দুপুর ঢলে পড়ে বিকালের দিকে। বাড়ী এখন নিঝুম, আমগাছে ঘু ঘু ডাকে ঘুমেলা সুরে। দোতলার বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে থাকে অনুরাধা, দুপুরে ঘুম তার কোনোকালেই হয় না। আগে সেলাই, উলবোনা এইসব নিয়ে দুপুর কেটে যেতো, এখন তো আর সেইসবও নেই। হঠাত্ করে কালো আর হলুদ উল দিয়ে বোনা সেই বাঘা সোয়েটারটার কথা মনে পড়ে গেলো। তখন ঝোরা কিন্ডারগার্টেনে আর অভি তখন মাত্র বছর দুইয়ের। সোয়েটারটা ঝোরার জন্য বুনেছিলো প্রথমে, ঝোরা একদুইবার পরেছিলো মাত্র, পরে অভি পরতো অনেকদিন পর্যন্ত প্রত্যেকে শীতে। খুব প্রিয় সোয়েটার ছিলো ওটা অভির। শীতকালে তোলা সব ফোটোতে ছোট্টো অভিকে দেখা যায় ঐ সোয়েটার গায়ে।
চিতাবাঘের ডোরার মতন বলে ওটাকে বাঘা সোয়েটার বলতো ওরা।
ওদের বড় হয়ে ওঠার দিন গুলোর মধ্যে কত গুরুত্বপূর্ণ দিনের কথা ভুলে গেছে অনুরাধা, কত কথা কুয়াশা-কুয়াশা মনে পড়ে কিন্তু উজ্জ্বল হয়ে মনে থেকে গেছে সামান্য-সামান্য ঘটনা। একদিন, অভি তখন বছর দুইয়ের,জ্বর ছিলো ওর, বিকালে ডাক্তারখানায় নেবার সময় বললো,"সাজিয়ে দাও মা,ডাক্তারখানায় যাবো তো!" শুনে হেসে ফেললো সবাই। কত কত ঘটনার ভীড়ে এই সামান্য কথা এমন করে মনে রয়ে গেলো কিকরে? আরেকদিন, ঝোরা তখন মাত্র দশ কি এগারোমাসের, বুঝতে পারার মতন কথা ফোটে নি তখনও, ওকে কোলে নিয়ে লাউমাচার পাশ দিয়ে আসছিলো অনুরাধা, সেসময় হঠাত্ ঝোরা বলে উঠলো "লাউ!" শিরশির করে উঠলো অনুরাধার সারা গা, কি স্পষ্ট মনে আছে সেদিনের কথাও।
সপ্তাহান্তে ফোন করে বাবামায়ের খোঁজ নেয় ঝোরা, সারা সপ্তাহ নাকি তার দম ফেলার সময় নেই। মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করে খুব। কতদিন হয়ে গেলো দেখে না? চার বছর আগে শেষ এসেছিলো। সামনের শীতে আসবে বলেছে সব ঠিকঠাক চললে, আহা যদি আসে! কাছে যখন ছিলো তখন এত মন পুড়তো না, কত রূঢ় ব্যবহার তখন করেছে। তখন যদি জানতো এত দূরে চলে যাবে তাহলে....কিছুই মানুষের জানা থাকে না.....কিছুই না, কিছুই না......
আঁচল তুলে চোখ মোছে অনুরাধা, বেলা আরো ঢলে গেছে। এককাপ চা হাতে নিয়ে আর অন্য হাতে পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া পুরানো ডাইরিটা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠে অনুরাধা।
"উজ্জ্বল সুবর্ণরেখ দিনের শেষে
অপরাজিতা-নীল আকাশে
কমলা সন্ধ্যা হয়ে আসা-
চোখের দরজা খুলে
দেখেছ কি কোনোদিন, বন্ধু?
আকাশী-আঁচল জুড়ে আলোর আবীর
কেমন মিলিয়ে আসে নতনেত্র তরুণীর মতন?
চেনা কুটির, প্রাসাদ ও বনস্পতি
কেমন মেধাবী সিলুয়েটের মতন দাঁড়ায়?
মিলিয়ে যাবার আগে আশ্চর্য কোমল আভা
এসে পড়ে পৃথিবীর ছায়াবৃত্তে?
বালিকার খুশীচোখের মতন
চিকমিক করে জ্বলে সন্ধ্যাতারা?
অপ্সরা-ওড়নার মত বিছিয়ে পড়ে আলো-
চোখের দরোজা খুলে দেখেছ কি বন্ধু?
রেখেছ কি সংবেদী হৃদয়ের তারে?
ছায়াপথভরা রাতে বেজেছে কি সে?
একা একা, হৃদয়ের গভীর ভিতরে?
তবে তোমাকে বলা যায়
তবে তোমাকে দেওয়া যায়
সেইসব রুনরুন রিনরিন
সেই ময়ূরপঙ্খী দিন ......"
কবেকার লেখা এইসব? অনুরাধার মুখে আবীর ছড়িয়ে পড়ে আকাশের আবীরের মতন, পশ্চিমে তখন সূর্যাস্তের বর্ণবিলাস শুরু হয়েছে,অবর্ণণীয় বর্ণচ্ছটায় মেঘ, পাহাড়, মাঠ, গাছগাছালি সব রঙীন হয়ে উঠেছে।
(চলবে হয়তো )
মন্তব্য
ভালো লাগছে পড়তে
থামাবেন না
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ, রানা মেহের।
দেখি আবার সে কবে আসে।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হয়তো কেন বলছেন?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হয়তো বলি কি আর সাধে?
মাঝে মাঝে চলা বন্ধ হয়ে যায় যে! দিনের পর দিন কিছুই আসে না।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
থামবেন না পরের অংশ চাই।
মেঘের কথকতা
মেঘের কথকতা, আপনাকে ধন্যবাদ। বলতে ইচ্ছা করে চেষ্টা করবো দিতে। কিন্তু চেষ্টায় তো এসব হয় না। নিজে নিজে যদি আসে, তবেই।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার লেখায় একটা কেমন শীর্ষেন্দু-শীর্ষেন্দু আবহ আছে...
চলুক ...!
কন কি? শীর্ষেন্দু আবহ? মই ছাড়া গাছে তুলতে চান নাকি?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এত সুন্দর লেখা কেউ যদি না পড়ে সেটা হবে তার দূর্ভাগ্য!
আপনার তাই মনে হয়, হরিপদ? আমার কিন্তু তা মনে হয় না, এসব সামান্য লেখাপত্র, নদীর মতন একলা একলা কথা কয়ে যাওয়া, তেমন কিছু নেই এসবের ভিতরে। এসব না পড়লে তেমন কিছু কেউ হারাবে না।
তবু মনে হয় একজন দুইজনও যদি পড়ে মনে আনন্দ পায়, সেইটুকুই বাড়তি পাওয়া।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই লেখাটাও আটকে গেছে, আর এগোয় না।
কী জীবন! কাহিনি ডানা ঝাপটায়, পালক উড়িয়ে দমবন্ধ করে আনে, কিন্তু লেখার ফুরসত মেলে না।
কিজানি আবার কবে অবসর আসে!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন