ফিনিক্স-১ (cont.)
সংরক্ষিত তথ্যের ঘর! সে ঘর এই যানের একদম সর্বোচ্চ জায়গায়। অবশ্য মহাকাশে কোনটা উপরে আর কোনটা নীচে এমনিতে বলা ভারী শক্ত। কিন্তু কৃত্রিম অভিকর্ষের ব্যবস্থা করা আছে বলে এরা ভারশূন্যতা অনুভব করে না। মেঝেতে হেঁটেচলে বেড়াতে পারে স্বাভাবিকভাবেই। মানবশিশুদের ঠিক গন্তব্যগ্রহের সমান অভিকর্ষের মধ্যে বড় করা হচ্ছে, নইলে গ্রহে পৌঁছে এরা মানিয়ে নিতে পারবে না, ফিনিক্সের পুরো উদ্দেশ্যটাই তাহলে বৃথা হবে। তাই এদের কাছে উপরের ঘর বা নীচের ঘর এসব কনসেপ্ট জানা। ভারশূন্য হয়ে ভেসে বেড়াতে হলে এরা জানতেই পারতো না উপর নীচ কাকে বলে!
ঐ সংরক্ষিত তথ্যের ঘর এদের কাছে "ফরবিডেন জোন"। ওদের কাউকেই ওখানে যেতে দেওয়া হয় না। বয়স পনেরো হবার আগে দেওয়া হবে না জানে সবাই। রুশা বলেছে ওদের সবাইকে। নী ভাবে কি মজাটাই না হবে সেই বিশেষ জন্মদিনে! রঙীন কাগজ, অনেক বেলুন আর টুনিবাতি দিয়ে ঘর সাজানো হবে, কেক কাটা হবে, গান গাওয়া হবে। তারপরেই কি সবাই ছুট দিয়ে ওই ঘরের দিকে যাবে তারা? নাকি অন্যরকম হবে সবকিছু? কল্পনার সঙ্গে মিলবেই না একটুও?
নী ভাবে এই যে জন্মদিনে ঘর সাজানো, বাতি জ্বালানো, কেককাটা, গান গাওয়া, এইসব কোথা থেকে শুরু হলো? রুশাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে এসব নাকি নিয়ম। ওদের প্রতি নাকি এইরকম নির্দেশই আছে! কারা দিলো নির্দেশ?এসব নিয়ে আরো জিজ্ঞাসা করলে রুশা হাসে আর বলে এসব তো জানা কথা, সকলেই জানে! এসব নিয়ম টিয়ম নিয়ে বেশী জিজ্ঞেসই নাকি করতে নেই! নিয়ম আছে মানার জন্য, কোথা থেকে এলো, কারা দিলো সেসব অবান্তর। নী অবাক হয়ে ভাবে কেন এমন? জানতে চায় বলেই তো সে জিজ্ঞেস করে! জানতে চাওয়া তো অন্যায় হতে পারে না! জানাতে না চাইলে তাদের এই স্কুলেরই বা কি দরকার ছিলো?
মাঝে মাঝে কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে রুশা বলে বড় হলে নাকি জানতে পারবে তারা। নী ভাবে কেমন ছিলো সেই মানুষেরা, এইসব রীতিনীতিনির্দেশমালা যারা দিয়েছিলো? তারা কি তাদের মতন মানুষই ছিলো নাকি অন্যরকম? তাদের কথাই কি জানতে পারবে ওই সংরক্ষিত তথ্যের ঘরে? নী ছটফট করতে থাকে বহু আকাঙ্খিত সেই বিশেষ দিনটা আসার জন।
স্কুল শেষ হলে রুশা হাসিমুখে বিদায় দেয় ওদের সবাইকে এক এক করে। দিওতিমাকে নিতে আসে রুহাম, রুহানের দেহ ধাতব, কিন্তু মুখ দিব্যি হাসিখুশী! নী ভাবে তার কপালেই পড়লো কিনা ওরাক, যে হাসতে জানে না!
দিওতিমাকে হাত নেড়ে বিদায় দিতে সেও হাত নেড়ে চলে যায় রুহামের সঙ্গে, তার হাত ধরে। পরদিন স্কুলটাইম আর প্লেটাইমের আগে আর দেখা হবে না। প্রতিদিন বিদায়বেলায় মনখারাপ হয় নী'র। কি ক্ষতি হতো যদি স্কুলের পরেও আরো অনেকক্ষণ একসাথে থাকতে পারতো সে আর দিওতিমা!
মহাকাশে দিনরাত নেই, সবই এক, অন্তহীন বিভাময় বিভাবরী। তাদের গন্তব্যগ্রহটিকে নাকি প্রায় ত্রিশঘন্টার দিনরাত্রি ঘুরে ঘুরে আসে। তাদের জন্যও তাই ফিনিক্সে সেইভাবেই ব্যবস্থা করা।
রুহামের পর আসে সেরাক, সে তাভামকে নিয়ে যায়। সেরাকের মুখ আরো শক্ত,সেরাকও কখনো হাসে না, কিন্তু তাতে তাভামের কোনো হেলদোল আছে বলে মনে হয় না, সে এসব কেয়ার করে না। সে থাকে তার নিজের হবি নিয়ে, তাভামের হবি গানবাজনা। তার একটা বেহালা আছে, সে অবসরে সেটা বাজায়। তার বেহালার করুণ সুর একদিন শুনেছিলো তারা সবাই।
আজকে সবাইকে "বাই বাই" করে সেরাকের হাত ধরে যখন তাভাম চলে যাচ্ছে, তখন নী'র হঠাত্ মনে হয় হয়তো তাভামও তার মতন মনের ভাব লুকিয়ে রাখে। ব্যাখাতীত একটা অনুভব কাঁপিয়ে তোলে নী'কে, তাভামের জন্য কোনো কারণ ছাড়াই চোখে জল আসতে চায় তার। মনে হয় তাভাম তারই মতন স্নেহ খুঁজে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না। নী অবাক হয়, এরকম কেন লাগছে তার? কোনো কারণ সে খুঁজে পায় না। তাভাম হয়তো এসব সত্যিই কেয়ার করে না! সে বোকার মতন ওসব ভাবছে! নী জানে না বহুকাল আগে যখন তাদের গন্তব্যগ্রহে মানুষ বাস করতো তখন তার সেই অনুভবকে নাম দিয়েছিলো সমবেদনা। সেই অপরূপ অনুভূতির ধিকারী হয়েও যে তারা কেন .....
ওরাক আসছে, নী নিজেকে সামলে নেয়। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গীতে সকলকে বিদায় জানিয়ে চলতে থাকে ওরাকের সঙ্গে। তার ঘর বেশ দূরে, যানের একেবারে প্রান্তে। নির্জন ঘরটি ভালোই লাগে নী'র, তার কয়েকটা ফুলের টব আছে, তাতে নানারকম ফুলগাছ লাগিয়েছে সে, স্কুল থেকে ফিরে তার প্রধান কাজ অনেকক্ষণ ধরে পুষ্পপরিচর্যা! এই কাজটি খুব ভালো লাগে তার।
(চলবে)
মন্তব্য
পুরো লেখাটা তৈরি আছে আপনার? তাহলে একসাথে দিয়ে দিতেন! কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাস একসাথে পুরোটা পড়তে না পারলে সমস্যা।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
সুন্দর।
আর হ্যাঁ, এইরকম জিনিস এত পরে পরে একটু একটু খুচরো খুচরো প'ড়ে হাউশ মিটছে না।
------------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
আসলে লেখাটা নাই। লেখতে লেখতে তৈরী হইয়া উঠতাসে। ভ্রূণের প্রস্ফুটনের মত!!
আলট্রাসোনোতে যেমুন দেহা যায়, এই তো হাত, এই তো মাথা!
শেষ হইবো যেদিন, সেদিন তো সে পৃথক সত্তা হইয়া যাইবো! আর তো সে আমার থাকবো না! সেই ঈর্ষায় কত ল্যাখা আমার শেষ হয় নাই,অর্ধেক হইয়া কি কোয়ার্টার হইয়া হারাইয়া গেছে কোন্ অতলে!
- হুমম
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হুমম কিসের?
ইয়া হাবিবি!
নতুন মন্তব্য করুন