কণাজগত ৩

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শনি, ০৪/১০/২০০৮ - ৪:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সে বেশ অনেকদিন আগের কথা। পদার্থবিজ্ঞানীরা তখন মহা ফূর্তিতে। মাত্র তিনরকমের মূল কণা-প্রোটন, নিউট্রন আর ইলেকট্রন, এই দিয়েই সব কিছু হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। বিনিময় কণা বলতে শুধু ফোটন।
সে এক সুবর্ণসময়। একটাই মুশকিল হলো এই প্রোটনেরা মহা কেলো করেছে মানে বেশ ঝামেলায় ফেলেছে। এরা পজিটিভ চার্জওয়ালা কণা কিন্তু থাকে গায়ে গায়ে লেগে ঐ ছোট্টো নিউক্লিয়াসের ভেতরে! কি গেরো! এদের তো পরস্পরকে ভীষণ বিকর্ষণ করা উচিত যদি কুলম্বের কথা মানতে হয়! তাহলে তো ঐ নিউক্লিয়াস অতি দ্রুত ফেটেফুটে ভেঙে যাবার কথা! তা তো মোটেই হয় না! নিউক্লিয়াস খুবই স্টেবল! বারবার করে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তেজষ্ক্রিয়য় মৌল ছাড়া বাকী সব মৌলের নিউক্লিয়াস রা খুব স্থিতিশীল! এ রহস্যের সমাধান কি?
তড়ি‌ত্‌চুম্বকীয় তত্ত্ব সত্য, সেও বারে বারে প্রমাণিত। এর থেকেই কুলম্ব সূত্র যে সূত্র অনুযায়ী প্রোটনে প্রোটনে বিপুল বিকর্ষণ হওয়া উচিত। এদিকে জলজ্যান্ত এইসব স্থিতিশীল নিউক্লিয়াস,যাদের কিনা থাকাই উচিত না তড়িত্‌চুম্বকীয় তত্ত্ব অনুসারে! এ কি দোটানা!
তখন ইউকাওয়া কইলেন, "মশায়রা শোনেন মন দিয়া! আমার মনে হয় কোনোরকম তীব্র বল আছে যার রেঞ্জ খুব ছোটো মানে নিউক্লিয়াস সাইজের রেঞ্জ, সেই বল এদের মধ্যেকার বিকর্ষণের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী বলে এদের একসংগে আটকে রেখেছে। এই দেখুন আমার অঙ্ক। এই দেখুন পোটেনশিয়াল ফাংশান এরকম হলে..... "
"আরে রাখেন মশায় অঙ্ক। আগে কন সেই যে আপনাদের এত সাধের ফিল্ড থিওরি সেই অনুসারে তো আপনার এই Strong interaction এ কণা বিনিময় হবার কথা। কোথা গেলো সেই কণা?"
ইউকাওয়া শান্ত হাসিমুখে কন,"আরে আমাকে কইতেই দিন পুরোটা। আমি বলছি যে সত্যি ই কণা বিনিময় হয়, আমার অঙ্ক বলছে বিনিময় কণার ম্যাস হবে মাঝারি, মানে ইলেকট্রনের থেকে কয়েকশোগুণ ভারী হবে এরা। কিন্তু প্রোটন বা নিউট্রনের থেকে অনেক হালকা। এদের মেসন মানে মাঝারি ভরের কণা বলা হোক। আপনারা খুঁজুন, কসমিক রে র মধ্যে খুঁজুন(তখনো বড় বড় অ্যাকসিলারেটার বসে নি), উচ্চশক্তি নিউক্লীয় বিক্রিয়ার বাইপ্রোডাক্টে খুঁজুন, পাওয়া যাবেই কোথাও না কোথাও। "

পাওয়া গেলো। মেসন। শুধু তাই না, খুঁজতে গিয়ে প্যান্ডোরার বাক্সো খুলে গেলো!

নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আর অনুসন্ধানে শত শত মেসন আর ব্যারিয়ন পাওয়া গেলো! মাঝারি আর ভারী কণাদের মেসন আর ব্যারিয়ন বলে সাধারণভাবে ডাকা হয়। এসব কোয়ার্ক ধারণা আসার আগের কথা। এই সবগুলোকে এলিমেন্টারি কণা মনে হচ্ছিলো তখন। পদার্থবিজ্ঞানীদের মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা।
এরকম শয়ে শয়ে মৌলকণা? এরকম তো হবার কথা না! এতো এক গেরো দূর করতে গিয়ে আরো গভীর একা গাডডায় পড়ে যাবার অবস্থা! এখন উপায়?

(চলবে)


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার একটা ভুল পাইছি...

যদি কুলম্বের কথা মানতে হয়

এইখানে কুম্বলে হবে, অনিল কুম্বলে হইলে বেশি ভালো হয় হো হো হো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বজলুর রহমান এর ছবি

ঠিক, ঠিক। মাত্র চার রকম বল আছে, এটা একদম বাজে কথা। স্লো, ফাস্ট, মিডিয়াম, লেগব্রেক, অফব্রেক, গুগ্লি, ইন্সুইং, আউটসুইং, ইয়র্কার, ফুল্টস...। কুমবলেও অনেককে আউট করেছে।

স্বপ্নাহত এর ছবি

গল্পচ্ছলে নিউক্লিয়াস ভ্রমণ। দারুণ!

চলুক

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

তানবীরা এর ছবি

গল্প বলার ভঙ্গী অনেক মিষ্টি। পড়তে ভালো লাগছে।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

হি হি হি হো হো হো হাসি) হো হো হো
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়া আর মজার মন্তব্যের জন্য।
পরের পর্বে আরো মজা আছে।

রণদীপম বসু এর ছবি

সুন্দর ! তিনদিন নিউক্লিয়াসের বাইরে ছিলাম বলে দেরিতেই পড়া শুরু করলাম। ভালো লাগছে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

empty axis এর ছবি

কনার বেপার টা আগে এত ভাল করে জানতামানা। আপানাকে অনেক ধন্যবাদ।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

নিউক্লিয়াসের বাইরে ছিলেন! বলেন কি? হাসি
আপনাদের সবাইকে লেখাতি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শিগগীর পরের পর্ব আসবে আশা করছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।