আজকে স্বাধীনতা দিবস। আর ঠিক এই দিনটিতে বসেই এই দেশের মাটিতে বড় হয়েই হারিয়ে ফেলছি জীবনের সব অনুপ্রেরণা। খুব হতাশাবাদী হয়ে উঠছি দিন কে দিন। সবজান্তার মত আমিও বলছি- হ্যা, আমিও হতাশ। হতাশ আমার পাশের বাড়ির ছেলেটি। হতাশ আমার বন্ধুরা। হতাশ আমার রঙ্গিন স্বপ্নগুলো। এই দেশকে নিয়ে বুঝি স্বপ্ন দেখার দিন শেষ হয়ে এল। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এই দেশকে স্বাধীন করে সত্যিকার অর্থে কে কি পেল? হ্যা স্বাধীন আমরা খাতা কলমে হয়েছি নিশ্চয় কিন্তু চারপাশে এত হঠকারিতা আর বিচ্ছিন্নতা দেখে আমিও আর স্বপ্ন দেখি না এই দেশকে নিয়ে। আমাকে গালি দিন, আমাকে ভীরু বলুন কিন্তু বাস্তবতা হল আমাদের দেশকে নিয়ে এই প্রজন্ম স্বপ্ন দেখার সাহস মাত্র করে না। করলেও সে জানে সবই তার অলীক ক্ল্পনা মাত্র।
আমি এখনও মাঝে মাঝে ভাবি এই দেশ স্বাধীন না হলে কি হতাম আমরা? আমাদের সত্যিকার অর্থে কি হারাবার কিছু আছে? ভুল বুঝবেন না, আমি দেশের প্রতি সমস্ত শ্রদ্ধা রেখেই বলছি আমরা একটি ভাষাার অধিকার ছাড়া আক্ষরিক অর্থে কিছু পাইনি। নিজেদের জন্যে জাতিগত ভাবে তেমন কিছুই করে যেতে পারলাম না। পরবর্তি প্রজন্মকে একটি সুস্হ আবহাওয়া, শক্ত অর্থনীতি কিছুই দিতে পারলাম না। কবে পারব তাও জানি না। তবে এক জনমের এই জীবনে এই দেশে থেকে যদি কেঊ তার হাড় হাড্ডি বৃথা ক্ষয় করতে না চায় তবে তা কার দোয?
আমাকে হতাশাবাদী বলে দুষবেন তো? তার আগে নিজে বুকে একবার হাত দিয়ে বলুন-- জীবনে কতবার মনে হয়নি এই দেশ ছেড়ে পালাই?
[লেখাটির শুরুতে খেয়ালবশত একটি মারাত্মক ভুল করেছি। একদমই অনিচ্ছাকৃত! মনটা আরও খারাপ হইল!:-(]
মন্তব্য
আমার পরিচিতদের মধ্যে একমাত্র সেই বোকা মানুষটি আমি
যে দেশ ছেড়ে না যাবার জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল
আর যারা দেশ ছেড়ে যায় তাদের সবাইকে বোকার মতো একই কথা বলে- ফিরে এসে যদি বাংলাদেশের বিন্দুমাত্রও আগের মতো না পাও
তবুও পোড়া বাংলাদেশের কয়লার নিচে আমার হাড়গোড় না হোক অন্তত ফসিলটুকু পাবে
আর প্রতিটি প্রবাসী বন্ধুর সাথে দেখা হলে যে দেশে ফিরে আসার কথা বলে আর বারবার তাদের গাল খায়
আমি আশাবাদী না
দীর্ঘদিনের অবজারভেশন থেকে জেনেছি আমি মূলত বোকা মানুষ
কিন্তু আমি বাংলাদেশের মানুষের অসীম ক্ষমতাকে চিনি এবং তাতে ভরসা করি
বাংলাদেশের মানুষই বাঙালির জন্য বাংলাদেশ বানিয়েছে
বাংলাদেশের মানুষই বাঙালির জন্য বাংলাদেশকে মেরামত করবে
হয়তো সেই দলে আমি কিংবা আপনি কেউই থাকতে পারবো না
০২
আপনার কথাগুলোকে আমি হতাশা হিসেবে দেখি না
বাংলাদেশের কাছে আমাদের অনন্ত প্রত্যাশার দীর্ঘশ্বাস হিসেবেই দেখি
যে দীর্ঘশ্বাস যে বলে তার যেমন আছে
যে বলে না তারও আছে
আমিও না। ... মনে আছে তো, সেই চৈনিক উপকথা: বোকা বুড়ো পাহাড় সরিয়েছিলেন!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
জ্বি হতাশারই কথা বটে, কারণ আজকে বিজয় দিবস নয়, স্বাধীনতা দিবস।
আর হ্যাঁ, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, অন্তত এখন পর্যন্ত আমার একবারের জন্যও দেশ ছেড়ে যেতে মন চায় নি।
"কিন্তু বাস্তবতা হল আমাদের দেশকে নিয়ে এই প্রজন্ম স্বপ্ন দেখার সাহস মাত্র করে না"-কথা সত্য নয়, আমার প্রজন্মের কিছু মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখে, অহেতুক আবেগে ঘেরা অর্থহীন তীব্র স্বপ্ন নয়, কিংবা জটিল চালের মাঝে বুনে নেয়া কাঠখোট্টা স্বপ্ন নয়,
আমার প্রজন্ম এখনো যুক্তিযুক্ত ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন দেখে, এই গরীব দেশকে ঘিরেই।
স্বপ্নের আবার যুক্তি কি? স্বপ্ন দেখতে আমরা সবাই ভালোবাসি। আমিও চাই এই দেশকে একদিন পৃথিবীর মানচিত্রে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে। কিন্তু সময় সময় মনে হয় বড্ড পুঁজিবাদী মনোভাব নিয়ে বড় হচ্ছি আমরা। দেশকে নিয়ে কয়জনই বা সত্যিকার অর্থে ভাবে? স্বপ্ন আছে বলেই তো স্বপ্ন পূরণ না হবার ভয় আছে, কষ্ট আছে।
বাঙালি ঘুরে দাড়াঁলে সব পারবে। প্রয়োজনে সেটা তো করে দেখিয়েছে। তাই অপেক্ষায় আছি কবে সেই প্রয়োজন আবার আসবে আর সবাই জেগে উঠবে।
ভরসা রাখুন শেষ পর্যন্ত বাঙালির উপর, বাংলাদেশের উপর। ভরসা রাখতে গিয়ে বোকা হলেও আপত্তি নেই।
আমরা আছি। থাকব।
আমরা সবাই যেন আপনার কিংবা লীলেন ভাইয়ের মত করে ভাবতে পারি। ভাবতে শিখি।
রাবাব, আপনার লেখা পড়ে মনটা নতুন করে খারাপ হয়ে গেল।
রোজ আমরা যা অনুভব করি , আপনি তা খুব সহজ কথায় লিখেছেন।
কিন্তু আমি বাংলাদেশের মানুষের অসীম ক্ষমতাকে চিনি এবং তাতে ভরসা করি
বাংলাদেশের মানুষই বাঙালির জন্য বাংলাদেশ বানিয়েছে
বাংলাদেশের মানুষই বাঙালির জন্য বাংলাদেশকে মেরামত করবে
লীলেন ভাই কে শ্রদ্ধা এই কথা গুলোর জন্য।
রাবাব ভাইয়ের সাথে একমত হতে ইচ্ছা করে,কিন্তু কেন যেন পারিনা।যদিও কথাগুলো খুব বাস্তব ...খুব।
---------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
রাবাব ভাই
হা হা হা হা হা ......
নিঝুম ভাই, আনফরচুনেটলি 'রাবাব বোন ' ( ২ সেন্সেই, মানে সিস্টার এন্ড হাড্ডি ২ টাই ) ।
-----------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
হার মানা আমার জন্যেও সহজ নয় বিশ্বাস করুন। আমি হারতে শিখিনি। তবুও.. তবুও.. কখনো কখনো মনে হয় আর কতকাল?
বিদ্র: রাবাব ভাই?
খুব সুন্দর ভাবে অনুভূতির প্রকাশ করেছেন। মাঝে মাঝে যে আমারও এমন মনে হয় না তা নয়। তবে পরক্ষণেই আশাবাদী অমিত হতাশাবাদী অমিতকে মাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। মনে বল রাখুন, আমরা দেখিয়ে দেবো একদিন।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
হ্যা একদিন আমরাও...
লীলেন ভাই যথার্থ বলেছে -
আমরা করবো জয় নিশ্চয়
বুকের গভীরে আছে প্রত্যয়
--বিশ্বাসটুকু বেঁচে থাকুক। মানুষের প্রতি বিশ্বাস।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
বড্ড সাদামাটা সরলীকরণ। মানতে পারলাম না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
তা তো বটেই। কল্পনার জালগুলো যখন একটা একটা করে ছিঁড়ছে আর নোংরা বিভৎস সত্যকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তখন এই এক কথাতেই আমি মনে করি হাজার মনের কথা বলা হয়ে যায়।
রাবাব, সবই বুঝলাম। তোমার জন্য থেরাপি হল, হিমু ভাই এর গাওয়া জাতীয় সঙ্গীত, শুনলে মন ভালো হতে বাধ্য।
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবার স্বপ্ন কলেজ জীবন থেকেই দেখেছি, কিন্তু দেশ ছেড়ে পালাই এতটা হতাশ কখনও হইনি।
তার আগে বলুন বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করবার উদ্দেশ্য কি শুধুই জ্ঞান অর্জন? আমি তো মনে করি শতকরা ৭০ ভাগ ছাত্র ছাত্রী বিদেশ যেতে চায় আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে। এটি ভালো এবং খারাপ ছাত্র ছাত্রী নির্বিশেষে সত্য। এবং শুধুমাত্র পড়ালেখার উদ্দেশ্যে যদি সে দেশের বাইরে যায়ও তার পরেও ঐ দেশে একবার অভ্যস্হ হয়ে গেলে দেশে ফেরা আরও কঠিন হয়েই দাঁড়ায়।
জ্ঞান অর্জনের জন্য বিদেশ গমন?
সে তো কিতাবি কথাবার্তা। ৭০ ভাগ না আশি ভাগ তা জানি না তবে আমি বিদেশ যেতে চাই আর্থিক নিরাপত্তার জন্য। সামাজিক নিরাপত্তা সাথে ফ্রি!!
আমার মত এক বাংলাদেশীর আথির্ক নিরাপত্তার জন্য বিদেশ গমন তো দেশেরই মঙ্গল। এক জন বেশী বাংলাদেশী আর একটু সচ্ছল হল তাতে কি দেশটাও সাথে সাথে আরো একটু সচ্ছল হলো না?
কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশের ফেরা নিয়ে তাই না??
এখানে আসলেই আমি "কবি নীরব"!!
আমাদের যেসব বন্ধুরা বিদেশে বৃত্তি পাচ্ছে তাদেরকে NRB নামে ডাকা শুরু হয়ে গেছে!!
NRB- Not Returning Bangladesh
NRB-Non Resident Bangladeshi কে ব্যাঙ্গ করে
- হতাশ এবং বিষণ্ণ- এ দুয়ের মাঝে ফারাক বিস্তর। আপনি অত্যন্ত ঋণাত্বকবোধক হতাশ হওয়ার চাইতে বোধহয় অপেক্ষাকৃত (এবং অবশ্যই বেশি) ধনাত্বকবোধক বিষণ্ণ হতে চাইবেন।
আপনার ভাবনাগুলো আমাকেও ভাবায়, কিন্তু হতাশ হইনা আমি। আমি জানি একবার হতাশার গহীনে অস্তমিত হলে সেখান থেকে ওঠার আর কোনো পথই খোলা থাকে না। হতাশা হতাশায় ছেয়ে যায় পুরো সময়, একটা সময়।
হতাশা কাটিয়ে বিষণ্ণ হয়ে উঠুন, কামনা করি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রাবাব নামটা অনেক পরিচিত আমার কাছে।স্কুলের আলোরন সৃষ্টি করা নাম ছিল।আপনার মতই কথা বলতো।আমার রাবাব আপুর কথা মনে পড়ে গেল। আসলে সবার মনেই আসে কথাগুলো কিন্তু হাতে উঠে আসে না।
-নিরিবিলি
রাবাব, মনটাই খারাপ করে দিলেন, এগুলি তো সব আমার কথা, ধুত ! স্বপ্ন দেখা কিন্তু থেমে থাকে না, কিন্তু তা যেন ভাঙ্গার জন্যই তৈরী হয় ! দারুন মজারএকটা খেলা যেন !
- খেকশিয়াল
হুমায়ুন আজাদের লেখা কিছু লাইন মনে পড়ে গেলো...
যখন আমরা বসি মুখোমুখি, আমাদের দশটি আঙ্গুল হৃদপিন্ডের মতো কাঁপতে থাকে
দশটি আঙ্গুলে, আমাদের ঠোঁটের গোলাপ ভিজে উঠে আরক্ত শিশিরে,
যখন আমরা আশ্চর্য আগুনের জ্বলি, যখন আমরাই আমাদের স্বাধীন স্বদেশ,
তখন ভুলেও কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা জিজ্ঞেস করো না;
আমি তা মুহূর্তও সহ্য করতে পারি না,-তার অনেক কারন রয়েছে।
তোমাকে আমি মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিও না।
জানতে চেও না তুমি নষ্টভ্রষ্ট ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের কথা; তার রাজনীতি
অর্থনীতি, ধর্ম,পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষন
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন করো না;
আমি তা মুহূর্তও সহ্য করতে পারি না,-তার অনেক কারন রয়েছে।
তার ধানক্ষেত এখনো সবুজ, নারীরা এখনও রমনীয়, গাভীরা এখনও দুদ্ধবতী,
কিন্তু প্রিয়তমা, বাঙলাদেশের কথা তুমি কখনো আমার কাছে জানতে চেয়ো না;
আমি তা মুহূর্তও সহ্য করতে পারি না,-তার অনেক কারন রয়েছে।
(আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?/ হুমায়ুন আজাদ)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান…
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
আমি জানিনা কি বলা উচিৎ এখানে!!! তোমার লেখাটি পড়ে খুব দিশেহারা মনে হচ্ছে নিজেকে।
অনেকদিন তো নতুন কিছু লেখনি।নতুন কিছু কবে আসছে ?
নতুন মন্তব্য করুন