টুকরো টুকরো দ্বীপেরা ছড়িয়ে আছে। অসেতুসম্ভব সব দ্বীপেরা। মাঝে বয়ে গেছে বিচ্ছেদের আর বিষাদের নোনাপানি। অবিশ্বাস আর বেদনার নীল সমুদ্র। একদিন এইরকমই এক দ্বীপে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। মাঝে মাঝে গতজন্মস্মৃতির মতন মনে পড়ে বহুদিন আগে আমরা একটা মহাদেশে থাকতাম।
দিনগুলো কেমন ছিলো তখন? সোনালী, রূপালী, মেঘলা, রোদ্দুরে ঝলসানো, শুভ্র মেঘের ওড়না ওড়া সোনারঙের দিন--সবই ছিলো। নানারকম সব দিন। টুংটাং রুনরুন ঝমঝম করে তাদের নিজস্ব বাজনা বাজিয়ে চলে গেছে সেইসব দিনেরা। নিজের নিজের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে গেছে স্মৃতিবেদনার অশূন্য অমৃতপাত্র।
তখন আমরা একটা মহাদেশে থাকতাম, ভাগ করে নিতাম সুখদুঃখের খুদকুঁড়ো। তখন আমরা একে অন্যের কথা মন দিয়ে শুনতাম, বুঝতাম ও। একইসঙ্গে বেরোতাম জল আনতে, ফল পাড়তে, মাটি চষতে। আমাদের আয়না ছিলো না, একে অন্যের চোখের আয়নায় নিজেদের দেখে নিতাম। কখনও বা স্বচ্ছ জলে নিজেদের মুখ দেখতাম বনফুলের মালা চূড়ায় পরে। তখন সবকিছু এত ঘোলা হয়ে যায় নি। তখন বাতাস অনেক নির্মল ছিলো, তখন জল অনেক জীবনময়ী ছিলো। তখন সব অন্নই পরমান্ন ছিলো।
দিনেরা চলে গেছে তাদের নিজের নিয়মে। গেছে কিন্তু সব এত ভেঙে দিয়ে গেল কেন? এত ভেঙে দিতেই কি চেয়েছিলো তারা? জগতের নিয়মই কী এই? মহাদেশ ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে যাবে টুকরো টুকরো দ্বীপ হয়ে? আর সেতু ও থাকবে না দ্বীপ থেকে দ্বীপে যাবার ? তবে প্লেট টেকটনিকের পন্ডিতেরা যে ভিন্ন কথা বলে? তারা যে বলে সব মিলেমিশে আবার এক হবে? সে কবে? কত কল্পকল্পান্ত পরে? কত অতল অন্ধকার পার হয়ে?
আমার অসেতু দ্বীপে বেলা পড়ে আসে, সূর্য নামে পাটে। সন্ধ্যার কমলা মেঘেরা রঙ হারাতে থাকে আস্তে আস্তে। শীতশিহরিত শীর্ণ নদীটি পার হয়ে ফিরে যাই আগুন-ওম্ ভরা গুহায়, ঘুমের মধ্যে সমর্পণ করি নিজেকে। স্বপ্নে ফিরে আসে পুরানো সব কথারা আবার। অবচেতনের জল সরিয়ে সরিয়ে ভেসে ওঠা মাছেরা-শত শত রুই, কাতলা, স্যামন, হাঙর, কুমীর, ডলফিন, তিমি, সিন্ধুঘোটকেরা।
বেশীদিন আগের কথা ও তো না! এরই মধ্যে গতজন্মস্মৃতির মতন সুদূর হয়ে গেলো সব? এত দ্রুত বিশ্বাস ভেঙে যায়? যেতে পারে? এত দ্রুত বন্ধুদের মুখ মুখোশের মতন খসে পড়ে? বেরিয়ে আসে আদিম হিংস্র জোটবদ্ধ আক্রমণকারীদের মুখ? ন্যায়-নীতি সব জলাঞ্জলি যায় এত সহজে? দলছুটকে সবাই মিলে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে হত্যা করে দলবদ্ধেরা? একজনও থাকে না সেই যূথচ্যুতের পাশে দাঁড়াবার মতন? তার ন্যায্য কথা সব চাপা পড়ে যায় সম্মিলিত জান্তব চিত্কারে?
তবু নাকি বিশ্বাস হারাতে নেই, তবু নাকি আশা রাখতে হয়। সুপ্রাচীন পিতামহ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন খুব কঠিন সময়ে। বারে বারে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তাই ঝড়ের রাতে কালির মতন কালো অন্ধকারে ছোটো ডিঙাখানি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম সব ছেড়ে, নইলে হয়তো বিশ্বাসটুকুও বাঁচাতে পারতাম না। ঝড়ের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে ক্লান্ত ডিঙখান আমায় এখানে এনে আছড়ে ফেলেছিলো। পরদিন চেতনা ফিরে পেয়ে দেখেছিলাম পুবে ফরসা হয়ে আসছে, ছোট্টো দ্বীপে ভোর হচ্ছে।
তারপরে কেটে গেলো কতকাল,সে যে কতকাল! ভাঙা ডিঙা মেরামত করে এদিক ওদিক ভেসে ভেসে বেড়াই, টুকরো টুকরো দ্বীপগুলোর পাশ দিয়ে ভেসে যাই। আশায় থাকি হয়তো দেখবো কোনো "সবুজ ঘাসের দেশ" কোনো "দারুচিনি দ্বীপের ভিতর।" হয়তো দেখবো কোনো শান্ত বিশ্বাসের আদিগন্ত ভূমি, সোনার ফসল দুলছে যেখানে। বনফুলের মালা চূড়ায় পরে মেলায় যাচ্ছে তারা সবাই মিলে, বন্ধু বলে হাত বাড়াতে দ্বিধা নেই যাদের। আমার আশার তরী নিয়ে ঘুরে বেড়াই ঘাটে আঘাটায়, কিজানি কোথায় আছে সেই সাধের ভূমি!
মাঝে মাঝে কোথা থেকে জানি ভেসে আসে অদ্ভুত সুন্দর এক সুর, সে সুরে অসীম করুণা, বোধাতীত গরিমা। বুঝি বা নক্ষত্রের অক্ষরে তার স্বরলিপি লেখা! আমার ক্লান্ত আশা শক্তি ফিরে পায় সেই সুরে। সারাদিন ঘুরে ফিরে এসে যখন বসি তারাফোটা আকাশের নিচে, তখন কোনো অলীক নীলপাখির মতন কানে কানে কে বলে যায়, "আছে, আছে, আছে।"
আশার ডানায় ভর করে পাড়ি দিয়ে চলি অসেতুসম্ভব সময়ের সমুদ্র। আলোকের দূত বলে," পার আছে, পার আছে।" আমি পরম বিশ্বাসে তার হাতে হাত রেখে বলি, "জানি।"
*****
মন্তব্য
-
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খাইছে... এ দেখি বিরাট...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কি ?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কিন্তু আমি জানি না কী বলবো এমন অপারসম্ভব লেখা প'ড়ে!
আমি দিশাহীন, ভাষাদীন।
-----------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
বলেন কি? আপনি ভাষাদীন?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তাইলে!
আপনার কী মনে হয়?!- আমি আলাদীন?
-----------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন একটা ইমটিকন লাগবে। এগুলোতে হবে না।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অবনীল নামটা দেখি আর ভাবি এর মানে কি?
অবলোহিত মানে জানি ইনফ্রারেড, কিন্তু নীলের দিকে তো নামলে আকাশি উঠলে বেগুনী! বেগুনী পার হলে অতিবেগুনী। অবনীল তাহলে কোনখানে লুকানো?
অবশ্য ম: জাফর ইকবালের একটা কল্পবিজ্ঞান পড়েছিলাম এই নামে।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হে হে হে, এখানেই তো মজা। খুঁজতে থাকেন। পাইলেও পাইতে পারেন আলোর কিরন ।
জাফর ইকবাল স্যারই তো অনুপ্রেরনা আমার সবসময়। তবে আরেকটা ছোট কারন আছে এর পিছনে, অনুল্লেখযোগ্য তাই বললাম না :)।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
হ্যাঁ, অসেতুসম্ভবের একটা ইমোটিকন লাগবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
এইরকম ইমোটিকন হয়?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
প্রত্যেকটা লাইন নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাত পার করে দেয়া যায়।
এখনো আকাশ-পাতাল ভাবছি, ভালই লাগছে কিন্তু !
--------------------------------------------------------
ভালো লাগছে? তাইলে তো খুবই ভালো!
ভালো থেকো।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আবার প্রোফাইল পুরানো হয়ে গেলো কেন?
বেশ নতুন ছবি দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়েছিলাম কাল!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন