৩।
মজবুত জাহাজে অনেকের সঙ্গে ভেসে পড়লাম আমি আর আরেনুশও৷ অনেক তদবির তদারকের পর অনুমতি পাওয়া গেছে সাংগ্রিলার৷ না না, যোগের ইস্কুলে নয়, অত যোগ্যতা আমাদের কোথায়? মোটামুটি দিন চলা পরিবারের মেয়ে আমি৷ লেখাপড়া সাধারণ ইস্কুলে, সাংগ্রিলার ভাষা অবশ্য আমরাও শিখেছি ইস্কুলে অল্প সল্প৷ তরতর তরতর করে বলতে পারবো না অবশ্য, কিন্তু কাজ চালাবার মতন বলতে পারি থেমে থেমে ভেবে ভেবে৷ এখন এই দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় অনেক অভ্যাস করা যাবে ভাষা আমাতে আর আরেনুশে মিলে৷ আরো আশেপাশের সহযাত্রীদেরও পাওয়া যেতে পারে, নিশ্চয়ই অনেকেই ঐ ভাষা ভালো পারে, যাচ্ছেই যখন সেখানে।
আরেনুশের অবস্থা আমার চেয়েও সঙ্গীন৷ ওর কেউই নেই, দূর সম্পর্কের এক দাদামশায় আর দিদিমা ছোটোবেলা মানুষ করেছিলেন, তারা পরলোকে যাবার পর আরেনুশ একদমই একা৷ ওদের কিছু জমিজমা ছিলো, সেসব থেকে সামান্য আয় হয় আর ও মূর্তি টুর্তি বানিয়ে যা বেচতে পারে, তা থেকে যা হয়৷
সেই আমরাই কিনা চলেছি সাংগ্রিলা! অভূতপূর্ব সৌভাগ্যে আমরা মূক হয়ে থাকি দুজনেই৷ সমুদ্রের নীল জলের দিকে চেয়ে আমরা দুজন চুপ করে বসে থাকি জাহাজের ডেকে৷ সাদা ফেনার ফুল উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে প্রপেলারের ঘূরণ লেগে৷ সাংগ্রিলা থেকে অনুমতি শুধু না, কাজও পাওয়া গেছে৷ অবশ্য কাজ না পেলে আমাদের অনুমতি পাওয়া ই বা সম্ভব হতো কিকরে? আরেনুশ কাজ পেয়েছে ভাস্কর্যের, আমি ছবি আঁকার৷
আমাদের মনে পড়ছিলো সেইদিনের কথা, অদ্ভুত বুড়ো মানুষটার সঙ্গে যেদিন দেখা হলো৷ খর্বনাসা বিরলকেশ ফর্সা হাসিখুশী বুড়ো মানুষটির সঙ্গে সেদিনই প্রথম দেখা আমাদের৷ ঐ যে সেদিন, যেদিনের কথা বলছিলাম৷ আমি আর আরেনুশ সুবর্ণদ্বীপের মুইনুখ শহরে গেছিলাম ছবি আর মূর্তি বিক্রি করতে৷ মুইনুখের বাজারে আমাদের ছোটো একটু দোকানমতন আছে, আসলে আমাদের দোকান না, অন্য আরেকজনের দোকান, আমাদের কিছুটা সময়ের জন্য ডিসপ্লে করতে দেয় সামান্য ভাড়ার বিনিময়ে৷ আরেনুশের দাদুর সঙ্গে নাকি ভদ্রলোকের পরিচয় ছিলো, এমনিতেও লোক ভালো, নইলে এত কম ভাড়ায় এতক্ষণের জন্য এইভাবে জায়গা দেয় না তো এখানের আর কেউ!
সেদিন দুপুরবেলা ঝিমিয়ে পড়েছিলো বাজার, লোকজন পথে বেশী ছিলো না, আলস্যজড়িত হয়ে পড়ে ছিলো পথঘাট সব, লোকজন প্রায় সবাই ঘরের মধ্যে বিশ্রাম করছিলো, দ্বিপ্রাহরিক আহারের পরে প্রায় সবাই একটু ঘুমিয়ে নেয়৷ আমাদের দোকানমালিকও চলে গেছিলেন ভেতরের ঘরে, বিশ্রাম করতে৷ উনি আমাদের উপরে এইসময়টা পুরো দোকানের দায়িত্বই দিয়ে ঘুমাতে যান৷ আমি আর আরেনুশ দোকানে জেগেই ছিলাম, দুপুরে আমরা অল্প খাই বলে ঘুম পায় না, বলা যায় না, দুপুরবেলাও তো খরিদদার আসতে পারে!
ঐ সময়েই হাসিমুখ সেই বৃদ্ধ এসে দোকানে ঢুকেছিলেন আর আরেনুশের তৈরী কালো পাথরের একটি ক্ষুদ্র মূর্তির উপরে চোখ পড়তেই থমকে দাঁড়িয়েছিলেন! তারপরে ভালো করে সরু চোখ আরো সরু করে দেখছিলেন আমাদের ছবি আর মূর্তিগুলো! যত দেখছিলেন ততই ওনার সস্নেহ হাসিতে আলো জ্বলে উঠছিলো বেশী বেশী করে৷
৪।
"তখন আলো ছিলো না, অন্ধকারও না, জন্ম ছিলো না, মৃত্যুও না, জ্ঞানঘন চৈতন্যময় মহাসমুদ্রে ডুবে ছিলো সব সদসত্ বস্তু৷ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জ্ঞানের নদী ঝাঁপ দিয়ে পড়ছিলো সমুদ্রে, লীন হয়ে যাচ্ছিলো ঐ বিরাটে৷ যে পূর্ণকে না চেয়ে অংশকে চায়, সে তলিয়ে যায়৷" স্মিতমুখ বক্তৃতাকারিণী কথা বলছেন অতি মধুর, অতি সুরেলা গলায়, ঘিয়ে রঙের আলগা পোশাক ওনার, কোমরে নীল রংএর চওড়া রেশমী কোমরবন্ধ৷ মুখ এত শান্ত আর ভাবলেশহীন যে কেমন ভয় ভয় করে৷ আমাদের সেই দ্বীপময় দেশে মানুষ অনেক বেশী প্রাণচঞ্চল৷ এখানে এই স্বপ্নের দেশ সাংগ্রিলায় এসে থেকেই মানুষকে দেখছি অদ্ভুতরকম শান্ত! মুখের রেখায় ভাবপ্রকাশ হয় না, চোখের আলোতে ছায়াতেও না৷ মানুষেরা যোগমগ্নের মতন যেন৷ এই কি সেই বিখ্যাত সাংগ্রিলার যোগবিদ্যা? এত ব্যপ্ত? সকলেই এর অংশীদার?
আরেনুশ আর আমি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি, আশেপাশে অসংখ্য তদগতচিত্ত ছাত্রছাত্রী৷ আমাদের ওরিয়েন্টেশান হচ্ছে৷ আমরা যদিও যোগের শিক্ষায় ঢুকছি না, আমাদের ক্লাস হবে চিত্রকলার আর ভাস্কর্যের, কাজও করতে হবে সঙ্গে সঙ্গে, কিন্তু ওরিয়েন্টেশানের সময় নাকি এই একই জায়গায় সকলকে আসতে হয়৷ এটা নাকি একদম অপরিহার্য৷ সকলকেই আবশ্যিকভাবে এটা নিতে হয়৷
অভূতপূর্ব কথায় আচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকি আমরা, শুধু আমার ডান হাত আর আরেনুশের বাঁহাত শক্ত করে পরস্পরকে ধরে আছে, কিছুতেই আমাদের পথচ্যুত হতে দেবে না, ঐ আলোছায়াময় আন্দিজের প্রাচীন গুহা থেকে প্রাচীরগাত্রে খোদাই করা চিত্রগুলি যেন আমাদের হদৃয়ের মধ্য থেকে বলছে, " তোমরা অভিভূত হয়ো না, অভিভূত হয়ো না,হৃদয়কে ভয় পেতে দিও না৷ মুক্তিকে ভুলে যেও না, স্বপ্ন দেখতে বিস্মৃত হয়ো না৷"
সেই হাসিমুখ ক্ষুদ্রচোখ খর্বনাসা বৃদ্ধকে মনে পড়ে আমাদের, মুইনুখের বাজারে সেই নির্জন শান্ত দুপুরে যিনি আমাদের দোকানে এসে আরেনুশের ভাস্কর্যের শিল্পসৌকর্য্যে মুগ্ধ হয়ে গেছিলেন৷ অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মূর্তি কিনেছিলেন উনি, আমার আঁকা কয়েকটা জলরঙের ছবিও৷ তারপরে খুব ক্যাজুয়ালি আমাদের জিজ্ঞেস করছিলেন যদি আমরা দূরের কোনো দেশে কাজের সুযোগ পাই যাবো কিনা! আমার বুকের মধ্যে হৃৎপিন্ড একবার থেমে গিয়ে দুপদুপিয়ে জোরে চলতে শুরু করলো, উত্তেজনা গোপণের জন্য আমি মুখ নীচু করলাম৷ আমি জানতাম ভদ্রলোক সাংগ্রিলার কথা বলবেন৷
আরেনুশ খুব ঠান্ডামাথা ছেলে,ও ধীরে ধীরে আলোচনার ভঙ্গীতে বলেছিলো, " যাবো কিনা সেটা নির্ভর করে কোন দেশ, কি কাজ, কতদিনের জন্য কাজ পারিশ্রমিক কত এইসব ছোটোখাটো খুঁটিনাটির উপরে৷" হাসিতে ভদ্রলোকের চোখ সরু হয়ে গেছিলো, ফুলের পাপড়ির মতন হাল্কা, পাতলা, উজ্জ্বল কার্ড বার করে আমাদের দুজনকে দুটো দিয়ে বলেছিলেন, " আমার বাড়ী সাংগ্রিলায়৷ পরে যোগাযোগ করলে ভালো করে কথা হবে৷"
সাংগ্রিলা!!!! কথাটাই একটা শক্তিশালী মন্ত্রধ্বনির মতন আমাদের বিস্ময়াভিভূত করে দিয়েছিলো সেদিন৷ হৃৎপিন্ডের মধ্যে রক্তপ্রবাহের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম আমি৷ অনেক কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে বুজকুড়ি কেটে উঠতে থাকলেও বাকস্ফুর্তি হয় নি৷ আমার গলাটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছিলো, এক চুমুক জল খেতে পারলে ভালো হতো মনে হচ্ছিলো, কিন্তু সেই মুহূর্তে জলপানও অসম্ভব৷ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা দুজন তখন, প্রাণচঞ্চল দ্বীপমালার দেশের দুই তরুণ তরুণীর উষ্ণ দেহমন একটিমাত্র মন্ত্রশব্দে স্থির হয়ে গেছে৷ ঐ যে কারা যেন বলে সাংগ্রিলার লোকেরা যাদুকর, সত্যি কি তাই? অথচ এমনিতে তো ভদ্রলোককে দেখে কিছুই মনে হয় না! অন্যরকম দেখতে, এই পর্যন্ত৷
আমাদের বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখের সামনে বৃদ্ধ ভদ্রলোক অল্প মাথা নুইয়ে বিদায় নেবার আগে বললেন যে উনি কয়েকদিনের জন্য আপাতত মুইনুখ শহরের সমুদ্রবিলাস অতিথিনিবাসের একশো বত্রিশ নম্বর ঘরে আছেন৷ আগ্রহী হলে আমরা যেন পরদিবস সকালে যোগাযোগ করি৷
পরেরদিন সকালেই গিয়েছিলাম আমরা দুজনেই৷ আমি আর আরেনুশ৷ আরেনুশ হাসছিলো, আমায় বলেছিলো, " দ্যাখো কি কান্ড! আমরা, যারা কিনা মুইনুখের বাজারে অতি সামান্য দামে ছবি মূর্তি বিক্রি করে দিন চালাই, লেখাপড়াও বেশী না আমাদের, সেই তারাও কেমন নেচে উঠেছি সাংগ্রিলা শুনেই৷ কি প্রমাণ আছে যে এই ভদ্রলোক, কার্ডে যার নাম লেখা ঋতোবন্তো সুমিন্তোস, সেই এত গেরামভারী নামওয়ালা তিনি যে সত্যি কথাই বলছেন? এইসব কার্ড টার্ড সবই তো জাল হতে পারে? আমাদের ভাঁওতা দিয়ে যে ভোলাচ্ছেন না তার প্রমাণ কি? "
আমি হেসেছিলাম, বলেছিলাম, " আরেনুশ, আরেনুশ, এখনি এত কিছু ভেবে ফেললে? চলো আগে দেখে আসি কি বলেন, আদৌ আমাদের সঙ্গে দেখা করেন কিনা৷ দ্যাখো, আমাদের কিই বা আছে, আমাদের ঠকিয়ে কি পাবে কেউ বলো? বড়োজোর ভাঁওতা দিয়ে নিয়ে গিয়ে ... কি আর করবে? ঠকাবে? বিক্রি করে দেবে? অন্য অত্যাচার করবে? তাতে কি লাভ হবে? চলো দেখেই আসি৷ ভদ্রলোককে দেখে আমার অমন অসৎ মনে হয় নি৷ এমনিতেও তো আমাদের জীবনে কিছুই নেই, দিনগত পাপক্ষয়, উঞ্ছবৃত্তি করে চলেছি৷ নিজেদের একটু জায়্গাও নেই পসরা সাজানোর, পরের আশ্রয়ে সঙ্কুচিতভাবে কাজ করতে হয়৷ চলো, হয়তো আমাদের জীবনে কোনো একটা নতুন কিছু ঘটতে চলেছে, ভালো বা মন্দ৷ মন্দ হলে কতদূর আর হবে, বড়োজোর মৃত্যু৷ কিন্তু ভালো হলে কি হবে তা কি বলতে পারো? অনন্ত সম্ভাবনা৷ আমাদের ভয় পাবার কি আছে? আমাদের হারাবারই বা কি আছে বলো?"
তো, পরদিন আমরা গেলাম সমুদ্রবিলাস অতিথিনিবাসে৷ অসাধারণ সুন্দর সেই সমুদ্রতীরস্থ অট্টালিকা, অট্টালিকার সীমানা নির্ধারক প্রাচীরের মধ্যে বিরাট উদ্যান, সরোবর, লতাকুঞ্জ ইত্যাদি৷ অত্যন্ত ধনীরাই কেবল সমুদ্রবিলাসে ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন৷ ওখানে কোনোদিন আমাদের যাওয়া হবে, এও তো স্বপ্নের অগোচর ছিলো! দ্বাররক্ষীর হাতে কার্ড দিয়ে আমরা স্পন্দিতবক্ষে অপেক্ষা করছিলাম৷ আমাদের অবাক করে দিয়ে ঋতোবন্তো সুমিন্তোস নিজে এসে আমাদের ওনার ঘরে নিয়ে গেলেন৷
এখন আমি আর আরেনুশ কিছু কিছু সকালের ক্লাস একসঙ্গে করি, প্রধানত চিত্রকলার ক্লাস৷ দুপুরে একসঙ্গে দুজনে টিফিন খাই, তারপরেই ও চলে যায় সেই দূর প্রান্তরে যেখানে অনেক ছোটো বড়ো মিনার আর প্রার্থনালয় তৈরী হচ্ছে, সেখানে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে ভাস্কর্যের৷
আমি দুপুরের পরে যাই গুহাচিত্র অংকনের কাজে, এক চিত্রশিল্পী গ্রুপের সঙ্গে একত্রে কাজ করি সেখানে৷ আমাদের যিনি নির্দেশনা দেন, তিনি একজন প্রাচীনা সন্ন্যাসিনী, কিন্তু খুব শক্তসমর্থ, বয়স ওঁর মুখে বলিরেখা এঁকেছে কিন্তু সতেজ দেহমনে তেমন ভাঙন ধারাতে পারে নি৷ ওঁর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে ভাষা পড়তে পারিনা, কিন্তু ধীরলয়ের কথাগুলি এত স্পষ্ট আর ওনার দেখিয়ে দেবার ভঙ্গী এমন পরিষ্কার যে আমাদের বিশেষ অসুবিধা হয় না, ঠিক ঠিক রঙ ঠিক ঠিক তুলির কাজ ঠিকমতই হতে থাকে৷ পুরো গ্রুপ আমরা সুরবাঁধা যন্ত্রের মতন কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই৷ প্রদীপের পীতাভ আলোয় আর কর্মীদের দেহছায়ায় ঐ অদ্ভুত গুহার মধ্যে কখনো স্পষ্ট কখনো ছায়াময় হয়ে উঠতে থাকে গুহার দেয়ালের ঐসব আশ্চর্য চিত্রমালা-কিছু কিছু সমাপ্ত, কিছু অর্ধসমাপ্ত, কিছু মাত্র শুরু হয়েছে, কিছু অংশে এখনো হাতই পড়ে নি৷
আমি প্রদীপ তুলে ধরে এখন দাঁড়িয়ে আছি গুহাতে, কোথা থেকে যেন মৃদু বাতাস আসছে, প্রদীপের শিখা অল্প অল্প কাঁপছে৷ আমার অন্য হাতে রংতুলির থালা, প্রাচীনা সন্ন্যাসিনী নির্দেশিকা সেখান থেকে তুলি ও রঙ বেছে, রঙের বাটিতে তুলি ডুবিয়ে ছোট্টো চৌকো পাথরপাটায় পরীক্ষা করে নিয়ে তারপরে কোমল করে তুলি বোলাচ্ছেন গুহার দেয়ালে আঁকা অলৌকিক অগ্নিপক্ষীর ডানায়৷ তাপসীর মুখ ধ্যানমগ্নের মতন শান্ত সমাহিত, চোখ অর্ধনিমগ্ন৷ আমায় এখানের বন্ধুরা বলেছে উনি নাকি অমন আচ্ছন্ন ধ্যানমগ্ন অবস্থাতেই কোনো সুদূরের কারু নির্দেশ অনুভব করেন নিজের হৃদয়ে, সেই অনুসারে কাজ করেন, তাই ওঁর কাজের এইসব মুহূর্তগুলোতে কথা বলা নিষিদ্ধ৷
প্রথমটুকু এসে গেলেই উনি আমাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে পরের জনের কাছে চলে যাবেন৷ শান্ত হয়ে নি:শব্দে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখতে থাকি, হঠাৎ গুহার দেওয়াল মুছে গিয়ে জেগে ওঠে মুইনুখের বাজারের সেই দুপুর, মনে পড়ে ঋতোবন্তো সুমিন্তোসকে৷ ওনার সঙ্গে দেখা করতে সমুদ্রবিলাস এ গিয়ে আমরা অবাক মুগ্ধ হয়েছিলাম দুজনে, আমি আর আরেনুশ৷ অত বিলাসবৈভবের অতিথিনিবাস আমাদের মতন সাধারণ অবস্থার মানুষের পক্ষে দেখা প্রায় অসম্ভব৷
ঋতোবন্তো আমাদের ওঁর ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছিলেন, সুস্বাদু খাদ্যপানীয়ে তৃপ্ত করেছিলেন, দেখিয়েছিলেন ওর শিল্পসংগ্রহ৷ আরেনুশ বিমুগ্ধ বিস্ময়ে সেই সংগ্রহের মূর্তিগুলির দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, "এত সুন্দর!"
উনি আমাদের বলেছিলেন আমরা যদি সাংগ্রিলায় যেতে চাই, তবে উনি ব্যবস্থা করে দিতে ইচ্ছুক৷ উনি দুনিয়া ঘুরেছেন, শিল্পকলা উনি চেনেন, অনেক নামীদামী শিল্পনমুনা রয়েছে ওঁর সংগ্রহে৷ কিন্তু আমাদের কাজের মধ্যে উনি এমন কিছু দেখেছেন যা আগে কোথাও দেখেন নি৷ সাংগ্রিলায় ওঁর চেনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছেন, তাছাড়া উনি জানেন ওখানে চিত্রশিল্পী ও ভাস্করের কাজ জানা মানুষের প্রয়োজন৷ আমারা যেতে চাইলে খুবই স্বাগত৷
সেদিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি আমরা, কুন্ঠিতভাবে ভাবার সময় চেয়েছিলাম৷ উনি হেসে ফেলেছিলেন, বলেছিলেন," অবশ্যই৷ এখনি কিছু বলতে হবে না, কদিন সময় নাও, ভাবো, তারপরে এসে আমাকে বোলো৷ আমি এখানে আগামী দুইমাস থাকবো৷"
স্নেহময় প্রৌঢ় মানুষটির কথা ভাবলেই কেমন একটা অদ্ভুত ভালোলাগা ছড়িয়ে যায়৷
(চলবে)
মন্তব্য
খুব ভালো লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ বইখাতা।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লাগছে পড়তে, আগের পর্ব পড়ার আগেই এপর্ব পড়ে নিলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ মুস্তাফিজ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক।
আচ্ছা।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাল লাগছে আপু। আরেনুশ নামটা অপরিচিত লাগল।
-----------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
অপরিচিত লাগলো? আরে তাতো লাগবেই! দূর ভবিষ্যতের মানুষ তো সে! -----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন