"ওগো অনন্ত কালো
ভীরু এ দীপের আলো,
এরই ছোটো ভয় করিবারে জয়
অগণ্য তারা জ্বালো।......"
সুমীদের বাড়ীর ছাদটা আশ্চর্য, এর পুবের দিকটায় তাকালে দেখা যায় শুধু নারিকেল গাছের মাথা, ঐদিকেই পাড়া। আর দক্ষিণ, পশ্চিম, উত্তরে তাকালে খোলা খোলা খোলা। একদম খোলা আকাশ, কোনো বাধা নেই। নীচে ধানজমি একদম ঐ দূর দিগন্ত অবধি ছড়িয়ে আছে। শুধু অনেক দূরে আকাশের সাথে মিতালী করা নীল বৃক্ষরেখা। ওকে দিকচক্র বলে,জানে আরাত্রিকা।
সুমীদের ছাদটা খুব ভালো লাগে ওর। কী মধুর দখিনা হাওয়া বইছে এই গ্রীষ্মসন্ধ্যায়! আরাত্রিকা সুমীকে বলেছে যদি চিলকোঠার পাশে একটা ঘর থাকতো, তাহলে কী চমত্কারই না হতো! সুমী শুনে হাসে।
আরাত্রিকাদের বাড়ী পাড়ার মাঝমধ্যখানে, এরকম তিনদিক খোলা নেই। তাছাড়া ছাদে ওঠাও যায় না ওদের বাড়ীর। আজকে শনিবার, তাই বাড়ী ফিরতে একটু সন্ধ্যা বেশী হয়ে গেলেও বকবে না বাড়ীতে। ছাদে বসে আছে ওরা দুটিতে।
উত্তরে ধ্রুবতারা দেখিয়ে সপ্তর্ষি চিনিয়ে দেয় সুমী, "রাত্রি, দ্যাখ, ওই যে সাতটা তারা জ্বলজ্বল করছে, মনে মনে জুড়ে দিলে দেখায় জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতন,ওকে বলে সপ্তর্ষিমন্ডল। ওর প্রথম দুখানা তারা মনে মনে জুড়ে উত্তরে বাড়িয়ে দিলে যেই তারাটা দেখছিস, সেটাই ধ্রুবতারা। সারা রাত, সারা বছর ও ওইখানেই থাকে। তাই তো ওর অমন নাম! "
আরাত্রিকা আগ্রহী চোখ মেলে আকাশের নক্ষত্রসভা দেখতে দেখতে বলে," কেমন জ্বলজ্বল করছে, যেন হীরা, যেন কোহিনূর! যদিও জানি না কোহিনূর আসলে কেমন।" হেসে ফেলে আরাত্রিকা। সুমী ওর অত বড় নামটাকে ছোটো করে ডাকে রাত্রি। রাত্রি ঘোরলাগা চোখে বলে, "খুব ইচ্ছে করে উড়ে চলে যাই একদিন। ওই তারাদের দেশে! কেমন হবে সেই দেশ, সুমী?আমাদের পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর?ওখানে তোর যেতে ইচ্ছে করে না সুমী? "
সুমী লাল মঙ্গলের দিকে হাত দেখিয়ে বলে,"ঐ যে লাল তারাটা, ওটা তারা নয় আসলে,ওটা মঙ্গলগ্রহ, তারাদের তুলনায় অনেক কাছে। ওখানে যেতে আমার খুব ইচ্ছে করে। আমাদের পৃথিবীর মতন সুন্দর নীলসবুজ নয় ওটা, লাল। ওখানে আমাদের পৃথিবীর মতন গাছপালা নেই, নীল সমুদ্র নেই, তবু যেতে ইচ্ছে করে আমার। রাত্রি, আমরা কোনোদিন যেতে পারবো না। আমরা কি মহাকাশচারী নাকি?মানুষ ঠিক ওখানে যাবে। আরো আরো দূরেও যাবে। একদিন ওই তারাদের দিকেও যাবে। আমরা যেতে পারবো না, ততদিন আমরা থাকবোই না। "
রাত্রি বলে, " কিজানি! আমি হয়তো পারবো না, তোর কথা বলতে পারিনা। আয় সুমী, তোকে একটা গান শোনাই। শুনবি?"
সুমী মাথা হেলিয়ে জানায় শুনবে। দখিনা বাতাসের সঙ্গে, তারার আলোর সঙ্গে স্পন্দিত হয়ে ওঠে আরাত্রিকার কিন্নরকন্ঠ- "মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকালমাঝে, আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে-----"
মন্তব্য
হুঁম,,,
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
পড়ার জন্য ধন্যবাদ রণদীপম।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহারে, আকাশ দেখা হয় না কতদিন। গোনা হয় না পরিচিত তারাদের সংখ্যা।
কি জানি! আমি হয়তো পারবো না
-----------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন