একদিন আকস্মিকভাবে নীরব পাঠক পর্যায় থেকে লেখালিখিতে উন্নতি ঘটলো আমার। অনিকেতের পোস্টে অতিথি হিসাবে কমেন্ট করতে গিয়ে(একটু টাইম-জাম্প করছি এখানে। অনেকের কথা বলার আছে, অসাধারণ সব লেখক পেয়েছি সচলে, নীরব পাঠক পর্যায়েই পেয়েছি তাদের। প্রত্যেকের কথা বহু পাতা ধরে লিখলেও শেষ হবার নয়। এত বর্ণময়, এত ধারালো মোচড়ওয়ালা, এত তীক্ষ্ন, এত গভীর, এত সুনিপুণ, এত তথ্যব হুল, এত ভাবনাজাগানিয়া--- এ যেন এক মহাসমুদ্রের মতন !!!! ভয় করে, দুর্বল কলমে সীমাবদ্ধ সময়ে তাঁদের নিয়ে কতটুকুই বা বলতে পারবো যোগ্য মর্যাদা রেখে। )।
আসি নিজের প্রথম লিখে ফেলার কথাতে। অনিকেত তখন না ঘুমিয়ে (উৎসাহে উদ্বেগে ঘুম নাকি তার উড়ে গেছে তখন! ) নিজের ব্লগে পর পর পোস্ট করছেন সার্ণের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার নিয়ে, উচ্চ শক্তির প্রোটন-প্রোটন সংঘর্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন তখন। বিশ্বজুড়ে তখন এত খরচ করে এইসব করার প্রসংগে নানা লোকের নানা মত। সকলে ভয়ানক উত্তেজিত। কি হয় কি হয়। সুযোগ পেয়ে মিডিয়া আবার নানা গল্প ছড়াচ্ছে। নাকি ব্ল্যাক হোল হয়ে যাবে, দুনিয়া লোপ পাবে, এইসব চলছে! বিজ্ঞানীরা যতই কন আরে না কিছুই হবে না, কে শোনে কার কথা! তো, সেই টগবগের দিনগুলিতেই আর না থাকতে পেরে একজনের প্রশ্নের উত্তরে দিলাম এক পোস্ট মেরে। ইংরেজী হরফে এলো, কিছু তো তখন জানিনা কিকরে বাংলা হরফ করতে হয়! সঙ্গে সঙ্গে ই অবশ্য পরের পোস্টে একজন বলে দিলেন কিকরে ঠিকঠাক লিখতে হয়। ব্যস! হয়ে গেলো। সেই যে শুরু হলো, চলছেই। "একেই নাচইন্যা বুড়ী/ তায় পড়সে ঢোলে বাড়ি।" শুধু কমেন্টই না, রেজিস্টার ফেজিস্টার করে ফেলে ব্লগিয়ে ব্লগিয়ে যারে কয় গুলজার!
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় কতগুলো ভাবনা জেগে উঠলো। আমি সাধারণত ধর্ম বা জাতি বিষয়ক লেখার দিকে বিশেষ যাই না। কারণ এই তর্ক-বিতর্ক সীমাহীন। বিশ্বাসের উপরে যুক্তি চলে না, আর যার যার নিজের নিজের বিশ্বাসের ব্যাপারে আমরা অনড়। একেশ্বরবাদী, বহু-ঈশ্বরবাদী, নিরীশ্বরবাদী, অজ্ঞেয়বাদী বা অন্য কোনো বাদী সকলেই মনে করে তার নিজের মতবাদ ই সঠিক পন্থা। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ব্যাপারেও তাই। যার যার নিজের নিজের টাই সেরা, এতেই মুক্তি---এরকমই বিশ্বাস। এমনকি যার বিশ্বাসটাই না-ঈশ্বরে, সেই নাস্তিক ও মনে করে তারটাই সেরা, বাকীরা কেন বোঝে না কেজানে! এরকম তর্কের কখনো শেষ হয় না, মাঝখান থেকে তার্কিকেরা মনটন খারাপ করে ফেলে, পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হয়। সেইদিক থেকে দেখলে খটোমটো বিজ্ঞান, জটিল কবিতা বা বিমূর্ত গল্প এসব জিনিস মাথাপাগলা করে দেবার ভয় দেখালেও বেশ নিরাপদ লেখা।
দেশ, জাতি নিয়ে এসব নিয়ে লেখা শুরু হলেও কেমন সিঁদুরে মেঘ দেখতে থাকি আমি ঘরপোড়া গরু। আসলে আমি খুব সামান্য একজন মানুষ। আবেগ-অনুভূতিতেও ঘাটতি আছে। আসলে বেসিকালি হয়তো স্বার্থপরই, যখন যেমন তখন তেমন নীতি নিয়ে টুনটুনির মতন পালিয়ে বেড়াই। কাকে ঘৃণা করবো, কাকে ভালোবাসবো, কে বন্ধু, কে শত্রু-এসব খুঁড়তে ভয় পাই। কেজানে কি খুঁড়তে কি বেরিয়ে পড়ে।
বিশ্বায়নের গোলমালে হরিবলের দিনে আমার মতন সামান্য মানুষও বাড়ীঘর পাড়া-পিতিবেশী সব ছেড়ে দুনিয়ার উল্টা দিকে পাড়ি দেয়। আসলে তো স্রোতে ভাসা কুটা মাত্র, নিজের ইচ্ছা কি খুবই বেশী কিছু? বেশীরভাগ সময়েই তো পরিস্থিতির দাসমাত্র, কিসের গর্ব করে বলি নিজের ইচ্ছার কথা?
আমি অল্প অল্প যেটুকু ইতিহাস পড়েছি, সেইটুকু পড়তে পড়তে চমকে উঠেছি। ইতিহাস জুড়ে জাতিতে জাতিতে কী প্রচন্ড ঘৃণা! কি লড়াই, কি অন্তহীন লড়াই! জার্মানে ফরাসীতে লড়ে গেছে, ইংরেজে জার্মানে লড়ে গেছে। স্পেনের ওরা রণতরী নিয়ে এগোয় তো এদিক থেকে এরা রেডি হয়। ইউরোপের জাতিগুলি প্রায় সবাই পরস্পরের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে মরে মেরে একাকার করেছে। ইহুদীদের উপরে ঘৃণা আর অকথ্য অত্যাচার। মধ্যপ্রাচ্যে দেশে দেশে লড়াই। প্রাচ্যেও কম কি? এশিয়ার দেশে দেশে চলছে। আফ্রিকার দেশে দেশে চলছে লড়াই। এসব কোথাও শেষ হয় নি, পূর্বজ থেকে সন্তানে চলে এসেছে শিক্ষায় দীক্ষায়। তীব্র ঘৃণা প্রচন্ড শত্রুতা! পরিণামে একই হাহাকার।
মানুষ কী এখনও মানুষকে পুরো ঘৃণা করে ফেলতে পারেনি? কোটা ফুরিয়ে যায় নি শত্রুতার? কিজানি! হয়তো এখনও অনেক বাকী! মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছু নতুন করে যদি শুরু করা যেত! যদি একদিন হঠাৎ করে --
(চলবে)
মন্তব্য
এই পর্বে আঁচটা বেশী । গদ্যের ও গদ্যকারের । ব্রাভো , তুলিরেখা ।
---------------------------------------------------------
'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুমন সুপান্থ।
-----------------------------------------------
পৃথিবী চায় নি যারে, মানুষ করেছে যারে ভয়
অনেক গভীর রাতে তারায় তারায়
মুখ ঢাকে তবুও সে-
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
- এই লেখায় আবার আমাদের মতো কঁচিকাঁচাদের 'শক্ত লেখা' খাওয়ানো হচ্ছে!
তবে পড়তে মন্দ লাগে নাই। লেখাগুলো একটু প্যারা প্যারা করে দিলে পড়তে আরাম হয় প্রিয় তুলিরেখা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূ গো,
যাক, আফনের মুখেভাত হইয়া গেল।
প্যারা করে দিতে গেলাম তো! ভাবলাম দুই লাইন গ্যাপ দিবে, দিলো না।
মানুষে মানুষে ঘৃণা কিছুটা গোষ্ঠী মানসিকতার থেকেই এসেছে। বিবর্তনে গোষ্ঠীবদ্ধতা অনেক সাহায্য করেছে মানুষকে আর সেই গোষ্ঠীবদ্ধ থাকার জন্য এক গোষ্ঠীর অন্য গোষ্ঠীকে ঘৃণা করাটা স্বাভাবিক ছিল। সেই চরিত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে। দেশ ব্যাপারটা এরকমই একটা গোষ্ঠীর বড় প্রাতিষ্ঠানিক আকার। সময় পেলে এ নিয়ে লিখব।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এক সময় আদিবাসী গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে মানুষের মুন্ডু শিকার হোতো। যে দলনেতা বেশী মুন্ডু পেয়েছে, তার গর্ব বিশাল! সেরা দলপতি সে।
সারা পৃথিবীতেই কমবেশী হয়তো ছিলো এরকমই।
আজ একবিংশের দুনিয়ায় বসে শিউরে উঠি হয়তো, হয়তো বলি কি বর্বর! কিন্তু শিউরে উঠলে কি হবে, ঘৃণার চাষ কিন্তু কম না কোথাও। যুদ্ধযন্ত্রের আড়ালে বর্বরতাও কম না।
অথচ কোথাও তো থামতে হবে!
দুই হাজার বছর হয়ে গেলো, আজ ও ওই মানুষটাকে কেউ নিতে পারলো না, তার অনুগামীরাও না,অন্যরাও না। নইলে এত গণহত্যা এত যুদ্ধ---এসব হয়?
হয়তো মানুষ আজো সেই পর্যায়ে আসে নি এখানো। হয়তো লাগবে আরো আড়াই হাজার বছর, যদি না তার আগেই সবাই লোপ পাই আমরা ডাইনোদের মতন।
পড়ে যাচ্ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনার পর্বগুলো শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি..... তখন একসাথে বলব কেমন লাগছে। এখন আপাতত পর পর সব পড়ে যাচ্ছি
------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এই সিরিজের সবগুলো লেখা পড়লাম। বেশ ভালো লেখনী। আপনি কি মজলিশ তথা বাংলালাইভের আই.পত্রিকার প্রত্যুষা?
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ভালো হচ্ছে।
আর আমার নাম আসায় এই পর্ব খুবই চমৎকার হয়েছে
হে হে হে
মানুষের প্রতি মানুষের ঘৃণার হয়তো এখনো ঢের বাকি শেষ হতে ! অথবা হঠাৎ করে কোনো শুভদিন চলেও আসতে পারে। জানিনে !
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম তুলিপু।
--------------------------------------------------------
যারা যারা পড়লেন সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
পরের পর্ব আসবে কিছুদিন পরে। দৌড়ের উপর আছি।
ঝরাপাতা,
হ্যাঁ, আমি সেই।
(আপনার নামটি খুব চমত্কার! )
অনিকেত,
হা হা হা হা। ))
আপনার এল এইচ সি এর কেরামতি না থাকলে চিরকাল নীরব পাঠক থেকে যেতাম ( মনে হয় ভালোই হতো সেটা
ধন্যবাদ। আমার প্রোফাইলের ছবিটাই আসলে ওই নামের উৎস।
অফটপিকে বলে রাখি, আমিও একসময় মজলিশে আর আই.পত্রিকায় নিয়মিত ছিলাম অভ্র (চলতি পথের পথিক) নামে। এখন আর ব্যস্ততার জন্য লেখা হয় না। আপনার কবিতা আমি পড়েছি এবং বেশ ভালো লাগে আপনার কবিতা। এখানেও আশা করি নিয়মিত কবিতা পাবো।
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ঝরাপাতা(নাকি চলতি পথের পথিক?),
ঝটপট লেখা দিন তো এখানে, পড়ি।
(অফটপিকে)
ওখানে আপানি লিখতেন শুনে ভালো লাগলো।
প্রত্যূষা তো এইবারের আই এর পুজোসংখ্যা থেকে গদ্য লেখা ধরেছে। পড়ে প্লীজ বলবেন কেমন লাগলো। এমনি তো বললে কেমন শোনায়, মডুরাও মনখারাপ করে, তাই নাহয় রিভিউ লিখুন।
পরে আমি "বাংলা কল্পবিজ্ঞান -পুবে ও পশ্চিমে" রিভিউ করে করে কিছু লিংক দেবো একটা ব্লগ লিখে।
নতুন মন্তব্য করুন