দেশে যেতে আমার খুব ভালো লাগে।
যখন বাংলাদেশে থাকতাম তখন দেশের বাড়ি বলতে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িটাকে বুঝাতাম। আমাদের বন্ধুদের একেক জনের দেশের বাড়ি ছিল একেক জায়গাতে। কারও বাড়ি বরিশালে, কেউ সিলেটের, কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে, মনে হতো যেন বাংলাদেশটা এক বিশাল জায়গা, কত হাজার হাজার চেনা - অচেনা নাম। বিদেশে গমনের পরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, এইখানে সব বাংলাদেশির একটাই দেশ। কেউ যখন বলে যে সে দেশে যাচ্ছে - তখন বুঝতে হয় সে বাংলাদেশে যাচ্ছে, সেটা ঝালকাঠি না-কি মানিকগঞ্জ সেই প্রশ্ন পুরোই অবান্তর। আমরা যেই দিন মঙ্গলগ্রহে বসত গড়ব সেই দিন হয়ত দেশে যাওয়ার মানে হবে পৃথিবীর কোন এক জায়গা, সেটা সাংহাইও হতে পারে আবার রোমও হতে পারে।
যেটা বলছিলাম, দেশে যেতে আমার বেশ লাগে। প্লেনের টিকেট কাটার পরেই আমি বেশ উত্তেজনা বোধ করি, ক্যালেন্ডার দেখে বের করে নেই আর কতোদিন বাকি আছে। ফেসবুক থেকে বের করি ঢাকাতে আর নতুন কি খাবারের জায়গা তৈরি হলো। ৬০...৫০...৪০...২০...১০...৯...৮...৩ দেখতে দেখতে দিনটা ঘনিয়ে আসে, স্যুটকেস টুটকেস গুছিয়ে গাড়িতে উঠে বসি।
পয়সা বাঁচানোর জন্য আমরা হিউস্টন থেকে প্লেন ধরি। প্রায় তিন ঘন্টার পথ। টেক্সাসে শহর এলাকা ছাড়া প্রায় জনশূন্য থাকে পথ-ঘাট। পথটা আমি খুব উপভোগ করি। শুরুতেই একটা ডিসপ্লে বোর্ড - তাতে লেখা - এই বছর টেক্সাসের রাস্তায় ২৮৯৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সুতরাং খুউউউব খিয়াল কৈরা...একটু পরেই চারিদিকের ভিড়ভাট্টা একটু কমে আসে, পেছনে হেলে পড়ে কমলাটে সূর্য...ছোট একটা বনভূমি, ফাঁকা সবুজ মাঠ, নিঃসঙ্গ কিছু গাছ, পুকুর, ডোবা, আধমরা কয়েকটা নদী, নির্জনে তিনটা খেজুর গাছওয়ালা একটা গ্যাস স্টেশন যেটার নাম আমি দিয়েছি সৌদি আরব। ধীরে ধীরে আমি বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে চলি। আমার শৈশবের বন্ধুরা ফিরে আসে সন্ধ্যের মুখে, মাগরিবের আগে ঘরে ফেরার তাড়া নেই কারো। ওদের কারও মুখে আর কাঁচাপাকা দাঁড়ি নেই - হাঁটুর ব্যথা অদৃশ্য, যেন বছরের শেষ পরীক্ষা দিয়ে ওরা সবাই চলছে আইসক্রিম খেতে। পেছনে ফেলে আসা স্কুলের ঘরটাও আমি পরিস্কার দেখতে পাই, অলৌকিক এক গাড়ি চালিয়ে যেন আমি সময়ের স্রোতের বিপরীতে চলছি।
।।২।।
ঢাকাতে নামলে আমার ঘোর কেটে যায়। বিমানবন্দরটা এখন বেশ আরামদায়ক মনে হয়, মালপত্র হারানো বা কাস্টমসের হয়রানি অথবা ভিখারির উৎপাত, কোনটাই হয়নি কখনো। তারপরও কেন যেন বিমানবন্দর থেকে বের হলেই মনে হয় শহরটা যেন আরেকটু দুঃখী দুঃখী হয়ে গেছে। এইবার যেই সময়ে পৌঁছেছি সেই সময়টা বেশ জটিল। বিএনপি আর জামাতের অবরোধ, হরতাল, বাসে আগুন আর বোমা হামলা চলছে। আমি দেশে ফিরেছি শুক্রবারে - যাতে হরতালের আওতার বাইরে থাকা যায়। আর দেশ ছাড়বো বড়দিনের দিন - আশা আছে ওই দিনেও কেউ হরতাল বা অবরোধ ডাকবে না। নামার পরে জানলাম যে আমি প্লেনে থাকতে থাকতেই শাহবাগের কাছে বাসে আগুন দিয়ে নয়জন মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
