"এই ঘাড়ত্যাড়া গাউচ্ছা মাইয়ায় মাইয়া না হইয়া পোলা হইয়া জন্মিলে ভালো হইতো তো! কপাল, সবই কপাল! মাইয়ামাইনষের এত জিদ এত জিদ! শ্বশুরবাড়ী গিয়া এর উপায় হইবো কি?" ভাইবেটী সম্পর্কে মেজপিসির সুচিন্তিত মন্তব্য।
শীতের ছুটিতে পিসেপিসিরা এসেছে, জ্যেঠাজ্যেঠিও। দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে, উঠানে মাদুর বিছিয়ে রোদে ভিজা চুল মেলে গল্প করছে মহিলারা। বাড়ীর পুরুষেরা সব ভাতঘুমে। ভাইও ঘুমাচ্ছে মায়ের খাটে। ঠাকুমা নারকোলপাতার শলা তুলছে পুবের উঠানে শিউলিতলায়। ঠাকুমা হাতের কাজ ছাড়া থাকতে পারতো না। যখন এমনি কাজ ফুরাতো তখন কাঠি দিয়ে গেঁথে গেঁথে কাঁঠালপাতার মুকুট বানাতো, এঁটেলমাটির পুতুল বানাতো। আমাকে কতরকম পুতুল বানিয়ে দিয়েছে, তাদের মাথায় গোল খোঁপা অবধি দিতো, মাটির ছোটো গোল্লা বানিয়ে লাগিয়ে দিতো মাথার পিছনে। নারিকেলশলা দিয়ে তাদের মাথায় আঁচড় কেঁটে চুলের সিমুলেশান অবধি করতো। ঐরকম অনায়াস হাতের কাজ আর কারুর দেখলাম না আগে পরে।
আমি যেমন ধুলাপায়ে ঘোরাঘুরি করি উঠানে কাঠানে আমতলা জামতলা খেজুরতলায় তেমন করছি। বেশ বড়ো বয়স অবধি আমি পায়ে চটি দিতাম না ইস্কুলে যাওয়ার সময় ছাড়া। ছোটোবেলার সব ফটোতে তাই আমায় ধুলাবালিমাখা খালিপায়ে দেখা যায়, না আঁচড়ানো চুলেরা হাওয়ায় আউলাঝাউলা।
পিসির সুমন্তব্যের সময় আমি ওদের কাছাকাছি ছিলাম, আমার ত্যাড়াঘাড় গেলো আরো ত্যাড়া হয়ে। আমি ওদের মাঝখানে গিয়ে পড়ে আগ বাড়িয়ে বলি, "শ্বশুরবাড়ী না অসুরবাড়ী! শ্বশুর না অসুর! আমি কোন্ দু:খে শ্বশুরবাড়ী যাবো?"
"আরে সব্বনাইশা মাইয়ায় কয় কি! বিয়া হইয়া শ্বশুরবাড়ী যাবি না তো কই যাবি তুই কালীতারা?"
"বিয়া? কোন্ দু:খে বিয়া করতে যাবো আমি?"
"আরে তরে খাওয়াইবো কেডা? বাপের বাড়ীর মধুখাম হইয়া থাকবি নাকি চিরকাল?"
"কেন? বড় হয়ে বাবার মতন চাকরি করবো! চাকরি করলেই তো বেতন পাবো, তা দিয়ে কিনে খাবো।"
"ওরে মাইয়া, এইদিকে দেখি টনটনা কথা!" পিসি মায়ের দিকে ফিরে কয়,"এই মাইয়া লইয়া অনেক লড়াদশা হইতে হইবো আমার মিঠাজাম্বুরা ভাইরে! মাইয়ার এখনই কেমুন টকরটকর কথা! "
"কিছু লড়াদশা হতে হবে না। তোমাদের মিঠাজাম্বুরা ভাইয়ের টাক্করও লাগবে না কিছু। আমি হু উ উ উ শ করে চলে যাবো, উড়ে চলে যাবো।"
দৌড় দিয়ে পুবের উঠানে চলে যাই, এরোপ্লেনের ডানার মতন করে হাত দুটো ছড়িয়ে, আকাশ দিয়ে শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে একটা প্লেন, আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি সেটার দিকে তাকিয়ে। ওর ভিতরে নাকি সারি সারি মানুষ বসে আছে! যা:, তা কেমন করে হয়? কিন্তু জ্যেঠু তো এয়ারপোর্টে কাজ করে, জ্যেঠু তো তাই বললো!
"ঝুমকা,এই ঝুমি, এইহানো দেইখা যা!" ঠাকুমা ডাকে, আমি গিয়ে বসে পড়ি পাশে। কি দেখতে ডাকলো? বেড়ালতার বেড়ার কাছে কতগুলো আগাছামতন গাছ, চিকরি চিকরি পাতা, ঠাকুমা সদ্য ছুলে তোলা একটা নারিকেল শলা নিয়ে যেই না পাতাটা ছুঁয়েছে, অমনি বুজে গিয়ে নুয়ে পড়লো পাতাটাতা সবশুদ্ধ। আরে!!! কি কান্ড!
ঠাকুমা হাসে, বলে, "এই গাছেরে কয় লইজ্জাবতী। ছুঁইয়া দিলে পাতা জুইপ্যা ঢইলা পড়ে। "
আমার বিস্ময় একেবারে উপচে পড়ে, কিকরে এমন হ্য়? বারে বারে ঘুরুন দিয়ে এসে এসে দেখে যাই, পাতাগুলো খুলছে কি? সোজা হয়ে উঠছে কি? ও কিকরে বুঝলো কেউ ওকে ছুঁযে দিলো? আর কোনো গাছের পাতায় তো এমন হয় না! আমপাতা জামপাতা স্বরূপাপাতা কাঁঠালপাতা কেউ তো এরকম ঢলে পড়ে না ছুঁয়ে দিলে? ও কি অন্যরকম গাছ?
মন্তব্য
চমৎকার, বরাবরের মতোই। তবে এতো অল্প যে শুরু করতে না করতেই শেষ!
আচ্ছা স্বরূপাপাতা'টা কী?
আরে! পোস্ট দিতে না দিতেই দেখি আপনি!
আজকে তাড়াতাড়ি ঘর যেতে হচ্ছে, তাই যা ছিলো তুলে দিলাম! বাড়ী গিয়ে খিচুড়ী ডিমভাজা রানতে হবে!
স্বরূপা বলে নোনাফলকে। আমি নাকি শিশুভারতীর শিশুক্লাসে ভর্তি পরীক্ষায় দু'খানা ফুলের নাম জিগ্গেস করলেই বলেছিলাম,"কাঁঠালফুল, স্বরূপাফুল।"
আমার কিছু মনে নেই এইসব, তাই একদম বিশ্বাস করবেন না, এসব বিরোধীদলের অপপ্রচার!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমার ঠাকুমা নারকেলপাতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানিয়ে আমাদের দিতেন, দাঁড়ে বসা টিয়াপাখি, হাতঘড়ি, আংটি এইসব কত কি। আপনার লেখা পড়তে গিয়ে হুড়মুড় করে সব মনে এলো !
কম লিখছেন ক্যান? আপনি মানুষটা খারাপ এবং ফাঁকিবাজ।
কম কমই ভালো, একসাথে বেশী ভালো না ভুতুম।
ধইনবাদ লন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লেখা কম কম পড়লে তিয়াস মিটে না।
লজ্জাবতী গাছরে ছোটবেলায় আমিও লজ্জা দিতাম, অবশ্য লজ্জাজনক উপায়ে!
কোয়ালিটি ম্যাটারস , নট কোয়ান্টিটি!
অতি চমৎকার লেখা!!!
ধইনবাদ লন মামুন।
আপনের স্মৃতিচারণ কবে আসতেছে?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা... কতদিন খেলার ছলে লজ্জাবতীকে লজ্জা দেওয়া হয়না।
লজ্জাবতী গাছই দেখেনি এখনকার কত বাচ্চারা! আগে শহরতলী আর মফস্বলে যে গ্রাম-গ্রাম ভাব ছিলো তাও তো দূর হয়ে যাচ্ছে জনসংখ্যার চাপে!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
- হ, বড়ই সেন্সিটিভ গাছ এই লজ্জাবতী!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জগদীশের গপ্পো পড়ার পর থেকেই বনচাঁড়াল গাছ দেখার শখ ছিলো আমার! নিজে নিজে নাকি তার পাতা নড়তে থাকে।
পতঙ্গভুক কলসপত্রী দেখার ও সাধ ছিলো, দেখা হয়ে গেলো অবশ্য গ্রীণ হাউসে! গপ্পে যেমন শোনা যায় তেমন ভয়ানক কিছু না, দিব্যি ভালোমানুষ গাছ!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিরেখা--কী লেখা !!
দারুন হচ্ছে বস।
কেমন যেন মনে হল শীর্ষেন্দু'র নতুন কোন গল্প পড়ছি।
ঈমানে কন, আপনে শীর্ষেন্দু না তো??
ঈমানে কই,আমি শীর্ষেন্দু না।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা লজ্জাবতীর কথা ভুলতে বসেছিলাম।
আপনি মনে করিয়ে দিলেন অনেকদিন পর।
গাউচ্ছা মাইয়া এখন এই জীবনে এমন মারাত্নক মারাত্নক গল্প ল্যাখে ক্যান্? আর কাম পাইলো না?
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
তাও তো ঝন্টুর মার বাজারে যাওয়ার সুযোগে তাদের বাগানের আমচুরির গল্প এখনও বলিই নাই!
হ্যাঁ রে সাইফুল, গাউচ্ছা মাইয়ার কি কাম পাইবার কথা আছিল রে? মহিষাসুরবধের কাম?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এইদ্দ্যাহো, এহন আবার ঘাড়ের উপ্রে উইঠ্যা কাম কাম কইরা কানডা খারাপ করতাছে!
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
:-'
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন