে যেকোন লেখা পড়লেই কোথায় যেন একটা চিনচিনে ব্যাথা হয়। মাকে ছাড়া জীবন কল্পনাই করতে পারি না। ছবি দু'টো অসম্ভব সুন্দর
মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে
এই কবিতাটা পড়ার সময় একটা অদ্ভূত অনুভূতি হতো। চোখে ভাসতো দূরের কোন বিস্তীর্ণ দুর্গম অঞ্চল, আর অভিযাত্রী হয়ে আমি আর আমার মা।
আজকে আমি বিদেশ চলে এসেছি ঠিকই, কিন্তু মাকে সাথে করে নিয়ে আসতে পারি নি। ব্যস্ত হয়ে গেছি, মাসে ক'বার কথা হয় হাতে গুনে বলে দেয়া যায়।
মন খারাপ হয়ে গেলো..........................
অসাধারণ!
সবাইকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চমৎকার লেখা!
মায়েদের জগত-টাই অদ্ভুত! কতো অল্পতেই এরা খুশী, জীবন থেকে অল্পই চাওয়া তারও কম পাওয়া। তবু তাঁরা সুখী আমাদের পেতে দেখেই। 'মনে-পড়া' কবিতাটা পড়ে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে, মা থাকবে না একদিন, এটা ভাবলেই বুকটা কেঁপে উঠে। তবু 'ভালোবাসি' নামক ছোট্ট শব্দ-টা কখনোই বলা হয়ে উঠে না একবার মাকে জড়িয়ে ধরে।
- শ্রাবস্তী
অসাধারন লিখলেন তাসনীম ভাই।
আমার মার খুব অল্প বয়েসে বিয়ে হয়, ২৩ বছরেই উনার শেষ সন্তানের জন্ম হয়। আমার সাথে মার সম্পর্ক বন্ধুর মতো। ছোট বেলায় মাকে সবসময় গুন গুন করে গান করতে শুনেছি। একবার ক্লাস ফাইভ এ পড়ার সময় মার গানের খাতা নিয়ে গিয়ে স্কুলের ফাংশনে আকাশের ওই মিটিমিটি তারার সাথে কইব কথা গানটি গেয়েছিলাম। যদিও আমার গলায় সুর নেই, কিন্তু মার গলায় সুন্দর সুর ছিল।
কাল রাতেই মার সাথে অনেকক্ষন কথা হল। আমি দুই তিন পর পরই কথা বলি। বাবা মা বেঁচে থাকতে মনে হয় কখনো চিন্তা করা যায় না উনারা একসময় থাকবেন না। আপনার দুই মেয়েই এখন আপনার মা। ভাল থাকুন, মার জন্যে দোয়া করছি।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মন খারাপ লাগছে।মাকে মিস করছি।
মা!
আমার মা-কে নিয়ে আমার একটি লেখা ছিলো, কিছুটা অপ্রাসংগিকভাবেই লিঙ্কটা এখানে দিলাম। আসলে আপনার লেখা পড়ে আমারো লিখতে ইচ্ছে করছিলো- কিন্তু পুরানো লেখা সচলায়তনে দেওয়া যায় না, তাই এখানে দিলাম। আশাকরি স্পামিং- এর অভিযোগে অভিযুক্ত হবো না ।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
নতুন মন্তব্য করুন