সাত্যকি(১)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শুক্র, ০১/০৫/২০০৯ - ১২:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


সত্যকের রোবট দুজন, নাইন্টি-টু আর হান্ড্রেডটেন যাদের উনি নান্টু আর হ্যান্ডু বলে ডাকেন, এরা দুজন এসে রুবেনকে সত্যকের পায়ের কাছে ফেলে মাথা ঝুঁকিয়ে সেলাম করে চলে গেলো৷ নান্টু আর হ্যান্ডু দরকার ছাড়া কখনো কোনো কথা বলে না, এরা দুজনেই অ্যাকশন-ধর্মী রোবট, কথা কম কাজ বেশী নীতি এদের৷

রুবেনকে দড়াম করে ফেলেছিলো ওরা, অল্প কাতরানি শোনা গেলো৷ রুবেনের জামায় এখানে ওখানে লাল দাগ, হয়তো নান্টু আর হ্যান্ডু ধরে আনার সময় মেরেছে, হয়তো রুবেন রেজিস্ট করছিলো ... কেজানে!

সত্যক রুবেনকে ধরে তুললো, সোফায় বসালো, রুবেন হাতজোড় করছিলো, ঠোঁটের কাছে কাটা, রক্ত গড়িয়ে পড়ছিলো, হয়তো যখন ফেলেছে তখন লেগে কেটেছে ... করুণ গলায় রুবেন একটু জল চাইলো৷ সত্যক জল দিলো, টেবিলের উপরে বোতলেই জল ছিলো৷ কয়েক ঢোক জল খেয়ে রুবেন ধন্যবাদ দিলো৷

রুবেন ধরা পড়ে গেছে, এখন সত্যকের হাতের মুঠায়, সব জারিজুরি ভেঙেচুরে গেছে, কিন্তু এই অবস্থায় রুবেনকে কিকরে শাস্তি দেবে ভেবে পেলো না সত্যক৷ আধমরার মতন পড়ে ছিলো রুবেন৷ সত্যক সামনাসামনি তো আগে দেখেনি রুবেনকে, রুবেনও সামনাসামনি দেখেনি সত্যককে, আগে যখন কথাবার্তা হতো তখন তা হতো যন্ত্রের মাধ্যমে, ইন্টার্প্ল্যানেটারি নেটোয়ার্কে, তখন ভিশনপ্লেটে দেখে এরকম বোঝা যায় নি৷ খুব ডাঁটওলা মনে হতো রুবেনকে, নিষ্ঠুরধরনের কাটা কাটা কথা, হুমকীর মতন কথাও বলতো, নীআস্ট প্রোজেক্টের অসাধারণ সাফল্যই হয়তো ওর অত অহংকার এর কারণ ছিলো৷ তখন হয়তো চেহারাও এত দুর্বল ছিলো না, সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে হয়তো রুবেন মানসিকভাবেও খুবই দুর্বল হয়ে গেছে৷

সত্যকের মনে পড়লো কদিন আগের রুবেনের সেই হুমকী, পৃথিবী উড়িয়ে দিতে পারে এইরকম হুমকী৷ হঠাত্ রাগটা ফিরে এলো সত্যকের, এ ছেলে শাস্তির যোগ্য৷ এগিয়ে গিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরলো সত্যক৷ রুবেন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো, কিযেন বলতে চাইলো, পারলো না৷ কাঁপছিলো ও, সত্যক কিছু করার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো৷

সত্যক ওর মুখেচোখে জল দিলো, কেমন অনুশোচনা হচ্ছিলো তার৷ রুবেনের মুখ একদম ফ্যাকাশে, ছাইয়ের মতন। জলের ঝাপটায় চেতনা ফিরলো ওর,ও চোখ মেললো। চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে গেছে! আগে সত্যক যখন ভিশনপ্লেটে দেখতো, তখন প্রথম চোখে পড়তো রুবেনের কালো চোখের তীব্রোজ্জ্বল স্বচ্ছ উদ্ধত দৃষ্টি৷ এখন যেন সেচোখের দৃষ্টি ধোঁয়াশায় ঢাকা৷

রুবেন কষ্টে উঠে বসে, সত্যকের কাছে মাফ চায় আগে যা করেছে তার জন্য, এখনি মাফ চায়, পরে যদি আর সময় না হয়! হয়তো আর বেশীদিন সে বাঁচবে না! রুবেন খুব অনুনয় করে বলে, সত্যকের কানে ধরা পড়ে ওর গলার স্বরের আন্তরিকতা৷ রুবেন বোধহয় আশা করেনি সত্যক বুঝবে, বার বার করে বলে, বলতে কষ্ট হচ্ছে বোঝা যায়, তবু বলে৷ তারপরে ইতস্তত: করে অনুরোধ করে, "টিনিয়াম থেকে যদি কোনো খবর পান, একটু যদি খোঁজ নেন দয়া করে, কি হলো সেখানে ... আমি কিছুই দেখতে পাই নি,ওখানে আমি তখন সবেমাত্র এসেছি টুর থেকে ফিরে, নামতেও পারিনি, তার আগেই নাইন্টিটু আর হান্ড্রেডটেন গিয়ে ... আমি বাধা দিই নি, কি হবে বাধা দিয়ে? আমি একদম নিরস্ত্র, তাছাড়াও রোবটের সঙ্গে কি মানুষ পারে, তবু ওরা আমায় ... আহ ... ওখানে কি হলো খবর পেলে আমায় একটু বলবেন দয়া করে?"

(চা ব্রেক হাসি )


মন্তব্য

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনার লেখার ডাইমেনশনের সাথে তালা রাখা আমার মতোন লোকের কম্ম না ... মন খারাপ
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

তুলিরেখা এর ছবি

কি যে কন!
হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনি কি একসাথে সর্বাধিক কটা সিরিজ চালানো যায় তার রেকর্ড করার তাল করছেন? আর এতো চা খেলে মাথা গরম হবে, তার চেয়ে আরেকটু বেশি বেশি ক'রে লিখুন।

তুলিরেখা এর ছবি

বলি এতো চা কই দেখলেন?
সবে এককাপ চা লইয়া বইছি।
হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বেশী কঠিন হয়ে যাচ্ছে ...!!!
প্লটটা ধরতে পারলাম না।

---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

তুলিরেখা এর ছবি

পর্বে পর্বে পারবেন ধরতে। হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তুলিরেখা আপু'র মত এমন প্রোলিফিক এবং ডাইভার্স লেখক কম দেখেছি। আমিও তাল রাখতে হিমশিম খাই। একারণেই বছরান্তে "তুলিরেখা অমনিবাস" জাতীয় কিছু নিয়ে বসবো ভাবছি। খাইছে

তুলিরেখা এর ছবি

কী যে কন! আপনেগো পাশে তুলিরেখা আপা! ফড়িং!
খাইছে

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

আচ্ছা আপনাকে সেই যে বললাম "মালাকাইটের ঝাঁপি" নিয়ে লিখতে, তার কী হলো?

তুলিরেখা এর ছবি

লাজে তখন কইতে ফারি নাই মূলত ফাটক, মালাকাইট আমি ফড়ি নাই। খাইছে
আফনেরা কেউ লিখেন না গো,ফইড়া আনন্দ পাই।
-------------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

আমার যদি তেমন ভালো মেমোরি হতো তো নিশ্চয়ই লিখতাম, কিন্তু খুঁটিনাটি সব গেছি ভুলে, শুধু ভালো লাগাটাই মনে আছে। সবসেরা কিশোরসাহিত্যের তালিকায় থাকবে এটা, আর থাকবে 'দুরন্ত ঈগল'। আনন্দ'র নয় ব'লে এটা তেমন প্রচার পায় নি, কিন্তু এটা চাঁদের পাহাড়ের পর্যায়ের ভালো, কি হয়তো আরো ভালো। পড়েছেন?

তুলিরেখা এর ছবি

দুরন্ত ঈগলের গলপ শুনেছি আগের বাড়ীতে, খুব সুন্দর করে বলেছিল একজন। আমার পড়া নাই। মন খারাপ
আমার পড়ার মধ্যে দুই খন্ড ইস্পাত, মানুষের মত মানুষ, ধলা কুকুর শামলা কান, পৃথিবীর পাঠশালায়, পৃথিবীর পথে, মা, সার্কাসের ছেলে, পুনরুজ্জীবন, পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান, রুশ দেশের উপকথা, টেলিস্কোপ কি বলে,তুষারকন্যা,আনা কারেনিনা, ডক্টর জিভাগো,গোত্রান্তর---এইসব।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

আমারি বলার ভুল, দুরন্ত ঈগল কিন্তু রাশিয়ান সাহিত্য নয়, খোদ বাঙালির লেখা বাংলা উপন্যাস। দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (যিনি কিশোর ভারতীতে ভাবা-সিরিজ লিখতেন)। পটভূমিকা যদিও কাজাকস্তান আফগানিস্তান এই সব। এ লেখা আনন্দ প্রকাশ করতে পারলে ঢাকঢোল পিটিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কিশোরোপন্যাসের তালিকায় তুলে দিতো, এবং তাতে করে খারাপ কিছু হতো না।

দ্রোহী এর ছবি

ভালোভাবেই শুরু করেছেন। বেশি চা খাবার দরকার নেই। আর গল্পটাও বেশি বড় না করলেই ভালো হবে।

তুলিরেখা এর ছবি

কন কি? চা খাওয়ার দরকার নাই? অবশ্যই দরকার আছে! চোখ টিপি
গল্প বড় না, একেবারেই না, ওয়ার অ্যান্ড পীসের তুলনায় তো কিছুই না, উটের মুখে জিরা। হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।