দেশবিদেশের উপকথা(৮)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শুক্র, ২৯/০৫/২০০৯ - ৩:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রাচীন ভারতীয় উপকথায় চন্দ্র আর সাতাশটি নক্ষত্র নিয়ে গল্প আছে। গল্পটা হলো এই: দক্ষের সাতাশজন কন্যার সঙ্গে চন্দ্রদেবের বিবাহ হলো। প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং এই বিবাহ দিলেন আর চন্দ্রের কাছে প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন যে সে প্রত্যেক স্ত্রীকেই সমান ভালোবাসবে, সমান সঙ্গ দেবে, সমান প্রীতি-উপহার ইত্যাদি দেবে। চন্দ্রদেব সম্মত হলেন। সম্মত না হয়ে করেন কি? আরে বুড়া দাদুর সামনে কিকরে বলেন আর অন্যরকম? এদিকে আসল কথা হলো চন্দ্র প্রথম দেখাতেই রোহিণীকে দেখে চিত্ত হারিয়েছেন, "ওরে আমার জানরে ওরে আমার পাখিরে"অবস্থা।

দিন যায় দিন যায়, দেখা যায় চন্দ্র রোহিণীকে নিয়ে ব্যস্ত, প্রায় সারাক্ষণ তার মহলেই থাকেন, আনন্দ করেন, বহুরকম উপহার দেন তাকে আর বাকী ছাব্বিশজনের সঙ্গে নমোনমো করে সম্পর্করক্ষা করেন। এই ছাব্বিশজন মহিলা তো রেগে আগুন হয়ে গেল। দক্ষের কন্যা তারা, খুব তেজীয়ান, এসব সইবে কেন মুখে বুজে? দলবেঁধে তারা প্রথমে গেল পিতা দক্ষের কাছে নালিশ করতে, দক্ষ তাদের তাড়াতাড়ি করে প্রজাপতি ব্রহ্মার দিকে অগ্রসর করে দিলেন। এতজন কন্যার দলবদ্ধ আক্রমণে অমন যে অমন দক্ষ, তিনিও ঘাবড়ে গেছিলেন নিশ্চয়, সেকথা গল্পে চেপে গেছে। হাসি

পিতামহ ব্রহ্মা দক্ষকন্যাদের অভিযোগ মন দিয়ে শুনলেন, সব শুনে তিনিও রেগে গেলেন। এ কী? ছোঁড়া এই সেদিন সোনামুখ করে প্রতিশ্রুতি দিলো সবাইকে সমান ভালোবাসবে, এদিকে দু'দিন যেতে না যেতেই অন্য রকম আচার আচরণ? রেগে গিয়ে তিনি শাপ দিলেন, চন্দ্রের ক্ষয় রোগ হবে। দক্ষকন্যারা হৃষ্টচিত্তে ফিরে যে যার আপন আপন মহলে চলে গেলেন।

অচিরেই অভিশাপ ফললো, চন্দ্র ক্ষয়ে যেতে আরম্ভ করলেন, আতঙ্কিত রোহিণী যথাসাধ্য যত্ন-আত্তি করলো চিকিৎসার ব্যবস্থাও করলো, কিন্তু চন্দ্র ক্ষয়েই যেতে লাগলেন দিনের পর দিন। দিদিদের কাছে গিয়ে কেঁদে পড়লো রোহিণী, প্রথমে দিদিরা "এবার কেমন লাগে?" ধরনের অ্যাটিচুড নিয়েছিলো, কিন্তু পরে সংকট বাড়লে নিজেরাও ত্রস্ত হয়ে উঠলো। চন্দ্রদেব মারা গেলে যে সকলেই বিধবা হবে তারা!

এবারে সাতাশজন মিলেই আবার গেলো দাদুর কাছে, সকলে কেঁদে পড়লো অভিশাপ ফিরিয়ে নেবার জন্য। পিতামহ মিনতিতে গলে গিয়ে ওদের সঙ্গে চলে এলেন চন্দ্রদেবের প্রাসাদে। নিজের কমন্ডলুর সঞ্জীবনী জল ছিটিয়ে আরোগ্য করে দিলেন চন্দ্রকে।

কিন্তু পুরোপুরি তো যাবার নয় অভিশাপ, তাই মাসের অর্ধেক ধরে চন্দ্র ক্ষয়ে যান আবার বাকী অর্ধেকে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেন, এইভাবেই চলতে থাকে। এখনো তাই চলছে। পূর্ণিমার গোল চাঁদ ক্ষয়ে ক্ষয়ে অমাবস্যার আঁধারে মিলান, ফের সরু চন্দ্রলেখা হয়ে দেখা দিয়ে আস্তে আস্তে বড়ো হয়ে ওঠেন পূর্ণিমার রাত্রিতে পূর্ণ হবেন বলে। স্থিরপ্রেমা রোহিণী শান্ত হয়ে বসে থাকে নিজ মহলে, একটি রাত্রিতে প্রিয়তমকে কাছে পাবে বলে।


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার খন্ড ৎ কাজ করছে না নাকি? প্যারা ৪ লাইন ২ শব্দ ২।

ভালো গল্প (তবে বড্ডো ছোটো) হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ পাঠক।
ৎ কাজ করেছে। হাসি
এই ৎ আমায় খন্ড খন্ড করে ফেললো। পাণিনি লোকটা সুবিধার লোক ছিলো বলে মনে
হয় না। মন খারাপ
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ধুসর গোধূলি এর ছবি
তুলিরেখা এর ছবি

ছাব্বিশ জনের হাতের চড় সামলানো সোজা কথা না। এরা কেমন তেজীয়ান দেখেছেন? মাজেদা খালার মতন এদের কথাই হলো, "দুইবেলা ব্যাটাদের থাপড়াইয়া চাপার দাঁতগুলি ফেলাইয়া দিতে হয়।" হাসি
সাবধানে প্ল্যান করেন জনাব ধূগো। হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ধুগোকে তাদের অ্যাড্রেস দিয়ে দেন, তুলিরেখা।
তিনি আবার "এসো নিজে করি" নীতিতে বিশ্বাসী কিনা... দেঁতো হাসি
পরে আমরা হাড্ডিগুড্ডি গুনে দেখবো, ধুগো বহাল তবিয়তে আছে কিনা... চোখ টিপি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার বিরুদ্ধে 'ইন্টার-উইম্যান-সোসাইটিক' ষড়যন্ত্রের তেব্র নেন্দা জানায়া গেলাম! এইসব করে কি আর ধুগোর হাত থেকে দুই দশ ছয় ছাব্বিশ তেজস্বীনিকে দূরে রাখা যাবে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তুলিরেখা এর ছবি

তেজস্বিনী হবে। হাসি
আহা, দিমুনে কনট্যাক্ট। পরাণ ভইরা গাল ভইরা পেট ভইরা থাপড়া খান। দেঁতো হাসি
মেম্বরের পিটানি খাওনের ভাইগ্য দেইখা যেমুন হাপিত্যাশ করেন! আহা রে! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

এইসব হইলো পারফরমিং আর্ট। হাসি
করুক নিজে নিজে, বুঝুক মজা। দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আচ্ছা। দেঁতো হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এই গল্পটা আমার খুব ভালোলাগার একটা গল্প।
ছোটদেরকে সহজেই শুনিয়ে দেয়া যায়।
আবারো ভাল্লাগলো। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তুলিরেখা এর ছবি

শুনে আমারও ভালো লাগলো।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অষ্টম অধ্যায় পড়া শেষ

তুলিরেখা এর ছবি

আচ্ছা স্যর।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

খেকশিয়াল এর ছবি

চন্দ্র বেচারার জীবনে এই দুই বড় ফাঁড়া, এক এই ক্ষয় আরেক রাহুর গ্রাস। চন্দ্ররে ধরছিলেনই যখন, রাহুর গ্রাসটাও একসাথে বইলা ফেলতেন হাসি

------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তুলিরেখা এর ছবি

আহা রাহু আর কেতুরে আমি বড় ভালা পাই। সুন্দর দুইটা ভাই, সরল বিশ্বাসে আইয়া পংক্তিভোজে বইছে, কেমুন কইরা ওদের মারলো! নিন্দা করতে মন সরে না।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।