এটা অ্যাজটেক উপকথা। মহান সর্পদেবতা কেট্জালকোয়াটল এর গল্প।
কেট্জালকোয়াটল ছিলো দেবতাদের নগরীর সর্বজনশ্রদ্ধেয় রাজা। বিশুদ্ধ, নিষ্পাপ ও পরম উত্তম। জাগতিক কামনাবাসনা তাকে তখনো স্পর্শ করতে পারে নি। কোনো কাজই তাঁর কাছে হীন কাজ ছিলো না, সে রাজা হয়েও অনায়াসে পথঘাট ঝাঁট দিতো মস্ত এক ঝাড়ু নিয়ে, যাতে বৃষ্টিদেবতারা তারপরে এসে ভালোভাবে বৃষ্টি দিতে পারেন।
কেট্জালকোয়াটল এর এক কুটিলচরিত্রের ভাই ছিলো, নাম তার টেজকাটলিপোকা। সে কেট্জালকোয়াটল এর এই সবদিকে একেবারে সবসেরা চরিত্র আর তা নিয়ে অন্যদের নিরন্তর প্রশংসায় একেবারে ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে মরতো। সে কেট্জালকোয়াটলের ভালোত্ব ভাঙতে এক জটিল চাল চাললো। একদিন সে তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে এসে কেট্জালকোয়াটলকে বললো, " ভাই, তুমি সারাক্ষণ খালি কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকো। সর্বক্ষণ খালি কাজ আর কাজ। এছাড়া জগতে কি আর কিছু নেই? আজ আমাদের উৎসবের দিন, তুমি আমাদের সঙ্গে আনন্দউৎসবে যোগ না দিলে আমাদের সব আয়োজন বৃথা। আসবে না ভাই?" খুব আন্তরিক গলা। অভিনয় চমৎকার পারতো টেজকাটলিপোকা।
কেট্জালকোয়াটল কোনো সন্দেহ করে নি, সে সহজসরল মনে যোগ দিয়েছে উৎসবে। এদিকে টেজকাটলিপোকা সুযোগ বুঝে বার করেছে যাদু আয়না আর কেট্জালকোয়াটলের চোখের সামনে দিয়েছে বাড়িয়ে সেটা। যেই না যাদু-আয়নায় নিজেকে দেখতে পেয়েছে কেট্জালকোয়াটল, সে দেখেছে তার পবিত্র সর্পদেহ বদলে যাচ্ছে মানুষদেহে, সে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছে। কিন্তু তখন খুব দেরি হয়ে গেছে, জাগতিক কামনাবাসনা আগুনের মতন তাকে ছেয়ে ফেলেছে ততক্ষণে। আতঙ্কে আর দু:খে অচেতন হয়ে পড়লো সে।
পরদিন জেগে উঠে কেট্জালকোয়াটল দেখলো তার পাশে বসে আছে তার আরেক ভাই, জোলোটল। এই ভাই খুব ভালো, ছোটোবেলা থেকেই তার খুব ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। কেট্জালকোয়াটল তার কাছে কেঁদে বললো, "এই দেহ নিয়ে কেমন করে আমি প্রিয় প্রজাদের সামনে যাবো? না না, তা কিছুতেই পারবো না। কী কুক্ষণে গতকাল আমি ওদের পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম! হায়, এখন কী হবে? কোথায় গেল আমার সেই শুদ্ধ পবিত্র জীবন! এই কুৎসিত মানবদেহ, এ অপবিত্র মুখ আমি দেখাতে পারবো না। আমার অবসর নিয়ে আড়ালে চলে যাওয়াই ভালো।"
জোলোটল বলে, " ভাই, এত ভেঙে পোড়ো না তুমি। রাজা হয়ে তুমি যদি এমন ভেঙে পড়ো, তোমার প্রজাদের মনোবল আরও ভেঙে যাবে। তুমি নিজেও জানো যে টেজকাটলিপোকা তাই চায়। তোমার এই চেহারার সমস্যার আমি একটা টেম্পোরারি সমাধান করতে পারি যদি তুমি রাজী হও।"
কেট্জালকোয়াটল আগ্রহী গলায় বলে, "সমাধান? করতে পারো? কেমন করে?"
জোলোটল বলে," তুমি যদি রাজী হও আমি এমন পোশাক আর মেকাপ দিতে পারি যে তোমাকে প্রায় আগের মতনই দেখাবে।"
কেট্জালকোয়াটল সাগ্রহে রাজী হয়।
জোলোটল যত্ন করে এক মস্ত পোশাক বানায় কেটজাল পাখির সবুজ, লাল আর সাদা পালক দিয়ে। আরো বানায় পরচুলা আর দাড়ি। ঠোঁট কপাল গাল রঙ করে দেয়, একটা মুখোশও বানায় টার্কোয়েজ দিয়ে। এইসব পরে কেট্জালকোয়াটল হয় পালকওয়ালা সর্পদেব।
এই ছদ্মবেশে কেট্জালকোয়াটল প্রজাপালন আর নিয়মিত কাজকর্ম করে যেতে থাকে নিখুঁতভাবে। জাগতিক কামনাবাসনাকে প্রশমিত করে রাখে সতর্কতার সাথে। জোলোটল তাকে কাজকর্মে আর যুক্তিপরামর্শে সবদিকে সাহায্য করে।
কিন্তু টেজকাটলিপোকা এত সহজে ছেড়ে দেবার বান্দাই না। সে আবার আরেক ফন্দি আঁটে। আবার কান্নাকাটি আর আন্তরিকতার অভিনয় করে কেট্জালকোয়াটলকে আরেক উৎসবে যোগ দিতে রাজী করায়। সেইখানে কড়া সুরা পান করিয়ে কেট্জালকোয়াটলকে সে প্রায় অচেতন করে ফেলে। তারপরে তাকে দিয়ে এমন এক কাজ করায় যা ভয়ানক। কেট্জালকোয়াটলের তখন বিচারবিবেচনার অবস্থা ছিলো না, থাকলে সে নিজের মরার পথ নিজে তৈরী করতো না। পরদিন জেগে উঠে সব শুনে শোকে মুহ্যমান হয়ে যায়, সে যা করেছে তা গর্হিত অপরাধ।
কেট্জালকোয়াটল আত্মাহুতির জন্য তৈরী হয়। পাথরের বাক্সে সে চারদিন শুয়ে থাকে, তারপরে উঠে নিজের সমস্ত প্রিয় জিনিস ঐ বাক্সে দিতে বলে। তারপরে তার নির্দেশে ঐ বাক্স নিয়ে ভৃত্যরা সমুদ্রতীরে যায়। সেখানে বিরাট অগ্নিকুন্ড তৈরী করে তাতে আগুন দেয় কেট্জালকোয়াটল নিজেই, তারপরে বাক্সসমেত উঠে বসে সেই চিতায়। প্রজাদের জলভরা চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাদের প্রাণপ্রিয় রাজা। জোলোটল নিজেও আত্মাহুতি দেয়।
চারদিন চাররাত চললো নীরন্ধ্র অন্ধকার। ঊষা উদিত হলো না, দিন এলো না। কেট্জালকোয়াটল আর জোলোটল তখন পাতালে, মৃত্যুলোকে। সেখানে তাদের পিতা মৃত্যুদেবতা মিকত্লানতেকুহটলি তাদের অভ্যর্থনা করে নিয়ে যান অস্থিকক্ষে। সেখানে প্রাচীন হাড়গোড় ছিলো, সেগুলি তাদের দিয়ে বলেন, "এগুলি নিয়ে তোমরা পৃথিবীতে ফিরে যাও। এগুলির থেকে তোমরা মানুষ বানাও, পৃথিবীকে মনুষ্যপূর্ণ করো। বাছা কেট্জালকোয়াটল, মানুষ বলে তাদের ঘৃণা কোরো না, অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও এদের মধ্যে অমিত সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনাকে প্রস্ফুটিত হতে সাহায্য করো তোমরা।"
কেট্জালকোয়াটল আর জোলোটল হাড় নিয়ে ফিরে এলো। আবার দিন শুরু হলো অন্ধকার পার হয়ে।
হাড়গুলির উপরে মন্ত্র পড়ে পড়ে নিজের রক্ত ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিলো কেট্জালকোয়াটল, জোলোটল সাহায্য করলো। মানুষজাতির সৃষ্টি হলো। কেট্জালকোয়াটল তাদের শেখাল চাষবাস আর কাপড় বোনা। তাছাড়া জেডপাথরপালিশ আর মোজাইক বানানোও শেখালো। সময় মাপতে শেখালো, বছরে মাসে ভাগ করতে শেখালো সময়কে, নানা ঋতুর পর্যায়ক্রমে আসা যাওয়ার জ্ঞানও তাদের দিলো সে।
তারপরে একদিন সব শেখানো সমাপ্ত হলে কেট্জালকোয়াটল আর জোলোটল নৌকায় চড়ে চলে গেল সমুদ্রপথে পুবের দিকে। যাবার সময় তারা বলে গেল, " তোমরা ভয় পেও না, তোমাদের যা শিখিয়ে গেলাম তা ভালোভাবে ব্যবহার করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করো। একদিন সময় হলে আবার আমরা আসবো।"
তাদের নৌকা ভেসে গেছে দূর থেকে দূরে, মিলিয়ে গেছে ঐ যেখানে আকাশ এসে জলে মিশেছে সেইখানে। সেই থেকে মানবজাতি নিজেদের দায়িত্ব নিজেই নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে সেইদিনের, যেদিন ফিরে আসবে কেট্জালকোয়াটল।
মন্তব্য
খুব সুন্দর। অ্যাজটেক মিথলজি কিছু আগেও পড়া কিন্তু এত চমৎকার ঝরঝরে অনুবাদের ধারেকাছেও ছিলো না সেইগুলা।
অফটপিকঃ পিচ্চিবেলায় একবার জন্মদিনের উপহার হিসাবে বাবা বইয়ের দোকানে নিয়ে ছেড়ে দেয়- শর্ত- একটা বই নিতে পারবো- কিন্তু সিরিয়াস ভালোগোছের কিছু নিতে হবে, 'ফালতু' কিছু না। অনেক খুঁজেপেতে একটা মেক্সিকান উপকথার বই নিলাম- প্রচ্ছদে ডানাওয়ালা উড়ন্ত সাপ আর খুনজখমের ছবি দেখে- পড়তে গিয়ে কেট-জাল-কোয়াটল আর টেজ-কাটলি-পোকা উচ্চারন করতে গিয়ে দাঁত ভাঙ্গার অবস্থা! নিজের ওপর যে রাগ হয়েছিলো সেইদিন
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
নামগুলো দাঁতভাঙা তো বটেই।
তবে আমেরিকানদের কায়দা লাগালে ছোট্টো করে বলতে পারেন কেট্জ আর টেজ আর জোলো।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এখন আর সমস্যা হয় না- সিলেবল ভেঙ্গে নিই কি না- আমাদের এক খান্ডারনী শিক্ষিকার নাম দেয়া হয়েছিলো সিহুয়াকোয়াটল - তাঁর গলার আওয়াজ সেইরকম ছিলো কি না।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
তিয়াহুয়ানাকো আর সাকসাইহুয়ামান ঘুরতে গেলে ওনারে সাথে লইয়া যাইয়েন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ দারুণ!
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এইটা দারুণ লাগলো।
যে ভয়ানক কাজ করে এতো অনুতাপ সেটা কী, সে কথা কি মূল গল্পেও নেই, না আপনি সেন্সর করে দিলেন?
মূল গল্পে আছে, নিজের ফাইলে লেখার সময়েও লিখেছিলাম, কিন্তু ব্লগে সেন্সর করে দিলাম। বাচ্চাকাচ্চাদের ওসব আজাইরা কথা বইলা লাভ কী?
লাইন দু'খানা সেন্সর করে আর আশেপাশে একটু মডিফাই করে কিন্তু গল্পের ফ্লো দেখলাম আটকাচ্ছে না।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই সব উপকথা কি বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য লেখা না কি? আগে বলবেন তো, আমি শৈশব পার হয়ে এসেছি অল্প কিছু দিন হলো, তাইলে তো আর পড়া উচিত হবে না (ঠিক যেমনি বাচ্চাদের অনুচিত বড়োদের বই পড়াটা)।
না কি আজকাল সক্কলে ঠানদি বলে ডাকছে শুনে আপনিও সবাইকে শিশু ভাবছেন?
আহা শিশুই তো। এইসব সরলসোজা কোমলমতি শিশুরা----
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
লাজবাব, ঠানদি
থাঙ্কু, নাতি।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
- কোতোয়াল ভাইয়ের ফিরে আসার অপেক্ষা কেনো করছে মনুষ্যসম্প্রদায়?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কোতোয়াল ভাই আইসা কোতোল করবেন বইলা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার
অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেশ লাগলো ঠানদি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ভালো লাগলো?
আহা নাতি, বেঁচে থাকো, সুখী হও।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন