সচলচারণ ৮

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শুক্র, ৩১/১০/২০০৮ - ৯:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকের লেখাটা লিখতে গিয়েও বহুৎ‌ চিন্তায় পড়েছি। ভাবছি বলবো কি বলবো না? বললে ভয়ে বলি কি নির্ভয়ে বলি?( আগে জানতাম প্রভুর সামনে এরকম কইলে প্রভু অভয় দেন, সেরকমই নাকি দস্তুর। এরকম দেখেছি পুরানো রাজতন্ত্রের সময়কার ঘটনা নিয়ে তৈরী নাটক ইত্যাদিতে। কিন্তু কিছুদিন আগেই এক বাংলা নাটকে দেখলাম ভিলেন তার সাগরেদকে কইছে,"আরে ভয়ে বল্‌ হতভাগা, আমার সামনে নির্ভয়ে বলবি কিরে? তোর এত আস্পর্ধা!!!!" হাসি )

প্রথম সচলচারণেই বলেছিলাম নেটে আমি পুরানো পাপী। বহুদিন থেকে ঘোরাঘুরি। তো, নানা সাইটে যাই, এটা ওটা নিয়ে বকমবকম করি (যদি ফোরাম ধরনের কিছু থাকে ), কিছুদিন পরে দেখেটেখে বেরিয়ে আসি। প্রথমদিকে বেশীরভাগই ছিলো অনিয়মিত সাইট, আপডেট হত কালেভদ্রে। এই করতে করতে এক জায়গায় গিয়ে বেশ কায়েমী হয়ে গেলাম(না না, চিন্তা নেই,নাম করবো না কিছুতেই। আমি শুধু ব্যক্তিগত ভালোলাগা মন্দলাগা কইছি, এতে আর কারুর দায় নাই, পাঠকগণ উত্তেজিত হবেন না হাসি ) প্রথমে ওখানে বেশ ভালো লাগতো, নানারকম আলাপ-আলোচনা হতো, গল্প, কবিতা স্মৃতিচারণ মজারু সজারু সবই হতো। মনে হয়েছিলো বা:, বেশ তো! এমন সব আলোড়নকারী আলোচনা হতো যে খুবই আশাজনক লাগত, উদারপন্থী সব লোকজন-আউট অব দ্য বক্স চিন্তাভাবনা, মনে হয়েছিল এই লোকেরা জেগে উঠলে হয়ত সমাজের বদ্ধজলায় পরিবর্তন আসবে, ভালোর দিকে।

কিন্তু আশায় মরে চাষা। ক্রমে সব গেলো হেজে। দেখা গেলো সেখানে প্রায় সব একই পেশার লোক, হাতেগোণা দুয়েকজন বাদে। আলোচনাও সব ছকে বাধা হয়ে গেলো আস্তে আস্তে। সেই একই খাড়া বড়ি থোড়-গাড়ী, ফ্ল্যাট, ক্যামেরা, দামী মদ, দামী ইস্কুলে বাচ্চাকে দেওয়া যায় কিকরে আর মাঝে মাঝেই নিজ নিজ কম্পানির বড়কর্তাকে মেজোকর্তাকে অথবা যেই উপরে আছে তাকে গালাগালি। এইভাবে সবটাই একই পেশার কর্মীদের সন্ধেবেলার ক্লাব হয়ে গেলো। সমাজবিপ্লব, মার্কস, লেনিন, জন লেনন, পাবলো নেরুদা, অক্তাভিও পাজ, চমস্কি,সাম্যবাদ, চার্বাক সবই ঘুরেফিরে আসতে থাকলেও বোঝা গেলো আসলে এগুলো বলতে হয় বলে বলা, কাজের বেলা এসব না, তখন ওই গাড়ী বাড়ী টাকা ওসব। তা হোক, মানুষ তো এসব চাইবেই, ভালো থাকতে, সুখে থাকতে কেনা চায়! কিন্তু ভয়ের যেটা লাগলো সেটা ওই ছকে পড়ে যাওয়া, ঝাঁকের মত। সেই "বয়েজ ফ্রম ব্রাজিল" বা "ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ডের" ক্লোনেদের মতন, অর্ডার দিয়ে তৈরী শত শত মানুষ, একরকম সব, একজন আরেকজনের কপি, দলে দলে মানুষ, একভাবে কাজ করে, একই কথা বলে, ঝগড়াও করে একইভাবে! একই ভাবে হাসে, একইভাবে কাঁদে! রোবোটের সংগে তফাত কি? ভাবলেই শিরদাঁড়া দিয়ে শীত-শীত একটা কি বয়ে যায়। আকাশ বাতাস ধাতব লাগে!

পেশা ও নেশা বৈচিত্র হীন সেখান থেকে পালিয়ে পালিয়ে ঘুরে বেড়াই, একদিন সচলে এসে পড়ি, আস্তে আস্তে চিনতে থাকি। আমায় সবচেয়ে আশ্বস্ত করে মানুষের বৈচিত্র। নানা পেশার লোক দেখি, কেউ ছাত্র, কেউ ছড়াকার, কেউ নাট্যকার, কেউ সিনেমা বানান, কেউ চিংড়ীর ভেড়ি চালান, কেউ অধ্যাপক, কেউ নৃত্যশিল্পী, কেউ শিক্ষক, কেউ বা এসব কিছু না, একদম নতুন কিছু করেন। লেখার মধ্যে ধরা পড়ে এই জ্যান্ত সমাজ, মানুষের সৃষ্টিশীল মনুষ্যত্ব এখনো যেখানে ছকে পড়ে যায় নি। ভালো লাগে, রোবটদুনিয়ার ভয়ের সেই শীত-শীত ভাবটা কেটে যায়, আরামদায়ক একটা উষ্ণতা টের পাই,প্রায় রোজই আসতে থাকি সেই উষ্ণতাটুকুর জন্য।

(চলবে)


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার লেখা পড়তে বড়ই আরামবোধ হয়.... সিরিজ চলুক...

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

প্রহরী,
সিরিজ চলুক সিরিজ চলুক করতে করতে শেষে না সেইরকম হয়! হাসি
সেই উজীরের গল্প মনে আছে? দাবার বোর্ডের একেকটা ঘর বাড়ে আর ২ টা গম, ৪ টা গম, ৮ টা গম এরম করে করে দুগুণ দুগুণ করে বাড়ে! হাসি
তখন সবাই আমারে তাড়া করবো পাথর লইয়া-" ঢিলা, চাককা , অরে চতুঃসীমা পার কর"। হাসি

জুয়েল বিন জহির এর ছবি

এতো সুন্দর গুছিয়ে লিখেন কী করে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আরামদায়ক একটা উষ্ণতা টের পাই,প্রায় রোজই আসতে থাকি সেই উষ্ণতাটুকুর জন্য। ........................... খুবই সত্য কথা ।
নিবিড়

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে অনুমান করা যায় না ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে আপনি শেষ পর্যন্ত ঘাই মারবেন

এটার সাথে সাথে আপনার অন্য লেখাগুলোও ছাড়েন
(দয়া করে কম্পু বিজ্ঞান রাসায়ণ আর গণিত বাদ দিয়ে)

নন্দিনী এর ছবি

মাহবুব লীলেন, এটা তো ঠিক না ভাই... উনাকে লিখতে দিন । আমরা যার যেমন রুচি সে অনুযায়ী পাতে তুলে নেই... কি বলেন ?ঃ-)

নন্দিনী

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

কি আর কমু, আফনেগো হগলডিরে ধইন্যবাদ।
আরে লীলেন, কি যে কন, কম্পু বিজ্ঞানের কি বা জানি যে কমু! আর অংক? সেতো আরো জটিল! হেই জিনিস আমি লেখতে গ্যালে মহাভেজাল হইয়া যাইবো।
আমি ব্লগরব্লগর কইরাই আফনেগো মাথা খামু। চোখ টিপি
তবে এক বার একটা গপ্পো দিবার সাধ আছে। হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

কলম চলবে ফ্রি-স্টাইল, এই তো চাই ! চলুক। যে দিকে খুশি। আপনার নিজের মত আপনি প্রকাশ করবেন। কে কী ভাবলো তা যার যার নিজের ব্যাপার। মতভিন্নতা থাকতেই পারে এবং থাকাটাই উচিৎ। নইলে সেই যে রোবটিক বললেন, তাই হয়ে যাবে। আমরা তা হতে দেবো কেন ?
আপনার সহায়ক একটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি-

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

লেখাডা ভালা হইছে তুলিপু, এক নিঃশ্বাসেই পড়ে ফেললাম। আপনার লেখার বড় ভক্ত হইয়া যাইতেছি দিনে দিনে। দেখলেই লোভ সামলাতে পারিনা, পড়তেই হয়।

--------------------------------------------------------

পরিবর্তনশীল এর ছবি

চলুক। দারুণ হচ্ছে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যাক... অন্তত এখনো অজ্ঞানে আছেন... তাতেই শান্তি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

জ্ঞানী আবার কবে হইবার কথা আছিলো? চোখ টিপি
সিরিয়াস, আফনেরা এইসব টিভি সিরিয়াল, নাটক, গান, মত্‌স্যচাষ- সত্য সত্য করেন না?

মাল্যবান এর ছবি

ইস্ রে এতদিন আপনের লেখা পড়িনাই কেমনে! নিজেই নিজের কান মলি।
আসলে আপনের শিরোনাম দেইখা হোঁচট খাইতাম। বানান কইরা পড়ি তো তাই।
অনেকদিন পর বড় আরাম কইরা একটা লেখা পড়লাম।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

মাল্যবান,
আপনি স্বাগত। আমার সামান্য ব্লগরব্লগর পড়ে আপনার ভালো লেগেছে শুনেই আমার ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

রেখা দিয়ে তুমি এঁকে গেলে ছবি,
তুলি দিয়ে বেশ রাঙালেও তাকে--
মনের কথাটা জানালে এ ফাঁকে,
তুলিরেখা তবে তুমিই কবি...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

খাইছেরে! আমি কই যাই! মনডা ফানুষের লাহান উড়াল দিতাম চায় দেহি। কবি বানাইয়া দিছে দেখি! হো হো হো)
নানা কারণে কয়েকদিন সচলচারণ বন্ধ। অনির্দিষ্ট কাল পরে আবার শুরু হইবে। চোখ টিপি

তুলিরেখা এর ছবি

অনেকদিন সচলচারণ লেখা হয় নি। এই সচলচারণ লিখতে গিয়েই প্রথম পাঠকের ভালোবাসা টের পেয়েছিলাম। সামনের সপ্তাহে কোনো সময়ে আবার লিখলে আপনারা কি
পড়বেন তেমনই ভালোবেসে?
ভালো থাকবেন সবাই।
-----------------------------------------------
পৃথিবী চায় নি যারে, মানুষ করেছে যারে ভয়
অনেক গভীর রাতে তারায় তারায়
মুখ ঢাকে তবুও সে-

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

আবার সচলচারণ করবো একবার, দুইবার, চারবার .....
এত কবি এত কবি এখানে! ফকির, সুপান্থ, পান্থ, নিঝুম, ঝরাপাতা,পলাশ, আজকাল ধূসর গোধূলিও কবিতা লেখা ধরেছেন, কী অসাধারণ! কবি বিষয়েই চারণের পর চারণ করা যায়! হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আবার কবিতা! মাফ কইরা দেওন যায় না?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

যাইবেন কই?
কবিতার কাঁথা লইয়া আসতাছি। দেঁতো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

পরের পর্ব চাই!!!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।