কিছুদিন আগে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার(LHC) এর উদ্বোধন হবার সময় কণাজগত নিয়ে চাঞ্চল্য জেগেছে নতুন করে। একুশে অক্টোবর সর্বোচ্চশক্তির সংঘর্ষ ঘটানো হবে। এই সুযোগে কণাজগত নিয়ে একটু কথা বলা যাক।
আমাদের মহাবিশ্ব অতি বিরাট কিন্তু তা কি দিয়ে তৈরী? অতি ক্ষুদ্র কণার সমাহারেই তো! তাদের সমস্ত মিথস্ক্রিয়া (interaction) ঘটেই বা কাদের সৌজন্যে? অতি ক্ষুদ্র বলবাহক কণাদের জন্যই তো!
এই যে বিরাট মহাবিশ্ব-তার অস্তিত্ব অতি ক্ষুদ্রের, অতি সূক্ষের উপরেই নির্ভরশীল। মহতোমহীয়ান আর অণোরণীয়ান আসলে মিলেই আছে, নেহাত অংকের ট্রিকটা আমরা ধরতে পারিনি, সে আমাদের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু মহাবিশ্ব কেন বিরোধ দেখতে পাবে?সে আছে তার মতন।
বর্তমান পদার্থবিদদের নিরলস প্রচেষ্টা এই দুইকে মিলিয়ে দেয়ার। এই চেষ্টা চলছে অনেক অনেক দিন ধরে। এই চলার পথে আবিষ্কার হচ্ছে আরো কত কত অজানা জিনিস,জট খুলে যাচ্ছে কতকিছুর, কিন্তু এখনো সেই একীভূত ক্ষেত্রতত্ত্ব (Unified field theory) যা কিনা মহাকর্ষের সাথে বাকী তিন বল মিলিয়ে দেবে তা আগের মতই অধরা।
আসলে হয়েছে কী, বড় স্কেলে মহাবিশ্ব বর্ণনা করতে লাগে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (General theory of relativity)। এই তত্ত্ব ক্লাসিকাল। এই তত্ত্ব মহাকর্ষকে ব্যাখা করে। কিন্তু কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা নিয়ে এই তত্ত্ব কাজ করতে পারে না। এদিকে ক্ষুদ্রকণাদের আচার আচরণ নিয়ে বলতে গেলে লাগে Quantum field theory , এই তত্ত্ব ক্লাসিকাল নয়। এতে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোত হয়ে। তাই এরা মেলেনা, কিছুতেই মিলতে চায় না। অথচ এরকম হলে তো চলবে না! বড় ছোটো সকলেই তো মহাকর্ষ অনুভব করে!
গত কয়েক দশকের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয়েছে সাব-নিউক্লিয়ার জগতের অস্তিত্ব। জানা গেছে প্রোটন নিউট্রনেরা অবিভাজ্য নয়, এরা কম্পোজিট পার্টিকল। এদের বিভাজিত করা সম্ভব। ইলেকট্রন বীমকে প্রোটনের দিকে ছুটিয়ে দিয়ে ধাক্কা খাইয়ে দেখা গেছে বেশীরভাগ ইলেকট্রন একটুও বিচ্যুত না হয়ে প্রোটনের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। তখন বলা হলো "না হে, এরা এমন নীরেট না হে, এদের ভিতরে অনেক ফাঁকফোঁকড় আছে।"
এখন জানা গেছে তিনরকম কোয়ার্ক দিয়ে এদের দেহ তৈরী-দুটো আপ আর একটা ডাউন কোয়ার্ক। আবার নিউট্রনেরা তৈরী দুটো ডাউন আর একটা আপ কোয়ার্ক দিয়ে। এই কোয়ার্ক নামটা দেন বিজ্ঞানী মারে জেলমান, এক মজার ছড়ার লাইন থেকে।
এই কোয়ার্কেরা এখন অবধি আস্ত আছে, এরা মৌলকণা, এদের ভাঙা যায় নি। এখন জানা গেছে কোয়ার্ক আছে ছয়রকম ফ্লেভারের-আপ, ডাউন, স্ট্রেঞ্জ, চার্ম, বটম, টপ। আর আছে ছয়রকম লেপ্টন, এরাও মৌলকণা। এই ছয় কোয়ার্ক আর ছয় লেপ্টন-আর তাদের প্রতিকণা(anti-particle), এদের দিয়েই আমাদের পরিচিত জগত গড়া।
(চলবে)
মন্তব্য
চলুক।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আর এই ফাঁকে ছোট্ট করে বলে দিইঃ আমাদের এত সাধের LHC কিন্তু এখন ভগ্ন! শিক্ষানবিস কিছুদিন আগেই আমাদের সেটা জানিয়েছিলেন। একেবারে সম্প্রতি খবর পেলাম, আগামী বছরের আগে আর কিছু ঘটছে না।
মশয়, কন কি? এক্কেরে দুমফটাশ!(
সিরিয়াসলি, কি হয়েছে? যান্ত্রিক গোলযোগ?
জ্বী।
Superconducting Magnets দের একটি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। যে তরল সেটিকে ঠান্ডা রাখত সেইটাও লিক করছে। সব মিলিয়ে সেখানের তাপমাত্রা যা থাকার কথা সেটা থেকে আরো ১০০ ডিগ্রী বেড়ে গিয়েছে।
এইসব ঠিক না করে বিজ্ঞানীরা আপাতত আর নতুন কিছু নিয়ে ভাবছেন না।
সেটাই।
লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ তুলিরেখা।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
লেখাটা পড়ে ভীষন ভালো লেগেছে। আগে এরকম ভাল করে বুজিনি। ধণ্যবাদ আপনাকে।
লেখা খুবই তথ্যবহ্ুল হয়েছে !
সানি,
আমার ও ধন্যবাদ,লেখাটি পড়ার জন্য।
অনিকেত,
ঠান্ডা করার গন্ডগোল ঠিক করতে এত সময় লাগবে?
এদিকে হিগস সাহেব তো উদগ্রীব হয়ে আছেন তার নেমসেক কে খুঁজে পাবার জন্য!
উপায় নেই ! অতিরিক্ত তাপে দুটো বৃহৎ আকৃতির চুম্বক নাকি গলেই গেছে ! ঠিক করার সময়সীমা প্রথমে দুমাস, তারপর তিনমাস ধরেও কুলাচ্ছে দেখে শেষপর্যন্ত হতাশ হয়ে বিজ্ঞানীরা এলএইচসি'র পরীক্ষার মেয়াদ এক বছরই পিছিয়ে দিলেন।
তুলিরেখাকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ, চমৎকার পোস্টটি উপহার দেয়ার জন্য। আগামী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আলমগীর,অমিত ও সাধু-
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
কি বিশাল বিশাল সব ঘরসমান চুম্বক! এতসব সামলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা! সোজা কথা নাকি?
মাঝে মাঝে আমার একটা মজার কথা মনে হয়! আজ থেকে ৫০০ কি হাজার বছর পরে ছিমছাম স্লিম ইকুইপমেন্ট নিয়ে এইসব পরীক্ষা
করবে মানুষ আর আমাদের এগুলোকে কি ভাববে?
এককালে সামান্য শক্তির কম্পুটারই ছিলো ঘরসমান বড়। আর আজ? ডাইরির মতন হাতে করে বয়ে নেওয়া যায় কত বেশী মেমরির ল্যাপটপ!
এত বছরও লাগে নি! বছর ৫০ মত লেগেছে!
আমিও খুব উদগ্রীব এটা নিয়ে, জানতে চাই, চলতে থাকুক
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
সুন্দর লেখা। চলুক।
আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
কণা পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে লেখা শুরু করার জন্য ধন্যবাদ। চলুক
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
নতুন মন্তব্য করুন