এবারে আরেকটু পিছিয়ে যাই সময়ের পথে। এইসব কথা দুই নম্বর লড়াইয়ের বেশ অনেকবছর আগের কথা। তখন ফার্মি,পাউলি সহ অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীরা বিচলিত বিটা ডিকে(beta decay) নিয়ে। তারা দেখলেন কোনো কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস যখন কিনা অন্য মৌলের নিউক্লিয়াসে বদলে যায়(অ্যাটমিক নম্বর এক করে বাড়ে)তখন বদলে যেতে থাকা সেই নিউক্লিয়াস থেকে বিটা কণা বেরোয়। এই ব্যাপারটাকে বিটা ডিকে বলা হতো। আর অ্যাটমিক নম্বর এক করে বাড়া মানে একটা করে প্রোটন যোগ হওয়া।
পরীক্ষা করে দেখা গেলো বিটা হলো ইলেকট্রন, এর চার্জ নেগেটিভ। আরে কী সব্বনাইশ্যা কথা! নিউক্লিয়াস তো পজিটিভ চার্জওয়ালা প্রোটনদের(তখনও নিউট্রন আবিষ্কার হয় নাই, আরো দুই বত্সর লাগবে নিউক্লিয়াসে সেই ছুপা রুস্তমকে খুঁজে পেতে। সেও আরেক রোমাঞ্চকর কাহিনি! ) থাকার ঘর!সেই ঘর থেকে কি করে নেগেটিভ চার্জ ওয়ালা কণা বেরোয়? ব্যাটারা কোথায় লুকাইয়া ছিলো?
ধরে নেওয়া হলো নিউক্লিয়াসে কোনো নিস্তড়িত্ কণা আছে, সেটা ভেঙে গিয়ে প্রোটন আর ইলেকট্রন ছিটকে বেরোয়। যেহেতু প্রোটন অনেক বেশী ম্যাসিভ, তাই বেশীদূর যেতে পারে না আর ইলেকট্রন হাল্কা বলে ছুটে বেরিয়ে যায়(পরে জানা গেছে প্রোটনেরা হোলো হ্যাড্রন,এরা স্ট্রং ফোর্সের দ্বারা আটকে যায়, কিন্তু ইলেকট্রনেরা লেপ্টন, এরা স্ট্রং ফোর্সের আওতার বাইরে। এরা ওই সাংঘতিক ফোর্স বুঝতেই পারে না। ওরা তাই ছিটকে বেরিয়ে যায় নিউক্লিয়াস থেকে বিটা কণা রূপে )।
ভালো করে মেপে টেপে হিসেব টিসেব করে আর এই বিটাদের এনার্জী প্লট করে দেখে আক্কেলগুড়ুম! শক্তির নিত্যতা সূত্র সত্য হতে হলে এদের যা এনার্জী হবার কথা,তার থেকে অনেক কম দেখা যাচ্ছে!!!
এইবার? শক্তি তো হারিয়ে যেতে পারে না! তাহলে এইখানে এইটা কি কান্ডটা হচ্ছে? গেলো কোথায় এনার্জী?নিলস বোর কইলেন শক্তির নিত্যতা সত্য এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে? হয়তো এই প্রক্রিয়ায় এনার্জী কনজার্ভড হয় না! চারিদিকে গেলো গেলো রব উঠলো! কেউ কেউ কইলেন, কনজার্ভেশন অব এনার্জী যদি সত্যি না হয়, তাহলে পদার্থবিদ্যা চর্চা করে আর কি হবে? বরং যাই, পথে পথে গান গেয়ে বেড়াই। সে অনেক ভালো, সুখে শান্তিতে থাকবো।
যাই হোক, সকলে এত সহজে ছাড়ার পাত্র না। উলফগ্যাং পাউলি প্রস্তাব দিলেন এই বিটা ডিকে তে অদেখা কোনো নিস্তড়িত্ কণা আছে, যারা হরিয়ে যাওয়া শক্তিটুকু বহন করে নিয়ে যায়। তিনি তাদের নাম দিলেন নিউট্রিনো। কইলেন এদের ভর খুব কম, প্রায় নেইই বলা যায়।
বহু বছর পরে আবিষ্কার হয় সেই নিউট্রিনো, জানা যায় তিনরকম নিউট্রিনো আছে। আর জানা যায় এদের খুব সামান্য ভর আছে। এরা অত্যন্ত কম interaction করে বলে এদের আবিষ্কার হতে এত দেরী হলো।
এই নিউট্রিনোরা ভারী মজার। এদের কাছে আমাদের এই বিরাট পাথুরে পৃথিবীও স্বচ্ছ জলের মতন। প্রতি সেকেন্ডে কোটি কোটি নিউট্রিনো আমাদের সকলের শরীর,ঘর বাড়ী, বাগান মাঠঘাট, পাহাড় পর্বত সমেত গোটা পৃথিবী ভেদ করে চলে যায়,আমরা কিছু বুঝতেও পারিনা।
(চলবে)
মন্তব্য
খুবই চমৎকার লেখা। বিষয়টাও দারুন।
আপনার নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলাম।
-----------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বাকি অংশগুলো কোথায় পাওয়া যেতে পারে?
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
নিল্স বোরের কথা পড়ে বেশ মজা পেলাম। একেবারে মূলে আঘাত হেনেছিলেন। অবশ্য, অতোটা না হলে তো মানুষ সমস্যা সমাধানের প্রাণপন চেষ্টাও করতো না!
নামের ক্ষেত্রে বাংলা প্রতিবর্ণীকরণের প্রমিত নিয়ম ব্যবহার করতে পারেন। এখানে যেমন উল্ফগ্যাং পাউলি লিখেছেন। তার নামের প্রকৃত উচ্চারণ ভোল্ফগাং পাউলি। অনেকে অবশ্য ইংরেজি উচ্চারণ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কিন্তু আমি সবসময়ই সঠিক প্রতিবর্ণীকরণের পক্ষে।
অনেক পদার্খবিজ্ঞানীদের নামের সঠিক প্রতিবর্ণীকরণ এখানে পাবেন:
http://bn.wikipedia.org/wiki/পদার্থবিজ্ঞানে_নোবেল_পুরস্কার
আর প্রতিবর্ণীকরণের নিয়ম পাবেন এখানে:
http://bn.wikipedia.org/wiki/উইকিপেডিয়া:বাংলা_ভাষায়_বিদেশী_শব্দের_প্রতিবর্ণীকরণ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিক্ষানবিস,
আমি প্রতিবর্ণীকরণের সময় সাবধান থাকবো। আসলে অনেকে বেশী পরিচিত উচ্চারণেই সচ্ছন্দ বোধ করেন,তাই ইংরেজীটাই দিচ্ছিলাম। দেখবেন অনেকসময় আমি পরিভাষাও দিই না, "অপেক্ষক" "মিথস্ক্রিয়া" "অতিপ্রতিসাম্য" না লিখে সরাসরি "ফাংশান", "ইন্টারঅ্যাকশন" "সুপারসিমেট্রি" ই লিখি, কারণ সেই একই। কঠিনধরনের তত্সম পরিভাষা শ্রোতাকে অনেকসময় কাছে না টেনে দূরে সরিয়ে দেয়। যথাসম্ভব সেটা এড়াতে চেষ্টা করি।
পলাশ,
বুঝলাম না ঠিক, এই লেখার বাকী অংশগুলোর কথা বলছেন? যদ্দুর লেখা হয়েছে(কণজগত ৬ অবধি),সবই এই ব্লগেই তো আছে।
কীর্তিনাশা,
আপনাকে পাঠক পেয়ে খুবই খুশী হলাম। ভালো থাকবেন।
নিউট্রিনোর কথা প্রথম পড়েছিলাম মুহম্মদ জাফর ইকবালের "ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম" সায়েন্স ফিকশনে ... সেখানে নিউট্রিনো ব্যবহার করে আস্ত-গ্রহ-আস্ত-প্রাণী ট্রাইটনকে ধ্বংস করে দেয়া হয় ... থীওরীটা ছিল এমনঃ এমনিতে নিউট্রিনো আমাদের শরীরের ভেতর দিয়ে চলে যায়, কেউ টেরও পায় না কারণ এরা কারো সাথে কোন ইন্টারএকশন করে না ... কিন্তু কোনভাবে যদি ট্রাইটনকে বাধ্য করা যায় এর সাথে ইন্টারএক্ট করতে তাহলে সে ইন্টারএকশন থেকে এনার্জি বের হবে ... সেই অবস্থায় যদি অকল্পনীয় রকম বেশি নিউট্রিনো তার শরীরে প্রবেশ করানো যায় তাহলে অতিরিক্ত উত্তাপে ধ্বংস হয়ে যাবে ... এই অতিরিক্ত নিউট্রিনো পাওয়া গিয়েছিল পালসারের বিস্ফোরণ থেকে ...
যখন পড়েছিলাম তখন ভেবেছিলাম এগুলি ইমেজিনারি ... অনেক পরে নেট ঘেঁটে দেখি নিউট্রিনোও আছে, পালসারও আছে, তখন খুব মজা পেয়েছিলাম ...
আপনার লেখা পড়ে আবার এগুলির কথা মনে পড়লো ...
চলুক ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
নতুন মন্তব্য করুন