শীতের রাতে ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশে কালপুরুষের বীরমূর্তি ফুটে ওঠে তারায় তারায়, হাতে ধণুর্বান, কোমরের ঝকঝকে তিনতারার কোমরবন্ধ থেকে ঝুলছে তলোয়ার। কাঁধের কাছে কমলা তারা আর্দ্রা (বেটেলগিউজ), পায়ের কাছে ঝকঝকে নীল তারা বানরাজা(রাইগেল)। শীতরাত্রির অতন্দ্র প্রহরী কালপুরুষ।
গ্রীসে কালপুরুষকে বলতো ওরায়ন। ওরায়ন ছিলো পৃথিবীর এক বীর শিকারী, শরসন্ধানে অতুলনীয়। সাহসী তাজা এক তরুণ। সারাদিন বনে বনে শিকার করে বেড়াতো ওরায়ন, সন্ধ্যা হলে সমুদ্রতীরে তার কুটিরখানিতে ফিরে বিশ্রাম নিতো আর দেখতো সমুদ্রদিগন্তে কী অপরূপ চন্দ্রোদয় হচ্ছে! মনে মনে সে কল্পনা করতো চন্দ্রের দেবীকে, সাহসিনী সুন্দরী তেজস্বিনী আরণ্য অশ্বিনীর মতন তীব্র দুর্জয় নারী এক। আপন পৌরুষে তাকে মুগ্ধ করে জয় করে নেবার জাগর-স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যেত ওরায়ন।
চন্দ্রের দেবী ছিলেন ডায়ানা,তার আরেক নাম আর্তেমিস। অপরূপা সুন্দরী তেজস্বিনী তীব্র দুর্জয় দেবকন্যা তিনি। শরসন্ধানে তিনিও অতুলনীয়া। শিকারপ্রিয়া এই দেবী মাঝে মাঝে সমমানের সখীদের নিয়ে পৃথিবীর বনে বনে দিনের বেলা শিকার করে বেড়াতেন,রাত্রি হলে ফিরে যেতেন স্বর্গে।
এমনই এক শিকারপর্বে ডায়ানা আর ওরায়নের দেখা হলো। কষ্ঠিপাথরের মূর্তির মতন সুঠামদেহ এই দুর্জয় বীরকে দেখে প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন তেজস্বিনী শিকারপ্রিয়া অস্ত্রনিপুণা চন্দ্রদেবী। ওদের বন্ধুত্ব হলো,ক্রমে বন্ধুত্ব গাঢ়তর হলো। এখন প্রায়ই চন্দ্রদেবী আসেন শিকারে, সারাদিন শিকার ও অন্যান্য আনন্দ-উত্সবে কেটে যায়, সন্ধ্যায় দেবী ফিরে যান আকাশে। ওরায়ন মধুর ক্লান্তি নিয়ে ফিরে যায় তার সাগরতীরের কুটিরে, দাওয়ায় বসে চেয়ে দেখে পুবের আকাশে আস্তে আস্তে চন্দ্রোদয় হচ্ছে,সমস্ত সাগর কেমন উতল উদ্বেল হয়ে উঠছে! ভরা পূর্ণিমার সাগরের মতন উদ্বেল হয়ে ওঠে ওরায়নের হৃদয়-সমুদ্রও,ঘুমের অতলে সে স্বপ্নের মধ্যে ডুবে যায় অনন্ত মিলনোদ্যানে যেখানে মুহূর্তের ও বিরহ নেই।
ডায়ানা আর ওরায়নের প্রণয়-সংবাদ স্বর্গে পৌঁছালো। তারপরে তো মহাগন্ডগোল!দেবতারা সবাই ক্ষেপে বোম! সবচেয়ে বেশী ক্ষেপলেন সূর্যদেব অ্যাপোলো,ডায়ানার ভাই। কী!!!!! এ কী ঘোর অনাচার! স্বর্গের দেবী হয়ে তুচ্ছ নশ্বর মর্ত্যমানবের সংগে প্রেম! কিন্তু ডায়ানা বারণ মানে না, ধমক দিলে হো হো করে হাসে। সে স্বাধীন শক্তিশালী তেজস্বিনী দেবী, সে কেন অন্যের অন্যায় ধমকচমক মানবে?
ধমকে চমকে কাজ হয় না দেখে তখন দেবতারা এক কূটকৌশল করলেন।
(চলবে)
মন্তব্য
প্রতিদিন একটা করে পোস্ট দিয়েন ভাই ।
প্রতিদিন তো হবে না, তবে মোটামুটি নিয়মিত লেখার চেষ্টা করবো। হবে কিনা
তা উপরওয়ালাই জানেন।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
উপকথার রাজ্যে মনে হচ্ছে এবার ভালোই ভ্রমণ হবে। চলুক তুলিপা। ছাড়া ছাড়া ভাবে শোনা/পড়া গল্পগুলো আর একবার ঝালিয়ে নিই।
চেষ্টা করবো নিয়মিত লেখার, পলিনেশিয়া আর চীনদেশের ভারী মিঠামিঠা কাহিনি আছে আকাশ নিয়ে। গ্রীক-রোমান টাফটাফ কাহিনির বিপরীতে সত্যিই খুব নরম সেসব।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এটা একটা দুঃখের গল্প । রাতের বেলা কালপুরুষ মণ্ডলীটা দেখলেই গল্পটা মনে পড়ে আর মনটা খারাপ হয়ে যায় ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
গ্রীক-রোমান পরায় সব কাহিনিই তো রাগী রাগী টাফ-টাফ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাল প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন বস।
সাধুবাদ বানিয়ে রাখলাম।
আর লেখার কথা কি বলব? এমন 'নির্মম' রকমের ভাল আপনার লেখার হাত যে---পড়লেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়--
কেন যে ছাই এই রকম লিখতে পারি না----
অনিকেত,
এই প্রোজেক্ট হাতে নিয়া দেখি বস পকেট খালি! চারিদিকে বসেরা লোহিতচক্ষু উচ্চকন্ঠ উদ্যততর্জনী! সব কিছু অফ দিয়া শুধু অগোর কাজ করতে কয়। এই লেখা হইবো কিনা কেজানে! তবে কি আর করা নিয়া ফালাইসি যহন, মাঝে মাঝে চেষ্টা দিমু চালাইয়া যাওনের।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দুজন ব্লগারের নাম দেখে আমি সত্যিই চমকে উঠেছিলাম...
বুঝি না বেশি।
-----------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
- অনন্ত মিলনোদ্যানে যেতে মঞ্চায়।
আচ্ছা ঐ মহিলা চন্দ্রের দেবী আতরের শিশি না কী যেনো নাম, তিনি চন্দ্র ছেড়ে পৃথিবীতে কেনো আসতেন শিকারে? চন্দ্রে বা স্বর্গে কি কোনো জঙলা নেই শিকার করার উপযুক্ত!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূ গো,
মৃগয়ায় তো দেবদেবীরা সব পৃথিবীতেই আসে! সব দেশের গপ্পেই!
দাড়িআলা দাদাজান রবীন্দ্রনাথ কইতেন-"সেথা(মানে স্বর্গে) ব্যথা পাবে হেন কেহ নাই তাই আসিয়াছো মর্ত্যভূমে মৃগয়া করিতে?" (এইরকমই কিছু,খানিকটা ভুল হতে পারে তবে মানে একই
মনে হয় স্বর্গে পশুপাখি গাছপালা সব রিজার্ভেশন মুভমেন্টের আওতায় ছিলো।
নতুন মন্তব্য করুন