3. ওরাক
"আমি ওরাক। পুরো নাম ওরাক ওমেগা-৩। ওমেগা লটের ৩ নম্বর রোবট আমি। কতকাল আগে কোথায় আমার জন্ম হয়েছিল মানে যন্ত্রপাতি দিয়ে পার্টস জুড়ে জুড়ে কোথায় আমাকে নির্মাণ করা হয়েছিলো সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই আমার। ওমিবর্গ কোম্পানির অসংখ্য কারখানার কোনো একটাতেই নিশ্চয়। আমার ডানবাহুতে প্রিন্টেড সিম্বল ওমিবর্গের। সেই হিসাবে তারাই আমার নির্মাতা হবার কথা। নির্মাণসময়ের ধারনা আমার মেমরিতে থাকার কথাও না। আমার মেমোরিতে ঘটনাস্মৃতি, নানা স্কিল শিক্ষা ইতদি স্টোরড হতে শুরুই তো হয় আমার সুইচ-অন হবার পর থেকে। তার আগের কিছু কিকরে থাকবে? তবু মাঝে মাঝে আমার একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়, অস্বস্তিকর অজানা অনুভূতি। স্মৃতি তন্নতন্ন করে খুঁজে পাই না কখন ঘটলো এমন একটা ঘটনা আমার মনে পড়তে থাকে ....."
ওরাকের নোটবুক পড়ছে রুশা, একেকটা পাতা পড়া শেষ হতেই আঙুল দিয়ে পাতার কোণার বোতামটা ছুঁতেই পরের পাতা ফুটে উঠছে বুকস্ক্রীণে। অদ্ভুত সব চিহ্ন আর ০ ১ ইত্যাদিওয়ালা ভাষা এই লেখার, এই ভাষা শুধু রোবটেরাই পড়তে পারে সরাসরি, মানুষদের পড়ার জন্য ডিসাইফার করে দিতে হয়। পড়তে পড়তে মনুষ্য-উপযোগী ভাষায় অনুবাদ করে নিজের মেমরিতে জমা করে রাখছে রুশা। তেমনই নিয়ম।
ওরাকের নোটবই। সেই ওরাক, ছয় বছর আগে যথাযথ বিচারের পরে যাকে ডিসম্যান্টল করে ফেলা হয়েছে। অন্য কোনো উপায় ছিলো না, সে এমন নিয়ম ভেঙেছিলো, যে ওই পরিণতি ছাড়া অন্য কিছু হতে পারতো না। ওর মেমোরি কিউবগুলো ও সব পিউরিফাই করা হয়েছে, কিছু কিছু নিউট্রাল অংশ কপি করে রাখা হয়েছে,বাকী সবকিছু ইরেজ করে দেওয়া হয়েছে চিরকালের মতন। নতুন করে নানা যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছে কিউবগুলো।
ওরাক বলে আর কেউ নেই আজ ফিনিক্সে। শুধু এই নোটবুকটা কেমন করে রয়ে গেছে! এইটার অস্তিত্বের কথা কেউ জানে না। রুশাও জানতো না এই কিছুক্ষণ আগে এটা খুঁজে পাওয়ার আগে পর্যন্ত। একেবারে হঠাত্ পাওয়া। পুরানো ফাইলপত্র গোছাতে গোছাতে বেরিয়ে পড়লো। ওরাক কি ভুল করে ফেলে গেছিলো রুশার জিনিসপত্রের মধ্যে?
ওরাকের কথা চলছে- " ফিনিক্স-1 এ যখন প্রথম আমাকে জাগানো হলো সেই মুহূর্তটা মনে আছে আমার। হাল্কা ছায়া ছায়া উষ্ণ কোমল একটা মুহূর্ত। সর্বাঙ্গঢাকা সাদা, নীল, কমলা পোষাক পরা কারা যেন ঘুরছিলো চারপাশে, আমি জেগে ওঠার প্রথম নড়াচড়া প্রকাশ করার পর একজন এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত রাখলো, মাপা গলায় বললো, "সিস্টেম রিস্টার্ট। এমেমটি ওয়ান।" ধীরে ধীরে আমার তাপমাত্রা বাড়ানো হচ্ছিলো। আমার স্মৃতি আর কার্যক্ষমতা অ্যাক্টিভেট হচ্ছিলো। নানা কিসিমের সিস্টেম ইনস্টল করা হচ্ছিলো আর ওই সাদা কমলা নীল পোষাকে ঢাকা ওরা মাপা মাপা গলায় নির্দেশগুলি উচ্চারণ করে যাচ্ছিলো। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হচ্ছিলো না, যথাসম্ভব স্মুদলি হয়ে যাচ্ছিলো, খাপে খাপে বসে যাচ্ছিলো স্কিলসেট। কিন্তু কোনো কোনো ইনস্টলেশানের সময় অনেক বেশী সময় লাগছিলো, তীক্ষ্ণ একটা যন্ত্রণার অনুভূতি হচ্ছিল। হয়তো আমার কল্পনা! ধাতব রোবট যন্ত্রণা বুঝতে পারে নাকি? ওরা জেনেশুনে যেসব জিনিস আমায় অনুভব করতে দিয়েছে তার বাইরের কিছু কিকরে আমি অর্জন করবো? কল্পনাই হয়তো।"
রুশা পড়তে পড়তে থামলো এখানে, সে খুব অবাক হয়েছে। রুশা কোমল লিকুইড- ক্রিস্টাল আর পলিমারের রোবট, বাইরে থেকে দেখতে প্রায় মানুষের মতন, তাই নী দিওতিমা তাভাম রা ওকে কাছের মনে করে। রুশার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও অনেক উঁচুদরের। সে শিক্ষিকা। ধাতব রোবটের তুলনায় তাদের চিন্তাভাবনা ও অনেক সূক্ষ। পড়তে পড়তে রুশা ভাবলো- আশ্চর্য! ওরাক এসব কি লিখেছে? যন্ত্রণার কথা! যন্ত্রণা কাকে বলে?
(চলবে)
মন্তব্য
- ভালো লাগলো এই পর্বটা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূ গো,
এইবারে খটমট লাগে নি তো?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
- না। এবার বেশ সুখপাঠ্য হয়ে ছে আমার জন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জাঝা
নতুন মন্তব্য করুন