অণোরণীয়ান থেকে মহতোমহীয়ান (৭)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/০৯/২০০৯ - ৭:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পল স্টাইনহার্ট আর নিল টুরোক এর বিশ্বতত্ত্বের ধারনা হলো মহাবিশ্বের জন্ম ও মৃত্যু আবার নবজন্ম-এইরকম সাইক্লিক কসমোলজি।

এডুইন হাবলের গ্যালাক্সিদের দূরে চলে যাবার পর্যবেক্ষণ থেকে মহাবিশ্বের প্রসারণশীলতার ধারনা এসেছিলো। এ এমন এক মহাবিশ্ব যার স্থানকাল কেবল প্রসারিত হয়, ছড়িয়ে যায়। গ্যালাক্সিরা একে অপরের থেকে দূরে চলে যায় যা গ্যালাক্সিদের বর্ণালী বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। গ্যালাক্সিদের বর্ণালীতে লোহিত অপসরণ (Red Shift) দেখা যায়।

লোহিত অপসরণ মানে হলো এইসব গ্যালাক্সিদের থেকে আসা আলোকে প্রিজমের মধ্য দিয়ে যেতে দিয়ে স্পেকট্রাম ফলিয়ে দেখা যায় এদের বর্ণালী লালের দিকে (বেশী তরঙ্গদৈর্ঘের দিকে) সরে গেছে। এরকম হবার কারণ কি? বিজ্ঞানী ডপলারের আবিষ্কার থেকে আমরা জানি কোনো তরঙ্গ উৎস যদি আমাদের কাছ থেকে দূরে চলে যেতে থাকে তবে আপাত তরঙ্গদৈর্ঘ বেড়ে যায়।

অতীতে গ্যালাক্সিরা সবাই অনেক কাছাকাছি ছিলো, একেবারে সৃষ্টিমুহূর্তে একেবারে একসাথে মিলে ছিলো সব। সেই সৃষ্টিমুহূর্ত হলো মহাবিস্ফোরণ(Big Bang)। তারপর থেকেই সবকিছু ছুটে পালাচ্ছে দূরে আরো দূরে। কিন্তু তার আগে কি ছিলো? মহাবিস্ফোরণের আগে?

তাত্ত্বিকেরা বলতেন স্থানকালের সৃষ্টিও মহাবিস্ফোরণে, তাই তার আগে কি ছিলো এই প্রশ্ন অর্থহীন, কারণ তখন তো কালেরই অস্তিত্ব ছিলো না! কালই যদি না থাকে তবে আগেই বা কি পরেই বা কি? কেউ কেউ তখন তর্ক জুড়তেন স্থানকাল কিসের থেকে সৃষ্টি হলো? কোনোকিছুর থেকে যদি স্থানকাল সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে সেই জিনিস মহাবিস্ফোরণের আগেও ছিলো। কি সেই জিনিস?

এইসব নানা বাদানুবাদ তর্কবিতর্ক প্রশ্ন প্রতিপ্রশ্ন লেগেই ছিলো। সাম্প্রতিক কালে স্ট্রিং তত্ত্ব বিতর্ক আরো উসকে দিলো। পুরানো প্রশ্ন গুলোর সঙ্গে আরো নানা নতুন নতুন প্রশ্ন যোগ হলো। স্ট্রিং-তত্ত্বে নতুন মাত্রার (ডাইমেনশন) এর প্রয়োজন হয়ে পড়লো, আমাদের চেনা তিনটি স্থানিক মাত্রা- দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা আর একটি ভবিষ্যমুখী কাল মাত্রার যে জগৎ তাতে আর কুলালো না স্ট্রিং তত্ত্বে। বহু অতিরিক্ত মাত্রার প্রয়োজন হয়ে পড়লো গণিত মেলাতে।

স্টাইনহার্ট আর টুরোক নতুন বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে অগ্রসর হলেন নতুন জ্ঞানের আলোয়। তাঁরা বললেন, আমাদের চেনা তিনটি স্থানমাত্রা আর একটি কালমাত্রার জগৎ আসলে আছে উচ্চতর মাত্রার জগতের ভিতর। এই জগৎ হলো ডি-ব্রেনের(D-brane) জগৎ। এই ব্রেন কথাটা এসেছে মেমব্রেন থেকে। আমাদের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতাময় জগৎ হলো 3D-ব্রেনের জগৎ, তা ছুটে চলেছে চারমাত্রা বা পাঁচমাত্রার জগতের ভিতর দিয়ে। যেমন ধরা যাক খাতার একখানা পাতা খাতা থেকে ছিঁড়ে গিয়ে হাওয়ায় উড়ে চলেছে। খাতার পাতার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ছাড়াও সামান্য পুরুত্ব আছে, এখন গণিতের খাতিরে পুরুত্বকে অগ্রাহ্য করা হলো। যা রইলো তা হলো একটা দ্বিমাত্রিক জিনিস উড়ে চলেছে ত্রিমাত্রিক স্থানের মধ্য দিয়ে। এই তুলনা থেকে কল্পনা করে নিতে হবে আমাদের চেনা ত্রিমাত্রিক মহাবিশ্ব( কাল মাত্রাটি হিসাবে ধরলে চতুর্মাত্রিক) উচ্চতর মাত্রার জগতের ভিতর দিয়ে চলছে। আমারা নিজেরা ত্রিমাত্রিক জগতের জীব, আমাদের পক্ষে উচ্চতর মাত্রা কল্পনা করা সোজা না, কারণ আমাদের মগজ বিবর্তিত হয়েছে ত্রিমাত্রিক দেশকালের উপযোগী হয়ে। যাইহোক, গণিতের সহায়তায় বিজ্ঞানীরা অনায়াসে উচ্চতর মাত্রা নিয়ে হিসাব কষতে পারেন তবে কিনা দৃশ্যমান হিসাবে সে জগত কল্পনা করা শক্ত। আমরা যদি দ্বিমাত্রিক তলের উপরে ছায়ামানুষ হিসাবে জীবন কাটাতাম তাহলে যেমন "উপর" বা "নিচ" আসলে কি তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারতাম না।

আমাদের জগতের মতন আরো অনেক জগৎ- 3D ব্রেন, ভেসে চলেছে উচ্চতর মাত্রার জগতের ভিতর দিয়ে। স্ট্রিং-তত্ত্বের সমীকরণ গুলি ইঙ্গিত দেয় এইসব 3D ব্রেনেরা কাছাকাছি অন্য ত্রিমাত্রিক ব্রেনের উপরে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করে। ব্রেনে ব্রেনে ঘষা খেলেই এই শক্তি ছাড়া পায়, এই শক্তির প্রকাশ দেখা দিতে পারে মহাবিস্ফোরণ হিসাবে। শক্তি জন্ম দেয় পদার্থের, আইনস্টাইনের শক্তিবস্তু নিত্যতা সূত্র অনুসারে। ক্রমে তৈরী হয় গ্যালাক্সিরা, জ্বলে ওঠে তারারা, তৈরী হয় গ্রহ-উপগ্রহ ইত্যাদি।

ত্রিমাত্রিক ব্রেনের স্থানকাল প্রসারিত হয়, যেমন আমাদের মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। আর উচ্চতর মাত্রায় গোটা গোটা ত্রিমাত্রিক ব্রেনও পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। একসময় ত্রিমাত্রিক ব্রেনের ভিতরে এই প্রসারিত দেশকাল এত পাতলা হয়ে যায় যে প্রায় শূন্যই তখন তাকে বলা যায়, সব বস্তুরা পরস্পর থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যায়। এইরকম ফুলেফেঁপে বিশাল আর ভিতরপাতলা হয়ে উঠলে তখন ত্রিমাত্রিক ব্রেনেরা আবার পরস্পরকে আকর্ষণ করতে শুরু করে। কাছে এলেই আবার ঘটে সংঘর্ষ, আবার বিস্ফোরণ, শক্তি মুক্ত হওয়া, পদার্থের সৃষ্টি, আবার গ্যালাক্সি নক্ষত্র গ্রহ। নতুন করে সৃষ্টিচক্র শুরু হয়।

এইরকম "নতুন করে পাবো বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ" মডেলে এক মহাবিস্ফোরণ থেকে আরেক মহাবিস্ফোরণের মধ্যের সময়কাল এক ট্রিলিয়ন(হাজার বিলিয়ন) বছর। আমাদের মহাবিশ্ব মাত্র 13.7 বিলিয়ন বছর পার করেছে। এখনও একে শিশুই বলা যায়। হাজার বছর যার আয়ু তার কাছে ১৩ বা ১৪ বছর আর তেমন কি?

বারে বারে নতুন হওয়া মহাবিশ্বের মডেল সৃষ্টির আগে কি ছিলো সেই প্রশ্নের মীমাংসা করে দেয়। "আগে" ছিলো আরো আরো পুরাতন মহাবিশ্ব, মহাবিস্ফোরণ (বিগ ব্যাংগ) মাত্র একবার ঘটেনি, ঘটেছে আরো আরো বহুবার। মহাবিস্ফোরণে স্থানকালের সৃষ্টি না, তার আগে অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতিও লয় ঘটেছে।

নতুন রকম ধারনা, নতুন গণিত। বহু লোকে চমৎকৃত, কেউ কেউ বিরক্ত। এই সাইক্লিক মহাবিশ্ব মডেল নিয়ে বিরক্ত লোকেদের মধ্যে একজন হলেন ক্যালটেকের শন ক্যারল। তাঁর নিজের ধারনার মহাবিশ্ব মডেল আরো রুদ্ধশ্বাস বিস্ময়কর। সেকথা পরের পর্বে।

ছবিসূত্র: আন্তর্জাল


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

যাক বহুদিন পর সিরিজটাকে বাঁচিয়ে তুললেন!

লেখা নিয়ে কিছু কথাঃ

তাঁরা বললেন, আমাদের চেনা তিনটি সথানমাতরা আর একটি কালমাত্রার জগৎ আসলে আছে উচ্চতর মাত্রার জগতের ভিতর।

মনে হয় এখানে 'স্থানমাত্রা' বলতে চেয়েছিলেন, তাই না?

গ্যালাক্সিদের বর্ণালীতে লোহিত অপসরণ (Red Shift) দেখা যায়। অতীতে ওরা সবাই অনেক কাছাকাছি ছিলো, একেবারে সৃষ্টিমুহূর্তে একেবারে একসাথে মিলে ছিলো সব। সেই সৃষ্টিমুহূর্ত হলো মহাবিস্ফোরণ(Big Bang)।

যারা Red Shift নিয়ে কিছুই জানেন না তাদের জন্যে খুব সীমিত হয়ে গেল ব্যাপারটা। আমার মতে, এখানে আরেকটু ব্যাখ্যা করলে পারতেন।

গোটা লেখাটাতে একটু কেমন তাড়াহুড়োর ছায়া দেখলাম---সত্যিই কি তাই?

আর লেখা নিয়ে আরেকটা জিনিস না বললেই নয়---আপনার অন্যান্য লেখা যে পরিমান 'দুর্ভেদ্য' ---এই বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাগুলো সেই পরিমানেই
সহজ। তাই আমি আপনার এইসব লেখার বিরাট ভক্ত হয়ে উঠছি ইদানিং।

আপনি কিছুদিন আগে আমাকে 'গালমন্দ' করার অনুমতি দিয়েছেন, তাই আজ সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম---হে হে হে ----

আশা করি রাগ করবেন না---

ভাল থাকুন

তুলিরেখা এর ছবি

ওটা স্থানমাত্রা। আসলে পোস্টানোর আগে একবার দেখলাম তখন চোখ এড়িয়ে গেছিলো। মন খারাপ
এখন সম্পাদনা করে ঠিক করে দিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।
আসলেই রেড শিফট নিয়ে আরেকটু বলা উচিত ছিলো, এর আগের কোনো পর্বে বোধ হয় বলেছি। তবু ও আরেকটু মানে এক দুইলাইন বলা উচিত ছিলো। পরে জুড়ে দেবো।
একটু তাড়াতাড়ি তোলা হয়েছে, লেখাটা মাত্রই কালকের। আরেকটু সময় দেওয়া দরকার ছিলো।
আসলে এই সিরিজটা চালাবার ইচ্ছে ছিলো, সময় হয় না, অনেকসময় খানিকটা ভয় ও লাগে বোরিং হয়ে যায় যদি! আপনি এই সিরিজ পড়েন আর আপনার ভালো লাগে শুনে খানিক ভরসা পেলাম।
আপনার বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা অনেকদিন পাই না, সেই কথাও কিন্তু মনে আছে।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

কত্ত দিন পর!

তুলিরেখা এর ছবি

আরো আগেই সিরিজটা কন্টিনিউ করার ইচ্ছা ছিলো, নানা ভেজালে ফেঁসে ছিলাম।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সিরাত এর ছবি

অতি দারুণ লেখা! পাঁচ!!

মহাবিস্ফোরণের মধ্যের সময়কাল এক ট্রিলিয়ন(হাজার বিলিয়ন) বছর।

এটা কেমনে জানলেন/জানলো?!

এই লেখাটা সেরকম রিডেবল হইসে। আমি এগুলি নিয়ে আগেও পড়সি, কিন্তু পোস্টাকারে এরকম প্রাঞ্জল ভাষায় দেখে বেশি ভাল লাগলো!

রেড শিফট আমি কইয়া ফালাই - দূরে সরে যাওয়া বোঝায়। ডপলার স্পেকট্রামে লাল দেখে বোঝা যায়। (ভুল হইলো নাকি?)

আরো আরো আরো আরো!

আর শোনেন, আপনি কি ভাল সাইন্স ফিকশন পড়েন? আমারে মেইল করেন তো আপনি কি কি পড়েন? আমার মনে হয় আপনি সাইন্স ফিকশন দারুণ পছন্দ করবেন!

তুলিরেখা এর ছবি

উদ্ধৃতি

এক মহাবিস্ফোরণ থেকে আরেক মহাবিস্ফোরণের মধ্যের সময়কাল এক ট্রিলিয়ন(হাজার বিলিয়ন) বছর।

আরে ওনারা তো অঙ্ক করে বলেছেন। ওদের মডেলের কিছু কিছু অ্যাসাম্পশন নিয়ে অবশ্য অনেকের খটকা আছে।

আরে কিকরে জানলে? আমি সাইন্সফিকশন পড়ি তো! পুরানোদিনের লোকেদের মধ্যে আর্থার ক্লার্ক, আসিমভ, ব্রাডবেরি, উইনহাম, অদ্রীশবর্ধনের নাটবল্টু চক্র, অনীশদেবের কিছু লেখা, সত্যজিত রায়ের কিছু কল্পবিজ্ঞান (অনুকূল, ময়ুরকন্ঠী জেলি), প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা সিরিজ, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণের কিছু কিছু লেখা, লীলা মজুমদারের কিছু কিছু সাইন্সফিকশন, এইসব ভালো লাগতো।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শিক্ষানবিস এর ছবি

অসাধারণ। বেশি ভাল লাগল এজন্য যে, ব্রেন নিয়ে আমি কিছুই জানতাম এবং আপনি বুঝিয়েছেন খুব সুন্দরভাবে। কাগজ আর ছায়ামানবের উদাহরণগুলোর সাথে আগেই পরিচয় ছিল। এএজন্য খুব ভাল বুঝেছি।
"নতুন করে পাবো বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ"- আরেকবার কবিতার শক্তির পরিচয় পেলাম। আগেও হয়তো শুনেছি চরণটি, কিন্তু এত সুন্দর সাযুজ্য আগে পাই নি।

ছবিটাও খুব ভাল লাগলো। ছবির ৮ টি ধাপ নিয়ে আলাদা করে লিখলে আরও ভাল লাগতো।

আচ্ছা, ৭ নম্বর পয়েন্ট এ দেখলাম কন্ট্রাকশন। এটা কি closed universe এর তত্ত্ব মেনে করা হয়েছে?

আইডিয়াটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আরও পড়বো। প্রাইমার হিসেবে কি পড়লে ভাল হবে? রেফারেন্স দেন।

শন ক্যারল লোকটাকে আমার বেশ ভাল লাগে। তার কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগ প্রায় নিয়মিতই পড়ি। বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি তার দার্শনিক চিন্তাধারাও বেশ মজার। পরের পর্বে ক্যারল নিয়ে আরও জানার অপেক্ষায় থাকলাম।

অফটপিক:
এই লিংকটা দেখেন- "Black Holes Cannot Exist in Latest Theory of Quantum Gravity"
ব্লগটা পড়লেও সাথে যোগ করা পেপারটা পড়ার সাহস হয় নি। পড়ে দেইখেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানার আশা রইল...

তুলিরেখা এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ শিক্ষানবিস।
আরে ছবিটা নিয়ে ধাপে ধাপে বোঝানোর ইচ্ছে ছিলো, অন্তত পয়েন্টগুলো ক্লিয়ার করে। কিন্তু নেট থেকে নামানো ছবি, মাত্র কালকেই পেলাম। পরে জুড়ে দিতে পারি কিছু কিছু কথা ছবির ধাপগুলো নিয়ে।

৭ নম্বরে কনট্রাকশন এর ব্যাপারটা কিন্তু ক্লোজড ইউনিভার্সের না। এটা দুখানা ৩ডি ব্রেন এর কাছিয়ে আসার ব্যাপার। ছবিতে দ্বিমাত্রিক প্রোজেকশন দেখিয়েছে বলে খানিকটা গোলমাল লাগছে।

নতুন সায়েন্টিফিক আমেরিকানে একটা খুব ভালো লেখা বেরিয়েছে ভ্যাকুয়াম পোলারাইজেশন কিভাবে ব্ল্যাক হোল হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে চুপসে যেতে থাকা পদার্থপুঞ্জকে। ওটা পড়তে পারেন।

শন ক্যারোল এর চমকপ্রদ মডেল নিয়ে পরের পর্ব।

ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

Flat Empty Universe কি? এরা আবার পরস্পরকে আকর্ষণও করে? কিভাবে? বুঝি নাই।

ধাপগুলোর বিস্তারিত বর্ণন করেন। অতি চমকপ্রদ হয়েছে লেখা!

আমি সৌভাগ্যবান যে, অনিয়মিতভাবে সচলে এসেও আপনার এই সিরিজটা হারাইনি! ভক্তের সালাম নিন হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

ঐ যে পাতলা পাতের মতন দেখাচ্ছে ওগুলো আসলে 3D ব্রেনের দ্বিমাত্রিক প্রোজেকশন। ওরা আছে হায়ার ডাইমেনশন জগতে। 3D ব্রেনেরা পরস্পরকে আকর্ষণ করে যখন নিজেদের ভিতরের স্থানকাল বস্তুবিরল হয়ে গিয়ে একেবারে টানটান ফ্ল্যাট হয়ে যায় তখন।

আমাদের মহাবিশ্বের স্থানকাল এখন বস্তুপূর্ণ, তাই হাবল টেলিস্কোপ মজাসে তুলতে পারে কোটি কোটি গ্যালাক্সির ছবি। তারায় তারায় ঠাসাঠাসি গ্যালাক্সিরা। এত বস্তু থাকায় আমাদের স্থানকাল কুঁকড়ানো( স্পেসটাইমের কার্ভেচার রয়েছে ), ফ্ল্যাট না। আমাদের মহাবিশ্ব কিন্তু ত্বরিত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে, বস্তুরা দূরে সরে যাচ্ছে। ট্রিলিয়ন বছর পরে আর কোনো গ্যালাক্সিই দেখা যাবে না, ওরা বহু বহু দূরে চলে গিয়ে একেবারে দিগন্তের ওপারে চলে যাবে। এই দিগন্ত হলো গিয়ে দেখতে পাওয়া মহাবিশ্বের দিগন্ত, দিগন্তের ওপারে যাওয়া মানে আলো ও আর আসতে পারে না, ফোটনেরা অবধি ছড়িয়ে যাওয়া দেশেকালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে পারে না এরকম। তখন এত ছড়িয়ে যাবে বলে দেশকালের কার্ভেচার কমে কমে একেবারে আর থাকবেই না, একেই বলে ফ্ল্যাট স্পেসটাইম।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনেও সালাম নিয়েন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

বাঃ চমৎকার বোঝালেন। ডিসির স্পেস মিউজিয়ামে গিয়ে ঐ কার্ভেচারটা বুঝেছিলাম সিনেমা দেখে, চ্যাপ্টাটা এবার বোঝা হয়ে গেলো। এই সব বিষয়ে নেহাতই মূর্খ আমি। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।