রিমঝিম রিমঝিম নূপুর বাজছে সামনের টিনের চালে, আজকে একেবারে ঘনবর্ষা। গতরাত থেকে নেমেছে। ঝরঝর ঝরঝর করে জল পড়ছে পাশের বাড়ীর রেনওয়াটার পাইপ থেকে। নারিকেল গাছগুলো পাতা নাড়িয়ে নাড়িয়ে মহানন্দে স্নান করছে। হাওয়া এত ঠান্ডা, একেবারে বর্ষণবাতাস। ধানক্ষেতে জল জমে গেছে, বৃষ্টির জলে আধোডোবা চকচকে সবুজ ঘাসের মধ্য থেকে গলা বাড়িয়ে সোনাব্যাঙ গলা ফুলিয়ে ডাকছে। ওদের বিয়ের সময় কিনা, খুব ফূর্তি। বাড়ীর কাক আর কাকিনী শেডের তলায় বসে আছে। বৃষ্টি থামলে তবে ওরা খেতে বেরুতে পারবে।
আরেকটু বেলা বাড়ে, বৃষ্টির বেগ একটু কমেছে কিন্তু থামেনি, ঝরছে টিপ টিপ টিপ টিপ। বাচ্চাদের ইস্কুলে যাবার সময় হয়ে গেছে। লাল নীল ছোট্টো ছোট্টো ছাতা মাথায় দিয়ে স্কুলের বাচ্চারা পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, চারিদিকে এই জলের উৎসবে আজকে ওদের কচি প্রাণগুলো ভারী খুশী, শুধু বড়দের বাধাতেই ভিজতে পারছে না ছাতা ফেলে দিয়ে। রেনি ডে হয়ে ছুটি হয়ে যাবে হয়তো। একদল বাচ্চা চলে যেতেই একা এক দুষ্টুচোখের ছেলে এলো কালো ছাতা মাথায়। তার সঙ্গে বড়ো কেউ নেই, ছাতা পাশে নামিয়ে রেখে ঝোপ থেকে কচুপাতা তুলে নিয়ে কচুপাতা দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা শুরু করলো পাশের জলজমা গর্তে।
স্নান সেরে ভিজে চুল পিঠে মেলে রুণা টেপে গান দিয়েছে, "যেতে দাও গেল যারা, তুমি যেও না তুমি যেও না আমার বাদলের গান হয় নি সারা", মেঘলাবেলার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে সে একা, জানালার দু'খানা শিক দু'হাতে ধরে তাকিয়ে থাকে বাইরে। আজকে চেনা গাছপালাদের সবুজ অন্যরকম সুন্দর লাগে, কেমন একটা কোমল আর উজল রঙ! শুকনোদিনে এই রঙ কোথায় লুকিয়ে থাকে?
হঠাৎ রুণার মনে পড়ে যায় তিন বছর আগের তুমুল এক বৃষ্টিদুপুর, সাবধান হবার আগেই দু'চোখে ঝরঝর ধারা নেমে আসে। দূরে, অতি দূরে আজকে তার ঘরের চারধার জুড়েও কি বর্ষা নেমেছে? সেখানেও কি বাতাসে আজ বৃষ্টিভেজা জুঁইফুলের গন্ধ? কাছের মানুষেরা এভাবে দূরে চলে যায় কেন? যদি চলেই যাবে তবে এত মায়া কেন রেখে যায়?
রূপকথারা চুপ করেছে ঘুমে
স্বপ্নেরা সব লুকিয়েছে কুঙ্কুমে,
বনপলাশের গল্পগুলো মল্লার-মরশুমে
ভুল আখরে লিখছে চিঠি শালুকপাতার কোণে।
জল রিমঝিম ঝরে বনে, জল রিমঝিম ঝরে মনে....
মন্তব্য
এ প্রশ্ন আমারও।
খুব সুন্দর লিখেছেন। ছুঁয়ে গেল অন্তরটা।
আর একটু বড় করে লিখেন না ...
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
ধন্যবাদ রেশনুভা।
চলন্ত ট্রেনের জানলা থেকে দেখতে পাওয়া এক টুকরো দৃশ্যের মতন লেখাটা মনের
মধ্যে এসেছিলো, সেটুকুই এটা।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই গদ্য-কবিতার লেখার মধ্যে এইটা খুব সহজিয়া আর ফুরফুরে লাগলো, হয়তো বর্ষা নিয়ে লেখা বলেই। খুব সুন্দর শেষের কবিতাটা!
ধন্যবাদ মূলত পাঠক।
শেষের কয়েক লাইনকে ঠিক কবিতা বলা যায় কি? আসলে বর্ষা নিয়ে কেমন একটা
নস্টালজিয়া আমার আছে, খুব সুন্দর সজল সবুজ বর্ষা কাটিয়েছি জীবনের অনেকগুলো বছর, সেইসব সময়ের কাছে চিরকাল ঋণ থেকে যাবে। নানা সময়ে নানা জায়গায় বর্ষা নিয়ে লিখেওছি, কিন্তু মনে হয় যেন কিছুই বলতে পারিনি। আসলে একমাত্র বোধ হয় তেমন তেমন সব-ভাসানো গান আর সেইসাথে জোড়মেলানো বাজনাই ধরতে পারে বর্ষাকে।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আসলে বর্ষা নিয়ে কেমন একটা
নস্টালজিয়া আমার আছে, খুব সুন্দর সজল সবুজ বর্ষা কাটিয়েছি জীবনের অনেকগুলো বছর, সেইসব সময়ের কাছে চিরকাল ঋণ থেকে যাবে।
ঠিক একই কথা, আমরও।
বড় মন কেমন করে এই সব লেখা টেখা পড়ে।
কীইইইইই যে সুন্দর এই লেখাটা! আপনার ভক্ত হয়ে গেলাম।
ধন্যবাদ অন্দ্রিলা।
একেবারে ভক্ত হয়ে গেলেন?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কতদিন পর সোনা ব্যাঙ্গের কথা মনে করিয়ে দিলেন, ইদানীং তো শুনিইনা
...........................
Every Picture Tells a Story
সোনা ব্যাঙ চিড়িয়াখানা/অ্যাকোয়ারিয়মের বাইরে নিজের চোখে দেখেছি বলে মনে পড়ে না, জীববিদ্যা বইয়ের পাতায় রানা টাইগ্রিনা অবধিই দৌড়। ঝোপঝাড়ে দর্শন মিলতো শুধু কুচ্ছিত কুনোব্যাঙের, যার নামটা অবশ্য বেশি গেরামভারি, বুফো মেলানোসটিকটাস। কেমন দুমদাম পটকা ফাটার আওয়াজ যেন।
আমরাও বেশী দেখেছি কুনো ব্যাঙই(ওরে বাবা খুব বড়োও দেখেছি, প্রায় এককিলো ওজনের দশাসই চেহারার এক কুনোব্যাঙ একেবারে গ্যাঁট হয়ে বসে প্যাটপ্যাট করে আমাদের দেখছিলো ), সোনাব্যাঙ কমই দেখেছি।
তবে দেখতে যেমনই হোক, রেওয়াজী গলা কুনোব্যাঙেদেরও, বর্ষাকালে ওদের রেওয়াজে রাত ভরে থাকতো!
ক্লোরোফর্মে ভেজানো কুনোব্যাঙ কেটে কেটে বায়োলজি প্র্যাকটিকাল করতে হোতো, যা জীবনে কোনো কাজেই লাগেনি, অথচ তাদের গলা ফোলানো গান মনের কোথাও হয়তো ঠিকই কোনো আনন্দের তার ছুঁয়ে ফেলেছিলো, নইলে মনে থেকে যাবে কেন সব?
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
জলেভরা ধানক্ষেতের আলের ধারে সবুজ ঘাসের কাছে গলা ফুলিয়ে সেই তরুণ সোনাব্যাঙগুলো যখন কোরাস গাইতো, আহা! আমার এক গানবাজনা জানা বন্ধুনি বলতো," তোরা হাসছিস? এতো রীতিমতো রেওয়াজী গলা!"
আমাদের সময়েও সোনাব্যাঙ খুব কমই ছিলো, আগে নাকি আরো অনেক বেশী ছিলো, ধরে ধরে চালান হয়ে হয়ে(যেখানে ব্যাঙের ঝোলের চাহিদা সেখানে নাকি সেসব চালান হোতো) অল্পই বাকী ছিলো। পরে এত কমে গেল যে আর ধরতোও না(বোধ হয় পড়তায় পোষাতো না)।
এতকাল পরে এত দূর দেশে যখন কনজার্ভেশনিস্টদের কাজকর্ম দেখি তখন ভালো লাগে, হয়তো অনেক লুপ্তপ্রায় প্রজাতি এরা রক্ষা করতে পারবে।
----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার লেখার কবিতাময় ভংগীটি ভালো লাগে। এই লেখাটিও সেই ধরণের। কিন্তু অনেক কথা না বলা রয়ে গেল যে! কোন সে কাছের মানুষ যে চলে গিয়েছে? কেন চলে গেল সে? জানা হোল না।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
ঐ না বলা কথাগুলোই তো পাঠকের কল্পনার ডানা। ওখানেই রঙ বুলিয়ে রেখা টেনে পাঠক গড়ে নেন সেই মায়াবতী মেয়েটির নরম চোখজোড়া, ওর স্মৃতি থেকে তুলে আনেন টুকরো টুকরো সব সুখ দুঃখ পাওয়া হারানো আনন্দ বেদনা বিশ্বাস ও বিশ্বাসভঙ্গ। সে পাঠকের মৌলিক স্বাধীনতা, লেখা হয়ে যাবার পরে আর লেখকের সেখানে কোনো স্বৈরাচার চলবে না, এখন যে পড়বে তারই হৃদয়ের আলোয় নতুন করে বারে বারে জন্মাবে লেখা।
ভালো থাকবেন ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সুন্দর রচনা।
----------------------------------------
শুধু শরীরে জেগে থাকে শরীরঘর
মধ্যবর্তী চরকায় খেয়ালী রোদের হাড়
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
ধন্যবাদ আশরাফ মাহমুদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন