প্রথম এসে অনেক কিছুই নতুন রকম ঠেকে। ছোটো ছোটো লাইন-লেখকের কমেন্টের নিচে নিচে-নাকি সিগ্নেচার লাইন। দেখে চমৎকৃত হই। কী অপূর্ব আইডিয়া! কোণায় কোণায় ছবি-কোনোটা মজার ছবি, কোনো কোনোটা সত্যি ফোটো, কিন্তু চেনার মধ্যে অচেনা । কারুর শুধু কপাল,নাক আর কপালের টিপটুক দেখা যায়, কারুর মুখ হাওয়াওড়া চুলে ঢাকা, কারুর আবার জানালার পাশে সিলুয়েট ছবি, মুখচোখ কিছু বোঝা যায় না কিন্তু বোঝা যায় অনুভবে। "কিছু তার দেখি আঁকা/কিছু পাই অনুভবে" র মতন ব্যাপার! বাঃ,বেশ তো! কারুর বা ছবির জায়গায় বাঘের ছবি,পাখির ছবি, আলাদীনের ধোঁয়াদৈত্যের ছবি। এও নতুনরকম লাগে । বেশ অভূতপূর্ব।
তারপরে সিগ্নেচার লাইনগুলো পড়ি একে একে - আর নাড়া খাই আমূল। বিবাগিনীর সিগনেচারে "একাকীত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ" পড়ে চুপ করে বসে থাকি, ঘুঘুডাকা একটা ঝিমঝিমে পুরানো গ্রীষ্মদুপুরের স্বপ্ন ভেসে ওঠে, আকাশে চিল পাক খাওয়া কবেকার সেই দুপুরবেলা, আমকাঁঠালের পাতার ছায়াজাল আঁকা রোদ্দুরের মধ্য দিয়ে তুরতুর করে দৌড়ে যাওয়া সেই কাঠবেড়ালীরা.... সেই দুপুরগুলো সব হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। সঙ্গে হারিয়ে গেছে আমার শৈশব কৈশোর, সেই নবীন স্বপ্নময় সব দিনগুলো। কত কাছে ছিলো ওরা একদিন, আজ সব কতদূরে! নাকি ওরা আসলে ছিলো না, সবই আমার স্বপ্ন ছিলো? কার লেখা ওই লাইনটুকু যা এমন করে নাড়া দেয় অস্তিত্বের মূল ধরে?
চোখ পরিষ্কার হতে দেখি জিনের বাদশার সিগনেচারে লেখা-"যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে ঘড়ির ভিতর লুকাইছে।" আরে! তাই তো! ঘড়িওলাকে বাইরে খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছি সবাই, ঘড়ির ভিতরে লুকিয়ে বসে সে হাসছে! ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার সে মোটেই নয়, সে চক্ষুর ভিতরে আসল চক্ষু, ভিতরে থাকে বলেই বাহিরের চক্ষুর হাত থেকে এড়ায়, আমরা খুঁজে খুঁজে সারা, পাই না, বেলা ফুরিয়ে যায়। হায় জ্ঞানী মানুষ! কার লেখা এই লাইন? কেজানে! হয়তো জানে না কেউ! হয়তো "মনমাঝি তোর বৈঠা নে রে....." মতন। নাম না দিয়ে কত গভীর কথাই তো বলে গেছে কত মানুষ!
একের পর এক পড়তে থাকি, আকালের স্রোতে ভেসে চলা নিশাচর, মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আসা ভাই, উষার দুয়ারে ঘা দিয়ে রাঙা প্রভাত আনতে চাওয়া সব পড়ে যাই। কিছু কিছু চেনা,বেশীই অচেনা। ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে।
অন্যরকম। খুব অন্যরকম। যখন পুরানো পাড়ায় নানা কারণে দমবন্ধ লাগে, ছুটে আসি সচলে। এ যেন ছায়াবটের ছায়া। কেমন রাগ পড়ে যায়,শান্তি লাগে! উগ্র আত্মবিজ্ঞাপন, সংকীর্ণ স্বার্থপরতা আর পিছনে ছুরি মারার বাইরে যে একটা খোলামেলা ভালোবাসার পৃথিবী আছে, ভাইবোন মাবাবা বন্ধু আছে, সুজনমাঝির নৌকা আছে, বুঝতে পারি। সেখানে রঙ কিনতে না পারা গরীব বন্ধু গাছপালাফুলফলমানুষ পেনসিলে এঁকে এঁকে বন্ধুকে দেখিয়ে বুঝিয়ে দেয়-"এইটা সবুজ, এইটা লাল!" ডানপিটে বন্ধুর কাছে কোনোদিন মার খেলে সে গিয়ে বন্ধুর মাকে বলে," কাকীমা, আমি ওরে এত ভালা পাই, ও আমারে মারে কেন?" সেই বালকবয়সেই থেমে আছে সেই ছবি-আঁকিয়ে, সে যে নিজেই ছবি হয়ে গেছে কবে, ছলছল চোখে অবিনশ্বর অভিমান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেইখানেই। অনুতপ্ত সেই ডনপিটে বন্ধু কালের সমুদ্র পার হয়ে কিছুতেই ব্যাকুল হাত বড়িয়ে মুছে দিতে পারছে না তার চোখ! ছায়াবটের ছায়ায় ভেসে ওঠে এরকম কত না-গল্প!
কেজানে কয় লাখ বছর হলো মানুষ বাস করে এই গ্রহে। কিন্তু মানুষ কি যে আসলে চেয়েছে এর কোনো মীমাংসা কোনোদিন হয় নি। কত হানাহানি কত কাটাকাটি হয়ে গেলো! কত কী গড়া হলো কত কী ভাঙা হলো! কী চায় মানুষ! বিরাট জয়? বিপুল যশ? বিপুল অর্থ বিত্ত? বিপুলভাবে ভোগবিলাস করতে পারা? শত্রুকে বিনাশ করা? কী চায়?
এই সচলছায়ার মায়ায় এসে মাঝে মাঝে মনে হয় সামান্য একটা কথা-ভালোবাসা। হয়তো জয়-যশ-শত্রুনাশ-বিত্তলাভ কর্মভোগ শুধু, মানুষের আসল চাওয়া হয়তো এই। মাত্র এইটুকু।
(চলবে)
মন্তব্য
- আপনি আবার ঘুরে ফিরে কঠিন কথায় ফেরত যাবেন? এই গরীব পাঠকের জন্য কি তাহলে কিছুই রবে না? সবই ফানা ফানা হয়ে যাবে? হায়রে মুমিন!
আসেন জিকির করি-
"দ্বীনের নবী মুস্তফায় রাস্তা দিয়া হাঁইটা যায়,
একটা পাখি বইসা ছিলো গাছেরও শাখায়।"
তারপরে জানি কি?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভাইবেন না, এত কঠিন হইবে না! পরে তরল হইবে।
অহনা আপুর এই লেখাটা আগের চেয়ে খানিকটা কঠিন হয়েছে বৈকি তবে খেই হারিয়ে ফেলিনি পড়তে পড়তে। বুঝতে পারছিলেম উনি কি বলতে চাইছেন। কতগুলো লাইন বারবার পড়ছিলাম, একদম হৃদয় ছুঁয়ে গেল। আমাদের সবাইকে এত আপন করে ভেবে নেবার জন্য, আপনার ভালবাসার ভাগিদার করার জন্য আনন্দে চোখের কোনে ভিজে উঠেছিল।
--------------------------------------------------------
পিচ্চি ভুতের বাচ্চা,
তবে রে!!!!!!
)))
ওরে বাবা ! মারতে আসছেন নাকি !!
নাকি লজ্জা পেয়েছেন মন্তব্য পড়ে ???
--------------------------------------------------------
না না, মারতে না। আপু বললে কিনা, তাই।:-)
ভালো লাগলো। ভালো থেকো।
অহনাপু, আসলে আমি সচলের পিচ্চি গ্রুপের মধ্যে পড়ি। আপনিও আমার চেয়ে অনেক বড় হবেন, তাই ভদ্রতার খাতিরে হলেও আপু বলা উচিত। তবে মন থেকেই আপু ডেকেছি আপনাকে। অভয় দিলে একটা প্রশ্ন করতাম। আপনার নামের প্রথম এবং শেষাংশ পড়তে পারলেও আমি মাঝের অংশটি কিছুতেই পড়তে পারলাম না ঠিকমতন। আপনার মত করে বলতে গেলে বলতে হয় রোমান হরফ দিয়ে তো আর সুন্দর বাংলা নাম লেখা যায়না ! মাঝের অংশটা আপনি বাংলায় কিভাবে লেখেন জানতে ইচ্ছে করছিল। 'তুলিরেখা' তাহলে আপনার নামেরই অংশ। এমন সুন্দর নাম কারো শুনেছি বলে মনে পড়েনা।
--------------------------------------------------------
মাঝে মাঝে ইমো আসে, মাঝে মাঝে আসে না কেনা?
মাফ করেন, খাড়ান, একটু পরীক্ষা করে দেখি।
{:-
আপু শুনে আমার খুব ভালো লাগলো বলেই তো ওইরকম বলে ফেললাম তখন,কিছু মনে নিও না।
নাম?
তুলিরেখা প্রত্যূষা অহনা।
প্রত্যূষা মানে হলো ভোরের আলো, ঊষা।
অনেক ধন্যবাদ বাংলায় লিখে দেবার জন্য !
--------------------------------------------------------
শেষ ভুরু কোচকানো ইমোটা এলোনা। যাহ।
'তুলিরেখা প্রত্যূষা অহনা'
কি চমৎকার একটা নাম !!!
আসলেই স্নিগ্ধাপু, এত সুন্দর নাম আমি এখনো পর্যন্ত খুব কম শুনেছি।
--------------------------------------------------------
বিজ্ঞানেও নাই, কবিতাতেও নাই, আছি শুধু ব্লগরব্লগরে। তাই মাঝে মাঝে স্মরণে রাইখেন আমাদের দিকে।
লেখা ভালো হইছে। চলুক।
আগে শেষ হোক। তারপর বলি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
জ্বী অহনাপু... আপনার লেখা কঠিন ভালো লাগলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আসলেই আপু, দারুন লেখা !!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হুমায়ূন আহমেদের কোন এক বইতে (মনে হয় "নবনী") অহনা নামের একটা চরিত্র ছিল। তখন থেকে আমি এই নামটার ভক্ত। আপনার পুরো নামটাই অসম্ভব সুন্দর।
স্নিগ্ধা,
ধন্যবাদ। আপনার নামটিও খুব সুন্দর।
পান্থ,নজরুল,জুলিয়ান,কীর্তিনাশা,প্রহরী-আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।লিখবো, সময় পেলেই টুকরো টুকরো লিখবো।
কঠিনাইজড সহজ লেখাটা শেষ পর্যন্ত ভালো লাগলো
সচলচারণ ভাল্লাগতাছে, চলুক চলুক
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
প্রত্যূষা মানে আমার জানা আছে আপু কিন্তু রোমান হরফে কিছুতেই পড়তে পারছিলেম না। কি জানি কেন ???
আর ঐরকম বলে ফেলার জন্য মনে করার তো কিছু নাই, বরং খুশিই হয়েছি।
--------------------------------------------------------
তুলিরেখা,
একের পর এক বিস্ময়ের ধাক্কা --আমি 'বিস্ময়াহতাহত'।
আমি আপনার এক মনোযোগী পাঠক। আমাদের এই 'সচলাঙ্গনে' অনেক শক্তিশালী লেখক আছেন। লেখকদের মাঝে অনেকেই গদ্য-পদ্য দুটোতেই এমন সাবলীল যে রীতিমত ঈর্ষা জাগানিয়া।
আপনাকে আলাদা করে ভাল লাগে---কারন আপনি খুব সম্ভবত একমাত্র ব্যাক্তি যিনি সমান অনায়াস-সাধ্যতায় লিখে যান গুরুতর বিজ্ঞান আর মর্মস্পর্শী কবিতা।
এইটে আসলেই বিরল।
আজ আরো চমকে গেলাম আপনার নাম শুনে। আমি জানিনা এইটে আসলেই আপনার নাম কিনা---কিন্তু যদি সত্যিকারের নাম হয়ে থাকে তাহলে আমাকে স্বীকার করে নিতে হবে---এরকম অসাধারন নাম আমি আর দুটি শুনিনি। আমি জানিনা কে আপনার এই নাম রেখেছেন। যিনিই রেখে থাকুন----তাঁকে সাধুবাদ।
আপনার গত লেখা পড়ে অবশ্য আরেক বার চমকানো হয়েছিল। দেখলাম নানান নামের মাঝে এই অধমের নাম আপনি উল্লেখ করেছেন। আমি সম্মানীত বোধ করছি।
আরো একটা জিনিস উল্লেখ করে আপনি আমাকে চমকে দিয়েছেন সেদিন। বিবাগিনীর কথা আপনার লেখায় এসেছে। আমার খুব প্রিয় একজন লেখক এই বিবাগিনী।
জানিনা কেন তিনি আমাদের থেকে দূরে থাকেন। আশা করি তিনি সুস্থ আছেন, ভাল আছেন।
ভালো থাকুন, আর আরো ভাল লিখুন।
ব্যস্ততার কারণে আগের মত নিয়মিত পড়া হচ্ছে না বেশ কয়েকদিন, পড়লেও মন্তব্য করা হয় না...অনিকেতদার মন্তব্য পড়ে বেশ ভালো লাগলো, তাই লগাইলাম।
তুলিরেখা, লিখে যান। এমন প্রশংসা খুব কম মানুষেরই জুটে
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
অনিকেত,
সক্কালবেলা এসে সচলে ঢুকে আপনার এত এত প্রশংসা দেখে এক্কেবারে বেগুনী হয়ে গেলাম( সাহেবদের মতন তো আর ফস্সা না যে লাল হবো!!!! )।
আরে আপনার এল এইচ সি এর লেখাটায় কমেন্টাতে গিয়েই তো ঢুকে পড়লাম লিখতে, পরে হিমু শেখালেন কিভাবে বাংলা হরফ লেখা যায় এখানে, নইলে তো নীরব পাঠক হয়েই থাকতাম!
বিজ্ঞান আর কবিতা শুনে শীর্ষেন্দুর এক গল্প মনে পড়ল। একজন খুব বিজ্ঞান চর্চা করতেন, ক্লাব বানিয়েছিলেন, বক্তৃতা দিতেন। একদিন সকালে উঠে দেখেন আকাশে কবিতা,বাতাসে কবিতা,গাছে গাছে কবিতা ঝুলছে।:-))
সেইদিন থেকে তিনি বিজ্ঞান ছেড়ে কবিতা ধরলেন,রবীন্দ্রনাথের মতন দাড়ি রাখলেন,জোব্বা বানাতে দিলেন।:-)))
এই লেখাটা আজ পড়লাম, পড়ে মাঝরাত্তিরে গায়ে কাঁটা দিলো! কী ভয়ানক লেখেন আপনি।
নতুন মন্তব্য করুন