ডায়ানা এসব কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের কিছুই জানেন না, তিনি সখীদের নিয়ে গেছেন শিকার করতে যেমন যান। দেখা হয়েছে ওরায়নের সাথে। সারাদিন কেটেছে সকলে মিলে বনে বনে শিকারে, খানাপিনায় আর আনন্দকোলাহলে। দিনশেষে স্বর্গে ফিরে গেছেন সঙ্গীসাথীসহ চন্দ্রদেবী।
ওরায়ন ফিরে গেছে তার সমুদ্রতীরের কুটিরে। কুটিরের দাওয়ায় বসে সে চেয়ে আছে সমুদ্রের দিকে আর ভাবছে সারাদিনের মধুর স্মৃতি। তুচ্ছ মর্তমানবের জীবনে এ কী অমর্ত্য-সমারোহ দেখা দিলো কোন্ মহাপুণ্যবলে! কিন্তু প্লাবনে উপচে পড়া নদীর মতন বিপুল সুখের ভিতরে ও জেগে থাকে "হারাই হারাই" ভয়, চোখে জল ভরে আসে তার, সে যে ক্ষণায়ুশাসিত জীব! কতদিন এই আনন্দ, এই সুখ, এই পরম-আবেশ? ধুলিকণা থেকে এসেছে সে, ফিরে যেতে হবে ধূলিতে। একে একে নতুন নতুন রঙের কারুকাজ চলছে সন্ধ্যার কোমল মেঘে মেঘে, সমুদ্রের ঢেউগুলি কেমন করছে! ওরা কি মরমানবের আকুলতা বুঝতে পারে?
পলিতকেশ জরাজীর্ণ অথচ সৌম্যমুখ জ্ঞানীর মতন চেহারা এক আগন্তুক এলো ওরায়নের কাছে,আতঙ্কিত ও ত্রস্ত সে। আগন্তুক তাকে বললো, "ওরায়ন, কি করছো এখনও ঘরের দাওয়াতে বসে?বাঁচতে চাও তো শীগগীর দূরে পালাও। এখুনি ভূমিকম্প হয়ে সব পড়ে যাবে।" সঙ্গে সঙ্গে মাটিটাও কেমন দুলে উঠলো! হতভম্ব ওরায়ন দাওয়া থেকে নেমে ছুটে খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। আগন্তুক তার কাছে এসে তাকে বললো, "এই দুলুনি তো সবে ওয়ার্নিং! এর পরে ভয়াবহ কান্ড হবে।এসো, সমুদ্রতীরে আজ রাত্রিটা কাটাও। ঘরদোরের মায়া কোরো না, বেঁচে থাকলে ঘোরদোর অনেক হবে।" কথা শেষ হতে না হতেই আবার মাটি কেঁপে ওঠে।
আগন্তুককে অনুসরণ করে ওরায়ন খোলা সমুদ্রতীরে আসে, সেখানেই রাত কাটাবার উদযোগ করে। ওরায়ন পাথরের শয্যায় শুয়ে পড়লে একসময় আগন্তুক বিদায় নেয়। সেই আগন্তুক ছিলেন ছদ্মবেশী অ্যাপোলো।
এদিকে চন্দ্রদেবী তখন সবে উদয় হতে মুখটি তুলেছেন পুব আকাশে। ছদ্মরূপ ছেড়ে অ্যাপোলো সেখানে গিয়ে হাজির। খুব উত্সুক মুখ করে কইছেন,
"কীরে বোন,খুব তো লক্ষ্যভেদের গর্ব করিস! আমার সঙ্গে কম্পিট করবি সাহস করে?পারবি না অবশ্য।"
ডায়ানা তেড়িয়া হয়ে কইলেন, "পারবো না?নিজেকে তুই মনে করিস কি? কই,কোথায় টার্গেট?"
অ্যাপোলো দূর সাগরতীরে টার্গেট দেখিয়ে কন,"ওই টার্গেট।পারবি এক তীরে বিঁধতে?"
ডায়ানা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কন,"আগে তুই ট্রাই করবি না আমি?"
অ্যাপোলো কন,"দেখি আগে আমিই দেখি।"
ধনুকে তীর চড়িয়ে খানিকক্ষণ লক্ষ্যস্থির করে ছোঁড়েন তিনি, ইচ্ছে করেই লক্ষ্যভেদ করেন না। মুখচোখ দুখীদুখী করে তীরধনুক ডায়ানাকে দিয়ে বলেন,"তোর টার্ন।"
ডায়ানা এক বানে টার্গেট বিঁধে ফেলেন, পরাজয় স্বীকার করে চলে যান অ্যাপোলো।
পরদিন শিকারে এসে ডায়ানা ওরায়নকে দেখেন না, দেখেন না। বারে বারে চিত্কার করে ডাকেন নাম ধরে, সে ডাকে পাখপাখালি গাছগাছালি চমকে ওঠে,কিন্তু ওরায়ন আসে না। আসে না তো আসেই না। বহুক্ষণ ডাকাডাকির পরে কোনো সাড়া না পেয়ে ভয় পান ডায়ানা। কি হলো ওরায়নের? এতক্ষণ ডায়ানার মনে কোথাও কোনো সন্দেহ ছিলো না, এইবারে তার নি:শঙ্ক চোখে অনিষ্টের আশঙ্কার ছায়া পড়ে। হঠাত্ তার মনে পড়ে আগের দিন পরাজয় স্বীকার করে বিদায় নেবার সময় অশুভ কীযেন ছিলো অ্যাপোলোর চোখের দৃষ্টিতে!
উন্মাদিনীর মতন ডায়ানা ছুটে যান সমুদ্রতীরে। হ্যাঁ,পড়ে আছে ওরায়ন। নশ্বর মর্তমানবের প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে সেখানে। ডায়ানার অব্যর্থলক্ষ্য তীরখানি মাথা ভেদ করে ফেলেছে তার।
উথালপাথাল অগ্নিঝঞ্ঝাময় শোকের পরে একসময় শান্ত হন চন্দ্রদেবী। আকাশে নিয়ে যান ওরায়নের দেহ। তারায় তারায় সাজিয়ে দেন তাকে, ক্ষণিকের প্রিয়কে চিরকালের প্রিয়তম করে। আর ভয় নেই, আর নশ্বরতার বেদনা নেই, অনন্ত সেই মিলনোদ্যানে আর তো বিরহ নেই।
সেই থেকে ওরায়ন আকাশে তারায় তারায় ফুটে আছে, আকাশ-পরিক্রমাপথে তাকে ছুঁয়ে যায় চাঁদ।
***
মন্তব্য
এতো আবেগ নিয়ে কিভাবে লিখেন?
পরের পর্ব জলদি করুন!!!!!!!!!
অনেক ধন্যবাদ।
পরের পর্ব কবে আসবে জানেন পারের কান্ডারী।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
- এই অংশটা ভালো লাগলো অনেক।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ ধূ গো মহারাজ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বাহ্ ! দারুন কাহিনী
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
থ্যাংকু নাশুভাই।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দুটো পর্ব পড়লাম একসাথে।
চমৎকার লাগলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ সুলতানা শিমূল।
আপনার লেখাগুলো আমার আরো ভালো লাগে।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আরো লিখেন
...........................
Every Picture Tells a Story
লিখতে তো খুবই ইচ্ছা করে, সময় পেলেই লিখবো।
আপনাকে ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আরো লম্বা ছিল তো গল্পটা
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আমি যে ভার্সনে পড়েছিলাম, সেটায় এরকমই ছিলো।
তবে গ্রীক পুরাণ রেকারিং ডেসিমেলের মতন, কোথা দিয়ে ডালাপালা বার
হয়ে যে কোথায় চলে যাবে কেউ বলতে পারে না।
পুবের কালচারে বড় হওয়া আমার বিয়োগান্তক লেখাগুলোকে কেমন যেন শেষ হলো না মাঝখানে হ্যাচকা টানে পর্দা ফেলে দিলো মনে হয়। আর গ্রীকদের টেন্ডেন্সিই হলো যতো পারে বিয়োগান্ত। ভালো নাটকফাটকগুলো সব ওরকম।
সন্ধেবেলা শুরু হয়ে মনে হয় ঘন্টাকয়েকের মধ্যে অভিনয় শেষ করে চলে যেতো। বিয়োগান্ত তো একেবারে বীভত্স বিয়োগান্ত, লোকের মাথায় বাড়ি দিয়ে কাঁদাবার মতন ব্যাপার। কোনো মানে হয়? এই নিয়ে আবার কী আদিখ্যেতা!
অথচ পুবের দিকের রামায়ণ মহাভারত কিংবা অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ দেখুন, ওভাবে মাঝখানে হ্যাঁচকা টানে শেষ করেনি কিন্তু, সুখদু:খ সবকিছুর শেষে একটা পজিটিভ মেসেজ রেখে গেছে। সেরকম না হলে সমাপ্তির সম পড়ে কি?
এস্কাইলাসের নাটক পড়ে আমার মনে হচ্ছিলো আরে শেষদিকের পাতাগুলো কি হারিয়ে গেছে? কোনো মানে হয়?
দেখুন কি বলতে কি বিরাট ভাষণ দিয়ে বসেছি!
পরে কোনো এক সময় আফ্রিকার উপকথা লিখবো, নেলসন ম্যান্ডেলার সংকলিত, সেগুলো বেশ চমত্কার।
ওরায়ন নিয়ে আপনার পড়া ভার্সনটাও দিয়ে দিন।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সবগুলো শেষ করলাম
নতুন মন্তব্য করুন