শুষ্ক মরুপ্রান্তর জ্বলছে তীব্র দহনে। দিশাহারা কিশোর রাখাল তার বাঁশী হারিয়ে ফেলেছে, জ্বরে পুড়ে যায় তার অকরুণ দিনরাত, প্রলাপের ঘোরে সে বলে তার একাকী নি:সঙ্গ প্রহর পুড়ে যায় নিষ্ঠুর রৌদ্রে, ধূ ধূ করা শূন্যমাঠ পড়ে থাকে বৃষ্টির আকন্ঠ তৃষ্ণায় ছাতিফাটা হয়ে। তার রাতও নিঠুর, হিংস্র জন্তুর মতন ছিন্নভিন্ন করে তাকে ধারালো শ্বদন্তে । তার শরীর নিভে গেছে, সাহস নিভে গেছে, আশাও নিবু নিবু। হায়, বুঝি নিভে গেল তার ধ্রুবনক্ষত্র।
সব পুড়ছে তাপে, ঝলসে যাচ্ছে আগুনে, ধোঁয়ায় অন্ধকার। ছিন্নপ্রলাপের মত জ্বলছে শুকনো ঘাস, রাতের আঁধারে খনি থেকে উঠে এসে যক্ষ সোনার তাল নিয়ে লোফালুফি করতে করতে বলছে," সোনা সোনা সোনা, এই সোনাই সব, সোনাই প্রভু, সোনাই উপাস্য।" অর্ধচেতনে রাখাল মনে করতে চাইছে, "তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রূষার জল।" তার চারিপাশে দলে দলে যক্ষমূর্তি, ছায়ার মতন ঘিরে এসেছে, সমবেতকন্ঠে তারা বলছে, "সোনা, সোনা, সোনা।"
না না, হে যক্ষ, স্বৈরাচারীর স্বর্ণ নয়-
সন্ধ্যার আঁচল ছোঁয়া সুবর্ণমেঘ,
আমি তাকে ডাকি, তাকে চাই।
নিষ্ঠুর দগ্ধবেলা পারে ছায়াবৈকাল-
বসে থাকি, হৃদিহ্রদে থরথর আকাঙ্ক্ষাঢেউ,
সে আসবে, চুলে তার নাগকেশরের ফুল।
স্নিগ্ধ চোখ, সন্ধ্যাতারার মত করুণায়
জলঠোঁটে ছুঁয়ে সে জুড়াবে এ তাপ।
আকন্ঠ তৃষ্ণায় অর্ধচেতনায় সে প্রার্থনা করে নদীকে, সেই নদী, যে একদিন হারিয়ে গেছিল মরুবালুরাশিতে। কুটি কুটি করে নদীকে কেটেছিল নেকড়েরা, হায়েনারা, রক্তমুখ কুকুরেরা। শকুনেরা হেসেছিল খলখল। অশুভরাত্রির শেষে ঘোলাটে ভোর হলো, তখন হারিয়ে গেছে নদী। আহ, সে কি আর ফিরবে না কোনোদিন? যে হারায় সে কি কেবলই আরো আরো হারিয়ে যায়?
প্রহর পুড়ছে তাপে, পুড়ে গেল রাত
রক্তের অক্ষরে ঢেকে গেছে দাঁত-
তবু তোকেই ডাকি, মায়াময়ী আয়-
যাতনা-আহুতি দিই জল-আত্মায়,
হৃদয়বর্ম ছিঁড়ে পাথর ফলায়-
আয় মায়া, আয় নদী, হৃদসখী আয়।
***
দূরে, অনেক দূরে, অনপনীয় অনতিক্রম্য ব্যবধানের অন্যপাশে ঝরঝর বাদলধারে ভিজে যেতে যেতে ভিজে যেতে যেতে সব ভুলে যাচ্ছে নদী। কি যেন তার করার ছিল? কোথায় যেন তার যাবার ছিল, কার কাছে জানি তার নিয়ে যাবার কথা ছিল স্নেহমমতার সুধাপাত্র? কার কাছে? সেই যে, একদিন যে বলেছিল, "মুছে যায় পাহাড়ের শিঙে শিঙে গৃধিনীর অন্ধকার গান/ আবার ফুরায় রাত্রি, হতাশ্বাস/ আবার তোমার গান করিছে নির্মাণ/ নতুন সমুদ্র এক, শাদা রৌদ্র, সবুজ ঘাসের মত প্রাণ/ পৃথিবীর ক্লান্ত বুকে।"
কে বলেছিলো? মনে পড়ে না নদীর, শুধু মনে পড়ে এক ভোরের আলোর মতন কিশোরমুখ, সে মুখ ঢেকে যাচ্ছে অন্ধকারে, পাপে, ভুলের কালোতে। " না না না ”- চিৎকার করে ওঠে নদী। স্বপ্ন ভেঙে জেগে উঠে দেখে আধেক চাঁদ লেগে আছে জিওলগাছের ডালে। তবু সে জানে, তার স্বপ্ন আসলে সত্য, কোথাও কেউ তাকে সত্যিই ডাকছে দগ্ধপ্রান্তর থেকে। সে কেমন করে যাবে? কারা ডাকে, কোথায় যেতে ডাকে, তার তো জানা নেই!
স্বপ্নে কুয়াশা কাঁপে, কে যেন ডাকে-
একফালি চাঁদ কাঁপে পাহাড়ী বাঁকে,
অনেক দূরের ডাঙা
আগুনের রঙে রাঙা-
আকুল তিয়াসে সে কি বৃষ্টি ডাকে?
স্বপ্নের কুয়াশায় কে যেন ডাকে!
***
সবুজ রঙের অক্ষরে সত্যই লেখা ছিল, স্বপ্ন নয়, তবে কেন পথ হারালি, কেন পথ হারালি কিশোর ? কেন চিনলি না জল, মাটি, আকাশের সঙ্কেত? সে নদী চলে গেছে মরুপথে বাঁক ঘুরে, দূরে দূরে দূরে অনেক দূরে। এইখানে পড়ে থাকা গতিহীন জলটুকু সবটা লবণী হয়ে গেছে ! কেন তাকে ধরে রাখতে পারলি না? কেমন করে ফিরাবি তাকে আজ? ফিরে এসে সে কূলপ্লাবী বন্যায় কেমন করে ভাসাবে তোর শুখা দেশ? পাথর পাথর পাথর! বালি বালি বালি! সেই জীবনজল এসে না ধুয়ে দিলে কিকরে বিষক্ষয় হবে পাথরের?
অবাক কিশোর, কোথায় তোমার বাঁশি?
যেই বাঁশিটি জাগতো আলোর ভোরে?
সুরের টানে ফুটতো কদমশিহর
সাঁঝ-আকাশে নীল তারাদের ঘরে?
******
মন্তব্য
ধন্যবাদ পিপিদা।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সুন্দর!
ধন্যবাদ পাঠক।
পুন: আপনি মেইল দেইখেন গো।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
____________
অল্পকথা গল্পকথা
ধন্যবাদ আ সা শিমূল।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আগেরদিন লেখাটার কিছুটা বাদ পড়ে গেছিলো অসাবধানে, আজকে জুড়ে দিলাম।
প্রিয় পাঠকেরা এর জন্য মাফ করবেন, ভুল করে চোখ এড়িয়ে গেছিল।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বসে থাকি, হৃদিহ্রদে থরথর আকাঙ্ক্ষাঢেউ,
স্বপ্নে কুয়াশা কাঁপে, কে যেন ডাকে-
একফালি চাঁদ কাঁপে পাহাড়ী বাঁকে,
অনেক দূরের ডাঙা
আগুনের রঙে রাঙা-
আকুল তিয়াসে সে কি বৃষ্টি ডাকে?
স্বপ্নের কুয়াশায় কে যেন ডাকে!
অবাক কিশোর, কোথায় তোমার বাঁশি?
যেই বাঁশিটি জাগতো আলোর ভোরে?
সুরের টানে ফুটতো কদমশিহর
সাঁঝ-আকাশে নীল তারাদের ঘরে?
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ধন্যবাদ খান ভাই।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন