সচলায়তনে যে জন্য প্রথম আসা তা হলো অণুগল্প সংকলন। পড়তে চমৎকার লাগছিল স্ফুলিংগের মতন গল্পগুলো। বিন্দুতে সিন্ধু। একটিমাত্র অশ্রুর ফোঁটায় যেমন ধরা থাকে অনেক না-বলা কথা,আলো পড়লে যেমন জ্বলজ্বল করে ওঠে অন্তহীন কাহিনির মুক্তাদানা -তেমনই এই সব অণুগল্পগুলো। যতটুকু বলা থাকে তার চেয়ে অনেক বেশী থাকে ভাবনার পরিসর।
কদিন আগে মাহবুব লীলেন তার একটি প্রকাশিত অণুগল্প আবার দিলেন দেখে সব মনে পড়ে গেল নতুন করে। অসাধারণ গল্পটি। তরুণবয়সে মৃত্যুপথযাত্রিণী এক মেয়ের লেখা চিঠি-বন্ধুকে লেখা চিঠি। পড়তে পড়তে চিনচিন করে বুকের ভেতরে, কিশোর বয়সে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের মনে পড়ে, যাদের আর বয়স বাড়েনি, অমলীন সেই দিনগুলোতেই নবীন উজল চোখ মেলে দাঁড়িয়ে আছে তারা। সময় আর তাদের ক্ষয় করতে পারে নি। দুনিয়ার কঠিন কালিমা আর তাদের মলিন করতে পারেনি। এক বিন্দু গল্পে এমনি গোটা আকাশ ছায়া ফেলে, মুগ্ধ হয়ে বসে থাকি পড়ার পরে।
ঠিক হেমিংওয়ের সেই অণুগল্পটির মতন-" একজোড়া শিশুদের জুতা বিক্রি আছে, কখনো পরানো হয় নাই।" কত কাহিনি যে বুনে ওঠে সামান্য লাইন কয়টা থেকে-একেকজনের কাছে একেকরকম কাহিনি, তরুনী সদ্য-মা-হতে-চলা মেয়ের কাছে একরকম, তরুণ বাবার কাছে একরকম, মাবাবা হতে চেয়েও না হতে পারা দম্পতির কাছে একরকম, সন্তানহারানো দম্পতির কাছে একরকম, বাধ্য হয়ে সন্তান দত্তক দিয়ে দেওয়া মায়ের কাছে একরকম। অসংখ্য আয়না ওয়ালা ঘরের মতন, অন্তহীন ঘর। অন্তহীন বেদনা, অন্তহীন আনন্দ, অন্তহীন যন্ত্রণা,অন্তহীন পুলক, অন্তহীন হারানো, অন্তহীন পাওয়া।
এরপরে অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আরো একটি গল্পসংকলন প্রকাশ হয়ে গেল কমাস পরেই। এইটাই আমাকে অবাক করলো সবচেয়ে বেশী। এই তত্পরতা। সদর্থক পরিশ্রমসহকারে সত্যি করে কোনো কাজ করে ফেলা।
কমদিন তো হলো না নেটে ঘোরাঘুরি করি,কত শত প্রস্তাব, কত শত বিপ্লবের প্রস্তুতি, কত শত "এই বুঝি শুরু হলো রেভোলুশন" ধরনের ব্যাপার দেখলাম। সবই শেষ অবধি সুনীলের "কেউ কথা রাখেনি" তে দাঁড়ালো, তাও দেখলাম। সেখানে সচলায়তন এর এইসব প্রকাশনা আমার কাছে শক খাওয়ানোর মতন ব্যতিক্রম। এইসব স্তাবকতার জন্য বলছিনা, আসলেই ভালো লেগেছিল এই ব্যাপারটা। প্রথমে খুব নিয়মিত ছিলাম না, আস্তে আস্তে যে নীরব পাঠক পর্যায়েই নিয়মিত হয়ে গেলাম তার নেপথ্যে এইসব টুকরো টাকরা ঘটনাই রয়েছে।
আর একটা জিনিস যা খুব মন টেনেছিল তা হলো লেখার বৈচিত্র। একজন ব্লগে কবিতা লেখেন তো আরেকজন লেখেন ভ্রমণ কাহিনি, তো তার পরেই আসে বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আসে কল্পবিজ্ঞান, আসে রহস্যকাহিনি, আসে হাসির লেখা, আসে নাটক, আসে পরিবেশবিষয়ক লেখা-এই বিপুল বৈচিত্র আর রুচিশীলতার সীমা কখনো না লংঘন করা-এই কারণেও লোভ দিন দিন বাড়তে লাগলো।
(চলবে)
মন্তব্য
রসালো গল্পের চালান কমে গেছে আজকাল, দ্রোহী ভাইয়ে মিস করি খুব উনার মজার মজার গল্পগুলোর কথা মনে হলে। লীলেনদার ঐ গল্পটার কথা আমিও বেশ ভালই মনে করতে পারছি এখন।
লেখার বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলছিলেন; তুলিপুর লেখাতেও তো বেশ বৈচিত্র্য দেখতে পাই আমরা !
এই পর্বটাও পড়লাম, অন্যগুলোর মতই প্রাণবন্ত হয়েছে। ভাল লাগল অবশ্যই।
--------------------------------------------------------
- এই পর্ব মজাদার আর 'ফুরুৎ'!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এত মজা কিসের? বলি এত মজা কিসের?
:)
- মজার কথা সবিস্তারে বলতে বড়হুজুরের ইজাজত নাই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ইজাজত দিলাম। মজার কথা পুরোটা খুলে বলুন।
- আরে এইটা কইত্তে আইলো?
জ্বী না হুজুরে আলা, এইসব নাই। হাকিম নড়ে তবুও হুকুম নড়ে না! ফাইজলামী পাইছেন আমার লগে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বড়হুজুর কি হাজির আছেন?
এই বিপুল বৈচিত্র্য আর রুচিশীলতার সীমা না লংঘন করা সচলের প্রতি আপনার লোভ দিন দিন বাড়ুক, এটাই কামনা করছি।
ভালো লাগছে প্রতিটা পর্ব।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নিয়মিত পড়ছি....
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আপনার সচলচারণ গুলো ভাল লাগছে।
এই সিরিজটা দারুণ হচ্ছে। আপনার লেখার হাতও চমৎকার।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অভিনন্দন তুলিকে, বিষয়টা নতুন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
কথকের নাটাই মনে হয় বিশাল। কথার সূতোও মনে হয় আরো দীর্ঘ। ভালো হচ্ছে কিন্তু!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
আপনাদের ধন্যযোগ।
আসলেই কথা অনেক, সব কথা কইতে ডরাই।
আস্তে আস্তে কিছু কিছু কইবো যেগুলি কওয়া যায়।
চালিয়ে যান
আরো কয়েক পর্ব হয়ে গেলে আমি আপনার লেখা থেকে কাটপেস্ট করে করে এই বিষয়ে নিজের একটা লেখা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারবো
চলুক
লীলেন, আরে কন কি? কাটপেস্ট? কাপিরাইটের আইনে ফাইস্যা যাইবেন যে!
নতুন মন্তব্য করুন