আগেরটা খুবই ছোটো হওয়া বিধায় কম্পেনসেট করতে আরেকটা দিলাম। বিদেশের। গ্রীক উপকথা।
এখন একটু বেশী রাতে, এই সাড়ে দশ কি এগারোটায় বাইরে গিয়ে রাত আকাশের দিকে চেয়ে উত্তরের দিকে তাকালে দেখি সপ্তর্ষির জিজ্ঞাসা চিহ্ন ঢলে পড়েছে পশ্চিমে আর পুবের দিকে উঠে আসছে W এর মতন চেহারা নিয়ে ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্রমন্ডল।
উপকথায় ইনি ছিলেন ইথিওপিয়ার রাণী, নীলোৎপলবর্ণা অপরূপা, রাজা সেফিউসের (সেফিউসের নামেও রয়েছে নক্ষত্রমন্ডল) স্ত্রী। এদের কন্যা ছিলেন অ্যান্ড্রোমেডা (এই কন্যার নামে আরেকটি নক্ষত্রমন্ডল আছে)।
তো ক্যাসিওপিয়া রূপের গর্ব করতেন বলে সমুদ্রদেবতা গেলেন রেগে। আসলে কিনা সমুদ্রদেবতার কন্যাদের তখন খুব রূপের খ্যাতি, তাই ইথিওপিয়ার রাণী ওদের বিউটি-কন্টেস্টে হারিয়ে দেবার উপক্রম করে দেখে ওরা ক্ষেপে গিয়ে ওদের বাবাকে নালিশ করে। সমুদ্রদেব এই শুনে মারাত্মক জলজন্তু সিটাসকে (সিটাস নক্ষত্রমন্ডলটি আছে একটু দক্ষিণঘেঁষা আকাশে) পাঠান ইথিওপিয়া দেশটাকেই ধবংস করতে।
দেশ জুড়ে হায় হায় রব ওঠে, লোকে পালাতে থাকে ঘরবাড়ী ছেড়ে। মহানহৃদয় রাজা সেফিউসের অন্তর দুলে ওঠে, প্রজাদের বাঁচাবার চেষ্টা করতেই হবে। পুরোহিতদের পরামর্শ নিতে গেলেন তিনি। বহু আলোচনার পরে তারা পরামর্শ দিলো কুমারী অ্যান্ড্রোমেডাকে উত্সর্গ করা হোক সেটাসের কাছে,ওকে মন্ত্রতন্ত্র দিয়ে শুদ্ধ করে বেঁধে রেখে আসা হোক সমুদ্রতীরের পাহাড়ের চূড়ার কাছে, শিলাখন্ডের সঙ্গে। বোঝো কান্ড! কে কোথায় কি করলো, প্রায়শ্চিত্তের ভার পড়লো কার ঘাড়ে! উদো কি সাধে ঐ হযবরল র ছাব্বিশমার্কা দেশে গিয়ে সুখে থাকতো? আমাদের দুনিয়ায় প্রচুর ফ্যাচাং! একে তো বয়স কেবল বেড়েই চলে, মোটেই ঘুরিয়ে দেওয়া যায় না,তার উপর আবার এইসব গন্ডগোল! কে কোন সজারু না বাঁদর না প্যাঁচা কোথায় কি করে, ন্যাড়াকে ধরে আসামী বানায়!
না না, তাবলে আবার ভেবে বসবেন না যেন অ্যান্ড্রোমেডা ন্যাড়া ছিলো। তার ছিলো ঘাড়পিঠকোমরছাপানো রেশমহেন চুল, নিয়মিত ভৃঙ্গরাজ তেল দিয়ে তাকে করে রাখতো পম্পাসরোবরের ঢেউ। রাজকুমারী দেখতে ছিলো যেন সদ্যফোটা পদ্মটি, রূপেগুণে তাঁর জুড়ি ছিলো না কোথাও।
তো, দেশকে বাঁচাতে এহেন কন্যাকে বলি দিতে হবে শুনে রাজা-রাণী ম্রিয়মান, কিন্তু কি আর করা! বৃহত্তর স্বার্থে মেনে নিতেই হলো। কথামতো রাজকুমারীকে বেঁধে রেখে আসা হলো শিলাখন্ডের সঙ্গে, যার সঙ্গে বিবাহের কথা ছিলো রাজকন্যার, সেই কাপুরুষও রাজকন্যাকে বাঁচাবার চেষ্টা করলো না। দূরে দেখা যায় সিটাসের আগমণের জলোচ্ছ্বাস! নিশ্চিত্ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে রাজকুমারী। এমন সময় এক আশ্চর্য কান্ড!
সেটাস প্রায় ধরে-ধরে অ্যান্ড্রোমেডাকে, এমন সময় আকাশ থেকে বাজপাখির মতন ঝাঁপ দিয়ে কে যেন পড়ে এসে সেটাসের পিঠের উপরে। সেটাস "ধরি ধরি মনে করি ধরিতে পারিনা" কীর্তন গাইতে গাইতে পাথুরে দ্বীপ হয়ে জেগে থাকে ইথিওপিয়ার সমুদ্রকুলের কাছে।
আসলে হয়েছে কি তখন গ্রীসের এক তরুণ বীর যুবরাজ পার্সিউস গর্গনবধ সেরে বাড়ী ফিরে যাচ্ছিলেন, জুতায় ডানা লাগানো ছিলো বলে উড়ে উড়ে যাচ্ছিলেন। কোমরবন্ধে বাঁধা ছিলো গর্গন মেডুসার মাথা, সেই মাথায় চুলগুলো সব সাপ আর চোখদুটির দিকে তাকালেই যেকোনো জীব পাথর হয়ে যায়। পার্সিউস নিজে মেডুসাকে বধ করার সময় আয়নার মধ্যে তাকিয়ে তাকিয়ে কায়্দা করে করেছিলেন, কাটামুন্ডুর দিকেও তাকান নি, অন্যদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অস্বচ্ছ আবরণে সাবধানে ঢেকে রেখেছিলেন মাথাখানা।
উড়ে যাবার পথে দেখেন ইথিওপিয়ার কূলে কিকান্ড হচ্ছে! এক সুন্দরী তরুণী হতে চলেছে এক জলজন্তুর খাদ্য! কি সব্বোনেশে ব্যাপার! তিনি পত্রপাঠ দুম করে নেমে পড়লেন সেটাসের পিঠে। আর মেডুসার সেই মাথা এখন সেটাসের চোখের সামনে নিয়ে ফটাস করে দিলেন খুলে। ব্যস! আর যায় কোথা! সেটাস পাথর হয়ে গেলো।
দ্রুত এবারে অ্যান্ড্রোমেডার পাশে গিয়ে পার্সিউস শিকলটিকল সব চটাং পটাং করে খুলে ফেলে জিগালেন," তাড়াতাড়ি কও তো দেখি কান্ডটা কি! বেশী ফ্যানাবে না, সময় বেশী নেই, খুব টাইট স্কেজুলের মধ্যে আছি। টু দ্য পয়েন্ট বলে যাও।" রাজকুমারী একেবারে টু দ্য পয়েন্ট বলেদিলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেলো।
পার্সিউস অ্যান্ড্রোমেডাকে নিয়ে পাহাড় থেকে নামলেন, রাজপ্রাসাদে এলেন, রাজা-রাণী কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত, পার্সিউস বললেন," চটপট আমার সঙ্গে অ্যান্ড্রোমেডার বিবাহ দিন। গ্রীসে ফিরেই অনেক কায়দা করে রাজত্বলাভ করতে হবে আমার। বেশী দেরি করার সময় নেই।"
সেফিউস ক্যাসিওপিয়া কিন্তু কিন্তু করছিলেন এমন তাড়াহুড়া করে বিদেশীর সঙ্গে মেয়ের বিবাহ দিতে, ওদের অচেনা সমাজ সংস্কৃতি .... মেয়ে কি মানিয়ে নিতে পারবে ... হ্যানো ত্যানো। পার্সিউস ক্ষেপে গিয়ে বলে,"বের করবো নাকি মেডুসার মাথাখান?"
"না না বাবা, আমরা কি তাই বলেছি? তোমার মতন বাবাজীবন পাওয়া খুব ভাগ্যের " ইত্যাদি ইত্যাদি ...চটপট বিয়ে হয়ে গেলো। পক্ষীরাজে চড়ে বাড়ী ফিরলেন পার্সিউস। সঙ্গে সদ্যলব্ধ স্ত্রী অ্যান্ড্রোমেডা, রাণীর মতন রাণী।
***
মন্তব্য
- ঈশ! অ্যান্ড্রোমেডা-রেও নিয়া গেলোগা 'দুষ্টু' রাজপুত্তুর! আমার হাত থেকে, এই অল্পের জন্য!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অ্যান্ড্রোমেডা আমার!!
ছোটকালে ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটান এ দেইখা প্রেমে পইড়া গেছিলাম..
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কারুরেই নজরের বাইরে রাখেন না? অ্যান্ডরিমেডারেও চাই?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আবার খণ্ড ৎ নীলোত্পলবর্ণা
গল্পটা অবশ্য চমৎকার।
ধন্যবাদ।
খন্ড ৎ ঠিক করেছি।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বরাবরের মতোই চমৎকার।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ধন্যবাদ ভুতুম।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ক্যাসিওপিয়া'র কি কোনো বাংলা নাম ছিলো?
ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্রমন্ডলের বাংলা নাম শুনেছিলাম শর্মিষ্ঠা নক্ষত্রমন্ডল।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সুন্দর লাগল।
কিন্তু এইটাও তো অনেক ছোট। কম্পেনসেট করতে তাহলে আরেকটা দেন না!
বলেন কি? বারে বারে তো না, একবারই কম্পেনসেট করা যায়।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুবই ভালো লাগলো। আপনার অনুবাদও সাবলীল ও চমতকার!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরন্দাজ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নবম অধ্যায় পড়া শেষ
দশম অধ্যায়?
দশম আসছে,আসছে স্যর।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পার্সিউসটা কিন্তু বেএএশ ...
আর, আপনার লেখার ভঙ্গি আরও বেশ!
এই জায়গাটা সত্যি দারুণ ছিলো
পার্সিউস চমৎকার লোক। ওঁর নিজের জীবনের গল্পও খুব ইন্টারেস্টিং। এইরকম সতেজ চরিত্র খুব কম দেখা যায়, কারুর উপরে কোনো অভিযোগ করে না, যদিও বহু অন্যায় ওর উপরে হয়েছে একদম ওর জন্মকাল থেকে,পার্সিউস কেয়ার করে না, সে শুধু তার চেষ্টা জারি রাখে ভালো কাজের, হেল্প ও এসে যায় মাঝে মাঝে, ওর অ্যাডভেঞ্চারের গল্পগুলো পড়তে পড়তে "অজানি দেশের নাজানি কী" মনে পড়ে যায়। পরে কিছু কিছু শোনানোর ইচ্ছে আছে।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হাহাহা বেশ মজা করে লিখেছেন!
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ধন্যবাদ খেকশিয়াল।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এটা খুবই মজা লাগলো পড়তে।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
প্রত্যূষাদি' ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেও ক্ল্যাশ অফ দ্য টাইটানস দেখলাম কালকে। গল্পটা খুব বদলে দিয়েছে দেখেছো? আর পেগাসাস নিয়ে কিন্তু কিছুই বললেনা ! যাক্ কালকে ঐ ছবিটা দেখে খুব ইয়ে হয়ে আছি, ব্যস্ততার চোটে ঠিকমতো হুইনজিং করারও সময় পাচ্ছিলাম না
নতুন মন্তব্য করুন