কে যেন বলেছিল বিশ্বের বাঁশীতে নাচের ছন্দ বেজে ওঠে? সেই ছন্দে বস্তুর ভার হাল্কা হয়ে যায়? সেই ছন্দের তালে তালেই গ্রহনক্ষত্রের দল ভিখারী নটবালকের মত আকাশে আকাশে নেচে বেড়াচ্ছে? কে বলেছিলো? কে? মনে পড়ে, পড়ে, তবু পড়ে না।
যেন টলটলে জলের মধ্য থেকে চেয়ে আছি ছায়াপথের দিকে, হাওয়ায় হাওয়ায় টলমল করে কাঁপছে যেন ঐ ফিনফিনে মহাকাশীয় ওড়না। কে যেন বলেছিলো রাত্রি কখনো সূর্যকে পায় না কিন্তু তাতে তার দু:খ নেই, রাত্রির আছে অফুরাণ নক্ষত্রবীথি। কে বলেছিলো? কে? কিছুতেই মনে পড়ে না। স্মৃতি কি হারিয়ে ফেলছি? এরপরে কি ভ্রষ্টস্মৃতি মানুষের মতন খুঁজে ফিরবো কে আমি, কোথায় আমি, কোথা থেকে কোথায় এলাম আমি?
বাচেন্দ্রী অনুবাদ করে বেদমন্ত্র বলছে, আমি শুনছি। সে বলেছে-"বসুরা গায়ত্রী ছন্দে তোমাকে স্নিগ্ধ করুক, রুদ্ররা ত্রিষ্টুপ ছন্দে তোমাকে স্নিগ্ধ করুক, আদিত্যরা জাগতী ছন্দে তোমাকে স্নিগ্ধ করুক---"এই তুমি কে? কে, কিভাবে তাকে স্নিগ্ধ করবে? কেন করবে?
লিসা বলছে-"আমাদের চেনা তিনমাত্রার বাইরে রয়ে গেছে আরো অনেক অনেক মাত্রা। আমরা তাদের দেখতে পাইনা, তারা গুটিয়ে আছে সূক্ষ্মতম হয়ে। যদি কোনোভাবে প্রমাণ করা যায়---"
নোরা বলছে---"আমি খুঁজছি কোনো সরাসরি উপায় যদি থাকে গণনার, কিন্তু কিছুতেই গিঁট খুলছে না। আমি এখনো হতাশ নই, আমি চালিয়ে যাচ্ছি চেষ্টা।"
পাখামেলা যান নেমে আসছে, আগ্রহী উন্মুখ চোখেরা টিভির সামনে। তাদের গাঁয়ের সেই ছোটো মেয়েটি আজকে তার স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে স্বর্ণসূত্র গেঁথেছে। নেমে আসছে, আরো আরো কাছে। বিজয়মাল্য নিয়ে সারা পৃথিবী অপেক্ষায়। তারা কেউ জানে না, কেউ জানতো না---
সোনালী তিনটি রেখা আকাশের গায়ে। ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে সব, টুকরো টুকরো স্বপ্নের ছিন্নদেহ। আর মাত্র পনেরোটা মিনিটের জন্য ভূমি অধরা রয়ে গেলো তাদের। নাকি তারাই অধরা রয়ে গেলো? মৃত্যু উত্তীর্ণ হয়ে অমৃতের দিকে উড়ে গেলো যারা?
খুব অসহায় লাগে, অদ্ভুত শীতে কেঁপে উঠি। আমাদের সকল যুগের সঞ্চিত জ্ঞান কি হারিয়ে যায়?নতুন যুগে সেই অর্জিত জ্ঞানই পুনরাবিষ্কার করতে হয়? ঘুরে ঘুরে একই খেলা চলছে আর চলছে? সময়ের মহাবৃত্ত?আমাদের সম্মিলিত স্মৃতিও কি বারে বারে তৈরী হয়? আমরা কি বারে বারে ফিরে আসি পুনর্জাত হয়ে? এই মহাবিশ্ব ও কি পুনর্জাত হয়?
কবেকার ভুলে যাওয়া হেমন্তগোধূলির প্রান্ত থেকে উড়ে আসে পাতলা সাদা পাপড়িদের ছিন্ন ছিন্ন করুণ ডানা, ওরা উড়ে যেতে চেয়েছিলো নক্ষত্রের দিকে, কিন্তু হাওয়া ওদের উড়িয়ে নিয়ে গেছে অন্য পথে, পথ ভুলে ওরা চলে গেছে অন্ধকারের দিকে। ঘুরে চলেছে আর চলেছে। এইবারে দেবরাত সেই অনন্ত বৃত্তের মুখ খুলে দেবেন। ছাড়া পেয়ে ওরা উড়ে যাবে আলোর দিকে।
"সময়ের গিঁটখোলা রাতে
আকাশের চাবি তোর হাতে-
এই হাত রাখি সেই হাতে
সব নদী থাক আঁখিপাতে....."
***
মন্তব্য
রাত্রি কখনো সূর্যকে পায় না তাতে তার দু:খ নেই, কেননা সে পেয়েছে অনন্ত নক্ষত্রবীথি
লাইনটা আমারো খুব প্রিয় । তুলিরেখা আপনার লেখা আপনার নামের মতোই সুন্দর ও কাব্যিক। শুভেচ্ছা
তানিয়া,
অনেক ধন্যবাদ রইলো। আপনার শুভেচ্ছা আমার পাথেয়।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বাহ্ সুন্দর লেখা তো!!!!!!!!!
আপনার লেখার মতন সুন্দর তো না!
যাইহোক, ধন্যবাদ।
কী বলবো বুঝি না! কিছু না বললেই বা কী!
বললেও লেখা অসামান্য ভালো। না বললেও।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন