ইতিহাসবৃত্ত

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ০৯/১১/২০০৮ - ৭:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নী (Cont)

পড়ার ঘরে দিওতিমা ছিলো, ওরিন তাভাম রীহা জুইক তুরি কিজা রুফাস মিলে সকলেই ছিলো। শুধু ইলক তখনো আসে নি, ইলকের মাঝেমাঝেই দেরি হয়, সে ছবি আঁকে কিনা, তাই আঁকতে আঁকতে ভুলে যায় যে পড়ার ঘরে যাবার সময় হয়ে গেছে। নী গিয়ে দিওতিমার পাশে বসে পড়ল। দিওতিমা ওর দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে খুব মৃদুস্বরে বলল,"নী, আজকেও গেছিলি গ্যালাক্সি দেখতে?" নী কথা না বলে স্মিতহেসে মাথা দুলিয়ে জানায় সে গেছিলো। ওদের কথার মাঝখানেই সে দেখলো ইলক আসছে সাইননের হাত ধরে। সাইনন ইলকের দেখাশোনা করে,সে ধাতুনির্মিত রোবোট হলেও তার মুখখানা কেন জানি নী'র বেশ ভালো লাগে, তার মনে হয় সাইনন যেন হাসছে!

ওদের শিক্ষিকা রুশা, সেও রোবোট, কিন্তু সেকথা রুশাকে দেখে ওরা বোঝে না, নরম মিষ্টি চেহারা রুশার, দিওতিমা বলে রুশাকে মা-মা দেখতে। তারা কেউ জানে না মা কেমন হয়, তাদের জন্মই হয়েছে কত অন্যরকমভাবে! কিন্তু কোথায় মনের খুব গভীরে মাতৃস্মৃতি রয়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ বছরের এভোলুশনকে তো আর মুছে দেওয়া যায় না! রুশাকে দেখলে তাদের ভালো লাগে, ওর মুখের হাসিটাও ভারী মিষ্টি। যতবার রুশার হাসি দেখে, ততবার নী'র মনে পড়ে জিনির কথা। কি হলো জিনির? আর তার সাথে দেখা হবে না?

শৈশবে জিনি ওকে দেখাশোনা করতো। খাওয়াতো, পরিষ্কার করতো, সাজাতো, পোশাক পরাতো,কোলে নিয়ে দোল দিতো। হালকা নরম সুরে কথা বলত জিনি ওর সঙ্গে।জিনির কথা ধরে ধরেই কথা ফুটেছিলো নী'র। জিনির মুখের হাসি ছিলো খুব মিষ্টি। এই রুশার হাসির সাথে কোথায় যেন মিল! কি হলো জিনির? একদিন জিনির বদলে এলো ওরাক! ওদের সবারই ছোটোবেলার রোবোট বদলে গেছে। এইরকমই নাকি নিয়ম। কে করেছে এইসব নিয়ম? নী জিনিকে দেখতে চায়! এখনো মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে তার মনে হয় জিনির পোশাকের নরম প্রান্তটি বুঝি তাকে ছুয়ে গেলো! আর কোনোদিন দেখা হবে না? কোথায় গেলো নী'র জিনি? দিওতিমার সেম্মা? তাভামের মিমা রা? সকলের ছোটোবেলার ন্যানিরা?

কোনো কারণ নেই তবু নী'র মাঝে মাঝে মনে হয় ওদের সঙ্গে আর কোনোদিন দেখ হবে না। কেউ জানে না ওদের কি হলো! রুফাসকে কিজাকে তুরিকে-সবাইকে জিজ্ঞেস করেছে নী। কেউ কিছু বলতে পারে নি, ওরা জানতে আগ্রহীও না। ওরা ব্যস্ত ওদের পড়াশোনা,খেলাধূলা, হবি এইসব নিয়ে।

কিন্তু নী'র মন কেমন করে। মাঝে মাঝে সে যখন দিওতিমাকে নিয়ে ওই উপরের গোল বারান্দায় গিয়ে বসে গল্প করে, ওরা বসে কুট্টি কুট্টি গোলাপী ফুলওয়ালা লতাটার নীচে রাখা দুখানা চেয়ারে। নী বানিয়ে বানিয়ে সে গল্প বলে একের পর এক, ওর সব গল্পেই কোনো কোনো চরিত্র থাকে ন্যানির। বাকীরা ওদের এই বানিয়ে গল্প বলা আর শোনার খেলায় উত্‌সাহী না, এই খেলা শুধু নী আর দিওতিমার। অন্যেরা মেকানো বানায়, বোর্ড গেম খেলে, কার্ড গেম খেলে, অডিভিডি গেম খেলে, এমনি হুটোপাটি করা খেলা খেলে সবাই মিলে--ওসব খেলায় নী আর দিওতিমাও যোগ দেয় বেশীরভাগ সময়েই। শুধু মাঝে মাঝে কোনো কোনো দিন ওদের এসব ভালো লাগে না, তখন ওরা চলে যায় উপরের গোল বারান্দায়, গল্প বলা আর শোনা খেলতে।

কিছুদিন আগে নী গল্প করছিলো, অদ্ভুত এক দেশ, কিছু আলো কিছু ছায়া সেখানে। সেখানে আকাশে মেঘ ভেসে যায়,বৃষ্টি পড়ে -সে দেশ খুব সবুজ! সেখানে এক ছোট্টো মেয়ে দিয়া আর ওর ন্যানি থাকে বিরাট এক প্রাসাদে ..... দিওতিমা শুনছিলো গালে হাত রেখে, দুচোখ বড় বড় করে মেলে। আকাশ মেঘ নদী সমুদ্র পাহাড় সব ওদের চেনা, এসব ওরা চেনে শুধু থ্রী-ডি প্রোজেক্টরে দেখে দেখে। কিন্তু সত্যি করে ওসব কেমন হবে? এসব নিয়ে কেমন গল্প বানিয়ে ফেলে নী! বলতে বলতে সে নিজেই অবাক হয়ে ভাবে সে কিকরে এইসব বলে? এসব কার স্মৃতি?

(চলবে)


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- খাইছে! এবার তাইগ্রীস-ইউফ্রেতিস ছেড়ে একেবারে গ্যালাক্সির খটমটে গ্যাড়াকলে? চিন্তিত
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দ্রোহী এর ছবি

ওরে সব্বোনাশ!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! আমি দ্বিতীয় পর্বের পর প্রথম পর্ব পড়লাম।


কী ব্লগার? ডরাইলা?

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুন চলছে, চলুক ।

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

কি ব্লগার, ডরাইলা? চোখ টিপি

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

দুনিয়াজোড়া গিয়ানজাম দেইখা গালাকসিত্‌ লইয়া ফালাইছি। হাসি
ডরাইয়েন না ব্লগার। চোখ টিপি

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আমি ঠিকই ডরাইসি! এমন কাহিনী পড়লে আমার মাথা কেমন আউলাইয়া যায়।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।