শেষ থেকে শুরু

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৯/২০০৯ - ৩:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মিলা একা একা হেঁটে যাচ্ছে বনের মধ্য দিয়ে, সে উড়নযান নেয় নি, ইমপ্ল্যান্টেড চিপ অফ করে রেখেছে, সে এখন সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

উড়নযানে করে সে এসেছে হ্রদপর্যন্ত, তারপরেই সেখানে সেটা থামিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে বনের মধ্য দিয়ে। এখন তো আর পথগুলো দরকার হয় না কারুর, সবাই এখান থেকে ওখানে উড়নযানে করে যায়, পথগুলো সব আস্তে আস্তে সবুজে ঢাকা পড়ে গেছে, কিছু ফসল ক্ষেতের অংশ হয়ে গেছে, কিছু বনে ঢাকা পড়ে গেছে, পৃথিবীর বিধ্বস্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধারে এইসব উড়নযানগুলো ছিলো একটা বিরাট পদক্ষেপ।

আকাশের গায়ে নীল পাহাড়টি দেখা যাচ্ছে দূরে, পাহাড়কে যত দূরে মনে হয় পাহাড় তার চেয়েও অনেক দূরে। তবু আর বেশী কাছে পর্যন্ত উড়ে যেতে ইচ্ছে করেনি মিলার, সে ঐ স্বচ্ছ জলের হ্রদখানির ধারেই যান নামিয়ে চিপ অফ করে সভ্য জগতের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

এখন এই আলোছায়া বনভূমির মধ্যে সে একদম একা, রহস্যময় বনস্থলী ও তার সমস্ত পুরাতন লক্ষ লক্ষ যুগের পুরাতন আত্মাদের সঙ্গে সে আস্তে আস্তে এইবার খুঁজে পাবে সংযোগসূত্রটি। যা সে হারিয়ে ফেলেছিলো জন্মমুহূর্তে, ক্রমে ক্রমে ভুলে যেতে যেতে আরো আরো ভুলে যাচ্ছিলো যে একদিন সে এইসবের সঙ্গে যুক্ত ছিলো সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে ... গতরাত্রে জ্যোত্স্নাময় স্বপ্নদৃশ্যে সে সেই কথা দেখতে পেয়েছে একঝলক, সে জানে পথ তার ভুল হবে না, ভুল হবে না, ওকে লক্ষ লক্ষ সুর তাল লয় ছন্দ সমস্ত অতীত ভবিষ্যৎ একাকার করে দেওয়া অদৃশ্য অশ্রুত অস্পর্শনীয় অনুভব সাহস দিচ্ছে।

বড়ো বড়ো মহীরুহের ঘন সবুজ পাতারা চন্দ্রাতপ তৈরী করে রেখেছে, রোদ্দুরের বাতাসা ঝরে পড়ছে তার ফাঁকফোকড় দিয়ে, হঠাৎ দেখা যায় একটা নদী, কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে আলোছায়া ভেদ করে, পাশের থেকে স্রোতের উপরে ঝুঁকে পড়েছে বড়ো বড়ো ফার্ণের পাতা, পাতার অনুপম সব নকশার উপরে ছিটকে লাগছে কুচোজল, পান্নাহীরামুক্তার মতন ঝিকিয়ে উঠছে সেইসব জলকণা।

মিলা মন্ত্রমুগ্ধের মতন হাঁটছে, বনের গাছগাছড়া ওকে বাধা দিচ্ছে না, বন্ধুর মতন পথ করে দিচ্ছে ... কচি কচি নরম গোল গোল লুচিপাতার মতন পাতাওলা লতা ওর পায়ে জড়িয়ে গেলো, ও নীচু হয়ে আলতো যত্নে খুলে দিচ্ছে সে লতা, আহা ওর যেন না লাগে ব্যথা। বড়ো বড়ো কমলা রঙের ফল ধরে আছে একটা বিরাট গাছে, সে গাছের নীচে এসে বিশ্রাম নিতে বসলো মিলা, ওর কোলের কাছে ঝরে পড়লো দুখানা ফল, সে একটা তুলে জামায় একটু মুছে নিয়ে মুখের কাছে তুলে কামড় দিলো, অমৃতস্বাদ ফলখন্ড ভরিয়ে দিলো ওর মুখ,মন ও অনুভব ...

ফল চিবোতে চিবোতে সে ভাবছিলো মাত্র গত রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ার আগেও কি এই সিদ্ধান্তের কথা সে ভাবতে পেরেছিলো, এরকম সকালে উঠেই জীবন বদলে ফেলা একটা পদক্ষেপ সে নিয়ে বসবে?

মিলা চোখ বন্ধ করলো, সে দেখতে পাচ্ছে ববকে স্পষ্ট, বব টেবিলের উপরে ঝুঁকে পড়ে কাজ করছে ... যেমন হঠাৎ এসেছিলো তেমনি হঠাৎ বব মুছে গেল। মিলার মনে ফুটে উঠলো ওর সেই ছোট্টোবেলার পাহাড়, সেই পাহাড়চূড়ার বাড়ীখানা, "আকাশবাড়ী" বলে বলতো ওরা সবাই, কত রঙবেরঙের লন্ঠন ঝুলতো সে বাড়ীর পুষ্পিত লতা ঘেরা দোলনাওলা বারান্দায় ... সেখানে এক ঐ বৃদ্ধা ওদের গল্প বলতেন, ফিনিকফোটা জোছনার গল্প, সেই জোছনায় দুধালো হয়ে ওঠা পাহাড়ের গল্প....


মন্তব্য

সমুদ্র এর ছবি

পড়ে মনে হচ্ছে এটা আরো বড় একটা গল্পের শুরু - বব, আকাশবাড়ি, পৃথিবীর বিধ্বস্ত পরিবেশ....
প্রকৃতির বর্ণনাটা চমৎকার হয়েছে। চলুক

"Life happens while we are busy planning it"

সমুদ্র এর ছবি

পড়ে মনে হলো একটা বড় গল্পের শুরু - বব, আকাশবাড়ি, পৃথিবীর অবস্থা...
প্রকৃতির বর্ণনাগুলো চমৎকার হাসি

"Life happens while we are busy planning it"

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ।
আসলে একখানা বড়গল্প এইরকম জায়গায় এসে(বহুরকম ঘটনার পরে) শেষ হয়েছিল।
তো আমার এক্সপেরিমেন্ট হলো যদি এইখানে গল্পের সুতোটা হাতে নেওয়া যায় তাহলে কি হয়? এখান থেকে কি একটা নতুন গল্প শুরু হতে পারে? সেইরকম একটা ভাবনা থেকেই এটা লেখা।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

ধারুন লাগল। স্মৃতিকাতর ছিলাম খানিকটা, ছোট বেলায় গ্রামে যেমন হাটতাম লতাপাতা পা'য়ে জরিয়ে। ক্লান্ত শরীর হেলিয়ে দিতাম বড় কোন গাছের ছায়ায়, বুভুক্ষ হলে খেয়ে নিতাম সেই গাছের সুস্বাদু ফল, আরো কত কি যে মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপু।

দলছুট।
================
বন্ধু হবো, যদি হাত বাড়াও।

তুলিরেখা এর ছবি

দলছুট, ধন্যবাদ আপনাকেও।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মুস্তাফিজ এর ছবি

ধারাবাহিকের দিকে যাচ্ছেন মনে হয়?

...........................
Every Picture Tells a Story

তুলিরেখা এর ছবি

মনে হচ্ছে তাহলে? হাসি
তাহলে করাই যায় শেষ থেকে শুরু-আসলে শেষ বলে কি কিছু হয়? অমন যে অমন বিশাল মহাভারত, তাতেও কি যুদ্ধ টুদ্ধ হয়ে সব শেষ হয়ে যাবার পরেও কিছুই শেষ হয়? জীবন চলতেই থাকে।
কোথায় কোন অর্জুন মহাপ্রস্থানের পথে মাটিতে পড়ে গেল, কোথায় রাজা যুধিষ্ঠির হাঁটতে হাঁটতে স্বর্গে চলে গেল সাথে এক সারমেয় নিয়ে-তাতে আমাদের গাঁয়ের কালু সোনাই টুনি রাশুদের কি এলো গেলো-তারা তো তাদের জীবন নিয়ে সুখেদুখে কাটিয়ে চলেছে সুফসলি বছর থেকে শুখা বছর পেরিয়ে আবার বন্যা বছরে।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

ভাষাটা আরো গতিময় হতে পারতো। ভালো লেগেছে।
----------------------------------------
শুধু শরীরে জেগে থাকে শরীরঘর
মধ্যবর্তী চরকায় খেয়ালী রোদের হাড়
http://meghpalki.blogspot.com/

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ আশরাফ।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমি আপনার লেখার গুনমুগ্ধ। বরাবর।
অন্যত্র একটা প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবটা এখানে দিই। আপনি লিখেছিলেন, "মাঝে মাঝে কোনো গল্পের টুকরো টুকরো ছবিও তো আসে, শুরু নাই শেষ নাই মাঝ নাই গোটা গল্প নাই বলে কি টুকরো টুকরো ছবিতে শিল্প নাই?" আমার ভাবনা, গোটা গল্প বলে আসলে দুনিয়াতে কিছুই নাই।
সম্ভবত মহাভারতও গোটা গল্প না ... আর শিল্প নিয়ে ভাববেন না।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

তুলিরেখা এর ছবি

আমারও তাই মনে হয়, গল্পগুলো সব শেষ হয় বিরতি হিসাবে, সমাপ্তির সম কখনো পড়ে না। সব সময়েই থেকে যায় আগামীকাল, যা নাকি কখনো আসে না! হাসি
(অ্যাস্টেরিক্সের কমিকসে তাদের গাঁয়ের প্রধান হলেন বীর ভাইটালস্ট্যাটিসটিক্স। তার আর কোনো ভয় নেই কিন্তু একমাত্র ভয় হলো আগামীকাল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার ভয়। আবার নিজেই বলে আগামীকাল কখনো আসে না হো হো হো) ঘুম থেকে উঠেই সে দেখে দিনটা হলো আজ!!!!! )
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।