ছুটির দিনের তুলনায় রাস্তায় ভিড় কিছুটা বেশি যদিও অনেক সকাল। জানলাম যে স্কুলের পরীক্ষা শুধু মাত্র শুক্রবারে নেওয়া হয় হরতালে উৎপাতে, সারা সপ্তাহের সব কাজ শুক্রবার সারতে হয় মানুষকে, একটু বেলা বাড়লেই প্রচুর জ্যাম হয়ে যাবে। সেই অবস্থায় পৌঁছানোর আগেই আমি বাড়ি ফিরে ঘুম দিলাম।
ঢাকা শহরে মানুষের ঘুরে বেড়ানোর জায়গার খুবই অভাব। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে তাই বিকেল বেলাতে মানুষের ঢল নামে। আমিও সামিল হলাম সেই ঢলে। আগে এক সময় সন্ধ্যার পরে লেকের পাড় খুব নির্জন জায়গা ছিল। কিন্তু এখন গিজগিজ করে মানুষ, কাবাবের দোকান, চটপটি ফুচকা, পিঠা, অনুষ্ঠান এক জমজমাট ব্যাপার। সবুজ গালিচার মতো ঘাস আর গজানোর সুযোগ পায় না। আমি উদ্দেশ্যবিহীন ঘুরে বেড়ালাম ধানমন্ডির রাস্তায়। প্রতিটি রাস্তাতেই উঁচু অট্টালিকা, অন্যান্য দিনে অবরোধ থাকার কারনেই হয়ত সবখানেই প্রচুর মানুষ।
ধূসর সেই সন্ধ্যাবেলায় আমি আমার সেই দেশটাকে আমি খুঁজে পাই না।
।।৩।।
'এই যে ভাই সিএনজি - হাতিরঝিল যাবেন?'
ছুটির দিন শেষে আবারও হরতাল শুরু হয়ে গেছে। রাস্তায় রিকশা আছে, সিএনজি আছে, কিছু বাস আছে কিন্তু কোন প্রাইভেট গাড়ি নেই। নতুন ধরনের কিছু রিকশা দেখতে পেলাম, যেগুলোর নিচে মোটর লাগানো, অর্থাৎ কষ্ট করে প্যাডেল মারতে হবে না। কিন্তু ওইগুলোর গতি আর চালানোর ধরন দেখে মনে হলো যে ওরা ট্র্যাফিক আইন অমান্য তো করেই, পারলে পদার্থবিদ্যার নিয়মও ভঙ্গ করে ফেলবে। উঠতে সাহস হলো না। পরে একবার সাহস করে উঠেছিলাম, জিনিসটা বেশ ভীতিপ্রদ।
'যামু...১৫০ টাকা দিতে হবে'
ধানমন্ডি থেকে হাতিরঝিল কত ভাড়া হওয়া উচিত সেটা ঢাকায় আসার দুই দিন পরে টের পাওয়া যায় না। মার্কিন দেশ থেকে নিজের দেশে নামার পর আমি দেখেছি যে প্রথম সাতদিন সবার মনটাই বেশ নরম থাকে, তাছাড়া সব কিছু আশি দিয়ে ভাগ করলে কম কম লাগে। কিন্তু দুই তিন সপ্তাহ পরে সিএনজিওয়ালাদের হাঁকা ভাড়া মর্ম মূলে ছুরির মতো বিঁধে।
দেড়শ টাকা একটু বেশিই মনে হচ্ছিল। ঠিক আছে...বলে আমি উঠে পড়লাম। কিন্তু উঠার পরেই একটু ভয় ভয় লাগলো।
'আচ্ছা ভাই সিএনজিতে কি বোম-টোম মারে?'
'জ্বি, দেশের যা অবস্থা, এখন মারতেই মারে...' আমি আগেও দেখেছি যে যারা সিএনজি, রিকশা বা ট্যাক্সি চালায়, তাদের বেশ রাজনৈতিক সচেতনতা আর কিছুটা দার্শনিকতা থাকে। আলাপ করার জন্য এর বেশ ভাল সঙ্গী। এদের কাছে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার গল্প শোনা যায়। আমি একটু চিন্তায় পড়লাম। সিএনজি তো খাঁচার মতো, আগুন দিলে বের হবো কিভাবে?
উপায়টা সিএনজিওয়ালাই বাতলে দিল। তার পরামর্শ মতো খাঁচার দরজাটা আমি আঙ্গুল দিয়ে ধরে রইলাম, উল্টোপাল্টা কিছু হলে লক খুলতে হবে না, দ্রুত এক লাফ দিয়ে নেমে পড়া যাবে। আমার বোমার ভয় চলে গেল। একটু একটু ভালো লাগা শুরু করে। ডিসেম্বরের সকালের বাতাস একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা। সিএনজির খাঁচাটাও মন্দ লাগছে না। দেশে আসার আগে অনেকেই নানান ভয় দেখিয়েছে। আমার ভয়টা একদমই চলে গেল। অবরোধের মধ্যে রিকশা বা সিএনজিতে করে গন্তব্যে যেতে একদমই কম সময় লাগে। ঢাকা যে আসলে খুব বড় শহর নয় সেটা বোঝা যায়।
হাতিরঝিলের এই ঝিলটাকেই আমরা বেগুনবাড়ি খাল বলতাম। খালের চেয়ে ঝিল বেশি সম্মানের পরিচয়, সম্ভবত লেক আরেকটু বেশি সম্মানের। পায়ে হেঁটে একটু ঘুরে বুঝতে পারলাম জায়গাটার আসলেই অনেক উন্নতি হয়েছে। চারিদিক বেশ ঝকঝক করছে। অবরোধ অধ্যুষিত প্রায় খালি রাস্তা ঘাটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি অনেকদিন পরে আমার সেই দেশটাকে দেখলাম...হঠাৎ যেন হারানো বাল্যবন্ধুর মতো সে উদয় হয়।
।।৫।।
'পেয়ারাগুলতে ফরমালিন দেওয়া, ওইগুলো নিয়েন না' - ফলের দোকানের পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোক আমাকে নিষেধ করলেন।
দোকানি প্রতিবাদ করে উঠল। আমি জিজ্ঞেস করলাম - 'কিভাবে বুঝলেন ফর্মালিন দেওয়া, আমার তো ধারণা ছিল সস্তা ফলে ফর্মালিন দেয় না।'
'সস্তা দামি সব কিছুতেই ফর্মালিন, সব কিছুতেই বিষ বুঝলেন, দেখেন ফলের দোকানে একটাও মাছি নাই...দেখছেন কোনদিন খোলা ফলে মাছি বসে না?'
আমি চিন্তায় পড়ি। মাছির ব্যাপারটা ভাবিনি, তবে এটা আগেও শুনেছি। মার্কিন দেশেও সুপারমার্কেট ফলে মাছি দেখিনি, কিন্তু সেটা তো মার্কেটের ভেতর, রাস্তার পাশে বেচা ফলে মাছির উপদ্রব থাকা উচিত।
'শুনেন, ফল কিনতে পারেন, কিন্তু খাওয়ার আগে এক ঘন্টা পানিতে ভিজায়ে রাখবেন...'
'এরপর খেতে পারবো?' একটু উৎসুক হয়ে আমি জিজ্ঞেস করি।
'না, এরপরে পানিটা ফেলে দিয়ে আরো এক ঘন্টা নতুন পানিতে ফলগুলো ভিজিয়ে রাখবেন...তারপরে খাবেন...বুঝলেন মানুষ আর মানুষ নাই...সব ইয়ের বাচ্চা...ভদ্রলোক গজগজ করেন।
আমি আরও ভাবিত হই। এটা এক সময় আমার নিজের দেশ ছিল। কি কি করতে হবে সবই জানতাম। পুলিশের লাঠি, জনতার ভাংচুর, বাসের চিপাচিপি সবই কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় সেটা জানতাম। প্রায় ১৮ বছর ধরে ঘর ছাড়া, টিভি আর সংবাদপত্র ছাড়া এই দেশটা নিয়ে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। বাসে আগুন দিলে দেখি মানুষজন পেছনের জানালা দিয়ে নেমে দৌড় মারছে, এইকাজ এখন করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।
ভদ্রলোক হাঁটা দেন। ওনার অসহায়ত্ব মেশানো ক্রোধটা রয়ে যায় পেছন, হঠাৎ করেই আমার ভেতরে প্রবেশ করে সেটা।
'সব ইয়ের বাচ্চা...মানুষ আর মানুষ নাই...' আমিও হাঁটা দেই।
দেশটা আবারও অচেনা লাগে।
।।৬।।
ভোরবেলার ঢাকা দেখছি।
বিদেশ থেকে গেলে শখ করে ভোর রাতে আর উঠতে হয় না। জেট ল্যাগ বলে একটা ব্যাপার আছে। মুক্তবাজারের সৃষ্টিকর্তারা এই পৃথিবী তৈরি করলে এই দৃশ্য ফ্রি দেখা যেতো না। সকালে উঠে ক্রেডিট কার্ড চার্জ করার পরে সূর্যোদয় দেখা যেত। কিন্তু প্রকৃতি সুদখোর মহাজন না, সে প্রকৃত অর্থেই মহাজন। তার কল্যানে আর জেটল্যাগের সুবাদে সকালের সূর্যোদয় দেখা হচ্ছে। হাতিরঝিলে ভোর বেলাতেই স্বাস্থ্যসেবী মানুষের ভিড়। আমি দেখতে লাগলাম। একটু পরেই একদল মানুষ সাইকেল চালিয়ে কোথায় যেন গেলেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন, কিছুটা বিস্ময়কর। মার্কিন দেশের যেই শহরে আমি থাকি, সেই শহরের অনেক রাস্তার পাশেই বাইক লেন থাকে, বহু মানুষ সাইকেল চালিয়ে যাতায়ত করেন। এর কারণটা কিছুটা স্বাস্থ্য এবং কিছুটা পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার চেষ্টা। ঢাকাতে রাস্তাঘাটের যেই অবস্থা তাতে সাইকেল চালানো রীতিমত বিপদজ্জনক বলে মনে হয় আমার যদিও ঢাকা খুব বড় শহর নয় এবং সাইকেল আর রিকশা করে শহরের সব জায়গাতে অল্প সময়ে এবং কার্যকর ভাবে যাওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে রাস্তায় অনেক সাইকেল আরোহী দেখেছি - মেয়েরাও সাইকেল চালাচ্ছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যাতে। ঢাকাতে সাইক্লিস্টদের ক্লাব আছে অনেকগুলো।
এই শহরে প্রায় এক বছর আগে হেফাজতে ইসলাম নামে এক উগ্রবাদী সংগঠন মধ্যযুগে ফিরে যাওয়ার দাবী দাওয়া নিয়ে তাণ্ডব করেছে। দেশের সর্ববৃহৎ বিরোধীদল তাদের সমর্থনে ছিল - যদিও অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন কোন বোধশক্তিওয়ালা মানুষ হেফাজতে ইসলামের দাবি সমর্থন করতে পারে বলে আমার ধারনা ছিল না। কিন্তু মানুষের মূর্খতা প্রতিবারই আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য শয়তানের সাথে কোলাকুলি করাও মনে হয় জায়েজ। হেফাজতের তান্ডবের পরে জামাতের অবরোধ আর খুনোখুনি আন্দোলন হয়েছে। সেটা দমনের সময়ে মানবতা আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনেছি। মানবতার অর্থ বদলে গেছে - এর বর্তমান মানে হচ্ছে "পুলিশ কর্তৃক মৌলবাদিদের অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, ভাংচুর, হত্যা প্রতিরোধের সময়ে যেই অনুভূতি আক্রান্ত হয় সেই অনুভূতিকে বলে মানবতা"। মৌলবাদীদের মানুষ হত্যা, আগুন দেওয়া, রগ কাটা, চল্লিশ বছর ধরে চলে আসা জবাই - এই সব কিছুতেই অনুভূতিশূন্য থাকা যায়। মানবতা এখন ওয়ানওয়ে রোড।
প্রত্যাশাহীন ভাবেই দেশে এসেছিলাম। বলা যায় কিছুটা ক্ষোভ আর ক্রোধ ছিল। কিন্তু সকালবেলাতে ছেলে মেয়েদের একসাথে সাইকেল চালানো দেখে ভালো লাগলো। দিনের পর দিন টিভির বা পত্রিকার খবরে যতখানি দেশকে দেখতে পাই, মগবাজারের এই ছোট বারান্দা থেকে এক চিলতে হাতিরঝিলে তার চেয়ে অনেক বড় একটা দেশ দেখতে পেলাম। এই পরিবেশদূষণ মুখর শহরেও সকাল আসে নিজস্ব নিয়মে তার আপন সৌন্দর্য নিয়ে।
তখনো কুহেলীজালে,
সখা, তরুণী উষার ভালে
শিশিরে শিশিরে অরুণমালিকা উঠিতেছে ছলোছলি...
আমার ভালো লাগে। সেই শহর কানে কানে বলে - আমি হারিয়ে যাই নি বরং তুমিই হয়তো হারিয়ে গেছ।
একটু পরেই আকাশে চক্রাকারে একদল পায়রাকে উড়তে দেখলাম। এর পরে ভালো মতো লক্ষ্য করে দেখেছি, ঢাকার আকাশে প্রায়ই পায়রা দেখা যায়।
ঠিক এই দেশটাই শেষরাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে ডেকে নিয়ে যায়।
।।৭।।
আব্বা আমাকে এখন মাঝে মাঝে আর চিনতে পারেন না। পাশাপাশি বসে কথা বলছিলাম। হঠাৎ আমাকে আপনি আপনি করতে বলতে শুরু করলেন। আমি জানালাম আমি ওনার সন্তান, আমাকে আপনি করে বলার কোন কারন নেই। উনি একটু চিন্তা করে বললেন - সন্তান হলেও আমি একজন বয়স্ক ব্যক্তি। আমি অবাক হই না, দুঃখও পাই না - আব্বার বয়েস প্রায় নব্বুই, কম যন্ত্রই এতোদিন ঠিকঠাক কাজ করতে পারে, মস্তিষ্ক অনেক উন্নত হলেও এর কার্যকারিতাও কমে আসে দিনে দিনে। আব্বার অর্ধেক বয়েসের আমি নিজের অভিজ্ঞতাতেই সেটা বুঝি।
আমাদের আলাপচারিতার সময় কাছেই একটা মশা ভনভন করছিল। আমি সপাটে সেটাকে পিষ্ট করতে চাইলাম দুই হাতের তালু দিয়ে।
আব্বা উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলেন - মেরে ফেলেছেন নাকি?
ঢাকার মশা প্রায় র্যাম্বোর মতোই - চড়চাপড় দিয়ে মারা যায় না। আমি সেটা জানালাম। আব্বা খুব খুশি হলেন।
বুঝলা এভ্রিথিং হ্যাজ অ্যা পারপাস...
আমি হঠাৎ পয়ত্রিশ বছর পেছনে চলে গেলাম। বাসায় অনেক গাছ থাকার কারনে আমাদের বাসায় প্রায়ই নানান পোকামাকড় ঢুকতো। একবার ভয়াল দর্শন একটা সবুজ পোকা ঢুকেছিল। আমি আতঙ্কিত হয়ে স্যান্ডেল নিয়ে তেড়ে গেলাম। আব্বা দেখে ছুটে এলেন।
এইটা হচ্ছে প্রেইং ম্যানটিস, সাংঘাতিক উপকারি পোকা...ভালো মতো দেখ, খুব সুন্দর একটা জিনিস, দেখলে মনে হবে হাত জোড় করে প্রার্থনা করছে।
আমি ভালো মতো লক্ষ্য করলাম - আসলেই তা-ই। উনি প্রেইং ম্যানটিসের উপকারিতা বর্ননা করলেন - সেই সব আর মনে নেই। শেষে বললেন - অকারনে প্রাণী হত্যা করবা না - এভ্রিথিং হ্যাজ অ্যা পারপাস।
বহু বহু দিন চলে গেছে। আমি সেইসব প্রেইং ম্যানটিস অধ্যুষিত ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। আব্বাও বুড়ো হয়ে গেছেন। শহরের লোকজন উপকারি পোকাদের ভুলে গেছে - আমার মতো তারাও শহর ছাড়া। গাছের বৈজ্ঞানিক নাম আব্বার মনে আছে বলে মনে হয় না কেননা সন্তানদের নামই প্রায় নিয়মিতই ভুলে যান তিনি।
আমি হঠাৎ করেই ঢাকার অতিশয় ধুরন্ধর মশাদের প্রতি কিছুটা কৃতজ্ঞতাবোধ করলাম। হঠাৎ করেই আব্বা বয়সের খোলস থেকে বেরিয়ে এলেন - আমিও ফিরে গেলাম ক্লাস ফোরে।
হঠাৎ করেই জেনে গেলাম - এভ্রিথিং হ্যাজ অ্যা পারপাস...
দেশটা ব্যাপারটা কি সেটা আমি যেন বুঝতে পারি একটু একটু।
।।৮।।
'আব্বু...আব্বু...আই ওয়ান্ট টু গো ব্যাক হোম...'
'কেন গো মা?'
'দে আর অল মিন টু মি...অল অফ দেম, ওরা সবাই আমার পিছে লাগে, বাংলাদেশে সবাই মিন...আমাকে এখনি অস্টিনে নিয়ে যাও...রাইট নাউ'
ওর বয়েসি বাচ্চা আরো আছে এখানে। সারাদিন ওদের সাথে খেলাধূলার পাশাপাশি দিনে তিনটা ছোট, দুটো মাঝারি আর একটা বড় ঝগড়া হবেই। সে বলে চলে...'আই মিস টাপুর অ্যান্ড টুপুর, আই মিস কেনিয়া, আই মিস মাই স্কুল, মাই প্লে গ্রাইন্ড...দ্য ট্রি ইন ফ্রন্ট আওয়ার হাউজ...দিজ প্লেস ইজ নট মাই হোম'
লিস্টের কেউই মনুষ্য সন্তান নয়, কেনিয়া হচ্ছে পাড়ার সবচেয়ে বদ বিড়ালটার নাম। টুপুর আর টাপুর পাখিদের নাম। ওদের বাসার সামনের গাছটা শৈশব পেরিয়ে যৌবনে পা দেওয়ার পরে ওইখানে ছোট একটা দোলনা বেঁধেছিলাম। মেয়ের সজল অভিমানী চোখের দিকে তাকিয়ে আমি দেশ কথাটার মানে আরো একটু পরিস্কার বুঝতে পারি। দেশ মানচিত্রে কোন আঁকাবাকা দাগ নয়। দেশ হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে অভিমান হলে টুপ করে চলে যাওয়া যায়, ক্লান্ত হয়ে যেখানে ফিরতে ইচ্ছে করে, জায়গাটা যতখানি বাস্তবে আছে তার চেয়ে বেশি আছে বুকের ভেতরে। আমাদের সবারই দেশ আছে শৈশবের বারান্দার একটু বাইরেই। সেইখানের আকাশটা সম্ভবত অন্য জায়গার আকাশ থেকে একটু বেশিই নীল, বিস্ময়করভাবে সেই দেশ জায়গাটা খুব বড় কোন জায়গা না।
শৈশব থেকে দূরে চলে গেলে দেশে ফেরাটা বড় কঠিন একটা কাজ, তখন দেশ নামক ব্যাপারটা ধুমকেতুর মতো হঠাৎ হঠাৎ হাজির হয় শুধু গল্প আর ছবি নিয়ে। বড় হয়ে যাওয়া দেখি এক বিচ্ছিরি ব্যাপার, বড় হলে দেশটা শুধু হারিয়েই যায়।
সম্ভবত এই কারণেই আমি কোনদিনই বড় হতে চাইনি।
।।৯।।
এইবার ফিরতি ট্রিপ। ডিসেম্বরের এক হিম শীতল সন্ধ্যাতে হিউস্টনে আমরা পা-রাখলাম। মার্কিন দেশে এবার অনেক ঠাণ্ডা পড়েছে। রাস্তাঘাট আগের মতোই, কেমন যেন শীতার্ত একটু বিষণ্ণ। দেশে যাওয়ার সময়ে মনে হয় এরাই অনেক উৎফুল্ল ছিল। ডিসপ্লে বোর্ড দেখে জানলাম দুর্ঘটনাতে আরো কিছু মানুষ মারা গেছে। সৌদি আরব নামক গ্যাস স্টেশন থেকে তেল নেওয়ার সময়ে তেলের দামটাও লক্ষ্য করলাম। অর্থনীতি এবং তেলের দাম - এই দুইয়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। অফিসে কি কি কাজ জমে আছে তার একটা তালিকা করলাম মনে মনে। আস্তে আস্তে গাড়ি চালিয়ে আমরা আমাদের শহরে এবং তার কিছু পরে আমাদের বাসার গলিতে প্রবেশ করলাম। সেই সঙ্গে আমার জীবনেও প্রবেশ করলাম বলা যায়।
"আব্বু উই আর ব্যাক হোম" মেয়ের উল্লসিত কন্ঠ।
ঠিক তাই। আমরা দেশে ফিরে এসেছি। দেখা যাচ্ছে - আমরা দেশে যাই এবং সেখান থেকে আবার দেশেই ফেরৎ আসি।
এই গলিতে বড় বড় গাছ আছে, সেখানে কাঠবেড়ালি থাকে অনেকগুলো, খরগোশ আছে গোটা কয়েক পরিবার, বেশ কিছু পাখি আছে, নিরীহ দর্শন সাপ আছে, দশটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে। আর আছে একটা দেশ। আমার মেয়েদের নিজের দেশ। সেইখানে এখনও শৈশব আছে। সেখানে জীবনের মলিনতা, আয়-ব্যয়ের হিসাব, জগতের নীচতার অনুপ্রবেশ হয় নি এখনো। প্রতিদিনই সেই দেশ দারুণভাবে বেঁচে থাকে। কিন্তু আমার নিজের দেশটাও বেশি দূরে নয়, এইতো এইখানে বুকের ভেতর।
সেও বেঁচে আছে। নইলে আমাকে কে এমন পিছু ডাকে?
###
আজকের ছবি - "নিজের দেশে" আমার মেয়েরা।
মন্তব্য
ঢাকায় এবার বহু নিয়ম শিখলাম।
পার্কে ঘাস নেই এটা আমারও অবজার্ভেশন। ঢাকায় আগে এতো বোরখা পরা মেয়ে দেখা যেত না হাইপোথিসিসে কখনো ঈমান আনি নাই। এবার গিয়ে নিজের বিশ্বাস আরো পোক্ত হয়েছে। মেয়েরা রাস্তায় বেরোচ্ছে, দোকানে যাচ্ছে, কিনতে ও দোকানদারি করতে। প্রচুর নারী পুলিশ। বাসে সামনের তিনসিট সবসময় মেয়েরা দখলে থাকছে। গার্মেন্টসে কাজ করা মেয়েরা থেকে শুরু করে সবাই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করছে। সমস্যা আছে অবশ্যই। তবে আস্তে আস্তে দেশটা ঠেলে ঘষটে আগাচ্ছে এটাও ঠিক। সুসম হচ্ছে না আগানোটা, পরিবেশের কথা মাথায় রাখছি না, অন্যায়ের বিচার হয় না - এগুলো করতে পারাটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হাসিব। আপনার অবসার্ভেশনের সাথে আমিও এক মত, স্পেশালি মূল চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
দেশ ছেড়ে আসার সময় চোখে পানি আসেনি।
লেখাটা পড়ে এলো।
পাঁচ তারা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মন্তব্যের জন্য
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
প্রিয় দেশ, প্রিয় শহর নিয়ে লেখাটা পড়তে পড়তে কত সব স্মৃতিদের হুটোপাটি চললো মনজুড়ে।
ঝাচকচকে পরিবেশ ছেড়ে দেশে গেলে হঠাৎ কিছুটা অস্বস্তি ঘিরে ধরে ঠিকই...
কিন্তু ফেরার সময় আমাদের সবটা জুড়ে সে দেশটাই আলোড়ন তুলে...যেখানেই যাই বুকের জমি খাঁমচে থাকে ধূলোবালি মশায় ভরা অসহ্য রকমের প্রিয় দেশটা! কী দারুণ নীলপ্রজাপতির মত লাগছে ভাইয়া আপনার মেয়ে দু'টোকে!
ওদের জন্য অনেক আদর এই ফুপিটার আরো কিছু পর্ব আসুক দেশভ্রমণ নিয়ে।
দেশ ভ্রমন পর্ব আসবে কিনা জানি না, তবে অন্য কিছু আসতে পারে
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কি সাধারণভাবে কি আসাধারণ সব সত্যি কথাগুলা বলে ফেলা ...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
প্রজন্মান্তরে চলে আসা কিছু কাহিনীরই পুন:চিত্রায়ন। একসময় গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসা যুবক, শহরে ঠাঁই গেঁড়েছে, তার সন্তানরা গ্রামকে আপন করতে পারেনি; সেইসব সন্তানরা প্রবাসী হবার পর তাঁদের সন্তানরা, বাবার দেশটাকে আপন করতে পারেনি। কি জানি, মানব জীবন বড় অদ্ভুত!
অদ্ভুত একটা বিষাদে ছেয়ে গেল মনটা।
শুভেচ্ছা
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
খুব সুন্দর লেখা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
দারুণ। মেয়েদের ছবিটি স্বর্গীয়।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার লেখায় ঢাকা শহর ঘুরতে আমার ভারী ভালো লাগে. মরার পরে বেহেশত বলে কিছু থাকলে আমি সেখানে ইউনিভার্সিটি, ফুলার রোড, নীলক্ষেত, হাতিরপুল কাঁচাবাজার এবং বিশ টাকা (ঈদের দিন পঁচিশ টাকা) রিক্সাভাড়া দিয়ে উত্তর শাহজাহানপুর নানুবাসা যাবার সুব্যবস্থা এক্সপেক্ট করব.
..................................................................
#Banshibir.
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অপূর্ব!!
____________________________
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কি যে ভালো লাগল আপনার লেখাটা! তাসনীম ভাই।
গোঁসাইবাবু
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
শৈশব থেকে দূরে চলে গেলে দেশ ফেরাটা বড় কঠিন একটা কাজ, তখন দেশ নামক ব্যাপারটা ধুমকেতুর মতো হঠাৎ হঠাৎ হাজির হয় শুধু গল্প আর ছবি নিয়ে। বড় হয়ে যাওয়া দেখি এক বিচ্ছিরি ব্যাপার, বড় হলে দেশটা শুধু হারিয়েই যায়।
facebook
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অণু।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
****************************************
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
দুঃখ কেন? আনন্দও তো আছে লেখাতে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ব্রাক্ষণবাড়িয়া শব্দটাই এক টুকরো আনন্দ হুয়ে এল লেখাটায়। 'মেঘলা মানুষ' চমৎকার বলেছেন-
আপনার মত করে দেখতে পেলে হয়ত যন্ত্রনার উপশম হয় একটূ-
দেশ ছেড়ে যারা যায়, তাদের জন্য এমনিতেই আমার কষ্ট হয়। যারা ওদেশকেই 'দেশ' করে নেয় তাদের জন্য আরেকটু বেশি কষ্ট হয়। আর 'দেশ'কে মনে রেখে ওদেশে আটকে পড়ে ওদের জন্য কষ্ট লাগার পাশাপাশি শুভকামনা যোগ হয়- দেশে যেন ফেরা হয় ওদের, জীবন থাকতেই।
ছেলেমেয়েদের 'দেশ' ছেড়ে আপনার 'দেশ'-এ আসা কখনো হয়ে ওঠে কি না সেটা বলা কঠিন!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আশা আছে একদিন নিজ "দেশে" ফেরা হবে। ধন্যবাদ মর্ম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বছর কয়েক বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার।
আচ্ছা, অন্য কোনো দেশের মানুষ কি প্রবাসী হয়ে এমন দেশের জন্য পিঁছুটান নিয়ে ভাবে? আমি পাইনি---
লেখাটায় আবেগ, আনন্দ, কষ্ট সবই আছে। কোনটা নিয়ে বলি!
ধন্যবাদ শিমুল।
দেশের জন্য টানটা মনে হয় আমাদের বাংলাদেশিদের নিজস্ব স্বকীয়তা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত এই দেশটাকে নিয়েই আমি তবু স্বপ্ন দেখি... স্বপ্ন দেখি এই দেশের মানুষগুলোকে নিয়ে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমাদের দেশ নিয়ে এখনো স্বপ্ন দেখা যায়। আমিও দেখি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ব্লু বনেট!
বাচ্চাদের স্কুলের মাঠে আপনিই ফুটে মার্চ এপ্রিল মাসে। গ্রীষ্মের ছুটি শেষে আমাদের স্কুলের মাঠ কাশফুলে ভরে যেত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার লেখাটা কালকেই পড়েছিলাম। মন্তব্য করতে পারিনি কেমন একটা ব্যথা বোধ হয়েছিল বলে। যেগুলো বলার ছিল সেগুলো বাদ দিয়ে বলি, অসাধারণ একটা অনুভুতি সম্পন্ন লেখা এটা, খুব ভেতরটা নাড়া দিয়েছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনের হাতের লেখা ভাল না, ঝাপসা লাগে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হাতের লেখা ভালো করতে হবে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বড় অনুরণিত হলাম, আমিও এক দেশ-ছাড়া, আমার সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে । এমন অনেক অনুভূতি
আমাদের সঙ্গী, তবে এত সুন্দর করে বলতে পারতাম না! এমন চমত্কার লেখার জন্য আপনাকে শুভেচ্ছা!
-আনন্দময়ী মজুমদার
ধন্যবাদ আনন্দময়ী।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বলার মতো ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন এমন লেখা পড়লে। মনে হলো কে যেন চোখের সামনে পরাবস্তাবতার দুয়ার খুলে দিয়েছে, পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে এক বুক অতৃপ্তি, দীর্ঘশ্বাস, লুকিয়ে রাখা অভিমান আর দুরন্ত এক ছেলেবেলার সাথে। অতীতের সাথে বর্তমানের এমন মিল বন্ধন নিজেকেও স্মৃতির দেশে নিয়ে যায়। ভালোথাকুক প্রিয় স্বদেশ, ভালোথাকুক দূরে কাছের সবাই।
মাসুদ সজীব
ভালো থাকুক সবাই। ধন্যবাদ মাসুদ সজীব।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এই চমৎকার লেখাটা আগে পড়িনি কেন!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ক্লাস ফোরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে খুব।
---মোখলেস হোসেন
নতুন করে পড়লাম, তবে আমার কোন দেশ নেই।
নতুন মন্তব্য করুন