ইমার কথা
১।
"মনে হয় কোনো বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে"
-জীবনানন্দ দাশ
নদীর পশ্চিমে, নীল আকাশে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঋজু উদ্ধত কঠিন শিলাময় বৃক্ষবিরল পাহাড়, সকালের আলোয় গোলাপী থেকে সোনালী হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় বেগুনী থেকে কালো হয়ে রাত্রির অন্ধকারে মিলিয়ে যায়৷ দুপুরবেলার রোদে মরুভূমির তপ্ত আবহাওয়ায় ভাজা ভাজা হতে হতে যখন আমরা সমাধিমন্দিরে পৌঁছাই --ঐ পাহাড় যেন জ্বলন্ত কয়লার মতন তাপ বিকিরণ করছে৷
ঐখানেই পরজীবনের প্রাসাদ, পুরানো যুগের এক রানী তৈরী করিয়েছিলেন নিজের আর প্রিয়জনেদের জন্য। পার্থিব জীবনের সামান্য সময়টুকুর পরে বিস্তৃত যে অনন্ত জীবনকে তাঁরা জানতেন, সেই জীবনের জন্য। অদ্ভুত সুন্দর ইমারত, পাথর দিয়ে তৈরী বিস্তৃত স্তরগুলো ধাপে ধাপে উঠে গেছে উপরে, উপরে গিয়ে এমনভাবে মিশেছে পিছনের সেই পাহাড়ের সঙ্গে, ঠিক মনে হচ্ছে আকাশের গায়ে হেলান দেওয়া সেই পাহাড়মালা এই সৌধের এক বিরাট পশ্চাত্পট৷
একটু একটু করে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা বহু বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় সৌধ উদ্ধার করেছেন, সে সৌধ তো চাপাই পড়ে গেছিলো, হাজার হাজার বছরের বালির ঝড়ে ঝড়ে হারিয়ে গেছিলো, লুকিয়ে ছিলো বিস্মৃতির গর্ভে৷
প্রখর রোদ্দুর থেকে চোখ জুড়িয়ে নিতে আমরা ছায়ায় এসে দাঁড়াই, আস্তে আস্তে চোখ সয়ে এলে চোখে পড়তে থাকে দেয়ালে দেয়ালে স্তম্ভে স্তম্ভে অসাধারণ সব ভাস্কর্য-চৌত্রিশ শত বছর আগে থেকে অতীত-ইতিহাস আমাদের দিকে ফিরে তাকায়, মুচকি হাসে৷
আমরা এখানে এসেছি গতকাল। আমাদের হাতে মোট পনেরোদিন আছে ঘুরে দেখার। অথচ কী তীব্র অস্থিরতা আমার ভিতরে ঘূর্ণী তুলছে! মনে হচ্ছে যথেষ্ট সময় নেই। কোনোদিন আগে যে দেশ দেখিনি, কেন সেখানে আগে কখনো এসেছি বলে মনে হয়? কেন পথের এক-একটা বাঁকে এসে চমকে উঠি, এ যেন চেনা! কিন্তু তাতো হতে পারে না! সুপ্রতীক বলে যে আমি খুব বেশীরকম কল্পনাপ্রবণ। ছোটোবেলা থেকে গল্প আর ইতিহাস পড়ে পড়ে সব মিলিয়েমিশিয়ে নাকি ঘেঁটে ফেলেছি! এরকম হলেই নাকি এরকম অচেনা জায়গা চেনাচেনা ঠেকে! মাঝে মাঝে সুপ্রতীক রেগে যায়, বলে," ইমা, একটু বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন হবার চেষ্টা করো। আর কতকাল ফ্যান্টাসিল্যান্ডে থাকবে? " আমার খুব হাসি পায় ওর রাগীরাগী চেহারাটা দেখলে, বেচারা ভালো করে রাগও করতে পারে না, রাগলে ওকে কেমন শিশুর মতন দেখতে লাগে। ওকে একবার বলেছিলাম, "সু, মানুষের জীবনে যদি শুধু আঁককষা আর লাভক্ষতির হিসেবই থাকতো, কোনো কল্পনা, গল্প, কবিতা, রূপকথা,ফ্যান্টাসি না থাকতো, সে জীবন সইতে পারতে?" সুপ্রতীক কিছু বলেনি উত্তরে, চুপ করে আমার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়েছিলো, রাগের চোটে হয়তো কোনো যুক্তি মনে আসে নি ওর।
বালিভরা গরম দেশে একসঙ্গে বেশীক্ষণ ঘোরাঘুরি করা যায় না। আমরা ফিরে আসি নদীর অন্য পাড়ে, ছোটো একটা দোকানে ঢুকে ঠান্ডা পানীয় খেতে খেতে জুড়াতে থাকি ক্লান্ত শরীর আর আলোড়িত অনুভবকে গুছিয়ে আনতে থাকি যথাসম্ভব। তারপরে মিউজিয়ামে যাই, আমাদের পরিচিত বন্ধু একজন আছেন সেখানে।
সন্ধ্যাবেলা রওনা হই সরাইয়ে ফেরার জন্য, তখন অন্ধকার বেশ গাঢ়। আকাশের দিকে চেয়ে আবার কেমন হয়ে যাই। মরুভূমির রাত্রি অপরূপ! একসাথে এত তারা, এত তারা! একেবারে ঝকঝক করছে! হাল্কা ওড়নার মতন দেখা যাচ্ছে ছায়াপথের কালপুরুষ বাহু! এরকম কবে দেখেছিলাম, কোনোদিন দেখেছিলাম কি? হয়তো দেখেছিলাম কোনোদিন। হয়তো সে এ জন্মে নয়, হয়তো বহুজন্ম আগে যখন এই বালির টিলাগুলির পাশ দিয়ে যে পথ চলে গেছে পাথরের সীমানা দেওয়া গাঁয়ের দিকে, সেই পথে হাঁটতাম। রঙীন ঘাঘরা-চোলি থাকতো আমার অঙ্গে, কাঁখে থাকতো কলস, সখীদের সঙ্গে কথা কইতে কইতে হাসতে হাসতে জল নিয়ে ফিরতাম ঘরে। মরুগোলাপের ঘ্রাণ আমাদের মনকে উচাটন করতো!
সুপ্রতীককে এসব বলা বৃথা, আমি নিজের ডাইরিতে এইসব লিখে রাখবো।
(চলবে)
মন্তব্য
এতটুকু ভালো লাগে নি পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলুম...
_____________________________________________
কার জন্য লিখো তুমি জলবিবরণ : আমার পাতার নৌকা ঝড়জলে ভাসে...
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
পরের পর্ব যে ভাই পাঠকদের ভালোলাগার উপরে নির্ভর করে আসে!
যারা পড়েন তাদের যদি এতটুকুও ভালোই না লাগে, তাহলে পরেরগুলো আর নীড়পাতায় আনিনা।
ভালো থাকবেন। কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তা কেন!! পরের পর্ব পড়ে হয়তো গল্প'র পুরো আমেজ পেয়ে যাবো। অবশ্যই নীড় পাতায় আনবেন। অপেক্ষায়...
বাকী অংশের অপেক্ষায় রইলাম ............................
--------------------------------------------------
আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কাব্য নিয়ে ঘুরি।
আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কব্য নিয়ে ঘুরি।
পাঠক অপেক্ষায় থাকলে ভালো লাগে বেশ, মনে হয় লেখাগুলো কোথাও না কোথাও গিয়ে পৌঁছচ্ছে, লখকাটা ঘুড়ির মতন এলোমেলো ঘুরছে না।
ভালো থাকবেন, আশা করছি বেশীদিন আপনাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আরে না, অবশ্যই দেবেন পরের পর্ব! ইয়ার্কি না কি, অ্যাঁ? লেখা-খেলাপি হইবেন না কয়ে দিলাম! আরো কয়ে গেলাম- অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে। হ্যাঁ, আপনি জানেন- আরো অনেকের কাছেই লাগবে এমন অনেক ভালো।
অনেক সুন্দর। চলুক।
জায়গাটা এক্স্যাক্টলি কোন্ মুল্লুকে- একটু কি বলা যাবে এটা?!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ধন্যবাদ খান ভাই।
হয়তো আপনাকে বেশীদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে না, পাঠকেরা চাইলে দ্রুতই আসবে পরের পর্ব। ক'জন পড়লেন আর ক'টা কিরকম কমেন্ট আসলো, সেই দেখে বুঝেশুনে পরের অংশ দেবো।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
জায়গাটা কোন মুল্লুকে তা এখন কিকরে বলি? সে তো পরে বোঝা যাবে!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ওক্কে।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
প্রত্যূষা, লেখাটা আত্মজৈবনিক কি'না বুঝতে পারছিনা, কিন্তু আত্মমগ্নতো বটেই। মিষ্টি লাগলো কয়েকটা জায়গা - খুব। মিষ্টত্ব বলবৎথাকবে তো? একটু প্রেম না হোক প্রেম প্রেম ভাব চাই কিন্তু পাবো কি??
আহা আত্মজৈবনিক হলে তো হয়েই গেছিলো। মহানন্দে ঘোরাঘুরি করতাম দুনিয়ার এমাথা থেকে ওমাথা আর আজগুবি গপ্পো করে লোকের কানের পোকা নড়িয়ে দিতাম।
দেখা যাক, পরে প্রেম ট্রেম আসে কি মারামারি আসে নাকি ভুত আসে! শুনেছিলাম জগতে গল্প মাত্র দুইরকম-প্রেমের গল্প আর ভুতের গল্প। কেন যে যুদ্ধের গল্প ক্যাটেগোরিটা বললো না কেজানে, হয়তো যুদ্ধ আছে প্রেমে আর ভুতে হাফাহাফি করে।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চলবে বলছেন ?
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার প্রায় সব লেখারই অপেক্ষায় থাকি, বাকী অংশের ।
কেমন লাগলো, পুরোটা পড়েই বলি । কিন্তু আপনার ভাষা যে ইর্ষাকাতর করে ফেলবার জন্য যথেষ্ট, সেটা তো অনেকবারই বলেছি ।
নতুন করে আর না-ই বললাম ।
ভালো থাকবেন ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
আপনার মতন কথাকবির ভালো লাগলে এ তুচ্ছ লেখনী ধন্য হয়।
আসলে লেখাটা এমন ছড়িয়ে রয়েছে যে পাতায় নামানো কষ্টসাধ্য, সময় চুরি করতে ও কসরত লাগে, ধরা পড়ে গেলে সব বিদ্যা মহাবিদ্যা
তবু বেশীক্ষণ অপেক্ষায় না রাখার চেষ্টা করবো।
আপনিও ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন